ঢাকা ০৩:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo সোনারগাঁয়ে গাজাঁ ও ফেনসিডিলসহ আটক-৪ Logo স্বপ্ন পূরণ হলো না মৌলভীবাজারের লিটনের ! বেলারুশ সীমান্তে পিটিয়ে হত্যা তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: স্বপ্ন পূরণে ইচ্ছা ছিল জার্মানিতে গিয়ে উন্নত জীবনযাপনের মাধ্যমে স্বপ্নের বাস্তবতা হাসিল করার অদম্য সাহস ছিল লিটন চৌধুরীর। সেই দেশে যেতে বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিসহ কয়েকজন অভিবাসন-প্রত্যাশী পোল্যান্ড পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। তাদের পুশব্যাক করা হয়। কিন্তু বেলারুশেও তারা ঢুকতে পারেননি। দুই দেশের সীমান্তে গভীর জঙ্গলে বহু কষ্টে দিন কাটছিল তাদের। গত সোমবার স্থানীয় সময় রাতে স্বজনেরা জানতে পারেন, লিটনসহ ১৫ জন অভিবাসী পুলিশের পিটুনিতে মারা গেছেন। বেলারুশের একটি হাসপাতালের মর্গে তাদের লাশ রাখা হয়েছে। এ খবরে লিটনের পরিবারে মাতম শুরু হয়। লিটন চৌধুরী (৩৫) মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদরের জাঙ্গিরাই এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত মোশারফ হোসেন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ ছেলে। তার মা, এক ভাই, স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তান রয়েছে। লিটন এর আগে দুবাইয়ে থাকতেন। লিটনদের বাড়িতে, একটি কক্ষে তার মা ও স্ত্রী আহাজারি করছেন। স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, লিটনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে একটি কিন্ডারগার্টেনে পঞ্চম ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলের বয়স মাত্র দুই বছর। লিটনের ছোট ভাই নোমান চৌধুরী ইতালিতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বসবাস করছেন। বৈধ না হওয়ায় দেশে ফিরতে পারছেন না। স্বজনেরা বলেন, লিটনদের পরিবার অনেকটা সচ্ছল। দুবাইয়ের জীবন লিটনের ভালো লাগত না। ইউরোপে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। লিটনের স্ত্রীর বড় ভাই শাহিন আহমদ বলেন, মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে বছরখানেক আগে লিটন দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। মায়ের চিকিৎসা করান। মা সুস্থ হওয়ার কয়েক মাস পর দুবাইয়ে ফিরে যান। দুবাইয়ে গিয়ে রাশিয়ায় বসবাসকারী ম্যাক্স নামের এক দালালের মাধ্যমে জার্মানিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য ম্যাক্স ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ম্যাক্সের বাড়ি নোয়াখালী। প্রকৃত নাম অন্য কিছু হলেও দুবাইয়ে ওই নামেই তিনি পরিচিত। শাহিন বলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজারে নজরুল ইসলাম নামের এক গাড়ি ব্যবসায়ী ম্যাক্সের আত্মীয়। নজরুলের কাছে তাঁরা টাকা জমা দেন। এ সময় একটি চুক্তিনামাও করা হয়। জার্মানিতে পাঠাতে না পারলে সব টাকা ফেরতের কথাও চুক্তিনামায় উল্লেখ করা হয়। সেপ্টেম্বরে লিটন রাশিয়া হয়ে বেলারুশে যান। এরপর বেলারুশের সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে পৌঁছালে পুলিশ তাঁকেসহ আরও কয়েকজনকে ধরে ফেলে। তাদের সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। বেলারুশের পুলিশ তাঁদের ঢুকতে বাঁধা দেয়। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সীমান্তে জঙ্গলে তাঁরা দিন কাটান। শাহিন বলেন, সর্বশেষ ৭ই অক্টোবর লিটন তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভয়েস মেসেজ পাঠান। ওই ভয়েস মেসেজে লিটন বলেন, তিনি জঙ্গলে খুব কষ্টে আছেন। খাবার নেই, পানি নেই। তাঁর একটি পা ভেঙে গেছে। লিটন ম্যাক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে বলেন। পরে তিনি (শাহিন আহমেদ) ম্যাক্সের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করলে তিনি শুধু আশ্বাস দিতে থাকেন। কিছুদিন পর লিটনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। লিটনের খোঁজ না পাওয়ায় চিন্তিত ছিল তার পরিবার। এই বিষয়ে শাহিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লিটনের খোঁজখবর না পাওয়ায় তারা উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে থাকেন। সম্প্রতি তারা বেলারুশ সীমান্তের একটি ভিডিও পান। ভিডিওটি স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের। ওই ভিডিওতে দাবি করা হয়, সীমান্তে ১৫ জন অভিবাসীকে পোল্যান্ড পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এর মধ্যে চেহারা, পরনের টি-শার্ট ও প্যান্ট দেখে তারা লিটনের লাশ শনাক্ত করেন। কিন্তু তাতেও তাঁরা পুরোপুরি নিশ্চিত হননি। শাহিন বলেন, বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে বেলারুশে বসবাসকারী এক বাংলাদেশি চিকিৎসকের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেন। ওই চিকিৎসক বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প ও হাসপাতালে খোঁজ নেন। একপর্যায়ে একটি হাসপাতালের মর্গে লিটনের লাশ পান। সোমবার রাত আটটার দিকে চিকিৎসক লিটনের লাশের ছবি তাদের কাছে পাঠান। এতে তাঁরা নিশ্চিত হন লিটন মারা গেছেন। শাহিন বলেন, লিটনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ম্যাক্স ও নজরুলের সঙ্গে কথা বলেন। লাশ ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের সহায়তা চান। কিন্তু তারা কোনো সহায়তা করেননি। ম্যাক্সের আসল পরিচয় উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে। তারা ম্যাক্স ও নজরুলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেবেন। শাহিন বলেন, লিটনের লাশ দেশে আনা হবে কি না, সে বিষয়ে তাঁরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে কুলাউড়া সার্কেলের (কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান গনমাধ্যমে বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। Logo নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ Logo সৌদিতে ফ্যাশন শো নিয়ে ইসলামী পণ্ডিতদের ক্ষোভের যত কারণ Logo প্রতারণার অভিযোগে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে আমেরিকার আদালতে মামলা Logo ট্রাইব্যুনালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক কর্তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হলো Logo ভাঙ্গুড়া প্রেস ক্লাবের অবৈধ কমিটি বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান Logo মৌলভীবাজার পূজা উদযাপন পরিষদের সম্পাদক মহিম গ্রেপ্তার Logo পাবনার আমিনপুরে ইজিবাইক-মোটর সাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ Logo সেনাকুঞ্জে যাবেন খালেদা জিয়া

