ঢাকা ১১:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo আওয়ামী দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে সরকার সফল হবে না: তারেক Logo স্বৈরাচারের হিংস্র থাবা থেকে দেশ এখনও মুক্ত নয়: রিজভী Logo হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে যেভাবে ইসরায়েল খুঁজে বের করে হত্যা করেছে Logo সোনারগাঁওয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে যুবকের মৃত্যু Logo সংবাদ প্রকাশের পর বৃদ্ধা মহিলার ঠাই হলো স্বামীর বসত ভিটায় Logo সোনারগাঁয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি হালট দখল করে বালু ভরাট Logo ‘সংস্কারের ধীর গতি’ ও কাজের গুরুত্ব নির্ধারণ নিয়ে সমালোচনা, কী বলছেন উপদেষ্টারা? Logo আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু আজ Logo বাড়তে পারে ঈদ ও পূজার সরকারি ছুটি Logo আগামী বছর থেকে আবারও মাধ্যমিকে বিভাগ বিভাজন শুরু

তীব্র তাপপ্রবাহে ধানের পৌষ মাস, আম-লিচুর সর্বনাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
  • আপডেট সময় : ০৩:০১:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪ ১২ বার পঠিত

ঢাকা : তীব্র তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। গরমের কারণে প্রাণও যাচ্ছে। বৃষ্টির জন্য হা-হুতাশ করছে মানুষ। ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। খরায় ঝরে পড়ছে আম-লিচু। তবে খুশি বোরো ধান চাষীরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তাপপ্রবাহ আম-লিচুর ‘সর্বনাশ’ করলেও বোরো ধানের জন্য ‘পৌষ মাস’ হয়ে দেখা দিয়েছে। এবার ধান উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হলেও ব্যর্থ হবে আম-লিচুতে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত ৩১ মার্চ দেশে শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। এরপর থেকে একটানা এতদিন তাপপ্রবাহের ঘটনা ৭৬ বছরে দেখা যায়নি।

দেশের প্রায় সব জেলায় তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) সিলেট ও নেত্রকোনা জেলায় তাপপ্রবাহ না থাকলেও তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩২ ও ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন তাপপ্রবাহের মধ্যে ঢাকাসহ ১৭ অঞ্চলের তাপমাত্রা ছাড়ায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাত্রা।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) তাপমাত্রার পারদ ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে যশোরে, যা ৩৫ বছরে দেশের সর্বোচ্চ। অধিদপ্তর বলছে, ২১ জেলা রয়েছে তাপপ্রবাহের উচ্চ ঝুঁকিতে।

কৃষকদের অনেকে বলছেন, এখন ধান কাটা-মাড়াই ও শুকানোর মৌসুম। এই মুহূর্তে বৃষ্টি হলে ধান তোলা কঠিন হয়ে যাবে। তাই বৃষ্টিহীন আবহাওয়া আরও কয়েকদিন চান তারা।

তবে সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানিয়েছেন, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার।

এতদিন ধরে বেশি তাপমাত্রা এতবেশি এলাকাজুড়ে এর আগে কখনও থাকেনি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা।

অনুকূল আবহাওয়ার কারণে দেশে এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে। চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই পাকা ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষক। মাঠে এখন কেবল আধাপাকা ধান, যা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা। তবে ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলেই ধান কেটে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিএসও) ড. মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, “বোরো ধান সবাই একই সময়ে লাগায় না। একেক জন একেক সময় লাগায়। হাওরে আগাম বোরো লাগায় কৃষকরা। কারণ, ওইদিকে বন্যা বা পানি আসার একটা বিষয় আছে।

“যারা আগাম বোরো লাগিয়েছে তাদের জন্য এখন পৌষ মাস। কারণ তাদের ধান উঠে যাচ্ছে। বোরো ধান উঠানোর সময় অনেক বৃষ্টি, কালবৈশাখী ঝড় হয়। এতে কিন্তু অনেক ক্ষতি হয়। ধান শুকানো যায় না, এতেও অনেক ক্ষতি হয়। তারপর হাওরে বন্যা আসে অনেক সময়, এবার তা হয় নাই। হাওরের ধান নির্বিঘ্নে উঠে গেছে, তার জন্য সেখানকার কৃষকদের এখন পৌষ মাস।”

