ঢাকা ০৫:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিশ্রুতি আর প্রতিক্ষায় কেটে গেছে ৫৩ বছর, প্রায় ২৫হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো

জহুরুল ইসলাম খোকনসৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০২:০৯:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ২৫ বার পঠিত

সৈয়দপুর উপজেলায় প্রায় ৩ গ্রামের মানুষের চলাচলের একটি মাত্র ভরসা  বাঁশের সাঁকো । নিজস্ব অর্থায়নে গড়া বাঁশের সাঁকোটি প্রায় ৪০ বছর থেকে জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তি হওয়ায় বিভিন্ন দপ্তরে এটির সংস্কার বা ব্রিজ নির্মানে আবেদন করেও মেলেনি কোন প্রতিকার। এ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত চিকলি নদীর উপর সাকোটি পানিতে ডুবে গেলে  চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় । ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের ।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কামার পুকুর ইউনিয়নের পশ্চিম ওসুর খাই, পুর্ব অসুর খাই ও দক্ষিণ অসুর খাই এলাকায় অবস্থিত কাছারি ঘাট ।এই ঘাট থেকে সাঁকোর উপর দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে প্রায় ২০/২৫ হাজার মানুষ।

ওই এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বার জানান, দেশ স্বাধীনের বয়স প্রায় ৫৩ বছরে পদার্পন করেছে। এই সময়ে একাধিক সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ একাধিক দপ্তরে আবেদন করেও ভুক্তভোগীরা পায়নি কোন প্রতিকার। ফলে বাধ্য হয়েই মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে ওই এলাকার সাবেক মেম্বার আনসারুল হক ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনোয়ার প্রামানিকের নিজ অর্থে সাঁকোটি সংস্কার করা হচ্ছে।

আব্দুল কুদ্দুস নামের এক ব্যাক্তি জানায়, ১৯৭১ সালের পর ৬/৭ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এই আসনে। তারা সকলেই মানুষের চলাচলের ভোগান্তি ঘটনাস্থল তদন্ত করে সেতু নির্মানে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্ত কিছু দিন পরই তারা বলতে শুরু করেন বরাদ্দ নাই, এজন্য সেতু নির্মার সম্ভব হচ্ছে না । এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়া হয় সেতু নির্মারের আশা নিয়ে কিন্তু তারা বলেন এমপি সাহেব ডিও লেটার দিলে কিছু করা সম্ভব।

সর্বশেষ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদুল মোমিন এর কাছে গেলে তিনি বলেন সেতুর নির্মানের বিষয় টি দেখেন সংসদ সদস্যরা। তারা চেষ্টা করলে ৬ মাসের মধ্যেই ব্রিজ নির্মাণ করে দিতে পারেন। উপজেলা চেয়ারম্যানরা শুধু সম্মানের চেয়ারে বসে থাকেন। উপজেলার উন্নয়নে তেমন কিছুই বরাদ্দ মেলেনা।

কামারপুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনোয়ার সরকার জানান, কামার পুকুর ইউনিয়ন ও কাশারাস ইউনিয়ন এর প্রায় ২০/২৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন ওই নরবরে সাকো দিয়ে চলাচল করছে। নরবরে ওই সাকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মানুষের ভোগান্তির শেষ নাই। শুধু মাত্র একটি সেতুর জন্য এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্হানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্না ও আবেদন দিয়েও আজও নির্মাণ হয়নি সেতুটি। তিনি বলেন, কামার পুকুর ইউনিয়ন এর ৩ গ্রামের সেতু বন্ধনে একসাত্র ভরসা এই ঘাটের বাঁশ এর সাঁকোটি।

গতকাল শুক্রবার কামার পুকুর ইউনিয়ন ও কাশিরাম ইউনিয়ন এর শত শত মানুষ জানায়,প্রায় ৫৩ বছর থেকে আমরা এই চিকলি নদীর কাছিরি ঘাটে ব্রিজ নির্মানের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কে শুনে কার কথা। দেশ স্বাধীনের পর থেকে প্রতিশ্রুতি পাইতে পাইতে আমারা বিশ্বাস ও ভরসা দুটোই হারিয়ে ফেলেছি। তাই বাধ্য হয়েই কামার পুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনোয়ার প্রামানিক ও সাবেক মেম্বার নিজ অর্থায়ে জনগনের সুবিধার্থে বাঁশের সাঁকোটি সংস্কার করে চলেছেন।

তারা বলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী জনাব তাজুল ইসলাম সাহেবের নেক নজর দিলেই এই চিকলি নদীর কাছারি ঘাটে ব্রিজ নির্মান সম্ভব, নচেৎ নয়।
এবিষয়ে নীলফামারী-৪ আসনের সাংসদ আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন এমপি, বা চেয়ারম্যান ব্রিজ নির্মাণে প্রতিশ্রুতি দিয়ে কথা রাখেননি, তা আমার জানার বিষয় না। তবে আল্লাহ পাক যদি আমাকে আগামী ৫ বছর বাঁচিয়ে রাখেন, তাহলে ব্রিজটি নির্মাণ হবেই হবে।