প্রথমবারের মতো জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে সরে আসার আহবান জলবায়ু সম্মেলনে

সারাবেলা প্রতিবেদন
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৭:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ৪৫ বার পঠিত

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করে চলেছে বাংলাদেশ

দুবাইয়ে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক বৈশ্বিক সম্মেলন কনফারেন্স অব পার্টিজ বা কপ-২৮ এ একটি নতুন চুক্তির বিষয়ে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছে, যাতে প্রথমবারের মতো তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে সরে আসার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।

কয়েক দিনের আলোচনার পর সম্মেলনে অংশ নেয়া দেশগুলো শেষ পর্যন্ত নতুন এই সমঝোতায় উপনীত হলো, যাতে জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে সরে আসতে সব দেশকে ভূমিকা রাখার কথা বলা হয়েছে।

তবে অনেক দেশের দাবি অনুযায়ী একবারেই বাতিল না করে ধীরে ধীরে জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে নতুন চুক্তিতে।

এ সম্মেলনে অবশ্য এটি সবাই মেনে নিয়েছে যে ভবিষ্যতে গ্যাসের নিঃসরণ আরও বাড়বে, যদিও উন্নত কিংবা অনুন্নত দেশ ভেদে এর মধ্যে পার্থক্য থাকবে।

কপ-২৮ এর প্রেসিডেন্ট বলেছেন দেশগুলো বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করেছে এবং বিশ্বকে একটি সঠিক পথের নির্দেশনা দিয়েছে।

সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতিনিধি চুক্তিকে উচ্চাভিলাষী আখ্যায়িত করলেও এর প্রশংসা করেছেন।তিনি বলেছেন কার্বন নিঃসরণ কমাতে প্রতিটি পক্ষই তাদের পছন্দনীয় বাস্তবসম্মত উপায় বেছে নিতে পারে।

যুক্তরাজ্যের জলবায়ু মন্ত্রী গ্রাহাম স্টুয়ার্ট বলেছেন জীবাশ্ম জ্বালানী যুগের অবসান শুরু হলো। “আমরা জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে সরে আসার অঙ্গীকারের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ”।

অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু মন্ত্রী ক্রিস বোয়েন চুক্তিকে ‘শক্তিশালী ফল’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন দুবাইয়ের আলোচনা হলো একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’।

এর আগে চুক্তির বিষয়বস্তু নিয়ে অংশ নেয়া দেশগুলো একমত না হওয়ায় আলোচনা বাড়তি সময়ে গড়িয়েছিলো।

তবে বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, এই সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার কোন কারণ নেই।

এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিশ্বের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক মন্দার এক পটভূমির মধ্যেই এই জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে এর প্রতি দৃষ্টি কম ছিল। একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রুখতে তৈরি করা তহবিলগুলোতে দিন দিন অর্থ সংস্থান কমে যাওয়ার কারণে এর থেকে খুব বেশি প্রত্যাশাও ছিল না।

উপকূল ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আমরা যদি আশা করি, খুব বেশি লাভ হবে না। আমাদেরকে নিজেদের পয়সা দিয়েই ডেল্টা প্ল্যান বলেন, নিজেদের সুরক্ষা বলেন, আমাদেরকেই করতে হবে। তার সাথে তো ইকোনমিক ক্রাইসিস আছেই। তাই আমরা কিন্তু সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহ একটা জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছি।”

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর বলেন, ” কপ-২৮ লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ডে বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণের সুখবর দিয়ে শুরু হলেও, টানা দুই সপ্তাহ ধরে নানা আলোচনার পরে আশানুরূপ ফল দেয়নি।”

