ঢাকা ০৫:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দক্ষতার ভুয়া সনদ, ঝুঁকিতে আমিরাতের শ্রমবাজার

প্রবাসে বাংলা ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৪:১৬:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৩ ৭৫ বার পঠিত

ঢাকা শহরে রিকশা চালান, কিন্তু সার্টিফিকেটে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। কোনো রকম এইচএসসি পাস, অথচ সনদে তিনি লন্ডনের একটি প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা। দক্ষতা প্রমাণে এমন ভুয়া সনদ ব্যবহার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসার আবেদন করছেন বাংলাদেশিরা। মূলত যাদের কোনো দক্ষতাই নেই। একজন ক্লিনারকে দেখানো হচ্ছে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, নির্মাণ শ্রমিক ভিসা নিচ্ছেন লন্ডনের গ্র্যাজুয়েশন সনদ দেখিয়ে।

এমন অভিযোগ খোদ বাংলাদেশ মিশন কর্মকর্তাদের। সম্প্রতি দেশটি দক্ষ শ্রমিক ভিসার সুযোগ দেওয়ায় একটি অসাধু মহল ভুয়া সনদ তৈরি করে অদক্ষ শ্রমিকদের দেশটিতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে; যা অদূর ভবিষ্যতে দেশটির শ্রমবাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে। যার ফলে নতুন করে ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তর এই শ্রমবাজার।

এতে চলমান ভিসা প্রদান প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন মিশন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে সচেতন করতে এরই মধ্যে কমিউনিটিভিত্তিক নানা আয়োজনে প্রবাসীদের সতর্ক করছেন দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আবু জাফর ও কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন।

বিএম জামাল হোসেন বলেন, ‘আমিরাতে দক্ষ শ্রমিক আসার সুযোগ রয়েছে, দক্ষতা থাকলে আসতে বাধা নেই। কিন্তু অদক্ষ শ্রমিকদের দক্ষ দেখিয়ে নিয়ে আসছে একটি অসাধু মহল। প্রতিদিন কনস্যুলেটে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ ভিসা সত্যয়নের আবেদন আসে। যার সবগুলো দক্ষ শ্রমিক ভিসা। কিন্তু ভিসা সত্যয়নের সময় শিক্ষাগত সনদ যাচাই করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে সেগুলো শতভাগই ভুয়া। যদি দক্ষ শ্রমিকের ভিসাগুলোও এবার বন্ধ হয়ে যায়, তবে সেই দায় কে নেবে?।’

একই ইস্যুতে রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর বলেন, ‘আমরা অনেক সার্টিফিকেট পাচ্ছি, যারা এখানে আসার পর কাজ করতে পারছেন না। এগুলোর সঠিকতা যাচাই করতে গেলে অনেক সময় হতাশ হচ্ছি। সার্টিফিকেটগুলো সবই ভুয়া।’

অদক্ষ শ্রমিকের বিষয়ে আমিরাত অনেকটা নিরুৎসাহিত করছে বলেও জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ‘তারা (আমিরাত) এখন ধীরে ধীরে দক্ষ শ্রমিকের দিকে নজর দিচ্ছে। সেজন্য শ্রমবাজার সংকুচিত হবে। যদি আমরা অদক্ষ শ্রমিক তৈরি করি, তাহলে যেসব জায়গায় অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা আছে, শ্রমবাজারের নজর সেদিকে দিতে হবে।’

জানা গেছে, বর্তমানে ১২ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী রয়েছে দেশটিতে। তবে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দেশটির শ্রমভিসা। ২০১২ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশিদের অপরাধ ও অপরাধীর সংখ্যা বিবেচনায় নতুন শ্রমভিসা প্রদান প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি।

মিশনের দাবি, কমেছে অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা। যে কারণে কয়েক দফায় দক্ষ শ্রমিক নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। কিন্তু নতুন শ্রমিক প্রবেশের সুযোগ না থাকায় এরপর শ্রমবাজার ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসে। এই বাজার দখল করতে থাকে ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের মতো দেশগুলো।

