বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আইসিজি বলেছে, প্রধান বিরোধী দলকে বাইরে রেখে হতে যাওয়া নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতার অভাব থাকায় তা কেবল বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভাজনই বাড়াতে যাচ্ছে আর সাথে যোগ করছে সহিংসতার ঝুঁকিও।
বাংলাদেশের বিদেশি উন্নয়ন অংশীদার, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের প্রতি দুটি দলকে সংলাপে উৎসাহিত করার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এরকম একটা উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটা হালে পানি পায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে খুব একটা উৎসাহ দেখানো হয়নি৷
ক্রাইসিস গ্রুপ মনে করছে, নির্বাচনের পর সরকারের সংলাপে রাজি হওয়ার বেশ কিছু যৌক্তিক কারণ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকেই তারা উপস্থাপন করেছে।
বাংলাদেশের বর্তমান সময়টাকে একটা সন্ধিক্ষণ আখ্যা দিয়ে ক্রাইসিস গ্রুপ বলেছে, ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতির পাশাপাশি ক্রমাগত অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়ে দেবে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে বিবদমান দুই পক্ষকে সংলাপে বসতে হবে বলে তারা মনে করে।
‘নির্বাচনের চেয়েও অধিকতর: বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা ভাঙা' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে আইসিজি বলেছে,
‘‘প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠন এবং বাংলাদেশকে গণতন্ত্র, শাান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে ফিরিয়ে আনতে আলোচনার জন্য উভয়পক্ষ থেকে ছাড় প্রয়োজন৷ দেশটির বিদেশি অংশীদার, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের উচিত তাদের সেই দিকে সক্রিয়ভাবে উৎসাহিত করা৷''
নির্বাচন পরবর্তী সংলাপের বিষয়ে ক্রাইসিস গ্রুপের আহ্বান সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, পাঁচ বছর পর যে নির্বাচনটা হবে সেখানে তারা (বিএনপি) অংশ গ্রহণ করবে কি করবে না, তা নিয়েই এখন কেবল আলোচনা হতে পারে।
বিএনপিও যে এক্ষেত্রে তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে সেরকম ইঙ্গিত এখনো দৃশ্যমান নয়। ক্রাইসিস গ্রুপের প্রস্তাব সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, "আমরা ২০১১ সাল থেকেই দাবি করে আসছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা। এটা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা পদত্যাগ করে এটা পুনঃপ্রবর্তন করলেই সংকটের সমাধান হবে। নির্বাচনের পরে সংলাপ সম্ভব কিনা এটা আমাদের দলের নীতিনির্ধারকেরা অবশ্যই ভেবে দেখবেন। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব হবে যখন আমাদের চেয়ারম্যান বাইরে, মহাসচিব কারাগারে? "
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার মনে করেন, শর্তহীন যে কোনো আলোচনা সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে, "আমি প্রথমে বলবো, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছে বা যে আহ্বান জানিয়েছে, সেটাকে আমি স্বাগতম জানাই। স্বাগতম জানাই এ কারণেই যে, নির্বাচন হচ্ছে, নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করছে- এটা সত্য, এবং একই সাথে এটাও সত্য যে, বড় একটি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। কে ঠিক, কে বেঠিক -এই তর্ক চলতে থাকতে পারে, তথাপি বাস্তবতা এই, যে কোনো কারণেই হোক একটা পক্ষ অনুপস্থিত থাকার কারণে নির্বাচনটা সর্বাংশে সুন্দর হচ্ছে না।এজন্য আমি মনে করি, নির্বাচনের পরে দেশের স্বার্থে বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।"
এ ধরনের সংলাপ আদৌ কোনো ফলাফল বয়ে আনবে কি-না সে সম্পর্কে এখনই তিনি কোনো উপসংহারে পৌঁছাতে রাজি নন। "আলোচনা থেকে প্রথমবার, দ্বিতীয়বার লাভ না আসুক, কিংবা এমনকি লাভের আশা না করেও আলোচনা হতে পারে। কারণ, আমরা সব সময় মনে রাখবো, সংলাপের অনুপস্থিতি সংঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সেটা আমরা কেউ চাই না। এখন কেউ যদি বলে, উনাদের সাথে কিসের সংলাপ, কেউ যদি বলে যে, আমাদের এই দুটা শর্ত আছে, পাঁচটা শর্ত আছে এগুলি পূরণ করলে আমরা সংলাপে বসবো- তাহলে অবশ্য সংলাপের প্রশ্নটা নিরর্থক হয়ে যায়।"
পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে, দেশের স্থিতিশীলতা এবং দেশের গণতন্ত্রের জন্য যা যা দরকার, সেগুলি সবারই করতে হবে বলেও তিনি মনে করেন। তার মতে, এক্ষেত্রে কারো অহম কিংবা কারো হুঙ্কার কোনোটারই কোনো সুযোগ নেই। "হোক আলোচনা। শুনুক না সবাই, উনারা কে কী বলছেন, সে জন্য আমি মনে করি শর্তহীন যে কোনো আলোচানাই স্বাগতম।"
সম্পাদক : মাহমুদ আনোয়ার হোসেন
নির্বাহী সম্পাদক : জুবায়ের রহমান চৌধুরী
বার্তা সম্পাদক : খালেকুজ্জামান পান্নু
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয় : বাড়ি # ৬৩, সড়ক # ২১,
রূপনগর আ/এ, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬।
বাণিজ্যিক কার্যালয় : গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড, ঢাকা-১২১২।
ফোন : 01731-488397,01552381515, 01751345643
হোয়াটসএ্যাপ : 01826567123
Copyright © 2024 সারাবেলার সংবাদ. All rights reserved.