আওয়ামী লীগসহ যেসব দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে টানতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে তারা৷
নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে নির্বাচন কমিশনও মাঠে নেমেছে৷ রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রশাসন ও জন প্রতিনিধিদের এজন্য কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান৷
বিএনপির স্থায়ী কসিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানের কণ্ঠে বিপরীত সুর৷ তিনি বলেন, "৭ তারিখের নির্বাচন তো আগেই হয়ে গেছে৷ ভাগ করা হয়ে গেছে৷ আমরা আশা করছি কোনো ভোটার ওইদিন ভোট কেন্দ্রে যাবে না৷”
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের চলমান অসহযোগ আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই হলো ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে না যান৷ শনিবার তিনদিনের কর্মসূচি শেষ হলে রবিবার থেকে দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হবে৷ এভাবে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে৷ ৭ জানুয়ারিও হরতাল অথবা অবরোধ থাকবে৷ তাদের টার্গেট হলো, নির্বাচনে যদি ভোটার উপস্থিতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে হয়, তাহলে সরকারবিরোধী আন্দোলন আরো চাঙ্গা হবে, বিদেশিদের চাপ আরো বাড়বে৷
ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, "৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের টানা কর্মসূচি থাকবে৷ আমাদের অনেক নেতা-কর্মী এখন জেলে৷ কিন্তু তারপরও নির্দেশনা হলো, নেতারা যারা বাইরে আছেন, তারা যেন সবাই কর্মসূচি সফলে কাজ করেন৷ ফলে চলমান কর্মসূচি আরো কঠোর হবে৷ আরো নেতা-কমী মাঠে থাকবে৷ নির্বাচনের পর নতুন আরো কর্মসূচি আসবে৷”
তিনি বলেন, " সাত তারিখে ভোটার উপস্থিতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে যাতে হয়, আমাদের টার্গেট সেটাই৷ এর জন্য আমাদের কর্মসূচিসহ আরো কিছু কার্যক্রম থাকবে৷
জানা গেছে, বিএনপি এখন জামায়াতকে আরো সক্রিয় করতে চায়৷ জামায়াতকে একই মঞ্চে নিয়ে আন্দোলন করার পরিকল্পনাও তাদের আছে৷ দলে জামায়াতবিরোধীরা এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন৷ বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, মাঠের আন্দোলনে জামায়াতের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে৷
আর বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন বলেন, "এটা কোনো নির্বাচন নয় ৷ তাই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাবে না৷ ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের সব কর্মসূচিই থাকবে ভোটার যাতে ভোটকেন্দ্রে না যায় তার জন্য কাজ করা৷”
বিএনপি মনে করছে, ভোটার উপস্থিতি তেমন না হলে নির্বাচনের পর বাইরের বিশ্বের চাপ বাড়বে৷ তখন এই ধরনের একটি নির্বাচনের মাধ্যমে আসা সরকার বেশিদিন টিকতে পারবে না৷ নির্বাচনের পর পরিস্থিতি বুঝে তখন তারা আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে৷
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, "নির্বাচন ঠেকানো তো কঠিন ব্যাপার৷ নির্বাচন তো হয়ে গেছে৷ কারা কতটা সিট পাবে তা তো ভাগ করে দেয়া হয়েছে৷ আমাদের আন্দোলন হলো প্রকৃত নির্বাচনের জন্য৷ সেই নির্বাচন যখন হবে তখন জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পাবে৷ এখন তো ভোটাররা ভোট দিতে যাবে না৷”
তার কথা, "আমরা তো গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছি৷ হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ এর বাইরে তো কিছু করার সুযোগ নেই৷ সরকার যদি গ্রেপ্তার ও ভয়ভীতি না দেখাতো, সব মানুষ রাস্তায় নেমে আসতো৷ আমরা আমাদের এই আন্দোলন অব্যাহত রাখবো৷ সাত তারিখের পরও সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন চলবে৷”
অন্যদিকে সরকার এরই মধ্যে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি যাতে সন্তোষজনক হয়, সেজন্য কাজ করছে৷ আওয়ামী লীগ ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপাস্থিত করাকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ মনে করছে৷ সেই কারণেই যাতে বেশি প্রার্থী হয়, সেজন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহিত করা হয়েছে৷ বিদ্রোহী প্রার্থীদেরও উৎসাহিত করা হয়েছে৷ তারা মনে করছে, বেশি প্রার্থী হলে তারাই ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাবে৷ এর সঙ্গে এবার আইন-শৃঙ্খলার জন্য ভোটের বেশ আগেই সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার মাঠে নামানো হচ্ছে৷ নামবে বিজিবিও৷ কেউ যাতে ভোটে কোনো রকম বাধা না দিতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, "বিএনপি বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য দল৷ স্বাভাবিকভাবে তারা নির্বাচনে না গেলে ভোটার উপস্থিতি কম হবে৷ আর সেই কারণে ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে যান সেজন্য নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটা ক্যাম্পেইন শুরু করেছি ‘গো ভোট' নামে৷ এর উদ্দেশ্য হলো ভোটারকে ভেটকেন্দ্রে নেয়া৷ ভোট তিনি যেখানে খুশি সেখানে দেবেন৷ ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে, নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে৷” তার কথা, "নির্বাচনে স্বতন্ত্র, বিদ্রোহী সব মিলিয়ে বেশি প্রার্থীও ভোটার উপস্থিতি বাড়াানোর একটা কৌশল৷”
" আর কোনো দল বা ব্যক্তি যদি ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে না দেয়, বাধা বা হুমকি দেয়, তাদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে,” বলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা৷
নির্বাচন কমিশনও ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে বেশি আসেন, তার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে৷ নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, "আজকেও (শুক্রবার) এ নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি৷ জেলার রিটার্নিং অফিসার, সহকারি রিটার্নিং অফিসারসহ জেলার ডিসি, এসপি ও থানার ওসিসহ আরো যারা নির্বাচনের কাজে আছেন, তাদের সবাইকে ভোটরদের ভোটকেন্দ্রে আসতে উৎসাহিত করতে বলা হয়েছে৷ তাদের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে৷ জনপ্রনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করে তাদের ভোটার উপাস্থিতি বাড়াতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া মাইকিং করা হচ্ছে৷ গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনও যাবে৷ আমরা ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করবো৷”
সম্পাদক : মাহমুদ আনোয়ার হোসেন
নির্বাহী সম্পাদক : জুবায়ের রহমান চৌধুরী
বার্তা সম্পাদক : খালেকুজ্জামান পান্নু
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয় : বাড়ি # ৬৩, সড়ক # ২১,
রূপনগর আ/এ, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬।
বাণিজ্যিক কার্যালয় : গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড, ঢাকা-১২১২।
ফোন : 01731-488397,01552381515, 01751345643
হোয়াটসএ্যাপ : 01826567123
Copyright © 2024 সারাবেলার সংবাদ. All rights reserved.