অভিযোগ রয়েছে, এর মধ্যে নানাভাবে যতবারই বাংলাদেশি কর্মী যাওয়ার সুযোগ হয়েছে দেশটিতে, ততবারই দালাল ও বিভিন্ন অসাধু চক্র সুযোগের ‘অসৎ’ ব্যবহার করে বৃহত্তর এই শ্রমবাজারকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।

আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাসের দেওয়া এক তথ্য বলছে, ২০২০ থেকে ২০২২ মেয়াদে ভিজিট ভিসা থেকে কর্মী ভিসায় রূপান্তরের সুযোগ নিয়ে আমিরাতে প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। সে সময়ও এই সুযোগে বাড়ে দালালদের দৌরাত্ম্য। কিছু অসাধু চক্র কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশিদের থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।

ইউরোপ পাঠানোর নামে আদায় করে ১৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে পরবর্তী সময়ে কর্মহীন ও অসহায় জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে বহু বাংলাদেশিকে। পরে দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য ভিজিট ভিসা থেকে সাধারণ কর্মী ভিসায় রূপান্তরের এই পথটিও বন্ধ করে দেয়।

এদিকে শ্রমভিসা বন্ধ থাকলেও শুধু দেশটির বাণিজ্যিক শহর দুবাইয়ে জন্য দক্ষ শ্রমিকের ভিসা পাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। যেসব ক্যাটাগরিতে ভিসা দেওয়া হচ্ছে, সেখানে শিক্ষাগত সনদ প্রদান বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে। তার মধ্যে পেশাদার ডাক্তার, প্রকৌশলী, হিসাবরক্ষকসহ বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরির ব্যবস্থাপক পদের ভিসা প্রদান করা হচ্ছে।

এ ছাড়া ব্যবসায়িক অংশীদার, বিনিয়োগকারী ও ১০ বছরের গোল্ডেন ভিসাও বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। দুবাইয়ের বাইরে আবুধাবিসহ দেশটির বাকি ছয়টি প্রদেশে বাংলাদেশিদের জন্য তেমন কোনো ভিসার ব্যবস্থা নেই।

সারাবেলার সংবাদ/ জেডআরসি/ ১৯ আগস্ট ২০২৩

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

দক্ষতার ভুয়া সনদ, ঝুঁকিতে আমিরাতের শ্রমবাজার

আপডেট সময় : ০৪:১৬:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৩

ঢাকা শহরে রিকশা চালান, কিন্তু সার্টিফিকেটে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। কোনো রকম এইচএসসি পাস, অথচ সনদে তিনি লন্ডনের একটি প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা। দক্ষতা প্রমাণে এমন ভুয়া সনদ ব্যবহার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসার আবেদন করছেন বাংলাদেশিরা। মূলত যাদের কোনো দক্ষতাই নেই। একজন ক্লিনারকে দেখানো হচ্ছে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, নির্মাণ শ্রমিক ভিসা নিচ্ছেন লন্ডনের গ্র্যাজুয়েশন সনদ দেখিয়ে।

এমন অভিযোগ খোদ বাংলাদেশ মিশন কর্মকর্তাদের। সম্প্রতি দেশটি দক্ষ শ্রমিক ভিসার সুযোগ দেওয়ায় একটি অসাধু মহল ভুয়া সনদ তৈরি করে অদক্ষ শ্রমিকদের দেশটিতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে; যা অদূর ভবিষ্যতে দেশটির শ্রমবাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে। যার ফলে নতুন করে ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তর এই শ্রমবাজার।

এতে চলমান ভিসা প্রদান প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন মিশন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে সচেতন করতে এরই মধ্যে কমিউনিটিভিত্তিক নানা আয়োজনে প্রবাসীদের সতর্ক করছেন দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আবু জাফর ও কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন।

বিএম জামাল হোসেন বলেন, ‘আমিরাতে দক্ষ শ্রমিক আসার সুযোগ রয়েছে, দক্ষতা থাকলে আসতে বাধা নেই। কিন্তু অদক্ষ শ্রমিকদের দক্ষ দেখিয়ে নিয়ে আসছে একটি অসাধু মহল। প্রতিদিন কনস্যুলেটে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ ভিসা সত্যয়নের আবেদন আসে। যার সবগুলো দক্ষ শ্রমিক ভিসা। কিন্তু ভিসা সত্যয়নের সময় শিক্ষাগত সনদ যাচাই করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে সেগুলো শতভাগই ভুয়া। যদি দক্ষ শ্রমিকের ভিসাগুলোও এবার বন্ধ হয়ে যায়, তবে সেই দায় কে নেবে?।’