দুবাইতে বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে নানা বিতর্কের পর সব দেশের মতৈক্যের ভিত্তিতে একটি চুক্তিতে সম্মত হওয়াটা কঠিন হয়ে পড়েছে।

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর বিষয়টি খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত না থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলো খসড়ার সমালোচনা করেছে। সবার আশা ছিল যে, কয়লা, তেল ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের বিষয়ে সম্মতির শুরু হয়তো এখান থেকেই হবে। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে চুক্তির ভাষাতে এগুলো স্থান পায়নি।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে সম্প্রতি তাপপ্রবাহ বেড়েছে

যা নিয়ে মতবিরোধ

সোমবার প্রকাশিত খসড়া চুক্তিটিতে জীবাশ্ম জ্বালানী “পর্যায়ক্রমে বন্ধ” করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না থাকার কারণে এই চুক্তিটিকে “দুর্বল” বলে উল্লেখ করেছে অনেক দেশ।

মঙ্গলবার খসড়া চুক্তিটির নতুন একটি ভার্সন প্রকাশ করার কথা রয়েছে। এরইমধ্যে এই সম্মেলন বাড়তি সময়ে গড়িয়েছে। কোন চুক্তি হতে হলে সম্মেলনে অংশ নেয়া ১৯৮টি দেশের সবাইকে একমত হতে হবে।

সোমবার যে খসড়াটি প্রকাশ করা হয় যেখানে “পর্যায়ক্রমে বন্ধ” করার বিষয়টি বাদ দেয়া হয় এবং এর পরিবর্তে বলা হয়, দেশগুলোকে “জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ন্যায্য, সুশৃঙ্খল এবং সমানভাবে কমিয়ে আনতে” বলা হয়।

ভাষাগতভাবে এই পরিবর্তন খুব ছোট হলেও জাতিসংঘের নথিতে অল্প একটু পরিবর্তনও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশগুলো কী করতে পারবে আর কী করতে পারবে না তা এটির উপরই নির্ভর করে।

যেসব দেশ এরইমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হচ্ছে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে যাদের বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে, ঝড়ের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়ছে মানুষের জীবন, সেসব দেশগুলো এই খসড়ার নিন্দা জানিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি খসড়া চুক্তিটিকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে উল্লেখ করেছে।

এই পুরো সম্মেলনেই আলোচনা হয়েছে যে, তেল, কয়লা এবং গ্যাস পোড়ানোর কারণে নিঃসরিত গ্রিনহাউজ গ্যাস কিভাবে কমিয়ে আনা যায়।

কারণ জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে, ঝুঁকির মুখে পড়ছে লাখ লাখ মানুষের জীবন। কিন্তু কোন সরকারই এখনো পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি যে কখন এর ব্যবহার বন্ধ করা হবে।

তবে এবার সম্মেলন শেষে কঠোর কোনো চুক্তি আসবে না বলে আগেই আন্দাজ করা হচ্ছিলো কারণ কপ-২৮ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট সুলতান আল জাবের আবুধাবির অয়েল জায়ান্ট কোম্পানি অ্যাডনকের প্রধান নির্বাহী।

দুবাইতে থাকা কপ-২৮ এর জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক জাস্টিন রুউলেট বলেন, এমন একটি চুক্তি হতে হবে যেটি একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার বিষয়টিও থাকবে এবং যা তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোর কাছেও গ্রহণযোগ্য হবে, যারা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।

চুক্তিতে আরো থাকা দরকার যে, ধনী দেশগুলোতে জলবায়ু সংকটের মুখে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহায়তায় আরো বেশি নগদ অর্থ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশের উপকূল ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ‘ফেইজ আউট’ বা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা গুরুত্ব পাচ্ছে।

তিনি বলেন, ”সম্মেলনটা সংযুক্ত আরব আমিরাতে হয়েছে এবং এরা ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী দেশ। তাই তারা সহজে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করতে রাজি হবে না। বরং শেষমেশ হয়তো সিদ্ধান্ত আসবে যে, এই জ্বালানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রেও তারা কোন সময় সীমা বেধে দেবে না।”

তার মতে, এর কারণ হচ্ছে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতিতে ধ্বস নামবে।

“আবার তারা নিজেরাও খুব একটা তৈরি না। তবে তারা কখনো সামনাসামনি বলবে না যে, তারা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করতে চায় না। বরং তারা এটা বিলম্বিত করবে।”

দুবাইয়ের এক্সপো সিটি কমপ্লেক্স যেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে কপ-২৮ সম্মেলন

‘বাংলাদেশের আশা নেই?’

