ঢাকা ০৩:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo সোনারগাঁয়ে গাজাঁ ও ফেনসিডিলসহ আটক-৪ Logo স্বপ্ন পূরণ হলো না মৌলভীবাজারের লিটনের ! বেলারুশ সীমান্তে পিটিয়ে হত্যা তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: স্বপ্ন পূরণে ইচ্ছা ছিল জার্মানিতে গিয়ে উন্নত জীবনযাপনের মাধ্যমে স্বপ্নের বাস্তবতা হাসিল করার অদম্য সাহস ছিল লিটন চৌধুরীর। সেই দেশে যেতে বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিসহ কয়েকজন অভিবাসন-প্রত্যাশী পোল্যান্ড পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। তাদের পুশব্যাক করা হয়। কিন্তু বেলারুশেও তারা ঢুকতে পারেননি। দুই দেশের সীমান্তে গভীর জঙ্গলে বহু কষ্টে দিন কাটছিল তাদের। গত সোমবার স্থানীয় সময় রাতে স্বজনেরা জানতে পারেন, লিটনসহ ১৫ জন অভিবাসী পুলিশের পিটুনিতে মারা গেছেন। বেলারুশের একটি হাসপাতালের মর্গে তাদের লাশ রাখা হয়েছে। এ খবরে লিটনের পরিবারে মাতম শুরু হয়। লিটন চৌধুরী (৩৫) মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদরের জাঙ্গিরাই এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত মোশারফ হোসেন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ ছেলে। তার মা, এক ভাই, স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তান রয়েছে। লিটন এর আগে দুবাইয়ে থাকতেন। লিটনদের বাড়িতে, একটি কক্ষে তার মা ও স্ত্রী আহাজারি করছেন। স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, লিটনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে একটি কিন্ডারগার্টেনে পঞ্চম ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলের বয়স মাত্র দুই বছর। লিটনের ছোট ভাই নোমান চৌধুরী ইতালিতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বসবাস করছেন। বৈধ না হওয়ায় দেশে ফিরতে পারছেন না। স্বজনেরা বলেন, লিটনদের পরিবার অনেকটা সচ্ছল। দুবাইয়ের জীবন লিটনের ভালো লাগত না। ইউরোপে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। লিটনের স্ত্রীর বড় ভাই শাহিন আহমদ বলেন, মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে বছরখানেক আগে লিটন দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। মায়ের চিকিৎসা করান। মা সুস্থ হওয়ার কয়েক মাস পর দুবাইয়ে ফিরে যান। দুবাইয়ে গিয়ে রাশিয়ায় বসবাসকারী ম্যাক্স নামের এক দালালের মাধ্যমে জার্মানিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য ম্যাক্স ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ম্যাক্সের বাড়ি নোয়াখালী। প্রকৃত নাম অন্য কিছু হলেও দুবাইয়ে ওই নামেই তিনি পরিচিত। শাহিন বলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজারে নজরুল ইসলাম নামের এক গাড়ি ব্যবসায়ী ম্যাক্সের আত্মীয়। নজরুলের কাছে তাঁরা টাকা জমা দেন। এ সময় একটি চুক্তিনামাও করা হয়। জার্মানিতে পাঠাতে না পারলে সব টাকা ফেরতের কথাও চুক্তিনামায় উল্লেখ করা হয়। সেপ্টেম্বরে লিটন রাশিয়া হয়ে বেলারুশে যান। এরপর বেলারুশের সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে পৌঁছালে পুলিশ তাঁকেসহ আরও কয়েকজনকে ধরে ফেলে। তাদের সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। বেলারুশের পুলিশ তাঁদের ঢুকতে বাঁধা দেয়। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সীমান্তে জঙ্গলে তাঁরা দিন কাটান। শাহিন বলেন, সর্বশেষ ৭ই অক্টোবর লিটন তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভয়েস মেসেজ পাঠান। ওই ভয়েস মেসেজে লিটন বলেন, তিনি জঙ্গলে খুব কষ্টে আছেন। খাবার নেই, পানি নেই। তাঁর একটি পা ভেঙে গেছে। লিটন ম্যাক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে বলেন। পরে তিনি (শাহিন আহমেদ) ম্যাক্সের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করলে তিনি শুধু আশ্বাস দিতে থাকেন। কিছুদিন পর লিটনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। লিটনের খোঁজ না পাওয়ায় চিন্তিত ছিল তার পরিবার। এই বিষয়ে শাহিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লিটনের খোঁজখবর না পাওয়ায় তারা উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে থাকেন। সম্প্রতি তারা বেলারুশ সীমান্তের একটি ভিডিও পান। ভিডিওটি স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের। ওই ভিডিওতে দাবি করা হয়, সীমান্তে ১৫ জন অভিবাসীকে পোল্যান্ড পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এর মধ্যে চেহারা, পরনের টি-শার্ট ও প্যান্ট দেখে তারা লিটনের লাশ শনাক্ত করেন। কিন্তু তাতেও তাঁরা পুরোপুরি নিশ্চিত হননি। শাহিন বলেন, বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে বেলারুশে বসবাসকারী এক বাংলাদেশি চিকিৎসকের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেন। ওই চিকিৎসক বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প ও হাসপাতালে খোঁজ নেন। একপর্যায়ে একটি হাসপাতালের মর্গে লিটনের লাশ পান। সোমবার রাত আটটার দিকে চিকিৎসক লিটনের লাশের ছবি তাদের কাছে পাঠান। এতে তাঁরা নিশ্চিত হন লিটন মারা গেছেন। শাহিন বলেন, লিটনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ম্যাক্স ও নজরুলের সঙ্গে কথা বলেন। লাশ ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের সহায়তা চান। কিন্তু তারা কোনো সহায়তা করেননি। ম্যাক্সের আসল পরিচয় উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে। তারা ম্যাক্স ও নজরুলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেবেন। শাহিন বলেন, লিটনের লাশ দেশে আনা হবে কি না, সে বিষয়ে তাঁরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে কুলাউড়া সার্কেলের (কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান গনমাধ্যমে বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। Logo নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ Logo সৌদিতে ফ্যাশন শো নিয়ে ইসলামী পণ্ডিতদের ক্ষোভের যত কারণ Logo প্রতারণার অভিযোগে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে আমেরিকার আদালতে মামলা Logo ট্রাইব্যুনালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক কর্তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হলো Logo ভাঙ্গুড়া প্রেস ক্লাবের অবৈধ কমিটি বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান Logo মৌলভীবাজার পূজা উদযাপন পরিষদের সম্পাদক মহিম গ্রেপ্তার Logo পাবনার আমিনপুরে ইজিবাইক-মোটর সাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ Logo সেনাকুঞ্জে যাবেন খালেদা জিয়া

