ঢাকা ০৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

টিআইবি: ‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজন অনুদান, ঋণ নয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ৩১ বার পঠিত

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা করতে, ঋণের পরিবর্তে অনুদান পাওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে আলোচনা করতে, বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়। টিআইবি বলেছে, “এই সংকট মোকাবেলার দায় কেবল বাংলাদেশের নয়। দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের।”

বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে চাওয়া ১০০ কোটি ডলারের বিপরীতে, সংস্থা দুটি ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ এবং ৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার অনুদানের আশ্বাস দিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশের বাধ্য হওয়ার ঘটনায়, গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি।

একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটের মতো বৈশ্বিক মানবিক সংকট মোকাবেলার জন্য অনুদান পেতে, বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সঙ্গে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি, এই নীপিড়নমূলক মানবিক সংকট মোকাবেলায়, নিজ নিজ অবস্থান থেকে, ন্যায্য ও যথাযথভাবে এগিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “রোহিঙ্গা সংকটের মতো এমন একটি মানবিক সংকট মোকাবেলার সব ভার শুধু বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেয়া, পুরোপুরি অন্যায্য এবং তা মোটেই কার্যকর ও টেকসই সমাধান নয়। এই সংকট সমাধানের জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত পদক্ষেপ ও বৈশ্বিক সংহতি।”

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, “মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় প্রদান ও বছরের পর বছর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজেদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ করেছে বাংলাদেশ। এই বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝা সম্মিলিতভাবেই বহন করার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। নির্যাতনে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বলে, এই অর্থনৈতিক বোঝার পুরোটাই অনন্তকাল ধরে বাংলাদেশের কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।”

টিআইবি আরো বলেছে, “বিশেষত, যখন বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেই মুহূর্তে এই ঋণ চাওয়ার সিদ্ধান্ত দ্বিগুণ উদ্বেগজনক।”

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা এবং রোহিঙ্গা সংকট সংশ্লিষ্ট সব খরচের সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত বণ্টন নিশ্চিত করার জন্য, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।”

তিনি আরো বলেন, “ঋণ নয়, অনুদান হিসেবে সহায়তা প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রতি আমরা আহ্বান জানাই। আর, বাস্তুহীন রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক অনুদান হ্রাসের প্রবণতায় টিআইবি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।”

“বিশ্বব্যাংক ও এডিবির এমন প্রবণতার মাধ্যমে প্রমাণ হয়; আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভীরুর মতো তাদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে এবং এই বোঝা বহনের দায়িত্ব শুধু বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। অনুদান কমে যাওয়ার কারণে মাথাপিছু খাদ্য সহযোগিতায় বরাদ্দ প্রতি মাসে ১২ ডলার থেকে ৮ ডলারে নেমে এসেছে;” উল্লেখ করে টিআইবি।

ড. জামান বলেন, “বৈশ্বিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে মিয়ানমারের বহুমাত্রিক অংশীদারিত্ব, স্বার্থসংশ্লিষ্ট দেশসমূহের দায়িত্ব হলো, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের টেকসই সমাধান এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য মিয়ানমারকে জবাবদিহির মুখোমুখি করার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো।”

রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের আন্তর্জাতিক উদ্যোগ সমন্বয়ে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য জাতিসংঘ এবং তার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়, তা নিশ্চিত করা জাতিসংঘের নৈতিক দায়িত্ব। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগণের ওপর চলমান নিপীড়নসহ এই সংকটের মূল কারণসমূহ মোকাবেলায় জাতিসংঘকেও কাজ করতে হবে।”

“রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যথেষ্ট ভোগান্তির শিকার হয়েছে এবং মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনের অধিকার তাদের রয়েছে। রোহিঙ্গা নিপীড়ন-গণহত্যা থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ বইতে গিয়ে, বাংলাদেশ অনেক বেশি চাপে রয়েছে। এখন, সেই চাপ মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশকে ঋণ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে; এটা নিন্দনীয় কাজ ছাড়া আর কী হতে পাবেরে!” যোগ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

