ঢাকা ০১:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo পুলিশ সদস্য তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে যুবককে অপরহরণ করে নির্যাতনের অভিযোগ সাঁথিয়ায় Logo হত্যাচেষ্টায় দৈনিক জনবাণীর সম্পাদকসহ ৪ সাংবাদিকের ওপর হামলা Logo সোনারগাঁয়ে শীর্তাতদের মাঝে কম্বল বিতরন Logo রাত হলেই আকণ্ঠ মদ্যপান, নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন কেন? নিজেই জানালেন আমির খান Logo র‌্যাঙ্কিংয়ে নিজের সেরা অবস্থানে মাহেদি, ৮৫ ধাপ উন্নতি জাকেরের Logo পর্যটকদের গাড়িতে লাফ দিয়ে উঠল সিংহী, ঝাঁপিয়ে পড়ল যাত্রীদের উপর! Logo হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে চিঠি: আইনি দিক খতিয়ে দেখেই ঢাকাকে জবাব, সিদ্ধান্ত নয়াদিল্লির Logo ইজতেমার মাঠে বর্বর হামলার প্রতিবাদে সোনারগাঁওয়ে বিক্ষোভ মিছিল Logo সৈয়দপুরে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন Logo চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুনের রোমহর্ষক বর্ণনা

পরিবহণ খাতে চাঁদা টিআইবির হিসাবের চেয়েও বেশি

সারাবেলা প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৬:১০:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪ ১৩২ বার পঠিত
পরিবহণ খাতে বছরে টিআইবির হিসাবের চেয়ে বেশি চাঁদা আদায় হয় বলে জানিয়েছেন একজন পরিবহণ শ্রমিক নেতা৷ তার মতে এই খাতে টিআইবি ৪৬ ভাগ সেবাগ্রহীতাকে চাঁদা দিতে হয় বললেও বাস্তবে ৯০ ভাগকে চাঁদা দিতে হয়৷

আর ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পরিবহণে চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়৷ তাদের মতে পরিবহণ খাতে যেকোনো ধরনের চাঁদা পণ্যমূল্যের ওপর প্রভাব ফেলে৷

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গত ৫ মার্চ ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহণ ব্যবসায় শুদ্ধাচার’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, দেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস ও মিনিবাস থেকে বছরে এক হাজার ৬০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয়৷ এই চাঁদার ভাগ পায় দলীয় পরিচয়ধারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তা-কর্মচারী, মালিক-শ্রমিক সংগঠন ও পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা৷

অবশ্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে৷ বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘‘বিআরটিএ কিংবা মন্ত্রণালয়ে কোনো মৌখিক,  লিখিত অভিযোগসহ কোনো তথ্য না থাকা সত্ত্বেও টিআইবি অসত্য প্রতিবেদন তৈরি করেছে৷ বিআরটিএর সেবাগুলো ডিজিটাল হয়ে যাওয়ায় সশরীর অফিসে যেতে হয় না৷ ফলে ঘুস দুর্নীতিও হয় না৷”

আর সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি এক বিবৃতি বলেছে, ‘‘প্রকৃতপক্ষে মালিক সংগঠন নির্ধারিত পরিচালনা ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থ কখনো আদায় করে না৷ এর বাইরে কেউ অবৈধ চাঁদা আদায় করলে তা কঠোর হস্তে প্রতিহত করা হয় এবং অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

টিআইবি জরিপের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন তৈরি করে৷ জরিপে দেখা যায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য ও সমর্থনপুষ্টদের দ্বারা পরিবহণ ব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হয়৷ মালিক সংগঠনের নেতাদের অধিকাংশ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত৷ ২২টি কোম্পানির কাছে ৮১.৪ শতাংশ বাসের মালিকানা রয়েছে৷ আর তাদের ৮০ শতাংশই ক্ষমতাসীন দলের৷

জরিপে অংশগ্রহণকারী কর্মী বা শ্রমিকদের ৪০.৯ শতাংশের মতে, তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির এক বা একাধিক বাসের নিবন্ধনসহ কোনো না কোনো সনদের ঘাটতি আছে৷ সিটি সার্ভিসের কর্মী বা শ্রমিকদের ৪০.৪ শতাংশ বলেছেন, তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির গাড়িতে নকশা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত আসন সংযোজন করা হয়েছে৷ যাত্রীদের ৬০.৫ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন৷

গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘চাঁদাবাজির এই হিসাব খুবই রক্ষণশীল৷ বাস্তবে এর চেয়ে বহুগুণ বেশি চাঁদাবাজি হয়৷ এই চাঁদার ভাগ নানা পর্যায়ে যায়৷ যেহেতু খাতটি রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে, সেহেতু চাঁদার নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে৷’’

ড. ইফতেখারুজ্জামানের কথার সত্যতা পাওয়া যায় বাংলাদেশ পরিবহণ শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. হানিফ খোকনের কথায়৷ তিনি বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘টিআইবি বলেছে ফিটনেস, রুট পারমিট, রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য ৪৬ ভাগকে উৎকোচ দিতে হয়৷ বাস্তবে ৯০ ভাগকে উৎকোচ দিতে হয়৷ ভয়ে তারা প্রকাশ করে না৷”
তার মতে, বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স এখন অনলাইনে দুই-তিন দিনে হয়ে যায়৷ বাস্তবতা হলো চার বছরেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায় না এখানেও ঘুস আছে৷

তিনি জানান, ‘‘পরিবহণ খাতে এখন নানা ধরনের চাঁদা আদায় হয়৷ পরিবহণ থেকে মালিক ও শ্রমিক সমিতির নামে চাঁদা আদায় হয়৷ ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ২৫ পয়েন্টে চাঁদা নেয়া হয়৷ সায়েদাবাদ থেকে পটুয়াখালি ১৫ পয়েন্টে চাঁদা নেয়া হয়৷ মহাখালি বাস টার্মিনাল থেকে এক হাজার ২০০ গাড়ি চলাচল করে৷ তাদের ট্রিপ হয় দুইটা করে৷ প্রতি ট্রিপে ৮০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়৷ টিআইবি যে বছরে এক হাজার কেটি টাকা চাঁদা আদায়ের কথা বলেছেন বাস্ততে তার চেয়ে অনেক বেশি চাঁদা আদায় হয়৷”

“মালিক সমিতি বিআরটিএ থেকে নানা সুবিধা পায় তাই তারা টিআইবির রিপোর্টের বিরুদ্ধে বলছে৷ আর বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেছেন, এই প্রতিবেদনে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে৷ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের চাঁদাবাজি ওইসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দায়৷ তাতে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হবে কেন? সাহস  থাকলে তিনি তার সম্পদের তালিকা প্রকাশ করুক৷”

আর এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক এবং দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, “যেই অস্বীকার করুক না কেন পরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি হয়৷ এই খাতে চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়৷ বিশেষ করে পঁচনশীল দ্রব্যের ওপর চাঁদাবাজদের নজর বেশি৷ কারণ ওই পণ্য আটকে রাখলে বা দেরি করলে ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়েন৷”

তিনি জানান, ” ট্রাকের ওজন স্কেলের নামে চাঁদাবাজি হয়,  হাইওয়েতে ট্রাক আটকে সার্চ করার নামে চাঁদাবাজি হয়৷ এছাড়া পৌরসভা এলাকা পার হওয়ার সময়ও পণ্যবাহী ট্রাককে চাঁদা দিতে হয়।

চাঁদাবাজি হলে পরিবহণ ভাড়া বেড়ে যায়৷ আর সেটা ব্যবসায়ীদেরই বহন করতে হয়৷”

“আমরা একবার সরেজমিন তদন্ত করে দেখেছি৷ তাতে শাকসবজিসহ কাঁচামালের ট্রাকই চাঁদাবাজির শিকার হয় বেশি”৷ বলেন এই ব্যবসায়ী নেতা৷

আর বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “পরিবহণ খাতে এই চাঁদাবাজি টিকিয়ে রাখার জন্য শাসক দলকে দরকার হয়৷ সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবহণ খাতেও শাসক দলের লোকজন নিয়ন্ত্রণ নেয়৷ চাঁদাবাজির জন্যই এটা হয়৷”

তার কথা, “বাংলাদেশে পরিবহণ ভাড়া পাশের দেশ ভারতের চেয়ে অনেক বেশি৷ সেবার মান অনেক খারাপ৷ পাবলিক যানবাহনও নিম্নমানের৷ এর কারণ চাঁদাবাজি৷ চাঁদাবাজির কারণে ভাড়া যেমন বেশি৷ তেমনি নিত্যপণ্যের দামও বেড়ে যায়৷”