নারায়ণগঞ্জে এক শিল্পপতিকে হত্যার পর লাশ ৭ টুকরা, বান্ধবী গ্রেফতার

সারাবেলা সংবাদ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ১২:৩৯:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ২৪ বার পঠিত
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের লেক থেকে ৭টুকরা লাশ উদ্ধার এবং পরিচয় সনাক্ত হওয়ার পর এবার হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কের জের ধরে খুন হন শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুম। হত্যার সাথে জড়িত শিল্পপতির বান্ধবী রুমা নামের এক নারী ও তার সহযোগী রুকুকে রাজধানীর বনানীর একটি বাসা থেকে  পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়। গ্রেফতারের সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত হেক্সো ব্লেড,চাপাতি, নিহতের সাফারি পোষাক উদ্ধার করে পুলিশ। জসিম উদ্দিন মাসুম ফতুল্লার চাঁদ ডাইংয়ের মালিক ও সস্তাপুর ঈদগাহ মসজিদ কমিটির সভাপতি ।
রূপগঞ্জে উদ্ধার খন্ডিত ৭ টুকরা লাশ ফতুল্লা শিল্পপতি মাসুমের
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতারকৃত রুমার সাথে ব্যবসায়ি মাসুমের অবৈধ সম্পর্কের জেরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। গতকাল বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এসপি বলেন, শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুমকে হত্যা করে মরদেহ সাত টুকরো করে গুমের চেষ্টায় রুমা নামে এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, শিল্পপতি জসীমউদ্দিন মাসুমের ক্ষতবিক্ষত সাত টুকরো লাশ রূপগঞ্জ লেক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের পুলিশ তাৎক্ষণিক এর তদন্ত শুরু করে। গুলশান থানার একটি জিডির সূত্র ধরে আমরা এই ডিসিস্টের পরিচয় জানতে পারি। তার সাথে রুমা নামের একটি মহিলার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রথমিকভাবে জানা গেছে। তিনি হত্যা করে মরদেহটি টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেন। হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড মূল হোতা নিহতের প্রেমিকা রুমা (২৮) ও তার সহোযোগি রুকু(২৮) কে গ্রেফতার সহ উদঘাটন করা হয়েছে হত্যাকান্ডের রহস্য।