একই ইস্যুতে রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর বলেন, ‘আমরা অনেক সার্টিফিকেট পাচ্ছি, যারা এখানে আসার পর কাজ করতে পারছেন না। এগুলোর সঠিকতা যাচাই করতে গেলে অনেক সময় হতাশ হচ্ছি। সার্টিফিকেটগুলো সবই ভুয়া।’

অদক্ষ শ্রমিকের বিষয়ে আমিরাত অনেকটা নিরুৎসাহিত করছে বলেও জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ‘তারা (আমিরাত) এখন ধীরে ধীরে দক্ষ শ্রমিকের দিকে নজর দিচ্ছে। সেজন্য শ্রমবাজার সংকুচিত হবে। যদি আমরা অদক্ষ শ্রমিক তৈরি করি, তাহলে যেসব জায়গায় অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা আছে, শ্রমবাজারের নজর সেদিকে দিতে হবে।’

জানা গেছে, বর্তমানে ১২ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী রয়েছে দেশটিতে। তবে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দেশটির শ্রমভিসা। ২০১২ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশিদের অপরাধ ও অপরাধীর সংখ্যা বিবেচনায় নতুন শ্রমভিসা প্রদান প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি।

মিশনের দাবি, কমেছে অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা। যে কারণে কয়েক দফায় দক্ষ শ্রমিক নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। কিন্তু নতুন শ্রমিক প্রবেশের সুযোগ না থাকায় এরপর শ্রমবাজার ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসে। এই বাজার দখল করতে থাকে ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের মতো দেশগুলো।

অভিযোগ রয়েছে, এর মধ্যে নানাভাবে যতবারই বাংলাদেশি কর্মী যাওয়ার সুযোগ হয়েছে দেশটিতে, ততবারই দালাল ও বিভিন্ন অসাধু চক্র সুযোগের ‘অসৎ’ ব্যবহার করে বৃহত্তর এই শ্রমবাজারকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।

আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাসের দেওয়া এক তথ্য বলছে, ২০২০ থেকে ২০২২ মেয়াদে ভিজিট ভিসা থেকে কর্মী ভিসায় রূপান্তরের সুযোগ নিয়ে আমিরাতে প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। সে সময়ও এই সুযোগে বাড়ে দালালদের দৌরাত্ম্য। কিছু অসাধু চক্র কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশিদের থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।

ইউরোপ পাঠানোর নামে আদায় করে ১৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে পরবর্তী সময়ে কর্মহীন ও অসহায় জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে বহু বাংলাদেশিকে। পরে দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য ভিজিট ভিসা থেকে সাধারণ কর্মী ভিসায় রূপান্তরের এই পথটিও বন্ধ করে দেয়।

এদিকে শ্রমভিসা বন্ধ থাকলেও শুধু দেশটির বাণিজ্যিক শহর দুবাইয়ে জন্য দক্ষ শ্রমিকের ভিসা পাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। যেসব ক্যাটাগরিতে ভিসা দেওয়া হচ্ছে, সেখানে শিক্ষাগত সনদ প্রদান বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে। তার মধ্যে পেশাদার ডাক্তার, প্রকৌশলী, হিসাবরক্ষকসহ বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরির ব্যবস্থাপক পদের ভিসা প্রদান করা হচ্ছে।

এ ছাড়া ব্যবসায়িক অংশীদার, বিনিয়োগকারী ও ১০ বছরের গোল্ডেন ভিসাও বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। দুবাইয়ের বাইরে আবুধাবিসহ দেশটির বাকি ছয়টি প্রদেশে বাংলাদেশিদের জন্য তেমন কোনো ভিসার ব্যবস্থা নেই।

সারাবেলার সংবাদ/ জেডআরসি/ ১৯ আগস্ট ২০২৩

Facebook Comments Box