ঢাকা ০৪:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা চাইলেই শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য নয় দিল্লি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৪:১৪:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪ ২৯ বার পঠিত

ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। গেল ২০দিন ধরে ভারতেই অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়। এই সরকারে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি না থাকলেও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর মতো রাজনৈতিক দলগুলো ড. ইউনূসের সরকারকে সমর্থন করছে।

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবি জানিয়েছে অনেকে। এমনকি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগিরও শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছেন।

আর এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানালে ভারত কি তাকে ঢাকার হাতে তুলে দিতে বাধ্য? এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানো হয়নি দিল্লিকে। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের বেশিরভাগ নেতা-কর্মকর্তাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) বাতিল করা হয়েছে। যার দরুণ ভারতে থাকার বৈধ আশ্রয়টুকু ও হারাচ্ছেন শেখ হাসিনা। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা ও গণহত্যার মতো মামলা হয়েছে অনেকগুলো।

এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর কথায়, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৩-য় প্রত্যর্পণ চুক্তি হওয়ার পরে শেখ হাসিনাকে ভারত ঢাকার হাতে তুলে দিতে বাধ্য।” মির্জা ফখরুল আরও জানিয়েছেন, প্রত্যর্পণের পরে খুনের আসামি হিসাবে শেখ হাসিনার বিচার করা হবে ঢাকার আদালতে।

তবে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন জবাব দেয়নি ভারত সরকার। অন্যদিকে দিল্লিতে শেখ হাসিনার অবস্থান বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা আরও বাড়াবে তাও ভালোমত বুঝতে পারছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার বলছে, এমন পরিস্থিতি এড়াতে তৃতীয় কোনও দেশে শেখ হাসিনাকে নিরাপদে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য তোড়জোড় করছে দিল্লি।

এছাড়া শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে ২০১৩-র প্রত্যর্পণ চুক্তির তেমন কোনও গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছে না ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই চুক্তি করা হয়েছিল দু’দেশের মধ্যে জঙ্গি, পাচারকারী ও চোরাচালানিদের প্রত্যর্পণের উদ্দেশ্যে। ২০১৬-য় এই চুক্তিতে বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়েছিল।

কোনও দেশ যদি মনে করে, রাজনৈতিক কারণে কাউকে প্রত্যর্পণের দাবি জানানো হচ্ছে, তবে তারা দাবি মানতে বাধ্য নয়। এখানে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবি ভারত যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ বলে মনে করে, সেক্ষেত্রেও দাবি মানতে বাধ্য নয় দিল্লি। আবার চুক্তির আর একটি ধারায় রয়েছে, প্রত্যর্পণের পরে দীর্ঘ কারাবাস ও প্রাণহানির আশঙ্কা থাকলে অন্য পক্ষের দাবি খারিজ করা যাবে।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭৫-এর ১৫ অগস্ট শেখ হাসিনার গোটা পরিবার সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পরে ইন্দিরা গান্ধী তাঁদের দুই বোনকে আশ্রয় দেন। সময়ের ব্যবধানে ফের শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে একটি ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ সরকারের হাতে ভারত কখনওই তাঁদের ছেড়ে দিতে পারে না। তাই তৃতীয় কোনও দেশে তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

ঢাকা চাইলেই শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য নয় দিল্লি

আপডেট সময় : ০৪:১৪:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। গেল ২০দিন ধরে ভারতেই অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়। এই সরকারে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি না থাকলেও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর মতো রাজনৈতিক দলগুলো ড. ইউনূসের সরকারকে সমর্থন করছে।

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবি জানিয়েছে অনেকে। এমনকি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগিরও শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছেন।

আর এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানালে ভারত কি তাকে ঢাকার হাতে তুলে দিতে বাধ্য? এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানো হয়নি দিল্লিকে। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের বেশিরভাগ নেতা-কর্মকর্তাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) বাতিল করা হয়েছে। যার দরুণ ভারতে থাকার বৈধ আশ্রয়টুকু ও হারাচ্ছেন শেখ হাসিনা। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা ও গণহত্যার মতো মামলা হয়েছে অনেকগুলো।

এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর কথায়, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৩-য় প্রত্যর্পণ চুক্তি হওয়ার পরে শেখ হাসিনাকে ভারত ঢাকার হাতে তুলে দিতে বাধ্য।” মির্জা ফখরুল আরও জানিয়েছেন, প্রত্যর্পণের পরে খুনের আসামি হিসাবে শেখ হাসিনার বিচার করা হবে ঢাকার আদালতে।

তবে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন জবাব দেয়নি ভারত সরকার। অন্যদিকে দিল্লিতে শেখ হাসিনার অবস্থান বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা আরও বাড়াবে তাও ভালোমত বুঝতে পারছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার বলছে, এমন পরিস্থিতি এড়াতে তৃতীয় কোনও দেশে শেখ হাসিনাকে নিরাপদে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য তোড়জোড় করছে দিল্লি।

এছাড়া শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে ২০১৩-র প্রত্যর্পণ চুক্তির তেমন কোনও গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছে না ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই চুক্তি করা হয়েছিল দু’দেশের মধ্যে জঙ্গি, পাচারকারী ও চোরাচালানিদের প্রত্যর্পণের উদ্দেশ্যে। ২০১৬-য় এই চুক্তিতে বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়েছিল।

কোনও দেশ যদি মনে করে, রাজনৈতিক কারণে কাউকে প্রত্যর্পণের দাবি জানানো হচ্ছে, তবে তারা দাবি মানতে বাধ্য নয়। এখানে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবি ভারত যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ বলে মনে করে, সেক্ষেত্রেও দাবি মানতে বাধ্য নয় দিল্লি। আবার চুক্তির আর একটি ধারায় রয়েছে, প্রত্যর্পণের পরে দীর্ঘ কারাবাস ও প্রাণহানির আশঙ্কা থাকলে অন্য পক্ষের দাবি খারিজ করা যাবে।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭৫-এর ১৫ অগস্ট শেখ হাসিনার গোটা পরিবার সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পরে ইন্দিরা গান্ধী তাঁদের দুই বোনকে আশ্রয় দেন। সময়ের ব্যবধানে ফের শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে একটি ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ সরকারের হাতে ভারত কখনওই তাঁদের ছেড়ে দিতে পারে না। তাই তৃতীয় কোনও দেশে তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Facebook Comments Box