তিনি বলেন, “হাওর বাদ দিয়ে বাকিদের কথা যদি আপনি ভাবেন তাহলে আগাম যারা ধান লাগিয়েছে তাদের জন্যও ভালো হয়েছে। দেশে আগাম বোরো চাষ হয় মধ্যাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে। দেরিতে লাগানো হয় উত্তরাঞ্চলে। কারণ, ওইখানে আলু আর সরিষা লাগানো হয়। এর ফলে ওইখানে দেরি হয়।

“এরই মাঝে যারা আগাম লাগায় ফেলেছেন, তারা খুব সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। এই গরমে ধান পাকে দ্রুত। এতে তাদের জন্য ভালো হয়েছে। এবার ঠিকঠাক মতো ফসল তুলে আনতে পারবেন কৃষকরা। এতে তাদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম।”

যারা দেরিতে বোরো লাগিয়েছেন তাদের কিছু অদৃশ্য ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।

সাজ্জাদুর রহমান বলেন, “এখন শুধু দিনের তাপমাত্রা না রাতেরও তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। যেখানে ২০-২৫ ডিগ্রি থাকার কথা, সেখানে ২৮-৩০ ডিগ্রি থাকছে। ফলে এবার ধানের চিটা না হলেও বীজের পুরুত্ব কিছুটা কমে যেতে পারে। ধানের দানাটি পরিপূর্ণ হবে না।

“কারণ, পরিপূর্ণভাবে কার্বোহাইড্রেটটা জমা হবে না। তবে এতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন কম হবে না। কারণ, মধ্যাঞ্চলের ধান বেশিরভাগই ঠিকঠাক মতো কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের ধানও কিছুদিনের মধ্যে উঠে যাবে।”

ফল গবেষণা কেন্দ্রের (বিএআরআই) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘস্থায়ী খরা হলে আম-লিচুসহ সব ধরনের ফসলেরই ক্ষতি হয়। এসময় মাটিতে রস না থাকার কারণে আম-লিচুর বোটা শুকিয়ে যায়, এতে সেগুলো ঝরে যায়। খরা যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, আম-লিচু ঝরে পড়ার আশঙ্কা তত বেড়ে যাবে।

“খরা দীর্ঘস্থায়ী হলে আম-লিচুর বৃদ্ধিও অনেকটা কমে যায়। কারণ, এতে আম-লিচুর ওপরের স্তর, অর্থাৎ খোসা অনেক শক্ত হয়ে যায়। খোসা শক্ত হলে আম-লিচু বাড়তে পারে না, এতে সেগুলোর আকৃতিও ছোট হয়ে যায়। আর আম-লিচুর খোসা শক্ত হওয়ার পর যদি বৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে খোসাটা যতটা বাড়ে তার চেয়ে ভেতরের বৃদ্ধিটা বেশি হয়। এসময় আম-লিচু ফেটে যায়।”

বিএআরআইর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, কয়েকদিন বৃষ্টির পর যদি আবার খরা হয় তাহলে আম-লিচুর হার্ভেস্টিং পিরিয়ড খাটো হয়ে যায়। অর্থাৎ আম-লিচু একটু আগাম পেকে যায়। এতেও ফলের আকার ছোট হয়।

তিনি বলেন, “এখন আম-লিচুর বাড়ন্ত সময়, তাই খরা এমন দীর্ঘ হওয়ায় সেগুলো ঝরে পড়ার প্রবণতা বেড়েছে। অর্থাৎ আম-লিচু যে পরিমাণ ঝরার কথা ছিল তার চেয়ে একটু বেশি ঝরেছে। এদিক থেকে একটু ক্ষতি হয়েছে।”