কপ-২৮ সম্মেলনে যারা যোগ দিয়েছেন এবং জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা বলছেন, দুবাইতে অনুষ্ঠিত এবারের জলবায়ু সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের পাওয়ার আসলে তেমন কিছু নেই।

কারণ প্রথমত এই সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার বিষয়টি আলোচনার মূল বস্তু হয়ে উঠেছে যার বিরোধিতা করে যাচ্ছে ওপেকভুক্ত দেশগুলো।

আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে অ্যাডাপটেশন ফান্ড বা অভিযোজন তহবিলে অর্থ সংস্থান কমে যাওয়া এবং তা ছাড় করানোর কঠোর নীতি।

উপকূল ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, অভিযোজন তহবিলে ১০০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জার্মানি। আমেরিকার মতো দেশ যারা

ইসরায়েলকে সহায়তা করার জন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার দিলেও জলবায়ু তহবিলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মাত্র ১৭.৫ মিলিয়ন ডলার।

তাই সব মিলিয়ে বাংলাদেশ অ্যাডাপটেশন ফান্ডের ২০০ মিলিয়নের মতো অর্থ পেতে পারে বলে মনে করেন তিনি, যা আসলে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

তিনি বলেন, “আমরা যেখানে ট্রিলিয়ন ডলার আশা করতেছিলাম, বিলিয়ন ডলার তো তারা কমিটমেন্ট করেছিল প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার, সেটা এখন মিলিয়নে নেমে আসছে। সুতরাং অ্যাডাপটেশন ফান্ডেও আমরা খুব বেশি তহবিল আশা করতে পারবো না।”

দ্বিতীয়ত, এইসব তহবিলের অর্থ কতটা পাওয়া যাবে সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করেন তিনি। কারণ অভিযোজন তহবিল এবং গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের অর্থ পাওয়াটা খুব কঠিন।

বাংলাদেশের মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান এতে এখনো পর্যন্ত নথিবদ্ধ হয়েছে। একটি হচ্ছে পিকেএসএফ(পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন) এবং আরেকটি হচ্ছে ইডকল (ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড)।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলছেন, “তারাও সব মিলিয়ে প্রায় ১০-২০ মিলিয়নের মতো টাকা পেয়েছে।”

“আমরা যদি আশা করি, খুব বেশি লাভ হবে না। আমাদেরকে নিজেদের পয়সা দিয়েই ডেল্টা প্ল্যান বলেন, ওউন প্রোটেকশন বলেন, আমাদেরকেই করতে হবে। তার সাথে তো ইকোনমিক ক্রাইসিস আছেই। সো আমরা কিন্তু সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহ একটা কমপ্লেক্স সিচুয়েশনে পড়ে যাচ্ছি,” বলেন তিনি।

এ বিষয়ে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর বলেন, কপ-২৮ লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ডে বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণের সুখবর দিয়ে শুরু হলেও, টানা দুই সপ্তাহ ধরে নানা আলোচনার পরে আশানুরূপ ফল দেয়নি।

তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন ফান্ড যেমন গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড, অভিযোজন তহবিল, স্পেশাল জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলে বেশকিছু প্রতিশ্রুতি পেলেও, এর ধারাবাহিকতা এবং যথাযথ প্রয়োগের ব্যাপারে সন্দিহান।”

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রুখতে তৈরি করা তহবিলগুলোতে দিন দিন অর্থ সংস্থান কমে যাওয়ার কারণে হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই এখানে মূলত দায়ী।

শক্তিশালী দেশগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা বিশ্ব জনমতের পক্ষে নয়। বরং অনেক দেশে এখন উগ্র-জাতীয়তাবাদী চিন্তার জন্ম হয়েছে। সব দেশই এখন নিজেদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিতে চায়।

পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এই সমস্যা আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। কোভিডের পর অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠার আশা করা হলেও পরবর্তীতে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা যুদ্ধের কারণে পরিস্থিতি আবার বিরূপ আকার ধারণ করেছে।

রেজাউল করিম বলেন, “এই জিনিসগুলোর পটভূমিতেই এই ক্লাইমেট কনফারেন্সটা হচ্ছে। সুতরাং এখান থেকে আমরা আশা করতে যেমন পারি না, পাশাপাশি আমরা আবার এখানে কথা বলা বন্ধ করে দেবো সেটাও হবে না। আমাদের কথা বলা, হইচই করাটা চালিয়ে যেতে হবে।”

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানী বন্ধে কঠোর প্রতিশ্রুতি বা পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানী বন্ধ করা ছাড়া কোন বিকল্প নাই।

তিনি বলেন, ‘ফেজ আউট’ শব্দের পরিবর্তে বিকল্প শব্দের ব্যবহার বিভিন্ন দেশকে এই পদক্ষেপকে একটি ঐচ্ছিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখার সুযোগ তৈরি করে দিবে এবং এটি বিশ্বের জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

“উন্নয়নশীল দেশ, ছোট দ্বীপ দেশ এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলো এটা মেনে নিতে পারে না। বাংলাদেশ সহ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ তে থাকা সকল দেশগুলোর স্বার্থে কপ ২৮-এ এই বিষয়ে সকলের ঐকমত ভীষণ জরুরি।”

তবে এই সম্মেলন থেকে না হলেও বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে তহবিল পাওয়ার বিষয়ে আশা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ এর মতো বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের বিষয়ে সচেতন। কারণ বাংলাদেশ এরইমধ্যে মারাত্মক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এ বছর সবচেয়ে গরম দিনগুলো পার করেছে। এক বছরেই ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট চারটি ঘূর্ণিঝড়ের মুখে পড়েছে। এরইমধ্যে বেশ ভাল শীত পড়তে শুরু করেছে।

রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, এডিবি, আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জন্য ৫ বিলিয়নের একটা বিশেষ তহবিল তৈরি করতে যাচ্ছে। এটা একটা আশার বাণী বলে মনে করেন তিনি।