টিআইবি: ‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজন অনুদান, ঋণ নয়’

আপডেট সময় : ০৮:৫৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা করতে, ঋণের পরিবর্তে অনুদান পাওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে আলোচনা করতে, বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়। টিআইবি বলেছে, “এই সংকট মোকাবেলার দায় কেবল বাংলাদেশের নয়। দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের।”

বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে চাওয়া ১০০ কোটি ডলারের বিপরীতে, সংস্থা দুটি ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ এবং ৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার অনুদানের আশ্বাস দিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশের বাধ্য হওয়ার ঘটনায়, গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি।

একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটের মতো বৈশ্বিক মানবিক সংকট মোকাবেলার জন্য অনুদান পেতে, বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সঙ্গে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি, এই নীপিড়নমূলক মানবিক সংকট মোকাবেলায়, নিজ নিজ অবস্থান থেকে, ন্যায্য ও যথাযথভাবে এগিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “রোহিঙ্গা সংকটের মতো এমন একটি মানবিক সংকট মোকাবেলার সব ভার শুধু বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেয়া, পুরোপুরি অন্যায্য এবং তা মোটেই কার্যকর ও টেকসই সমাধান নয়। এই সংকট সমাধানের জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত পদক্ষেপ ও বৈশ্বিক সংহতি।”

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, “মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় প্রদান ও বছরের পর বছর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজেদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ করেছে বাংলাদেশ। এই বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝা সম্মিলিতভাবেই বহন করার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। নির্যাতনে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বলে, এই অর্থনৈতিক বোঝার পুরোটাই অনন্তকাল ধরে বাংলাদেশের কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।”

টিআইবি আরো বলেছে, “বিশেষত, যখন বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেই মুহূর্তে এই ঋণ চাওয়ার সিদ্ধান্ত দ্বিগুণ উদ্বেগজনক।”

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা এবং রোহিঙ্গা সংকট সংশ্লিষ্ট সব খরচের সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত বণ্টন নিশ্চিত করার জন্য, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।”

তিনি আরো বলেন, “ঋণ নয়, অনুদান হিসেবে সহায়তা প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রতি আমরা আহ্বান জানাই। আর, বাস্তুহীন রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক অনুদান হ্রাসের প্রবণতায় টিআইবি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।”

“বিশ্বব্যাংক ও এডিবির এমন প্রবণতার মাধ্যমে প্রমাণ হয়; আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভীরুর মতো তাদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে এবং এই বোঝা বহনের দায়িত্ব শুধু বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। অনুদান কমে যাওয়ার কারণে মাথাপিছু খাদ্য সহযোগিতায় বরাদ্দ প্রতি মাসে ১২ ডলার থেকে ৮ ডলারে নেমে এসেছে;” উল্লেখ করে টিআইবি।

ড. জামান বলেন, “বৈশ্বিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে মিয়ানমারের বহুমাত্রিক অংশীদারিত্ব, স্বার্থসংশ্লিষ্ট দেশসমূহের দায়িত্ব হলো, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের টেকসই সমাধান এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য মিয়ানমারকে জবাবদিহির মুখোমুখি করার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো।”

রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের আন্তর্জাতিক উদ্যোগ সমন্বয়ে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য জাতিসংঘ এবং তার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়, তা নিশ্চিত করা জাতিসংঘের নৈতিক দায়িত্ব। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগণের ওপর চলমান নিপীড়নসহ এই সংকটের মূল কারণসমূহ মোকাবেলায় জাতিসংঘকেও কাজ করতে হবে।”

“রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যথেষ্ট ভোগান্তির শিকার হয়েছে এবং মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনের অধিকার তাদের রয়েছে। রোহিঙ্গা নিপীড়ন-গণহত্যা থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ বইতে গিয়ে, বাংলাদেশ অনেক বেশি চাপে রয়েছে। এখন, সেই চাপ মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশকে ঋণ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে; এটা নিন্দনীয় কাজ ছাড়া আর কী হতে পাবেরে!” যোগ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

Facebook Comments Box