এসপি বলেন, শিল্পপতি জসীমউদ্দিন মাসুমের বুধবার রূপগঞ্জ থেকে ক্ষতবিক্ষত সাত টুকরে লাশ উদ্ধার হয়। এর পর পুলিশ তাৎক্ষণিক এর তদন্ত শুরু করে। গুলশান থানার একটি জিডির সূত্র ধরে আমরা এই ডিসিস্টের পরিচয় জানতে পারি। তার সাথে রুমা নামের একটি মহিলার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রথমিকভাবে জানা গেছে। পরে তরুনীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তারা প্রায় সময় মিরপুরের একটি ভাড়া বাসাট ফ্ল্যাটে মিলিত হতো। সেই ফ্ল্যাটে নিহত ব্যবসায়ী জসিমউদদীন অপর এক নারীকে নিয়ে যায়।

সেই বিষয়টি জানতে পারে গ্রেফতারকৃত রুমা। এতে রাগে ক্ষোভে রোববার নিহত জসীমউদ্দিন কে মিরপুরের শেওরাপাড়ার ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়।সেখানে নিয়ে গিয়ে দুধের সাথে চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে জসীমউদ্দিন কে পান করায়। এতে করে সে অচেতন হয়ে পরলে তার দেহ বেশ কয়েকটি টুকরো করে। পরবর্তীতে টুকরোগুলো রুমা নিজেই দু দফায় উবারে এবং সিএনজিতে করে লাশ ফেলে যায়।

তিনি আরো বলেন, আমরা লাশের টুকরা ও এই কাজে ব্যাবহৃত চাপাতি ও জামার টুকরো উদ্ধার করেছি। এ কাজে রুমা সহ অপর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।গত বুধবার দুপুরে কুড়িল-কাঞ্চন সড়কের উত্তর পাশে পূর্বাচলের ৫ নম্বর সেক্টর থেকে মাসুমের মরদেহের খন্ডাংশগুলো উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায় তিনটি পলিথিন ব্যাগে একজন পুরো শরীরের অন্তত সাতটি অংশ পাওয়া গেছে।নিহতের বড় ছেলে ওবায়দুল ইসলাম শিবু বলেন, দাড়ি, নখ ও বাঁ পায়ের কিছু চিহ্ন দেখে বাবার লাশ শনাক্ত করি। গত ১০ নভেম্বর বিকেল থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি জিডিও করেছি। সেরা করদাতা হিসেবে আমার বাবা একাধিকবার কর বাহাদুর পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি একজন শিল্পপতি। চাঁদ ডাইং ফ্যাক্টরিসহ আমাদের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাবার সঙ্গে কারও শত্রুতা রয়েছে বলে জানা নেই।নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১০ নভেম্বর বিকেলে বাসা থেকে গাড়িতে করে বের হয়ে গুলশান যান জসিম উদ্দিন। এর পর ব্যক্তিগত গাড়িচালককে ছেড়ে দেন। চালককে জানিয়েছিলেন অন্য গাড়িতে নারায়ণগঞ্জের কারখানায় যাবেন। তবে রাতে বাসায় না ফেরায় ও মোবাইল বন্ধ থাকায় পরদিন গুলশান থানায় জিডি করেন তাঁর বড় ছেলেরূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত আলী জানান, স্থানীয়রা বুধবার সকালে লেকের পাড়ে তিনটি কালো পলিথিন ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে এক এক করে পলিথিনের ব্যাগগুলো খুললে একজন পুরুষের শরীরের মাথা, দুইটি হাত, শরীরের পেছনের অংশ, নাড়ি ভুঁড়ি, বাম পা, বাম উড়ুর কাটা অংশ উদ্ধার করা হয়।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