চাষিদের হাতাশার প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শফিকুল ইসলাম বলেন, “চাষিরা হতাশ তো হবেনই। কারণ স্বাভাবিকের তুলনায় আম-লিচু তো একটু বেশি ঝরেছে। এটা তো তাদের ক্ষতি।

“আর সামনে কী আছে, এখনও আমরা জানি না। যতক্ষণ পর্যন্ত বৃষ্টি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষতির আসল রূপটা বোঝা মুশকিল। বৃষ্টিটা কবে নাগাদ হচ্ছে, কী পরিমাণ হচ্ছে, বৃষ্টিটা শীলা বৃষ্টি নাকি- এমন অনেক কিছুই সামনে ঘটতে পারে।”

এমনিতেই মুকুলের সময় যে বৃষ্টিটা হয়েছে তাতেও কৃষকের বেশ ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেক গাছে ঠিকমতো ফল ধারণই হয়নি। যার কারণে সেখানেও কৃষকরা কিছুটা হতাশাগ্রস্ত। তারপর আবার তারা একটা দীর্ঘ খরাতে পড়েছে। তাই তাদের হতাশ হওয়াটা স্বাভাবিক।

“কিন্তু আমরা যেটা মনে করি- গাছে যেটুকু আম-লিচু আছে, এখনও যদি ঠিকমতো বৃষ্টি হয়, আবহাওয়া অনুকূলে আসে তাতে পুরোপুরি না হলেও কিছুটা ফলন পাওয়া সম্ভব।”

এবার কোনোভাবেই আম-লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না উল্লেখ করে এর কারণও ব্যাখ্যা করেন বিএআরআইর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় গত বছরের উৎপাদনের হিসাব অনুসারে। গত বছর তো আম-লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। আর এবার তো মুকুলই ঠিকমতো আসেনি। গত বছরের হিসাবে যে হারে মুকুল আসার কথা তার ৬০ শতাংশ মুকুল এসেছে এবার।

“এতেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটা চ্যালেঞ্জ এসেছে। তার ওপর এবারের দীর্ঘ তাপদাহেও অনেক আম-লিচু ঝরে গেছে। এটাও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।”

তবে এই খরার কারণে কাঁঠালের ক্ষতি হবে না জানিয়ে বিএআরআইর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, “কাঁঠালের বিষয়টি একটু ভিন্ন। খরার কারণে কাঁঠালের তেমন সমস্যা হয় না। খরায় আম-লিচু যতটা ঝরে পরে কাঁঠাল ততটা ঝরে না।”

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

তীব্র তাপপ্রবাহে ধানের পৌষ মাস, আম-লিচুর সর্বনাশ

আপডেট সময় : ০৩:০১:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪

ঢাকা : তীব্র তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। গরমের কারণে প্রাণও যাচ্ছে। বৃষ্টির জন্য হা-হুতাশ করছে মানুষ। ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। খরায় ঝরে পড়ছে আম-লিচু। তবে খুশি বোরো ধান চাষীরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তাপপ্রবাহ আম-লিচুর ‘সর্বনাশ’ করলেও বোরো ধানের জন্য ‘পৌষ মাস’ হয়ে দেখা দিয়েছে। এবার ধান উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হলেও ব্যর্থ হবে আম-লিচুতে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত ৩১ মার্চ দেশে শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। এরপর থেকে একটানা এতদিন তাপপ্রবাহের ঘটনা ৭৬ বছরে দেখা যায়নি।

দেশের প্রায় সব জেলায় তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) সিলেট ও নেত্রকোনা জেলায় তাপপ্রবাহ না থাকলেও তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩২ ও ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন তাপপ্রবাহের মধ্যে ঢাকাসহ ১৭ অঞ্চলের তাপমাত্রা ছাড়ায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাত্রা।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) তাপমাত্রার পারদ ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে যশোরে, যা ৩৫ বছরে দেশের সর্বোচ্চ। অধিদপ্তর বলছে, ২১ জেলা রয়েছে তাপপ্রবাহের উচ্চ ঝুঁকিতে।

