ঢাকা ০৪:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে হাঁপানিতে ভুগছেন পৌনে দুই কোটির বেশি মানুষ!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
  • আপডেট সময় : ১১:৩৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪ ২৫ বার পঠিত

ঢাকা : বিশ্বব্যাপী মারাত্মক আকার ধারণ করেছে— এমন অসংক্রামক রোগগুলোর অন্যতম হাঁপানি বা অ্যাজমা। শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী এই রোগে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২৬ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। বছরে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হওয়া এই রোগ এখন বাংলাদেশেও স্বাস্থ্যঝুঁকির অন্যতম প্রধান কারণ।

ন্যাশনাল অ্যাজমা প্রিভিলেন্স সার্ভে বলছে— ১৯৯৯ সালে দেশে অ্যাজমা রোগী ছিল ৭০ লাখ। ২০১০ সালে দেশে এই রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯০ লাখে। তবে বর্তমানে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা জানা নেই কারো।

কারণ হিসেবে জানা যায়, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রোগটি নিয়ে জরিপ হয়নি জাতীয় পর্যায়ে। হয়নি উল্লেখযোগ্য গবেষণাও। ফলে বছরে এই রোগী কত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন কিংবা মারা যাচ্ছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্বাসনালির সমস্যায় ভুগছেন— এমন রোগীদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশেরই অ্যাজমা। এটি বংশগত। পরিবেশগত কারণেও হতে পারে। এছাড়া বায়ুদূষণ, অ্যালার্জেন, ঋতু, আবহাওয়া, তাপমাত্রা পরিবর্তনের কারণে এই রোগের প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এই রোগের প্রকোপ বেশি।

তাদের ধারণা, বর্তমানে দেশে অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা অন্তত দ্বিগুন হয়েছে। সেই হিসাবে, দেশে মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ অ্যাজমায় ভুগছেন। অর্থাৎ ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত রয়েছেন।

দেশে বর্তমানে অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা কত— তা সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে এই রোগে সেবা দেয়- এমন হাসপাতালগুলো থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল অ্যাজমার চিকিৎসা দেয়। ২০২০ থেকে ২৩ সাল পর্যন্ত জরুরি ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ১৭ হাজার। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৫ হাজার ৭৯৯ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪৬০ জনের।

তথ্য বলছে— ২০২৩ সালে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৬ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৪৬ জনের। ২০২২ সালে রোগী ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৯১ জন, মারা গেছে ৯৪৭ জন। ২০২১ সালে রোগী ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫১৭ জন, মারা গেছে ১ হাজার ২২ জন। ২০২০ সালে রোগী ছিল ৯৮ হাজার ৯৯১ জন, মারা গেছে ৮৭৭ জন।

বক্ষব্যাধি হাসপাতালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গেল চার বছরে শ্বাসনালির সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রোগী বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে মৃত্যু বেড়েছে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। চিকিৎসা নিতে আসাদের ৪ থেকে ৫ শতাংশ শিশু, বাকি ২৫ শতাংশের বয়স ২৪ বছরের নিচে। আর পঞ্চাশোর্ধ্ব রোগী ৪৫ শতাংশ। এই বয়সীদের মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মেইলের কথা হয় জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সেরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, অ্যাজমার সমস্যা আছে— এমন সব বয়সী রোগীই হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি। শিশুদের সংখ্যা সবচেয়ে কম।

তিনি বলছেন, রোগটিতে শিশুরা যে কম আক্রান্ত হয়— বিষয়টি এমন নয়। তাদের জন্য একাধিক বিশেষায়িত হাসপাতাল আছে। ফলে অ্যাজমায় আক্রান্ত শিশুরা আমাদের এখানে কম। আগে আমাদের বহির্বিভাগে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ রোগী আসতেন। বর্তমানে তা ৮০০ থেকে ১ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে বয়স্ক ও শিশুদের জটিলতা বেশি হয়।

অধ্যাপক ডা. মো. সেরাজুল ইসলাম বলেন, অ্যাজমা রোগীদের বড় অংশই শহরের বাসিন্দা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামের রোগীও বেড়েছে। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়ে। ফল রোগীর চাপও বাড়তে থাকে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটের এই অধ্যাপক মনে করেন— ‘ফ্রু ভাইরাসে’র কারণেই সংক্রমণ বেড়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় রোগী কম ছিল।

হাঁপানির লক্ষণ তুলে ধরে ডা. মো. সেরাজুল ইসলাম বলেন, অ্যাজমার কারণে মাঝে মাঝে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, নিঃশ্বাসের সঙ্গে সাঁ সাঁ শব্দ হয়। একই সঙ্গে শুকনো কাশি হয়, দীর্ঘ সময় একটানা কাশি চলতে থাকে। হাঁপানি রোগীরা বুকে চাপ অনুভব করেন। হাঁপিয়ে পড়েন খুব অল্প পরিশ্রমেই। লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে— সম্ভবত তিনি হাঁপানিতে আক্রান্ত।

শুধু অ্যাজমা বা শ্বাসতন্ত্রের অন্য রোগের কারণে শ্বাসকষ্ট হয়— বিষয়টি এমন নয় বলে জানিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, মানসিক চাপ থেকেও শ্বাসকষ্ট হয়। স্ট্রেস থেকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিলেই তা হাঁপানি বলা যাবে না। হাসপাতালে রোগী এলে আমরা প্রথমে হিস্ট্রি নিই। এরপর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে দেই। এতে ফুসফুসে কোনো সমস্যা পাওয়া না গেলে আমরা তাকে কাউন্সিলিংয়ের পরামর্শ দেই।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

দেশে হাঁপানিতে ভুগছেন পৌনে দুই কোটির বেশি মানুষ!