স্বপ্ন পূরণ হলো না মৌলভীবাজারের লিটনের ! বেলারুশ সীমান্তে পিটিয়ে হত্যা তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: স্বপ্ন পূরণে ইচ্ছা ছিল জার্মানিতে গিয়ে উন্নত জীবনযাপনের মাধ্যমে স্বপ্নের বাস্তবতা হাসিল করার অদম্য সাহস ছিল লিটন চৌধুরীর। সেই দেশে যেতে বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিসহ কয়েকজন অভিবাসন-প্রত্যাশী পোল্যান্ড পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। তাদের পুশব্যাক করা হয়। কিন্তু বেলারুশেও তারা ঢুকতে পারেননি। দুই দেশের সীমান্তে গভীর জঙ্গলে বহু কষ্টে দিন কাটছিল তাদের। গত সোমবার স্থানীয় সময় রাতে স্বজনেরা জানতে পারেন, লিটনসহ ১৫ জন অভিবাসী পুলিশের পিটুনিতে মারা গেছেন। বেলারুশের একটি হাসপাতালের মর্গে তাদের লাশ রাখা হয়েছে। এ খবরে লিটনের পরিবারে মাতম শুরু হয়। লিটন চৌধুরী (৩৫) মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদরের জাঙ্গিরাই এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত মোশারফ হোসেন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ ছেলে। তার মা, এক ভাই, স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তান রয়েছে। লিটন এর আগে দুবাইয়ে থাকতেন। লিটনদের বাড়িতে, একটি কক্ষে তার মা ও স্ত্রী আহাজারি করছেন। স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, লিটনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে একটি কিন্ডারগার্টেনে পঞ্চম ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলের বয়স মাত্র দুই বছর। লিটনের ছোট ভাই নোমান চৌধুরী ইতালিতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বসবাস করছেন। বৈধ না হওয়ায় দেশে ফিরতে পারছেন না। স্বজনেরা বলেন, লিটনদের পরিবার অনেকটা সচ্ছল। দুবাইয়ের জীবন লিটনের ভালো লাগত না। ইউরোপে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। লিটনের স্ত্রীর বড় ভাই শাহিন আহমদ বলেন, মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে বছরখানেক আগে লিটন দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। মায়ের চিকিৎসা করান। মা সুস্থ হওয়ার কয়েক মাস পর দুবাইয়ে ফিরে যান। দুবাইয়ে গিয়ে রাশিয়ায় বসবাসকারী ম্যাক্স নামের এক দালালের মাধ্যমে জার্মানিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য ম্যাক্স ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ম্যাক্সের বাড়ি নোয়াখালী। প্রকৃত নাম অন্য কিছু হলেও দুবাইয়ে ওই নামেই তিনি পরিচিত। শাহিন বলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজারে নজরুল ইসলাম নামের এক গাড়ি ব্যবসায়ী ম্যাক্সের আত্মীয়। নজরুলের কাছে তাঁরা টাকা জমা দেন। এ সময় একটি চুক্তিনামাও করা হয়। জার্মানিতে পাঠাতে না পারলে সব টাকা ফেরতের কথাও চুক্তিনামায় উল্লেখ করা হয়। সেপ্টেম্বরে লিটন রাশিয়া হয়ে বেলারুশে যান। এরপর বেলারুশের সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে পৌঁছালে পুলিশ তাঁকেসহ আরও কয়েকজনকে ধরে ফেলে। তাদের সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। বেলারুশের পুলিশ তাঁদের ঢুকতে বাঁধা দেয়। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সীমান্তে জঙ্গলে তাঁরা দিন কাটান। শাহিন বলেন, সর্বশেষ ৭ই অক্টোবর লিটন তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভয়েস মেসেজ পাঠান। ওই ভয়েস মেসেজে লিটন বলেন, তিনি জঙ্গলে খুব কষ্টে আছেন। খাবার নেই, পানি নেই। তাঁর একটি পা ভেঙে গেছে। লিটন ম্যাক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে বলেন। পরে তিনি (শাহিন আহমেদ) ম্যাক্সের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করলে তিনি শুধু আশ্বাস দিতে থাকেন। কিছুদিন পর লিটনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। লিটনের খোঁজ না পাওয়ায় চিন্তিত ছিল তার পরিবার। এই বিষয়ে শাহিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লিটনের খোঁজখবর না পাওয়ায় তারা উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে থাকেন। সম্প্রতি তারা বেলারুশ সীমান্তের একটি ভিডিও পান। ভিডিওটি স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের। ওই ভিডিওতে দাবি করা হয়, সীমান্তে ১৫ জন অভিবাসীকে পোল্যান্ড পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এর মধ্যে চেহারা, পরনের টি-শার্ট ও প্যান্ট দেখে তারা লিটনের লাশ শনাক্ত করেন। কিন্তু তাতেও তাঁরা পুরোপুরি নিশ্চিত হননি। শাহিন বলেন, বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে বেলারুশে বসবাসকারী এক বাংলাদেশি চিকিৎসকের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেন। ওই চিকিৎসক বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প ও হাসপাতালে খোঁজ নেন। একপর্যায়ে একটি হাসপাতালের মর্গে লিটনের লাশ পান। সোমবার রাত আটটার দিকে চিকিৎসক লিটনের লাশের ছবি তাদের কাছে পাঠান। এতে তাঁরা নিশ্চিত হন লিটন মারা গেছেন। শাহিন বলেন, লিটনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ম্যাক্স ও নজরুলের সঙ্গে কথা বলেন। লাশ ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের সহায়তা চান। কিন্তু তারা কোনো সহায়তা করেননি। ম্যাক্সের আসল পরিচয় উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে। তারা ম্যাক্স ও নজরুলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেবেন। শাহিন বলেন, লিটনের লাশ দেশে আনা হবে কি না, সে বিষয়ে তাঁরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে কুলাউড়া সার্কেলের (কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান গনমাধ্যমে বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নারায়ণগঞ্জে এক শিল্পপতিকে হত্যার পর লাশ ৭ টুকরা, বান্ধবী গ্রেফতার