কৃষকদের অনেকে বলছেন, এখন ধান কাটা-মাড়াই ও শুকানোর মৌসুম। এই মুহূর্তে বৃষ্টি হলে ধান তোলা কঠিন হয়ে যাবে। তাই বৃষ্টিহীন আবহাওয়া আরও কয়েকদিন চান তারা।

তবে সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানিয়েছেন, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার।

এতদিন ধরে বেশি তাপমাত্রা এতবেশি এলাকাজুড়ে এর আগে কখনও থাকেনি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা।

অনুকূল আবহাওয়ার কারণে দেশে এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে। চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই পাকা ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষক। মাঠে এখন কেবল আধাপাকা ধান, যা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা। তবে ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলেই ধান কেটে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিএসও) ড. মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, “বোরো ধান সবাই একই সময়ে লাগায় না। একেক জন একেক সময় লাগায়। হাওরে আগাম বোরো লাগায় কৃষকরা। কারণ, ওইদিকে বন্যা বা পানি আসার একটা বিষয় আছে।

“যারা আগাম বোরো লাগিয়েছে তাদের জন্য এখন পৌষ মাস। কারণ তাদের ধান উঠে যাচ্ছে। বোরো ধান উঠানোর সময় অনেক বৃষ্টি, কালবৈশাখী ঝড় হয়। এতে কিন্তু অনেক ক্ষতি হয়। ধান শুকানো যায় না, এতেও অনেক ক্ষতি হয়। তারপর হাওরে বন্যা আসে অনেক সময়, এবার তা হয় নাই। হাওরের ধান নির্বিঘ্নে উঠে গেছে, তার জন্য সেখানকার কৃষকদের এখন পৌষ মাস।”

তিনি বলেন, “হাওর বাদ দিয়ে বাকিদের কথা যদি আপনি ভাবেন তাহলে আগাম যারা ধান লাগিয়েছে তাদের জন্যও ভালো হয়েছে। দেশে আগাম বোরো চাষ হয় মধ্যাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে। দেরিতে লাগানো হয় উত্তরাঞ্চলে। কারণ, ওইখানে আলু আর সরিষা লাগানো হয়। এর ফলে ওইখানে দেরি হয়।

“এরই মাঝে যারা আগাম লাগায় ফেলেছেন, তারা খুব সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। এই গরমে ধান পাকে দ্রুত। এতে তাদের জন্য ভালো হয়েছে। এবার ঠিকঠাক মতো ফসল তুলে আনতে পারবেন কৃষকরা। এতে তাদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম।”

যারা দেরিতে বোরো লাগিয়েছেন তাদের কিছু অদৃশ্য ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।

সাজ্জাদুর রহমান বলেন, “এখন শুধু দিনের তাপমাত্রা না রাতেরও তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। যেখানে ২০-২৫ ডিগ্রি থাকার কথা, সেখানে ২৮-৩০ ডিগ্রি থাকছে। ফলে এবার ধানের চিটা না হলেও বীজের পুরুত্ব কিছুটা কমে যেতে পারে। ধানের দানাটি পরিপূর্ণ হবে না।

“কারণ, পরিপূর্ণভাবে কার্বোহাইড্রেটটা জমা হবে না। তবে এতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন কম হবে না। কারণ, মধ্যাঞ্চলের ধান বেশিরভাগই ঠিকঠাক মতো কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের ধানও কিছুদিনের মধ্যে উঠে যাবে।”

ফল গবেষণা কেন্দ্রের (বিএআরআই) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘস্থায়ী খরা হলে আম-লিচুসহ সব ধরনের ফসলেরই ক্ষতি হয়। এসময় মাটিতে রস না থাকার কারণে আম-লিচুর বোটা শুকিয়ে যায়, এতে সেগুলো ঝরে যায়। খরা যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, আম-লিচু ঝরে পড়ার আশঙ্কা তত বেড়ে যাবে।