আপডেট সময় : ১১:৩৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪

ঢাকা : বিশ্বব্যাপী মারাত্মক আকার ধারণ করেছে— এমন অসংক্রামক রোগগুলোর অন্যতম হাঁপানি বা অ্যাজমা। শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী এই রোগে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২৬ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। বছরে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হওয়া এই রোগ এখন বাংলাদেশেও স্বাস্থ্যঝুঁকির অন্যতম প্রধান কারণ।

ন্যাশনাল অ্যাজমা প্রিভিলেন্স সার্ভে বলছে— ১৯৯৯ সালে দেশে অ্যাজমা রোগী ছিল ৭০ লাখ। ২০১০ সালে দেশে এই রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯০ লাখে। তবে বর্তমানে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা জানা নেই কারো।

কারণ হিসেবে জানা যায়, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রোগটি নিয়ে জরিপ হয়নি জাতীয় পর্যায়ে। হয়নি উল্লেখযোগ্য গবেষণাও। ফলে বছরে এই রোগী কত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন কিংবা মারা যাচ্ছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্বাসনালির সমস্যায় ভুগছেন— এমন রোগীদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশেরই অ্যাজমা। এটি বংশগত। পরিবেশগত কারণেও হতে পারে। এছাড়া বায়ুদূষণ, অ্যালার্জেন, ঋতু, আবহাওয়া, তাপমাত্রা পরিবর্তনের কারণে এই রোগের প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এই রোগের প্রকোপ বেশি।

তাদের ধারণা, বর্তমানে দেশে অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা অন্তত দ্বিগুন হয়েছে। সেই হিসাবে, দেশে মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ অ্যাজমায় ভুগছেন। অর্থাৎ ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত রয়েছেন।

দেশে বর্তমানে অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা কত— তা সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে এই রোগে সেবা দেয়- এমন হাসপাতালগুলো থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল অ্যাজমার চিকিৎসা দেয়। ২০২০ থেকে ২৩ সাল পর্যন্ত জরুরি ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ১৭ হাজার। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৫ হাজার ৭৯৯ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪৬০ জনের।

তথ্য বলছে— ২০২৩ সালে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৬ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৪৬ জনের। ২০২২ সালে রোগী ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৯১ জন, মারা গেছে ৯৪৭ জন। ২০২১ সালে রোগী ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫১৭ জন, মারা গেছে ১ হাজার ২২ জন। ২০২০ সালে রোগী ছিল ৯৮ হাজার ৯৯১ জন, মারা গেছে ৮৭৭ জন।

বক্ষব্যাধি হাসপাতালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গেল চার বছরে শ্বাসনালির সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রোগী বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে মৃত্যু বেড়েছে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। চিকিৎসা নিতে আসাদের ৪ থেকে ৫ শতাংশ শিশু, বাকি ২৫ শতাংশের বয়স ২৪ বছরের নিচে। আর পঞ্চাশোর্ধ্ব রোগী ৪৫ শতাংশ। এই বয়সীদের মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মেইলের কথা হয় জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সেরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, অ্যাজমার সমস্যা আছে— এমন সব বয়সী রোগীই হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি। শিশুদের সংখ্যা সবচেয়ে কম।

তিনি বলছেন, রোগটিতে শিশুরা যে কম আক্রান্ত হয়— বিষয়টি এমন নয়। তাদের জন্য একাধিক বিশেষায়িত হাসপাতাল আছে। ফলে অ্যাজমায় আক্রান্ত শিশুরা আমাদের এখানে কম। আগে আমাদের বহির্বিভাগে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ রোগী আসতেন। বর্তমানে তা ৮০০ থেকে ১ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে বয়স্ক ও শিশুদের জটিলতা বেশি হয়।

অধ্যাপক ডা. মো. সেরাজুল ইসলাম বলেন, অ্যাজমা রোগীদের বড় অংশই শহরের বাসিন্দা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামের রোগীও বেড়েছে। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়ে। ফল রোগীর চাপও বাড়তে থাকে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটের এই অধ্যাপক মনে করেন— ‘ফ্রু ভাইরাসে’র কারণেই সংক্রমণ বেড়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় রোগী কম ছিল।

হাঁপানির লক্ষণ তুলে ধরে ডা. মো. সেরাজুল ইসলাম বলেন, অ্যাজমার কারণে মাঝে মাঝে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, নিঃশ্বাসের সঙ্গে সাঁ সাঁ শব্দ হয়। একই সঙ্গে শুকনো কাশি হয়, দীর্ঘ সময় একটানা কাশি চলতে থাকে। হাঁপানি রোগীরা বুকে চাপ অনুভব করেন। হাঁপিয়ে পড়েন খুব অল্প পরিশ্রমেই। লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে— সম্ভবত তিনি হাঁপানিতে আক্রান্ত।

শুধু অ্যাজমা বা শ্বাসতন্ত্রের অন্য রোগের কারণে শ্বাসকষ্ট হয়— বিষয়টি এমন নয় বলে জানিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, মানসিক চাপ থেকেও শ্বাসকষ্ট হয়। স্ট্রেস থেকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিলেই তা হাঁপানি বলা যাবে না। হাসপাতালে রোগী এলে আমরা প্রথমে হিস্ট্রি নিই। এরপর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে দেই। এতে ফুসফুসে কোনো সমস্যা পাওয়া না গেলে আমরা তাকে কাউন্সিলিংয়ের পরামর্শ দেই।

Facebook Comments Box