আপডেট সময় : ১২:৩৯:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের লেক থেকে ৭টুকরা লাশ উদ্ধার এবং পরিচয় সনাক্ত হওয়ার পর এবার হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কের জের ধরে খুন হন শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুম। হত্যার সাথে জড়িত শিল্পপতির বান্ধবী রুমা নামের এক নারী ও তার সহযোগী রুকুকে রাজধানীর বনানীর একটি বাসা থেকে  পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়। গ্রেফতারের সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত হেক্সো ব্লেড,চাপাতি, নিহতের সাফারি পোষাক উদ্ধার করে পুলিশ। জসিম উদ্দিন মাসুম ফতুল্লার চাঁদ ডাইংয়ের মালিক ও সস্তাপুর ঈদগাহ মসজিদ কমিটির সভাপতি ।
রূপগঞ্জে উদ্ধার খন্ডিত ৭ টুকরা লাশ ফতুল্লা শিল্পপতি মাসুমের
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতারকৃত রুমার সাথে ব্যবসায়ি মাসুমের অবৈধ সম্পর্কের জেরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। গতকাল বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এসপি বলেন, শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুমকে হত্যা করে মরদেহ সাত টুকরো করে গুমের চেষ্টায় রুমা নামে এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, শিল্পপতি জসীমউদ্দিন মাসুমের ক্ষতবিক্ষত সাত টুকরো লাশ রূপগঞ্জ লেক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের পুলিশ তাৎক্ষণিক এর তদন্ত শুরু করে। গুলশান থানার একটি জিডির সূত্র ধরে আমরা এই ডিসিস্টের পরিচয় জানতে পারি। তার সাথে রুমা নামের একটি মহিলার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রথমিকভাবে জানা গেছে। তিনি হত্যা করে মরদেহটি টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেন। হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড মূল হোতা নিহতের প্রেমিকা রুমা (২৮) ও তার সহোযোগি রুকু(২৮) কে গ্রেফতার সহ উদঘাটন করা হয়েছে হত্যাকান্ডের রহস্য।