“খরা দীর্ঘস্থায়ী হলে আম-লিচুর বৃদ্ধিও অনেকটা কমে যায়। কারণ, এতে আম-লিচুর ওপরের স্তর, অর্থাৎ খোসা অনেক শক্ত হয়ে যায়। খোসা শক্ত হলে আম-লিচু বাড়তে পারে না, এতে সেগুলোর আকৃতিও ছোট হয়ে যায়। আর আম-লিচুর খোসা শক্ত হওয়ার পর যদি বৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে খোসাটা যতটা বাড়ে তার চেয়ে ভেতরের বৃদ্ধিটা বেশি হয়। এসময় আম-লিচু ফেটে যায়।”

বিএআরআইর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, কয়েকদিন বৃষ্টির পর যদি আবার খরা হয় তাহলে আম-লিচুর হার্ভেস্টিং পিরিয়ড খাটো হয়ে যায়। অর্থাৎ আম-লিচু একটু আগাম পেকে যায়। এতেও ফলের আকার ছোট হয়।

তিনি বলেন, “এখন আম-লিচুর বাড়ন্ত সময়, তাই খরা এমন দীর্ঘ হওয়ায় সেগুলো ঝরে পড়ার প্রবণতা বেড়েছে। অর্থাৎ আম-লিচু যে পরিমাণ ঝরার কথা ছিল তার চেয়ে একটু বেশি ঝরেছে। এদিক থেকে একটু ক্ষতি হয়েছে।”

চাষিদের হাতাশার প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শফিকুল ইসলাম বলেন, “চাষিরা হতাশ তো হবেনই। কারণ স্বাভাবিকের তুলনায় আম-লিচু তো একটু বেশি ঝরেছে। এটা তো তাদের ক্ষতি।

“আর সামনে কী আছে, এখনও আমরা জানি না। যতক্ষণ পর্যন্ত বৃষ্টি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষতির আসল রূপটা বোঝা মুশকিল। বৃষ্টিটা কবে নাগাদ হচ্ছে, কী পরিমাণ হচ্ছে, বৃষ্টিটা শীলা বৃষ্টি নাকি- এমন অনেক কিছুই সামনে ঘটতে পারে।”

এমনিতেই মুকুলের সময় যে বৃষ্টিটা হয়েছে তাতেও কৃষকের বেশ ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেক গাছে ঠিকমতো ফল ধারণই হয়নি। যার কারণে সেখানেও কৃষকরা কিছুটা হতাশাগ্রস্ত। তারপর আবার তারা একটা দীর্ঘ খরাতে পড়েছে। তাই তাদের হতাশ হওয়াটা স্বাভাবিক।

“কিন্তু আমরা যেটা মনে করি- গাছে যেটুকু আম-লিচু আছে, এখনও যদি ঠিকমতো বৃষ্টি হয়, আবহাওয়া অনুকূলে আসে তাতে পুরোপুরি না হলেও কিছুটা ফলন পাওয়া সম্ভব।”

এবার কোনোভাবেই আম-লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না উল্লেখ করে এর কারণও ব্যাখ্যা করেন বিএআরআইর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় গত বছরের উৎপাদনের হিসাব অনুসারে। গত বছর তো আম-লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। আর এবার তো মুকুলই ঠিকমতো আসেনি। গত বছরের হিসাবে যে হারে মুকুল আসার কথা তার ৬০ শতাংশ মুকুল এসেছে এবার।

“এতেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটা চ্যালেঞ্জ এসেছে। তার ওপর এবারের দীর্ঘ তাপদাহেও অনেক আম-লিচু ঝরে গেছে। এটাও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।”

তবে এই খরার কারণে কাঁঠালের ক্ষতি হবে না জানিয়ে বিএআরআইর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, “কাঁঠালের বিষয়টি একটু ভিন্ন। খরার কারণে কাঁঠালের তেমন সমস্যা হয় না। খরায় আম-লিচু যতটা ঝরে পরে কাঁঠাল ততটা ঝরে না।”

Facebook Comments Box