ঢাকা ১২:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ট্রাইব্যুনালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক কর্তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হলো Logo ভাঙ্গুড়া প্রেস ক্লাবের অবৈধ কমিটি বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান Logo মৌলভীবাজার পূজা উদযাপন পরিষদের সম্পাদক মহিম গ্রেপ্তার Logo পাবনার আমিনপুরে ইজিবাইক-মোটর সাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ Logo সেনাকুঞ্জে যাবেন খালেদা জিয়া Logo সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ সিওয়াইবির কমিটি গঠন Logo সৈয়দপুর বাসটার্মিনালে বেহাল অবস্থা, যাত্রীসাধারনের দুর্ভোগ Logo ‘ফ্যাসিবাদী বয়ান’ দেওয়া গণমাধ্যম চিহ্নিত করা হবে: প্রেস সচিব Logo রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ Logo তিন দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ

পাবনার আকাশ কলি দাশকে পাখি-বন্ধু পদকে ভূষিত করলেন আ্যাপস বাংলাদেশ

পাবনা প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১১:০৫:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪ ১৬১ বার পঠিত

পাবনার আকাশ কলি দাশকে পাখি-বন্ধু পদকে ভূষিত করলেন আ্যাপস বা বাংলাদেশ  অ্যাসোসিয়েশন অব প্যারোট অ্যান্ড প্যারাকিট স্টকব্রিডার্স, বাংলাদেশ। সোমবার (১৩ই মে) পাবনায় শ্রী আকাশ কলি দাসের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই পদক ও নগদ অর্থ তাঁর হাতে তুলে দেন । আকাশ কলি দাশ পাবনার বেড়া উপজেলার কৈটোলা গ্রামে বসবাস করেন।

একজোটিক বার্ড ব্রিডারদের এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বনের পাখি, প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্যে পাবনা জেলার শ্রী আকাশ কলি দাশকে পাখি-বন্ধু পদকে ভূষিত করা হলো।

পাবনার বেড়া উপজেলার কৈটলা গ্রামে  পাখিকে ভালোবেসে চিরকুমার রয়ে যাওয়া আকাশ কলি দাস অনেক সম্পত্তির মালিক হয়েও তিনি জীবনযাপন করেন অতি সাধারণ। তার প্রতিষ্ঠিত পাখির অভয়াশ্রমে বসবাস করে হাজারো প্রজাতির পাখি। পাখির এই অভয়াশ্রম তৈরি করেছেন পাবনার বেড়া উপজেলার কৈটোলা গ্রামের আকাশ কলি দাস। তাঁর বয়স এখন ৮৭ বছর। নিজের বসতভিটা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন পশুপাখিদের জন্য। আকাশ কলি দাস কাটিয়ে দিয়েছেন তার জীবনের ৫০ বছর।

জানাগেছে,বাবা মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে বড় আকাশ কলি দাস। বাবা চন্দ্র কুমার দাস ছিলেন পাবনার নগরবাড়ির শ্রী নিবাস দিয়ার জমিদার বাড়ির নায়েব। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পরে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। হারিয়ে যায় তার কৈশোর। অভিভাবকের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দুই বোন ও এক ভাইয়ের বিয়ে দেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। তারা দুইজন ছাড়া সব আত্মীয়-স্বজনই চলে যান ভারতের শিলিগুড়ি ও মুর্শিদাবাদে।

কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর তারা আর যোগাযোগ করেননি ভাইয়ের সঙ্গে। তিন ভাই বোন তাকে ভুলে গেলেও তার সঙ্গ ছেড়েছিলেন না বোন ঝর্ণা দাস। ভাইয়ের সুখ দুঃখের সঙ্গী হয়ে ছিলেন তিনি । গত ২৪ এপ্রিল বোন ঝর্ণা দাসও তাঁকে ছেড়ে চলে যান।

পুরস্কার পেয়ে আ্যাপস সংগঠনকে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে ৮৭বছর বয়সি পাখি বন্ধু প্রকৃতি প্রেমী আকাশ কলি দাস বলেন, আমার মত একজন সাধারণ মানুষের কাছে আপনারা আসছেন এজন্য আমি কৃতজ্ঞ । আপনাদের মত মানুষকে আমি দাওয়াত দিয়ে আনতে তো পারতাম না। কিন্তু আপনারা এসেছেন। আপনাদের সংগঠনের সফলতা কামনা করি।

এ সময়ে ঢাকা থেকে আগত সিনিয়র বার্ড ব্রিডার ও বিশিষ্ট ফটো সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ বলেন, সারা বাংলাদেশে সকল পাখিপ্রেমীদের নিয়েই আমরা কাজ করতে আগ্রহী। পর্যায়ক্রমে আকাশ দাদার মত অন্যান্য পাখি ও প্রকৃতি প্রেমীদের খুঁজে বের করে আমাদের সংগঠন তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়ে উৎসাহিত করবে।

