ঢাকা ০২:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজের নামেই হোক পরিচয়

সারাবেলা সংবাদ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০১:৪৫:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ৯৬ বার পঠিত

জাগো নারী জাগো বহ্নি-শিখা।
জাগো স্বাহা সীমন্তে রক্ত-টিকা॥

১৯ নভেম্বর বিশ্ব নারী উদ্যোক্তা দিবসে সবাইকে জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন। সব বাঁধা ডিঙিয়ে কুসংস্কার আর অবহেলার বিরুদ্ধে নারীকে জেগে উঠতে হবে। নারীকে হতে হবে নিজেই নিজের পরম বন্ধু। হতে হবে আত্মপ্রত্যয়ী, বুদ্ধিদীপ্ত ও সাহসী।

নারীর জন্য বাড়তি কোনো কিছুই দরকার নেই। প্রয়োজন নেই কোনো বিশেষ অধিকারের। নারীর পরিচয় হোক শুধু মানুষ হিসেবে। পুরুষ যদি মানুষ হয়ে থাকে, তবে নারীও নিশ্চয়ই মানুষ- শুধু এই স্বীকৃতি চাই।

নারী-পুরুষ সমান অধিকার নিয়ে সমাজে থাকবে- শুধু এই নিশ্চয়তা দেবে রাষ্ট্র। আর তা দিতে হলে পুরুষ এবং নারীর মধ্যে যেসব আইনগত পার্থক্য আছে, তা দূর করতে হবে রাষ্ট্রকে। যেসব ক্ষেত্রে নারীর সমান অধিকার নেই, সেসব জায়গায় আইন পরিবর্তন করে পুরুষ-নারীর সম-অধিকার নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে।

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারী জাগরনের পথিকৃৎ। বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের ইতিহাসে বেগম রোকেয়ার অবদান চিরস্মরণীয়। তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি মুসলিম সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমান অধিকারের দাবি তুলে ধরেন। নারী স্বাধীনতার পক্ষে নিজের মতবাদ প্রচার করেন, অবরোধ প্রথার শেকল ভাঙেন।

বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধেও তার লেখনী ছিল সোচ্চার। তার লক্ষ্য ছিল, নারীশিক্ষার প্রসার, নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি এবং মুসলমান সমাজের অবরোধ প্রথার অবসান। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, শিক্ষা ছাড়া নারী জাতির অগ্রগতি ও মুক্তি সম্ভব নয় আর নারী মুক্তি ছাড়া কখনো একটি সভ্য সমাজ গড়ে উঠতে পারে না। এ সত্য অনুধাবন করেই তিনি নারীশিক্ষা প্রসারের কাজে ব্রতী হন। নারীকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা প্রদানের স্বীকৃতির লক্ষ্যেই পরিচালিত হয় তার সব চেষ্টা।

নারীকে মানুষই যদি না মনে করলেন, তাহলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন কার জন্য!? নারী তো নারীই, মানুষ কিনা তাই আজ প্রশ্ন। কোথাও নারীকে একেবারেই বাদ দেয়া হয়েছে, আবার কোথাও নারীকে পুরুষের অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। তাইতো পুরুষের গড়া এই সমাজে নারী নির্যাতন চলছে তো চলছেই।

কিন্তু এই দৃশ্যপট আজ বদলাতে শুরু করেছে। নারী আজ শুধু ভোগ্যপণ্য নয়, নারীরও আছে নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি। তারা ঘরের কাজে যেমন পারদর্শী তেমনই শিক্ষা-সংস্কৃতি, ব্যবসা এমনকি দেশ পরিচালনায় নিজেদের দক্ষতা দেখিয়েছে। আজ সারাবিশ্ব নারীর জেগে উঠা দেখে বিস্মিত।

নারীরা জেগে উঠেছেন তার নিজস্ব জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তায়। মেধা আর পরিশ্রমে নারী আজ এক বিজয়ীনী ও সাহসিকার অনন্য স্বাক্ষর। এই জেগে ওঠার জন্য নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি প্রয়োজন। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের লাখো নারী উদ্যোক্তা।

শখের বসে নয়, একজন নারী উদ্যোক্তাকে টিকে থাকতে হলে করণীয় বিষয়ে সমান পারদর্শী হতে হবে। সব প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে জয়ী হতে হবে। তবেই সমাজে মাথা উঁচু করে ঠাঁই দাঁড়াবে নারীরা। বিশ্ব নারী উদ্যোক্তা দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

শিরিন আকতার, স্বত্ত্বাধিকারী, ‘উড়ান’