“আমরা এই মাল্টিল্যাটেরাল প্রসেসের বাইরে, বাংলাদেশ খুব খারাপ অবস্থায় নাই, ভাল অবস্থানে আছি। আমাদের স্বতন্ত্রভাবে এই বহুপাক্ষিক

প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও অন্যান্য জায়গায় আমাদের সমঝোতা চালিয়ে যেতে হবে এবং সেখানে একটা আশার বিষয় আছে আরকি,” বলছেন চৌধুরী।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

স্বপ্ন পূরণ হলো না মৌলভীবাজারের লিটনের ! বেলারুশ সীমান্তে পিটিয়ে হত্যা তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: স্বপ্ন পূরণে ইচ্ছা ছিল জার্মানিতে গিয়ে উন্নত জীবনযাপনের মাধ্যমে স্বপ্নের বাস্তবতা হাসিল করার অদম্য সাহস ছিল লিটন চৌধুরীর। সেই দেশে যেতে বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিসহ কয়েকজন অভিবাসন-প্রত্যাশী পোল্যান্ড পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। তাদের পুশব্যাক করা হয়। কিন্তু বেলারুশেও তারা ঢুকতে পারেননি। দুই দেশের সীমান্তে গভীর জঙ্গলে বহু কষ্টে দিন কাটছিল তাদের। গত সোমবার স্থানীয় সময় রাতে স্বজনেরা জানতে পারেন, লিটনসহ ১৫ জন অভিবাসী পুলিশের পিটুনিতে মারা গেছেন। বেলারুশের একটি হাসপাতালের মর্গে তাদের লাশ রাখা হয়েছে। এ খবরে লিটনের পরিবারে মাতম শুরু হয়। লিটন চৌধুরী (৩৫) মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদরের জাঙ্গিরাই এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত মোশারফ হোসেন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ ছেলে। তার মা, এক ভাই, স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তান রয়েছে। লিটন এর আগে দুবাইয়ে থাকতেন। লিটনদের বাড়িতে, একটি কক্ষে তার মা ও স্ত্রী আহাজারি করছেন। স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, লিটনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে একটি কিন্ডারগার্টেনে পঞ্চম ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলের বয়স মাত্র দুই বছর। লিটনের ছোট ভাই নোমান চৌধুরী ইতালিতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বসবাস করছেন। বৈধ না হওয়ায় দেশে ফিরতে পারছেন না। স্বজনেরা বলেন, লিটনদের পরিবার অনেকটা সচ্ছল। দুবাইয়ের জীবন লিটনের ভালো লাগত না। ইউরোপে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। লিটনের স্ত্রীর বড় ভাই শাহিন আহমদ বলেন, মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে বছরখানেক আগে লিটন দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। মায়ের চিকিৎসা করান। মা সুস্থ হওয়ার কয়েক মাস পর দুবাইয়ে ফিরে যান। দুবাইয়ে গিয়ে রাশিয়ায় বসবাসকারী ম্যাক্স নামের এক দালালের মাধ্যমে জার্মানিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য ম্যাক্স ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ম্যাক্সের বাড়ি নোয়াখালী। প্রকৃত নাম অন্য কিছু হলেও দুবাইয়ে ওই নামেই তিনি পরিচিত। শাহিন বলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজারে নজরুল ইসলাম নামের এক গাড়ি ব্যবসায়ী ম্যাক্সের আত্মীয়। নজরুলের কাছে তাঁরা টাকা জমা দেন। এ সময় একটি চুক্তিনামাও করা হয়। জার্মানিতে পাঠাতে না পারলে সব টাকা ফেরতের কথাও চুক্তিনামায় উল্লেখ করা হয়। সেপ্টেম্বরে লিটন রাশিয়া হয়ে বেলারুশে যান। এরপর বেলারুশের সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে পৌঁছালে পুলিশ তাঁকেসহ আরও কয়েকজনকে ধরে ফেলে। তাদের সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। বেলারুশের পুলিশ তাঁদের ঢুকতে বাঁধা দেয়। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সীমান্তে জঙ্গলে তাঁরা দিন কাটান। শাহিন বলেন, সর্বশেষ ৭ই অক্টোবর লিটন তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভয়েস মেসেজ পাঠান। ওই ভয়েস মেসেজে লিটন বলেন, তিনি জঙ্গলে খুব কষ্টে আছেন। খাবার নেই, পানি নেই। তাঁর একটি পা ভেঙে গেছে। লিটন ম্যাক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে বলেন। পরে তিনি (শাহিন আহমেদ) ম্যাক্সের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করলে তিনি শুধু আশ্বাস দিতে থাকেন। কিছুদিন পর লিটনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। লিটনের খোঁজ না পাওয়ায় চিন্তিত ছিল তার পরিবার। এই বিষয়ে শাহিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লিটনের খোঁজখবর না পাওয়ায় তারা উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে থাকেন। সম্প্রতি তারা বেলারুশ সীমান্তের একটি ভিডিও পান। ভিডিওটি স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের। ওই ভিডিওতে দাবি করা হয়, সীমান্তে ১৫ জন অভিবাসীকে পোল্যান্ড পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এর মধ্যে চেহারা, পরনের টি-শার্ট ও প্যান্ট দেখে তারা লিটনের লাশ শনাক্ত করেন। কিন্তু তাতেও তাঁরা পুরোপুরি নিশ্চিত হননি। শাহিন বলেন, বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে বেলারুশে বসবাসকারী এক বাংলাদেশি চিকিৎসকের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেন। ওই চিকিৎসক বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প ও হাসপাতালে খোঁজ নেন। একপর্যায়ে একটি হাসপাতালের মর্গে লিটনের লাশ পান। সোমবার রাত আটটার দিকে চিকিৎসক লিটনের লাশের ছবি তাদের কাছে পাঠান। এতে তাঁরা নিশ্চিত হন লিটন মারা গেছেন। শাহিন বলেন, লিটনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ম্যাক্স ও নজরুলের সঙ্গে কথা বলেন। লাশ ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের সহায়তা চান। কিন্তু তারা কোনো সহায়তা করেননি। ম্যাক্সের আসল পরিচয় উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে। তারা ম্যাক্স ও নজরুলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেবেন। শাহিন বলেন, লিটনের লাশ দেশে আনা হবে কি না, সে বিষয়ে তাঁরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে কুলাউড়া সার্কেলের (কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান গনমাধ্যমে বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রথমবারের মতো জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে সরে আসার আহবান জলবায়ু সম্মেলনে