আ্যপসের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক চলচ্চিত্রকার ও আইনজীবী জনাব খান জেহাদ বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মত শ্রী আকাশ কলি দাসকে পাখি-বন্ধু পদকে ভূষিত করা হলো। সকলে মিলে তাঁর প্রতিষ্ঠিত পাখির অভয়ারণ্য ঘুরে দেখলাম। নিজেরাও পাখি ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করার বিষয়ে আরো বেশি উৎসাহিত বোধ করলাম। তিনি আরো বলেন, আকাশ কলি দাসকে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি মেড্যাল, একটি ক্রেস্ট ও নগদ দশ হাজার টাকা পুরস্কার হিসেবে দেয়া হলো যা তাঁর চিকিৎসায় সামান্য হলেও কাজে আসবে বলে আমাদের আশা। আ্যাপস দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নীরবে নিভৃতে থাকা আকাশ কলি দাসের মত অপরাপর পাখিপ্রেমীদেরকেও খুঁজে বের করে প্রতি বছরই সম্মানিত করতে চায়। মূলত তাদেরকে সম্মানিত করে আমরা আ্যাপসের সকল সদস্যরাই সম্মানিত হতে চাই।

অ্যাপসের সভাপতি ও সংগঠনটির প্রাণপুরুষ, পাখি পালন ও চিকিৎসায় কিংবদন্তীতুল্য ডাঃ এম এ মান্নান বলেন, আমরা এ সংগঠনের মাধ্যমে খাঁচার পাখি এবং প্রকৃতিতে থাকা উভয় পাখি নিয়েই কাজ করি। বাংলাদেশে যারা পাখি ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করেন আমরা এখন থেকে প্রতি বছরই তাদের কাউকে না কাউকে তাদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এ পদক দিয়ে যাব। প্রকৃতি ও পাখির প্রতি ভালোবাসাই আকাশ কলি দাসদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ও সম্পর্কের সেতু বন্ধন। সে কারণেই আমরা ঢাকা থেকে এখানে চলে এসেছি তাঁকে ও তাঁর কীর্তিকে প্রত্যক্ষ করতে।

জানা গেছে, তোতা ও টিয়া জাতীয় পাখির আদি ও দেশীয় জাতগুলোকে প্রকৃতিতে যথাযথভাবে সংরক্ষণের পাশাপাশি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তৈরি খাঁচায় পোষার উপযোগী মিউটেশনগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে বা শখের বশে লালন পালন করার সঠিক পদ্ধতির প্রসার ও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং পালনকারীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের পহেলা মে তারিখে গঠিত হয় অ্যাসোসিয়েশন অব প্যারোট অ্যান্ড প্যারাকিট স্টকব্রিডার্স, বাংলাদেশ (Association of Parrot and Parakeet Stockbreeders, Bangladesh)। সংক্ষেপে এই সম্প্রদায় (community) অ্যাপস (APPS) নামে পরিচিত।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

পাবনার আকাশ কলি দাশকে পাখি-বন্ধু পদকে ভূষিত করলেন আ্যাপস বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ১১:০৫:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

পাবনার আকাশ কলি দাশকে পাখি-বন্ধু পদকে ভূষিত করলেন আ্যাপস বা বাংলাদেশ  অ্যাসোসিয়েশন অব প্যারোট অ্যান্ড প্যারাকিট স্টকব্রিডার্স, বাংলাদেশ। সোমবার (১৩ই মে) পাবনায় শ্রী আকাশ কলি দাসের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই পদক ও নগদ অর্থ তাঁর হাতে তুলে দেন । আকাশ কলি দাশ পাবনার বেড়া উপজেলার কৈটোলা গ্রামে বসবাস করেন।

একজোটিক বার্ড ব্রিডারদের এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বনের পাখি, প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্যে পাবনা জেলার শ্রী আকাশ কলি দাশকে পাখি-বন্ধু পদকে ভূষিত করা হলো।

পাবনার বেড়া উপজেলার কৈটলা গ্রামে  পাখিকে ভালোবেসে চিরকুমার রয়ে যাওয়া আকাশ কলি দাস অনেক সম্পত্তির মালিক হয়েও তিনি জীবনযাপন করেন অতি সাধারণ। তার প্রতিষ্ঠিত পাখির অভয়াশ্রমে বসবাস করে হাজারো প্রজাতির পাখি। পাখির এই অভয়াশ্রম তৈরি করেছেন পাবনার বেড়া উপজেলার কৈটোলা গ্রামের আকাশ কলি দাস। তাঁর বয়স এখন ৮৭ বছর। নিজের বসতভিটা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন পশুপাখিদের জন্য। আকাশ কলি দাস কাটিয়ে দিয়েছেন তার জীবনের ৫০ বছর।