এসপি বলেন, শিল্পপতি জসীমউদ্দিন মাসুমের বুধবার রূপগঞ্জ থেকে ক্ষতবিক্ষত সাত টুকরে লাশ উদ্ধার হয়। এর পর পুলিশ তাৎক্ষণিক এর তদন্ত শুরু করে। গুলশান থানার একটি জিডির সূত্র ধরে আমরা এই ডিসিস্টের পরিচয় জানতে পারি। তার সাথে রুমা নামের একটি মহিলার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রথমিকভাবে জানা গেছে। পরে তরুনীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তারা প্রায় সময় মিরপুরের একটি ভাড়া বাসাট ফ্ল্যাটে মিলিত হতো। সেই ফ্ল্যাটে নিহত ব্যবসায়ী জসিমউদদীন অপর এক নারীকে নিয়ে যায়।

সেই বিষয়টি জানতে পারে গ্রেফতারকৃত রুমা। এতে রাগে ক্ষোভে রোববার নিহত জসীমউদ্দিন কে মিরপুরের শেওরাপাড়ার ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়।সেখানে নিয়ে গিয়ে দুধের সাথে চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে জসীমউদ্দিন কে পান করায়। এতে করে সে অচেতন হয়ে পরলে তার দেহ বেশ কয়েকটি টুকরো করে। পরবর্তীতে টুকরোগুলো রুমা নিজেই দু দফায় উবারে এবং সিএনজিতে করে লাশ ফেলে যায়।

তিনি আরো বলেন, আমরা লাশের টুকরা ও এই কাজে ব্যাবহৃত চাপাতি ও জামার টুকরো উদ্ধার করেছি। এ কাজে রুমা সহ অপর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।গত বুধবার দুপুরে কুড়িল-কাঞ্চন সড়কের উত্তর পাশে পূর্বাচলের ৫ নম্বর সেক্টর থেকে মাসুমের মরদেহের খন্ডাংশগুলো উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায় তিনটি পলিথিন ব্যাগে একজন পুরো শরীরের অন্তত সাতটি অংশ পাওয়া গেছে।নিহতের বড় ছেলে ওবায়দুল ইসলাম শিবু বলেন, দাড়ি, নখ ও বাঁ পায়ের কিছু চিহ্ন দেখে বাবার লাশ শনাক্ত করি। গত ১০ নভেম্বর বিকেল থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি জিডিও করেছি। সেরা করদাতা হিসেবে আমার বাবা একাধিকবার কর বাহাদুর পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি একজন শিল্পপতি। চাঁদ ডাইং ফ্যাক্টরিসহ আমাদের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাবার সঙ্গে কারও শত্রুতা রয়েছে বলে জানা নেই।নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১০ নভেম্বর বিকেলে বাসা থেকে গাড়িতে করে বের হয়ে গুলশান যান জসিম উদ্দিন। এর পর ব্যক্তিগত গাড়িচালককে ছেড়ে দেন। চালককে জানিয়েছিলেন অন্য গাড়িতে নারায়ণগঞ্জের কারখানায় যাবেন। তবে রাতে বাসায় না ফেরায় ও মোবাইল বন্ধ থাকায় পরদিন গুলশান থানায় জিডি করেন তাঁর বড় ছেলেরূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত আলী জানান, স্থানীয়রা বুধবার সকালে লেকের পাড়ে তিনটি কালো পলিথিন ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে এক এক করে পলিথিনের ব্যাগগুলো খুললে একজন পুরুষের শরীরের মাথা, দুইটি হাত, শরীরের পেছনের অংশ, নাড়ি ভুঁড়ি, বাম পা, বাম উড়ুর কাটা অংশ উদ্ধার করা হয়।

Facebook Comments Box