আপডেট সময় : ০৮:৫৭:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩

দুবাইয়ে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক বৈশ্বিক সম্মেলন কনফারেন্স অব পার্টিজ বা কপ-২৮ এ একটি নতুন চুক্তির বিষয়ে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছে, যাতে প্রথমবারের মতো তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে সরে আসার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।

কয়েক দিনের আলোচনার পর সম্মেলনে অংশ নেয়া দেশগুলো শেষ পর্যন্ত নতুন এই সমঝোতায় উপনীত হলো, যাতে জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে সরে আসতে সব দেশকে ভূমিকা রাখার কথা বলা হয়েছে।

তবে অনেক দেশের দাবি অনুযায়ী একবারেই বাতিল না করে ধীরে ধীরে জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে নতুন চুক্তিতে।

এ সম্মেলনে অবশ্য এটি সবাই মেনে নিয়েছে যে ভবিষ্যতে গ্যাসের নিঃসরণ আরও বাড়বে, যদিও উন্নত কিংবা অনুন্নত দেশ ভেদে এর মধ্যে পার্থক্য থাকবে।

কপ-২৮ এর প্রেসিডেন্ট বলেছেন দেশগুলো বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করেছে এবং বিশ্বকে একটি সঠিক পথের নির্দেশনা দিয়েছে।

সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতিনিধি চুক্তিকে উচ্চাভিলাষী আখ্যায়িত করলেও এর প্রশংসা করেছেন।তিনি বলেছেন কার্বন নিঃসরণ কমাতে প্রতিটি পক্ষই তাদের পছন্দনীয় বাস্তবসম্মত উপায় বেছে নিতে পারে।

যুক্তরাজ্যের জলবায়ু মন্ত্রী গ্রাহাম স্টুয়ার্ট বলেছেন জীবাশ্ম জ্বালানী যুগের অবসান শুরু হলো। “আমরা জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে সরে আসার অঙ্গীকারের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ”।

অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু মন্ত্রী ক্রিস বোয়েন চুক্তিকে ‘শক্তিশালী ফল’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন দুবাইয়ের আলোচনা হলো একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’।

এর আগে চুক্তির বিষয়বস্তু নিয়ে অংশ নেয়া দেশগুলো একমত না হওয়ায় আলোচনা বাড়তি সময়ে গড়িয়েছিলো।

তবে বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, এই সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার কোন কারণ নেই।

এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিশ্বের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক মন্দার এক পটভূমির মধ্যেই এই জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে এর প্রতি দৃষ্টি কম ছিল। একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রুখতে তৈরি করা তহবিলগুলোতে দিন দিন অর্থ সংস্থান কমে যাওয়ার কারণে এর থেকে খুব বেশি প্রত্যাশাও ছিল না।

উপকূল ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আমরা যদি আশা করি, খুব বেশি লাভ হবে না। আমাদেরকে নিজেদের পয়সা দিয়েই ডেল্টা প্ল্যান বলেন, নিজেদের সুরক্ষা বলেন, আমাদেরকেই করতে হবে। তার সাথে তো ইকোনমিক ক্রাইসিস আছেই। তাই আমরা কিন্তু সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহ একটা জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছি।”

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর বলেন, ” কপ-২৮ লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ডে বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণের সুখবর দিয়ে শুরু হলেও, টানা দুই সপ্তাহ ধরে নানা আলোচনার পরে আশানুরূপ ফল দেয়নি।”

দুবাইতে বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে নানা বিতর্কের পর সব দেশের মতৈক্যের ভিত্তিতে একটি চুক্তিতে সম্মত হওয়াটা কঠিন হয়ে পড়েছে।

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর বিষয়টি খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত না থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলো খসড়ার সমালোচনা করেছে। সবার আশা ছিল যে, কয়লা, তেল ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের বিষয়ে সম্মতির শুরু হয়তো এখান থেকেই হবে। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে চুক্তির ভাষাতে এগুলো স্থান পায়নি।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে সম্প্রতি তাপপ্রবাহ বেড়েছে