জানাগেছে,বাবা মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে বড় আকাশ কলি দাস। বাবা চন্দ্র কুমার দাস ছিলেন পাবনার নগরবাড়ির শ্রী নিবাস দিয়ার জমিদার বাড়ির নায়েব। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পরে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। হারিয়ে যায় তার কৈশোর। অভিভাবকের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দুই বোন ও এক ভাইয়ের বিয়ে দেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। তারা দুইজন ছাড়া সব আত্মীয়-স্বজনই চলে যান ভারতের শিলিগুড়ি ও মুর্শিদাবাদে।

কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর তারা আর যোগাযোগ করেননি ভাইয়ের সঙ্গে। তিন ভাই বোন তাকে ভুলে গেলেও তার সঙ্গ ছেড়েছিলেন না বোন ঝর্ণা দাস। ভাইয়ের সুখ দুঃখের সঙ্গী হয়ে ছিলেন তিনি । গত ২৪ এপ্রিল বোন ঝর্ণা দাসও তাঁকে ছেড়ে চলে যান।

পুরস্কার পেয়ে আ্যাপস সংগঠনকে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে ৮৭বছর বয়সি পাখি বন্ধু প্রকৃতি প্রেমী আকাশ কলি দাস বলেন, আমার মত একজন সাধারণ মানুষের কাছে আপনারা আসছেন এজন্য আমি কৃতজ্ঞ । আপনাদের মত মানুষকে আমি দাওয়াত দিয়ে আনতে তো পারতাম না। কিন্তু আপনারা এসেছেন। আপনাদের সংগঠনের সফলতা কামনা করি।

এ সময়ে ঢাকা থেকে আগত সিনিয়র বার্ড ব্রিডার ও বিশিষ্ট ফটো সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ বলেন, সারা বাংলাদেশে সকল পাখিপ্রেমীদের নিয়েই আমরা কাজ করতে আগ্রহী। পর্যায়ক্রমে আকাশ দাদার মত অন্যান্য পাখি ও প্রকৃতি প্রেমীদের খুঁজে বের করে আমাদের সংগঠন তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়ে উৎসাহিত করবে।

আ্যপসের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক চলচ্চিত্রকার ও আইনজীবী জনাব খান জেহাদ বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মত শ্রী আকাশ কলি দাসকে পাখি-বন্ধু পদকে ভূষিত করা হলো। সকলে মিলে তাঁর প্রতিষ্ঠিত পাখির অভয়ারণ্য ঘুরে দেখলাম। নিজেরাও পাখি ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করার বিষয়ে আরো বেশি উৎসাহিত বোধ করলাম। তিনি আরো বলেন, আকাশ কলি দাসকে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি মেড্যাল, একটি ক্রেস্ট ও নগদ দশ হাজার টাকা পুরস্কার হিসেবে দেয়া হলো যা তাঁর চিকিৎসায় সামান্য হলেও কাজে আসবে বলে আমাদের আশা। আ্যাপস দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নীরবে নিভৃতে থাকা আকাশ কলি দাসের মত অপরাপর পাখিপ্রেমীদেরকেও খুঁজে বের করে প্রতি বছরই সম্মানিত করতে চায়। মূলত তাদেরকে সম্মানিত করে আমরা আ্যাপসের সকল সদস্যরাই সম্মানিত হতে চাই।

অ্যাপসের সভাপতি ও সংগঠনটির প্রাণপুরুষ, পাখি পালন ও চিকিৎসায় কিংবদন্তীতুল্য ডাঃ এম এ মান্নান বলেন, আমরা এ সংগঠনের মাধ্যমে খাঁচার পাখি এবং প্রকৃতিতে থাকা উভয় পাখি নিয়েই কাজ করি। বাংলাদেশে যারা পাখি ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করেন আমরা এখন থেকে প্রতি বছরই তাদের কাউকে না কাউকে তাদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এ পদক দিয়ে যাব। প্রকৃতি ও পাখির প্রতি ভালোবাসাই আকাশ কলি দাসদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ও সম্পর্কের সেতু বন্ধন। সে কারণেই আমরা ঢাকা থেকে এখানে চলে এসেছি তাঁকে ও তাঁর কীর্তিকে প্রত্যক্ষ করতে।

জানা গেছে, তোতা ও টিয়া জাতীয় পাখির আদি ও দেশীয় জাতগুলোকে প্রকৃতিতে যথাযথভাবে সংরক্ষণের পাশাপাশি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তৈরি খাঁচায় পোষার উপযোগী মিউটেশনগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে বা শখের বশে লালন পালন করার সঠিক পদ্ধতির প্রসার ও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং পালনকারীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের পহেলা মে তারিখে গঠিত হয় অ্যাসোসিয়েশন অব প্যারোট অ্যান্ড প্যারাকিট স্টকব্রিডার্স, বাংলাদেশ (Association of Parrot and Parakeet Stockbreeders, Bangladesh)। সংক্ষেপে এই সম্প্রদায় (community) অ্যাপস (APPS) নামে পরিচিত।

Facebook Comments Box