 

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

প্রতিশ্রুতি আর প্রতিক্ষায় কেটে গেছে ৫৩ বছর, প্রায় ২৫হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো

আপডেট সময় : ০২:০৯:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

সৈয়দপুর উপজেলায় প্রায় ৩ গ্রামের মানুষের চলাচলের একটি মাত্র ভরসা  বাঁশের সাঁকো । নিজস্ব অর্থায়নে গড়া বাঁশের সাঁকোটি প্রায় ৪০ বছর থেকে জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তি হওয়ায় বিভিন্ন দপ্তরে এটির সংস্কার বা ব্রিজ নির্মানে আবেদন করেও মেলেনি কোন প্রতিকার। এ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত চিকলি নদীর উপর সাকোটি পানিতে ডুবে গেলে  চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় । ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের ।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কামার পুকুর ইউনিয়নের পশ্চিম ওসুর খাই, পুর্ব অসুর খাই ও দক্ষিণ অসুর খাই এলাকায় অবস্থিত কাছারি ঘাট ।এই ঘাট থেকে সাঁকোর উপর দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে প্রায় ২০/২৫ হাজার মানুষ।

ওই এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বার জানান, দেশ স্বাধীনের বয়স প্রায় ৫৩ বছরে পদার্পন করেছে। এই সময়ে একাধিক সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ একাধিক দপ্তরে আবেদন করেও ভুক্তভোগীরা পায়নি কোন প্রতিকার। ফলে বাধ্য হয়েই মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে ওই এলাকার সাবেক মেম্বার আনসারুল হক ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনোয়ার প্রামানিকের নিজ অর্থে সাঁকোটি সংস্কার করা হচ্ছে।

আব্দুল কুদ্দুস নামের এক ব্যাক্তি জানায়, ১৯৭১ সালের পর ৬/৭ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এই আসনে। তারা সকলেই মানুষের চলাচলের ভোগান্তি ঘটনাস্থল তদন্ত করে সেতু নির্মানে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্ত কিছু দিন পরই তারা বলতে শুরু করেন বরাদ্দ নাই, এজন্য সেতু নির্মার সম্ভব হচ্ছে না । এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়া হয় সেতু নির্মারের আশা নিয়ে কিন্তু তারা বলেন এমপি সাহেব ডিও লেটার দিলে কিছু করা সম্ভব।

সর্বশেষ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদুল মোমিন এর কাছে গেলে তিনি বলেন সেতুর নির্মানের বিষয় টি দেখেন সংসদ সদস্যরা। তারা চেষ্টা করলে ৬ মাসের মধ্যেই ব্রিজ নির্মাণ করে দিতে পারেন। উপজেলা চেয়ারম্যানরা শুধু সম্মানের চেয়ারে বসে থাকেন। উপজেলার উন্নয়নে তেমন কিছুই বরাদ্দ মেলেনা।

কামারপুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনোয়ার সরকার জানান, কামার পুকুর ইউনিয়ন ও কাশারাস ইউনিয়ন এর প্রায় ২০/২৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন ওই নরবরে সাকো দিয়ে চলাচল করছে। নরবরে ওই সাকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মানুষের ভোগান্তির শেষ নাই। শুধু মাত্র একটি সেতুর জন্য এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্হানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্না ও আবেদন দিয়েও আজও নির্মাণ হয়নি সেতুটি। তিনি বলেন, কামার পুকুর ইউনিয়ন এর ৩ গ্রামের সেতু বন্ধনে একসাত্র ভরসা এই ঘাটের বাঁশ এর সাঁকোটি।

গতকাল শুক্রবার কামার পুকুর ইউনিয়ন ও কাশিরাম ইউনিয়ন এর শত শত মানুষ জানায়,প্রায় ৫৩ বছর থেকে আমরা এই চিকলি নদীর কাছিরি ঘাটে ব্রিজ নির্মানের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কে শুনে কার কথা। দেশ স্বাধীনের পর থেকে প্রতিশ্রুতি পাইতে পাইতে আমারা বিশ্বাস ও ভরসা দুটোই হারিয়ে ফেলেছি। তাই বাধ্য হয়েই কামার পুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনোয়ার প্রামানিক ও সাবেক মেম্বার নিজ অর্থায়ে জনগনের সুবিধার্থে বাঁশের সাঁকোটি সংস্কার করে চলেছেন।

তারা বলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী জনাব তাজুল ইসলাম সাহেবের নেক নজর দিলেই এই চিকলি নদীর কাছারি ঘাটে ব্রিজ নির্মান সম্ভব, নচেৎ নয়।
এবিষয়ে নীলফামারী-৪ আসনের সাংসদ আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন এমপি, বা চেয়ারম্যান ব্রিজ নির্মাণে প্রতিশ্রুতি দিয়ে কথা রাখেননি, তা আমার জানার বিষয় না। তবে আল্লাহ পাক যদি আমাকে আগামী ৫ বছর বাঁচিয়ে রাখেন, তাহলে ব্রিজটি নির্মাণ হবেই হবে।

 

Facebook Comments Box