যা নিয়ে মতবিরোধ

সোমবার প্রকাশিত খসড়া চুক্তিটিতে জীবাশ্ম জ্বালানী “পর্যায়ক্রমে বন্ধ” করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না থাকার কারণে এই চুক্তিটিকে “দুর্বল” বলে উল্লেখ করেছে অনেক দেশ।

মঙ্গলবার খসড়া চুক্তিটির নতুন একটি ভার্সন প্রকাশ করার কথা রয়েছে। এরইমধ্যে এই সম্মেলন বাড়তি সময়ে গড়িয়েছে। কোন চুক্তি হতে হলে সম্মেলনে অংশ নেয়া ১৯৮টি দেশের সবাইকে একমত হতে হবে।

সোমবার যে খসড়াটি প্রকাশ করা হয় যেখানে “পর্যায়ক্রমে বন্ধ” করার বিষয়টি বাদ দেয়া হয় এবং এর পরিবর্তে বলা হয়, দেশগুলোকে “জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ন্যায্য, সুশৃঙ্খল এবং সমানভাবে কমিয়ে আনতে” বলা হয়।

ভাষাগতভাবে এই পরিবর্তন খুব ছোট হলেও জাতিসংঘের নথিতে অল্প একটু পরিবর্তনও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশগুলো কী করতে পারবে আর কী করতে পারবে না তা এটির উপরই নির্ভর করে।

যেসব দেশ এরইমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হচ্ছে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে যাদের বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে, ঝড়ের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়ছে মানুষের জীবন, সেসব দেশগুলো এই খসড়ার নিন্দা জানিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি খসড়া চুক্তিটিকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে উল্লেখ করেছে।

এই পুরো সম্মেলনেই আলোচনা হয়েছে যে, তেল, কয়লা এবং গ্যাস পোড়ানোর কারণে নিঃসরিত গ্রিনহাউজ গ্যাস কিভাবে কমিয়ে আনা যায়।

কারণ জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে, ঝুঁকির মুখে পড়ছে লাখ লাখ মানুষের জীবন। কিন্তু কোন সরকারই এখনো পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি যে কখন এর ব্যবহার বন্ধ করা হবে।

তবে এবার সম্মেলন শেষে কঠোর কোনো চুক্তি আসবে না বলে আগেই আন্দাজ করা হচ্ছিলো কারণ কপ-২৮ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট সুলতান আল জাবের আবুধাবির অয়েল জায়ান্ট কোম্পানি অ্যাডনকের প্রধান নির্বাহী।

দুবাইতে থাকা কপ-২৮ এর জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক জাস্টিন রুউলেট বলেন, এমন একটি চুক্তি হতে হবে যেটি একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার বিষয়টিও থাকবে এবং যা তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোর কাছেও গ্রহণযোগ্য হবে, যারা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।

চুক্তিতে আরো থাকা দরকার যে, ধনী দেশগুলোতে জলবায়ু সংকটের মুখে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহায়তায় আরো বেশি নগদ অর্থ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশের উপকূল ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ‘ফেইজ আউট’ বা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা গুরুত্ব পাচ্ছে।

তিনি বলেন, ”সম্মেলনটা সংযুক্ত আরব আমিরাতে হয়েছে এবং এরা ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী দেশ। তাই তারা সহজে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করতে রাজি হবে না। বরং শেষমেশ হয়তো সিদ্ধান্ত আসবে যে, এই জ্বালানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রেও তারা কোন সময় সীমা বেধে দেবে না।”

তার মতে, এর কারণ হচ্ছে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতিতে ধ্বস নামবে।

“আবার তারা নিজেরাও খুব একটা তৈরি না। তবে তারা কখনো সামনাসামনি বলবে না যে, তারা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করতে চায় না। বরং তারা এটা বিলম্বিত করবে।”

দুবাইয়ের এক্সপো সিটি কমপ্লেক্স যেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে কপ-২৮ সম্মেলন

‘বাংলাদেশের আশা নেই?’

কপ-২৮ সম্মেলনে যারা যোগ দিয়েছেন এবং জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা বলছেন, দুবাইতে অনুষ্ঠিত এবারের জলবায়ু সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের পাওয়ার আসলে তেমন কিছু নেই।

কারণ প্রথমত এই সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার বিষয়টি আলোচনার মূল বস্তু হয়ে উঠেছে যার বিরোধিতা করে যাচ্ছে ওপেকভুক্ত দেশগুলো।

আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে অ্যাডাপটেশন ফান্ড বা অভিযোজন তহবিলে অর্থ সংস্থান কমে যাওয়া এবং তা ছাড় করানোর কঠোর নীতি।

উপকূল ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, অভিযোজন তহবিলে ১০০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জার্মানি। আমেরিকার মতো দেশ যারা

ইসরায়েলকে সহায়তা করার জন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার দিলেও জলবায়ু তহবিলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মাত্র ১৭.৫ মিলিয়ন ডলার।

তাই সব মিলিয়ে বাংলাদেশ অ্যাডাপটেশন ফান্ডের ২০০ মিলিয়নের মতো অর্থ পেতে পারে বলে মনে করেন তিনি, যা আসলে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

