ঢাকা ০৬:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকায় মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার নেয়া যায়নি তিন বছরেও

সারাবেলা ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:০১:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৪ বার পঠিত

ধানমন্ডি এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি

ঢাকায় জলাবদ্ধ রাস্তায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ মোট চার জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে বেঁচে গেছে ওই পরিবারের সাত মাস বয়সী এক শিশু। এ সম্পর্কিত ছবি ও ভিডিও নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বিবিসি বাংলাকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় এরইমধ্যে একটি মামলা হয়েছে। এর অভিযোগে বলা হয়েছে, অজ্ঞাতনামা কারো অবহেলার কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। মহসীন বলেন, “বিদ্যুৎ-টা কোথা থেকে আসছে সে বিষয়ে এখনো আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে।”

পুলিশ বলছে, বৃহস্পতিবার রাতে ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে চার জনের একটি পরিবার যাওয়ার সময় পানিতে পড়ে বিদুৎস্পৃষ্ট হয়। এসময় ঘটনাস্থলে থাকা একজন তাদের উদ্ধার করতে গেলে তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে তাদের হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক চার জনকে মৃত ঘোষণা করে।

এদের মধ্যে সাত মাস বয়সী এক শিশু আহত হলেও পরে সে সুস্থ হয়েছে। পরে ওই শিশুটিকে তার আত্মীয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঢাকার রাস্তায় ঝুলন্ত তার আর জলাবদ্ধতার এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। ঝুলন্ত তার থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা নিয়ে এর আগে নানা সমালোচনা হলেও খুব একটা পরিবর্তন আসেনি।

তবে সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি অবশ্য দাবি করছে যে, এসব সমস্যা সমাধানে তারা কাজ করে যাচ্ছেন তারা এবং এরইমধ্যে কিছুটা উন্নতিও হয়েছে। বৃহস্পতিবারের এই ঘটনাটি নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা।

” তিনি বলেন, ঢাকা শহরে যাতে জলাবদ্ধতা না হয় তার জন্য “আমাদের লোকজন রাতে বৃষ্টি, ঠাণ্ডার মধ্যেও মাঠে ছিল। ওয়াটার লগিং যাতে না হয় সেটার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আজ সকাল থেকেও লোকজন মাঠে আছে। আমরা সেটা মনিটরিং করছি,” বলেন তিনি। “

বিদ্যুতের তার কেন সেখানে ঝুলে থাকবে, ঝড়ে তো আসলে গাছ পড়ে, গাড়ি ভাঙ্গে… আমরা এগুলা অপসারণের চেষ্টা করছি।” এ ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার নিরসনে তারা কিছুটা উন্নতি করেছেন এবং আরো উন্নতি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তবে জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশনের উপায় থাকছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ডিপিডিসি-কে কিছু রাস্তা খননের অনুমতি দেয়া হয়েছে যাতে তারা কাজ শুরু করতে পারে। “সম্ভবত এটা আসাদগেট, মোহাম্মদপুর, মিরপুর রোড, ওই এলাকাতে। এছাড়া শের-এ-বাংলা নগরের কিছু এলাকাতে, তেজগাঁ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরগেট থেকে শুরু করে বিজয় সরণী হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত। ”

বিদ্যুৎ ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন সেবা যেমন স্যাটেলাইট টিভির কেবল, ইন্টারনেট ও টেলিফোনের ঝুলন্ত তার অপসারণের কর্মসূচি ঢাকাতে চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি। অনেকগুলো রাস্তায় ঝুলন্ত তার অপসারণ করা হয়ে গেলেও কিছু রাস্তায় পর্যায়ক্রমে অপসারণের কাজ এখনো চলছে বলেও জানান তিনি। “ঝুলন্ত যে সার্ভিস তারগুলো রয়েছে সেগুলো আমরা কেটে দিতে চেয়েছিলাম, কাটার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে, কিন্তু জনসাধারণের ভোগান্তি খুব বেড়ে যায়।

” তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করে রাস্তাগুলো ভাগ করে দেয়া হয়েছে। প্রতি মাসেই দুই চারটা করে রাস্তা থেকে তারা তার কেটে মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে নিচ্ছে। ঢাকা শহর থেকে ঝুলন্ত তার সরানোর লক্ষ্যে ২০২০ সালের অগাস্টে অভিযান শুরু করা হয়েছিল সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে।

পরে সেটি কেবল অপারেটরদের চাপের মুখে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় একই সময়ে হাতে নেয়া হয়েছিল মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার নেয়ার প্রকল্পও। তবে সেটিও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আটকে ছিল। এ বিষয়ে ডিপিডিসি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, যে কাজগুলোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল, কোভিডের কারণে তা প্রায় দুই বছর আটকে ছিল। প্রকল্পের পরিকল্পনা করতেও একটা লম্বা সময় লেগেছে। এছাড়া রাস্তা খননের জন্য বিভিন্ন দপ্তর থেকে অনুমতি পেতে আরো সময় লেগে গেছে। “পারমিশন পাওয়া, সমন্বয় করা অনেক কঠিন হয়ে যায়।

আদারওয়াইজ আমরা সব রেডি আছি।” দেওয়ান বলেন, রাস্তা খননের জন্য সিটি কর্পোরেশন এবং রোডস এন্ড হাইওয়েজ বিভাগের অনুমোদনের দরকার হয় তাদের। “একচুয়ালি পারমিশনটাই(আসল কারণ)। কারণ রোড এক্সক্যাভেশনে তো অনেকগুলো ইউটিলিটি যায়, আবার সিটি কর্পোরেশন নতুন রাস্তা হলে দিতে চায় না, আবার বর্ষার একটা ব্যাপার ছিল, এই-সেই গুলি আরকি।” ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, বিদ্যুতের তার মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার জন্য এ পর্যন্ত দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তারা। বিবিসি

সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ২২ সেপ্টম্বর ২০২৩

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

ঢাকায় মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার নেয়া যায়নি তিন বছরেও

আপডেট সময় : ০১:০১:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ঢাকায় জলাবদ্ধ রাস্তায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ মোট চার জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে বেঁচে গেছে ওই পরিবারের সাত মাস বয়সী এক শিশু। এ সম্পর্কিত ছবি ও ভিডিও নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বিবিসি বাংলাকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় এরইমধ্যে একটি মামলা হয়েছে। এর অভিযোগে বলা হয়েছে, অজ্ঞাতনামা কারো অবহেলার কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। মহসীন বলেন, “বিদ্যুৎ-টা কোথা থেকে আসছে সে বিষয়ে এখনো আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে।”

পুলিশ বলছে, বৃহস্পতিবার রাতে ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে চার জনের একটি পরিবার যাওয়ার সময় পানিতে পড়ে বিদুৎস্পৃষ্ট হয়। এসময় ঘটনাস্থলে থাকা একজন তাদের উদ্ধার করতে গেলে তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে তাদের হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক চার জনকে মৃত ঘোষণা করে।

এদের মধ্যে সাত মাস বয়সী এক শিশু আহত হলেও পরে সে সুস্থ হয়েছে। পরে ওই শিশুটিকে তার আত্মীয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঢাকার রাস্তায় ঝুলন্ত তার আর জলাবদ্ধতার এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। ঝুলন্ত তার থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা নিয়ে এর আগে নানা সমালোচনা হলেও খুব একটা পরিবর্তন আসেনি।

তবে সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি অবশ্য দাবি করছে যে, এসব সমস্যা সমাধানে তারা কাজ করে যাচ্ছেন তারা এবং এরইমধ্যে কিছুটা উন্নতিও হয়েছে। বৃহস্পতিবারের এই ঘটনাটি নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা।

