অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, রিজার্ভের পরিমাণ গড়ে প্রতি মাসে এক বিলিয়ন করে কমার কারণ হচ্ছে ডলারের আয় ও ডলারের ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা। পর্যাপ্ত যোগান না থাকার কারণে আমদানি কমালেও তা রিজার্ভ ধরে রাখতে সহায়ক হয়নি।

বাংলাদেশে ২০২১ সালের অগাস্টে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন।

তিনি বলেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে শুরু করলে সব কিছু কেনার প্রবণতা বাড়ে। তখন রিজার্ভ খরচ হওয়া শুরু হয়। এরপর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পণ্যের সাপ্লাই-চেইন ব্যাহত হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বেশি দামে পণ্য কেনার কারণে রিজার্ভের উপর চাপ পড়ে।

“নরমাল সময়ে যে ফার্টিলাইজার ২০০-২৫০ ডলার, সেই ফার্টিলাইজার আমরা কিনলাম হচ্ছে ১০৫০ ডলার দিয়ে। রিজার্ভের রিকোয়ারমেন্ট তখন বাড়লো।”

এর পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতির কারণে সুদের হার দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর কারণেও বাংলাদেশে রিজার্ভে টান পড়েছে বলে জানান মেজবাউল. হক।

মেজবাউল হক বলেন, ডলারের বিনিময় হারে বড় ধরনের পার্থক্য হয়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলো স্বল্প মেয়াদে যে ঋণ নিয়েছিল লোকসান কমাতে সেগুলো খুব দ্রুত শোধ করার চেষ্টা করেছে।

এর ফলে একদিকে রিজার্ভের উপর যেমন টান পড়েছে অন্যদিকে আবার লায়াবিলিটি পেমেন্ট বা ঋণের পরিমাণ কমে এসেছে।

“লায়াবিলিটি পেমেন্ট কমতে কমতে সেপ্টেম্বরে কিন্তু আমাদের ৫০ মিলিয়নে দাঁড়াবে, এক্ষেত্রে কিন্তু একটা বড় ধরনের পজিটিভ জিনিস চিন্তা করছি,” বলেন মেজবাউল হক।

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে আমদানি ব্যয় ও ঋণ পরিশোধের জন্য যে পরিমাণ ডলার ব্যয় হয়, তার তুলনায় যদি যোগান না বাড়ে তাহলে রিজার্ভের উপর টান থাকবে।

একটা হচ্ছে, চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্যহীনতাকে সামাল দেয়ার জন্য ডলারের বিনিময় হার ছেড়ে দেয়া। অর্থাৎ বিনিময় হার যে পর্যায়ে উঠলে চাহিদা কমবে, সেটিকে সে পর্যায়ে উঠতে দিতে হবে। এতে ডলারের দাম বেড়ে গেলে ডলার কেনার প্রবণতা কমবে। আর আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে বেশি দাম মেলায় প্রবাসী ও রপ্তানি আয় বাড়বে। সব মিলিয়ে চাহিদা কমে যোগান বাড়বে। এটাই ডলার সংকট সামাল দেয়ার সবচেয়ে টেকসই উপায় বলে মনে করেন তিনি।

আর দ্বিতীয় উপায়টি হচ্ছে, ডলারের যোগান বিভিন্ন উৎস থেকে বাড়ানো যা বাংলাদেশ বর্তমানে চেষ্টা করছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে চিন্তা করতে হবে যে কীভাবে তহবিলের ‘হার্ড ফ্লো’ বাড়িয়ে ভারসাম্য আনা যায়।

সরকার এখন স্বল্পমেয়াদে নানা ডিল বা চুক্তি করছে। যেটি পরিশোধ করতে গেলে রিজার্ভের উপর চাপ পড়ে যাচ্ছে। এখান থেকে বের হতে হলে ঋণদাতাদের সাথে আলোচনা করতে হবে।

তিনি বলেন, বাজেটেও কিছু সংকোচনমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ২৩ অর্থবছরে সরকার টাকা ছাপানোর যে পদক্ষেপ নিয়েছিলো সেটি থেকে সরে আসতে হবে। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে এই চাপটি আবার আসবে। তখন এটি ধরে রাখা গেলে সেটি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

[caption id="attachment_8312" align="aligncenter" width="710"] নির্বাচনে আগে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের আশা নেই বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা[/caption]