তার কথা, ‘‘টিআইবি পরিবহণ খাতের চাঁদাবাজির আংশিক হিসাব দিয়েছে৷ তারা শুধু বাস মিনিবাসের কথা বলেছে৷ কিন্তু সড়কে সাত-আট ধরনের যানবাহন আছে৷ আমার হিসেবে এই খাতে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়৷”

তিনি বলেন,” চাঁদাবাজির কারণে সড়ক পরিবহণে নৈরাজ্য চলছে৷ এর সঙ্গে বিআরটিএ, মালিক ও শ্রমিক সংগঠন, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, পুলিশ জড়িত৷ এটাকে অস্বীকার না করে সরকারের উচিত আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া” ডয়চে ভেলে
Facebook Comments Box
ট্যাগস :

পরিবহণ খাতে চাঁদা টিআইবির হিসাবের চেয়েও বেশি

আপডেট সময় : ০৬:১০:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪
পরিবহণ খাতে বছরে টিআইবির হিসাবের চেয়ে বেশি চাঁদা আদায় হয় বলে জানিয়েছেন একজন পরিবহণ শ্রমিক নেতা৷ তার মতে এই খাতে টিআইবি ৪৬ ভাগ সেবাগ্রহীতাকে চাঁদা দিতে হয় বললেও বাস্তবে ৯০ ভাগকে চাঁদা দিতে হয়৷

আর ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পরিবহণে চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়৷ তাদের মতে পরিবহণ খাতে যেকোনো ধরনের চাঁদা পণ্যমূল্যের ওপর প্রভাব ফেলে৷

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গত ৫ মার্চ ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহণ ব্যবসায় শুদ্ধাচার’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, দেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস ও মিনিবাস থেকে বছরে এক হাজার ৬০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয়৷ এই চাঁদার ভাগ পায় দলীয় পরিচয়ধারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তা-কর্মচারী, মালিক-শ্রমিক সংগঠন ও পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা৷

অবশ্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে৷ বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘‘বিআরটিএ কিংবা মন্ত্রণালয়ে কোনো মৌখিক,  লিখিত অভিযোগসহ কোনো তথ্য না থাকা সত্ত্বেও টিআইবি অসত্য প্রতিবেদন তৈরি করেছে৷ বিআরটিএর সেবাগুলো ডিজিটাল হয়ে যাওয়ায় সশরীর অফিসে যেতে হয় না৷ ফলে ঘুস দুর্নীতিও হয় না৷”

আর সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি এক বিবৃতি বলেছে, ‘‘প্রকৃতপক্ষে মালিক সংগঠন নির্ধারিত পরিচালনা ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থ কখনো আদায় করে না৷ এর বাইরে কেউ অবৈধ চাঁদা আদায় করলে তা কঠোর হস্তে প্রতিহত করা হয় এবং অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

টিআইবি জরিপের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন তৈরি করে৷ জরিপে দেখা যায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য ও সমর্থনপুষ্টদের দ্বারা পরিবহণ ব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হয়৷ মালিক সংগঠনের নেতাদের অধিকাংশ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত৷ ২২টি কোম্পানির কাছে ৮১.৪ শতাংশ বাসের মালিকানা রয়েছে৷ আর তাদের ৮০ শতাংশই ক্ষমতাসীন দলের৷

জরিপে অংশগ্রহণকারী কর্মী বা শ্রমিকদের ৪০.৯ শতাংশের মতে, তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির এক বা একাধিক বাসের নিবন্ধনসহ কোনো না কোনো সনদের ঘাটতি আছে৷ সিটি সার্ভিসের কর্মী বা শ্রমিকদের ৪০.৪ শতাংশ বলেছেন, তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির গাড়িতে নকশা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত আসন সংযোজন করা হয়েছে৷ যাত্রীদের ৬০.৫ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন৷

গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘চাঁদাবাজির এই হিসাব খুবই রক্ষণশীল৷ বাস্তবে এর চেয়ে বহুগুণ বেশি চাঁদাবাজি হয়৷ এই চাঁদার ভাগ নানা পর্যায়ে যায়৷ যেহেতু খাতটি রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে, সেহেতু চাঁদার নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে৷’’