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

নিজের নামেই হোক পরিচয়

আপডেট সময় : ০১:৪৫:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৩

জাগো নারী জাগো বহ্নি-শিখা।
জাগো স্বাহা সীমন্তে রক্ত-টিকা॥

১৯ নভেম্বর বিশ্ব নারী উদ্যোক্তা দিবসে সবাইকে জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন। সব বাঁধা ডিঙিয়ে কুসংস্কার আর অবহেলার বিরুদ্ধে নারীকে জেগে উঠতে হবে। নারীকে হতে হবে নিজেই নিজের পরম বন্ধু। হতে হবে আত্মপ্রত্যয়ী, বুদ্ধিদীপ্ত ও সাহসী।

নারীর জন্য বাড়তি কোনো কিছুই দরকার নেই। প্রয়োজন নেই কোনো বিশেষ অধিকারের। নারীর পরিচয় হোক শুধু মানুষ হিসেবে। পুরুষ যদি মানুষ হয়ে থাকে, তবে নারীও নিশ্চয়ই মানুষ- শুধু এই স্বীকৃতি চাই।

নারী-পুরুষ সমান অধিকার নিয়ে সমাজে থাকবে- শুধু এই নিশ্চয়তা দেবে রাষ্ট্র। আর তা দিতে হলে পুরুষ এবং নারীর মধ্যে যেসব আইনগত পার্থক্য আছে, তা দূর করতে হবে রাষ্ট্রকে। যেসব ক্ষেত্রে নারীর সমান অধিকার নেই, সেসব জায়গায় আইন পরিবর্তন করে পুরুষ-নারীর সম-অধিকার নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে।

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারী জাগরনের পথিকৃৎ। বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের ইতিহাসে বেগম রোকেয়ার অবদান চিরস্মরণীয়। তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি মুসলিম সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমান অধিকারের দাবি তুলে ধরেন। নারী স্বাধীনতার পক্ষে নিজের মতবাদ প্রচার করেন, অবরোধ প্রথার শেকল ভাঙেন।

বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধেও তার লেখনী ছিল সোচ্চার। তার লক্ষ্য ছিল, নারীশিক্ষার প্রসার, নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি এবং মুসলমান সমাজের অবরোধ প্রথার অবসান। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, শিক্ষা ছাড়া নারী জাতির অগ্রগতি ও মুক্তি সম্ভব নয় আর নারী মুক্তি ছাড়া কখনো একটি সভ্য সমাজ গড়ে উঠতে পারে না। এ সত্য অনুধাবন করেই তিনি নারীশিক্ষা প্রসারের কাজে ব্রতী হন। নারীকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা প্রদানের স্বীকৃতির লক্ষ্যেই পরিচালিত হয় তার সব চেষ্টা।

নারীকে মানুষই যদি না মনে করলেন, তাহলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন কার জন্য!? নারী তো নারীই, মানুষ কিনা তাই আজ প্রশ্ন। কোথাও নারীকে একেবারেই বাদ দেয়া হয়েছে, আবার কোথাও নারীকে পুরুষের অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। তাইতো পুরুষের গড়া এই সমাজে নারী নির্যাতন চলছে তো চলছেই।

কিন্তু এই দৃশ্যপট আজ বদলাতে শুরু করেছে। নারী আজ শুধু ভোগ্যপণ্য নয়, নারীরও আছে নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি। তারা ঘরের কাজে যেমন পারদর্শী তেমনই শিক্ষা-সংস্কৃতি, ব্যবসা এমনকি দেশ পরিচালনায় নিজেদের দক্ষতা দেখিয়েছে। আজ সারাবিশ্ব নারীর জেগে উঠা দেখে বিস্মিত।

নারীরা জেগে উঠেছেন তার নিজস্ব জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তায়। মেধা আর পরিশ্রমে নারী আজ এক বিজয়ীনী ও সাহসিকার অনন্য স্বাক্ষর। এই জেগে ওঠার জন্য নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি প্রয়োজন। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের লাখো নারী উদ্যোক্তা।

শখের বসে নয়, একজন নারী উদ্যোক্তাকে টিকে থাকতে হলে করণীয় বিষয়ে সমান পারদর্শী হতে হবে। সব প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে জয়ী হতে হবে। তবেই সমাজে মাথা উঁচু করে ঠাঁই দাঁড়াবে নারীরা। বিশ্ব নারী উদ্যোক্তা দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

শিরিন আকতার, স্বত্ত্বাধিকারী, ‘উড়ান’

Facebook Comments Box