তিনি বলেন, “আমরা যেখানে ট্রিলিয়ন ডলার আশা করতেছিলাম, বিলিয়ন ডলার তো তারা কমিটমেন্ট করেছিল প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার, সেটা এখন মিলিয়নে নেমে আসছে। সুতরাং অ্যাডাপটেশন ফান্ডেও আমরা খুব বেশি তহবিল আশা করতে পারবো না।”

দ্বিতীয়ত, এইসব তহবিলের অর্থ কতটা পাওয়া যাবে সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করেন তিনি। কারণ অভিযোজন তহবিল এবং গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের অর্থ পাওয়াটা খুব কঠিন।

বাংলাদেশের মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান এতে এখনো পর্যন্ত নথিবদ্ধ হয়েছে। একটি হচ্ছে পিকেএসএফ(পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন) এবং আরেকটি হচ্ছে ইডকল (ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড)।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলছেন, “তারাও সব মিলিয়ে প্রায় ১০-২০ মিলিয়নের মতো টাকা পেয়েছে।”

“আমরা যদি আশা করি, খুব বেশি লাভ হবে না। আমাদেরকে নিজেদের পয়সা দিয়েই ডেল্টা প্ল্যান বলেন, ওউন প্রোটেকশন বলেন, আমাদেরকেই করতে হবে। তার সাথে তো ইকোনমিক ক্রাইসিস আছেই। সো আমরা কিন্তু সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহ একটা কমপ্লেক্স সিচুয়েশনে পড়ে যাচ্ছি,” বলেন তিনি।

এ বিষয়ে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর বলেন, কপ-২৮ লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ডে বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণের সুখবর দিয়ে শুরু হলেও, টানা দুই সপ্তাহ ধরে নানা আলোচনার পরে আশানুরূপ ফল দেয়নি।

তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন ফান্ড যেমন গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড, অভিযোজন তহবিল, স্পেশাল জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলে বেশকিছু প্রতিশ্রুতি পেলেও, এর ধারাবাহিকতা এবং যথাযথ প্রয়োগের ব্যাপারে সন্দিহান।”

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রুখতে তৈরি করা তহবিলগুলোতে দিন দিন অর্থ সংস্থান কমে যাওয়ার কারণে হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই এখানে মূলত দায়ী।

শক্তিশালী দেশগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা বিশ্ব জনমতের পক্ষে নয়। বরং অনেক দেশে এখন উগ্র-জাতীয়তাবাদী চিন্তার জন্ম হয়েছে। সব দেশই এখন নিজেদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিতে চায়।

পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এই সমস্যা আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। কোভিডের পর অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠার আশা করা হলেও পরবর্তীতে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা যুদ্ধের কারণে পরিস্থিতি আবার বিরূপ আকার ধারণ করেছে।

রেজাউল করিম বলেন, “এই জিনিসগুলোর পটভূমিতেই এই ক্লাইমেট কনফারেন্সটা হচ্ছে। সুতরাং এখান থেকে আমরা আশা করতে যেমন পারি না, পাশাপাশি আমরা আবার এখানে কথা বলা বন্ধ করে দেবো সেটাও হবে না। আমাদের কথা বলা, হইচই করাটা চালিয়ে যেতে হবে।”

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানী বন্ধে কঠোর প্রতিশ্রুতি বা পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানী বন্ধ করা ছাড়া কোন বিকল্প নাই।

তিনি বলেন, ‘ফেজ আউট’ শব্দের পরিবর্তে বিকল্প শব্দের ব্যবহার বিভিন্ন দেশকে এই পদক্ষেপকে একটি ঐচ্ছিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখার সুযোগ তৈরি করে দিবে এবং এটি বিশ্বের জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

“উন্নয়নশীল দেশ, ছোট দ্বীপ দেশ এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলো এটা মেনে নিতে পারে না। বাংলাদেশ সহ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ তে থাকা সকল দেশগুলোর স্বার্থে কপ ২৮-এ এই বিষয়ে সকলের ঐকমত ভীষণ জরুরি।”

তবে এই সম্মেলন থেকে না হলেও বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে তহবিল পাওয়ার বিষয়ে আশা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ এর মতো বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের বিষয়ে সচেতন। কারণ বাংলাদেশ এরইমধ্যে মারাত্মক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এ বছর সবচেয়ে গরম দিনগুলো পার করেছে। এক বছরেই ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট চারটি ঘূর্ণিঝড়ের মুখে পড়েছে। এরইমধ্যে বেশ ভাল শীত পড়তে শুরু করেছে।

রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, এডিবি, আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জন্য ৫ বিলিয়নের একটা বিশেষ তহবিল তৈরি করতে যাচ্ছে। এটা একটা আশার বাণী বলে মনে করেন তিনি।

“আমরা এই মাল্টিল্যাটেরাল প্রসেসের বাইরে, বাংলাদেশ খুব খারাপ অবস্থায় নাই, ভাল অবস্থানে আছি। আমাদের স্বতন্ত্রভাবে এই বহুপাক্ষিক

প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও অন্যান্য জায়গায় আমাদের সমঝোতা চালিয়ে যেতে হবে এবং সেখানে একটা আশার বিষয় আছে আরকি,” বলছেন চৌধুরী।

Facebook Comments Box