” তিনি বলেন, ঢাকা শহরে যাতে জলাবদ্ধতা না হয় তার জন্য “আমাদের লোকজন রাতে বৃষ্টি, ঠাণ্ডার মধ্যেও মাঠে ছিল। ওয়াটার লগিং যাতে না হয় সেটার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আজ সকাল থেকেও লোকজন মাঠে আছে। আমরা সেটা মনিটরিং করছি,” বলেন তিনি। “

বিদ্যুতের তার কেন সেখানে ঝুলে থাকবে, ঝড়ে তো আসলে গাছ পড়ে, গাড়ি ভাঙ্গে… আমরা এগুলা অপসারণের চেষ্টা করছি।” এ ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার নিরসনে তারা কিছুটা উন্নতি করেছেন এবং আরো উন্নতি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তবে জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশনের উপায় থাকছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ডিপিডিসি-কে কিছু রাস্তা খননের অনুমতি দেয়া হয়েছে যাতে তারা কাজ শুরু করতে পারে। “সম্ভবত এটা আসাদগেট, মোহাম্মদপুর, মিরপুর রোড, ওই এলাকাতে। এছাড়া শের-এ-বাংলা নগরের কিছু এলাকাতে, তেজগাঁ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরগেট থেকে শুরু করে বিজয় সরণী হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত। ”

বিদ্যুৎ ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন সেবা যেমন স্যাটেলাইট টিভির কেবল, ইন্টারনেট ও টেলিফোনের ঝুলন্ত তার অপসারণের কর্মসূচি ঢাকাতে চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি। অনেকগুলো রাস্তায় ঝুলন্ত তার অপসারণ করা হয়ে গেলেও কিছু রাস্তায় পর্যায়ক্রমে অপসারণের কাজ এখনো চলছে বলেও জানান তিনি। “ঝুলন্ত যে সার্ভিস তারগুলো রয়েছে সেগুলো আমরা কেটে দিতে চেয়েছিলাম, কাটার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে, কিন্তু জনসাধারণের ভোগান্তি খুব বেড়ে যায়।

” তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করে রাস্তাগুলো ভাগ করে দেয়া হয়েছে। প্রতি মাসেই দুই চারটা করে রাস্তা থেকে তারা তার কেটে মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে নিচ্ছে। ঢাকা শহর থেকে ঝুলন্ত তার সরানোর লক্ষ্যে ২০২০ সালের অগাস্টে অভিযান শুরু করা হয়েছিল সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে।

পরে সেটি কেবল অপারেটরদের চাপের মুখে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় একই সময়ে হাতে নেয়া হয়েছিল মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার নেয়ার প্রকল্পও। তবে সেটিও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আটকে ছিল। এ বিষয়ে ডিপিডিসি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, যে কাজগুলোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল, কোভিডের কারণে তা প্রায় দুই বছর আটকে ছিল। প্রকল্পের পরিকল্পনা করতেও একটা লম্বা সময় লেগেছে। এছাড়া রাস্তা খননের জন্য বিভিন্ন দপ্তর থেকে অনুমতি পেতে আরো সময় লেগে গেছে। “পারমিশন পাওয়া, সমন্বয় করা অনেক কঠিন হয়ে যায়।

আদারওয়াইজ আমরা সব রেডি আছি।” দেওয়ান বলেন, রাস্তা খননের জন্য সিটি কর্পোরেশন এবং রোডস এন্ড হাইওয়েজ বিভাগের অনুমোদনের দরকার হয় তাদের। “একচুয়ালি পারমিশনটাই(আসল কারণ)। কারণ রোড এক্সক্যাভেশনে তো অনেকগুলো ইউটিলিটি যায়, আবার সিটি কর্পোরেশন নতুন রাস্তা হলে দিতে চায় না, আবার বর্ষার একটা ব্যাপার ছিল, এই-সেই গুলি আরকি।” ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, বিদ্যুতের তার মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার জন্য এ পর্যন্ত দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তারা। বিবিসি

সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ২২ সেপ্টম্বর ২০২৩

Facebook Comments Box