ড. ইফতেখারুজ্জামানের কথার সত্যতা পাওয়া যায় বাংলাদেশ পরিবহণ শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. হানিফ খোকনের কথায়৷ তিনি বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘টিআইবি বলেছে ফিটনেস, রুট পারমিট, রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য ৪৬ ভাগকে উৎকোচ দিতে হয়৷ বাস্তবে ৯০ ভাগকে উৎকোচ দিতে হয়৷ ভয়ে তারা প্রকাশ করে না৷”
তার মতে, বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স এখন অনলাইনে দুই-তিন দিনে হয়ে যায়৷ বাস্তবতা হলো চার বছরেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায় না এখানেও ঘুস আছে৷

তিনি জানান, ‘‘পরিবহণ খাতে এখন নানা ধরনের চাঁদা আদায় হয়৷ পরিবহণ থেকে মালিক ও শ্রমিক সমিতির নামে চাঁদা আদায় হয়৷ ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ২৫ পয়েন্টে চাঁদা নেয়া হয়৷ সায়েদাবাদ থেকে পটুয়াখালি ১৫ পয়েন্টে চাঁদা নেয়া হয়৷ মহাখালি বাস টার্মিনাল থেকে এক হাজার ২০০ গাড়ি চলাচল করে৷ তাদের ট্রিপ হয় দুইটা করে৷ প্রতি ট্রিপে ৮০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়৷ টিআইবি যে বছরে এক হাজার কেটি টাকা চাঁদা আদায়ের কথা বলেছেন বাস্ততে তার চেয়ে অনেক বেশি চাঁদা আদায় হয়৷”

“মালিক সমিতি বিআরটিএ থেকে নানা সুবিধা পায় তাই তারা টিআইবির রিপোর্টের বিরুদ্ধে বলছে৷ আর বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেছেন, এই প্রতিবেদনে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে৷ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের চাঁদাবাজি ওইসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দায়৷ তাতে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হবে কেন? সাহস  থাকলে তিনি তার সম্পদের তালিকা প্রকাশ করুক৷”

আর এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক এবং দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, “যেই অস্বীকার করুক না কেন পরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি হয়৷ এই খাতে চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়৷ বিশেষ করে পঁচনশীল দ্রব্যের ওপর চাঁদাবাজদের নজর বেশি৷ কারণ ওই পণ্য আটকে রাখলে বা দেরি করলে ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়েন৷”

তিনি জানান, ” ট্রাকের ওজন স্কেলের নামে চাঁদাবাজি হয়,  হাইওয়েতে ট্রাক আটকে সার্চ করার নামে চাঁদাবাজি হয়৷ এছাড়া পৌরসভা এলাকা পার হওয়ার সময়ও পণ্যবাহী ট্রাককে চাঁদা দিতে হয়।

চাঁদাবাজি হলে পরিবহণ ভাড়া বেড়ে যায়৷ আর সেটা ব্যবসায়ীদেরই বহন করতে হয়৷”

“আমরা একবার সরেজমিন তদন্ত করে দেখেছি৷ তাতে শাকসবজিসহ কাঁচামালের ট্রাকই চাঁদাবাজির শিকার হয় বেশি”৷ বলেন এই ব্যবসায়ী নেতা৷

আর বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “পরিবহণ খাতে এই চাঁদাবাজি টিকিয়ে রাখার জন্য শাসক দলকে দরকার হয়৷ সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবহণ খাতেও শাসক দলের লোকজন নিয়ন্ত্রণ নেয়৷ চাঁদাবাজির জন্যই এটা হয়৷”

তার কথা, “বাংলাদেশে পরিবহণ ভাড়া পাশের দেশ ভারতের চেয়ে অনেক বেশি৷ সেবার মান অনেক খারাপ৷ পাবলিক যানবাহনও নিম্নমানের৷ এর কারণ চাঁদাবাজি৷ চাঁদাবাজির কারণে ভাড়া যেমন বেশি৷ তেমনি নিত্যপণ্যের দামও বেড়ে যায়৷”

তার কথা, ‘‘টিআইবি পরিবহণ খাতের চাঁদাবাজির আংশিক হিসাব দিয়েছে৷ তারা শুধু বাস মিনিবাসের কথা বলেছে৷ কিন্তু সড়কে সাত-আট ধরনের যানবাহন আছে৷ আমার হিসেবে এই খাতে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়৷”

তিনি বলেন,” চাঁদাবাজির কারণে সড়ক পরিবহণে নৈরাজ্য চলছে৷ এর সঙ্গে বিআরটিএ, মালিক ও শ্রমিক সংগঠন, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, পুলিশ জড়িত৷ এটাকে অস্বীকার না করে সরকারের উচিত আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া” ডয়চে ভেলে
Facebook Comments Box