ঢাকা ০৪:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝুঁকি নিয়েই চাকরি ছাড়লেন জীসান, হলেন সফল উদ্যোক্তা

ফিচার ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৬:৪৩:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৩ ৩৪৯ বার পঠিত

ঢাকা : তিনি কথায় পটু। এই কথাই পরবর্তীতে তাকে করেছে দেশব্যাপী সমাদৃত। তার মতে, “যে যেই কাজটা ভালো পারে তার সে কাজটা নিয়েই এগিয়ে যাওয়া উচিৎ। আমি খুব ভালো কথা বলতে পারি। তাই আমার শব্দটাকেই কাজে লাগিয়ে নিজেকেও এগিয়ে নিলাম।” এই কথায় যিনি আজ সকলের কাছে এক নামে সুপরিচিত তিনি হলেন ‘জিসান বিডি লার্নিং এন্ড কনসালটেন্সি’র ফাউন্ডার এবং স্পিকার সোলায়মান আহমেদ জিসান।

সোলায়মান আহমেদ জিসান একাধারে একজন জনপ্রিয় উপস্থাপক, পাবলিক স্পিকার এবং ট্রেইনার । লন্ডনের ‘World Book of Records’ এ আছে তার নাম । ২০২০ সালের করোনাকালীন সময়ে পৃথিবীর মানুষ যখন ঘরবন্দী ঠিক তখন জুলাই মাসের ১৭ ও ১৮ তারিখ দুইদিন ব্যাপী একটা অনলাইন প্রোগ্রাম করা হয়।

যেখানে সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৪৫০০ জন মানুষ রেজিষ্ট্রেশন করে এবং ৫৫ জন বক্তা বক্তব্য দেন জুম প্ল্যাটফর্মে। সেই সময় জুম প্ল্যাটফর্ম এ সর্বোচ্চ ১০০০ মানুষ নিয়ে এই ধরনের কোনো প্রোগ্রাম এর আগে কখনো করা হয়নি। তাই, এটি একটি ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছে সেই সময়। ২০১৯ সালে সামাজিক কর্মকান্ড ও তরুনদের অনুপ্রানিত করার জন্য ‘সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ লিডারশীপ এওয়ার্ড’ ও পান জিসান। এছাড়াও তার জীবনে বহু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

সোলায়মান আহমেদ জিসান পুরনো ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা । বাবা ছিলেন বেসরকারী চাকরিজীবী এবং মা গৃহিনী। তিন ভাই বোনের মাঝে সবার ছোট ও একমাত্র ছেলে। তার স্কুল ছিল ঐতিহ্যবাহী ‘আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ’ আর কলেজ ছিল ‘নটর ডেম কলেজ’। তিনি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা চলাকালীন অবস্থাতেই পার্ট টাইম কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি দুই পুত্র ও এক কন্যার জনক, তার স্ত্রী একজন গৃহিনী।

উদ্যোক্তা জীবনের পূর্বে দীর্ঘ ১৩ বছর তিনি কর্পোরেট সেক্টরে কাজ করেছেন। ২০০৭ সালে ‘ওয়েব বাংলাদেশ গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ নামক একটি আইটি কোম্পানি তে ‘গ্রাফিক্স ডিজাইনার এবং এডমিনিস্ট্রেটিভ এসিস্ট্যান্ট’ হিসেবে তার চাকরি জীবন শুরু করেন । উক্ত প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের প্রথম সার্চ ইঞ্জিন ও ই-কমার্স সাইটগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছিলো। এর পরবর্তীতে তিনি ২০০৮ সালে যুক্ত হন দুবাই ভিত্তিক টেলিকম কোম্পানি ‘ওয়ারিদ টেলিকম’ এ একজন কাস্টমার ম্যানেজার হিসেবে। যা পরবর্তীতে এয়ারটেল হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিতি বহন করে। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি এখানেই ছিলেন।

২০১০ সালের পর ২০২০ পর্যন্ত তিনি বেশ কয়েকটি আইটি কোম্পানিতে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করেছেন। প্রথমে ইউনিকন সলিউসন লিমিটেডে ই-স্ক্যান এন্টিভাইরাস, এরপর মাইক্রোটপ টেকনোলজি লিমিটেডে এভিজি এন্টিভাইরাস এবং সর্বশেষ ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেডে পান্ডা ও বিটডিফেন্ডার এন্টিভাইরাস সফটও্য়্যার নিয়ে কাজ করেন।

টানা ১০ বছর এত দীর্ঘ সময় এন্টিভাইরাস সেক্টর নিয়ে কাজ করেছেন তিনি যা আমাদের দেশে খুব কম সংখ্যক মানুষ করতে পেরেছে। এছাড়া ২০১৪-১৫ সালে চাকুরীর পাশাপাশি স্বনামধন্য ‘ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব’ এর মার্কেটিং বিভাগের দ্বায়িত্ব পায়। সে সুযোগে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ফিফা’ 𝗙𝗜𝗙𝗔 “𝗜𝗻𝘁𝗲𝗿𝗻𝗮𝘁𝗶𝗼𝗻𝗮𝗹 𝗙𝗲𝗱𝗲𝗿𝗮𝘁𝗶𝗼𝗻 𝗼𝗳 𝗔𝘀𝘀𝗼𝗰𝗶𝗮𝘁𝗶𝗼𝗻 𝗙𝗼𝗼𝘁𝗯𝗮𝗹𝗹” এর একটি সংস্থা ‘এ.এফ.সি’ 𝗔𝗙𝗖 “𝗔𝘀𝗶𝗮𝗻 𝗙𝗼𝗼𝘁𝗯𝗮𝗹𝗹 𝗖𝗼𝗻𝗳𝗲𝗱𝗲𝗿𝗮𝘁𝗶𝗼𝗻” থেকে ক্লাবের বিভিন্ন বিষয়ের উপর আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং পাওয়ার সুযোগ হয়।

২০২০ সালের নভেম্বর মাসে তিনি যখন করনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন তখন থেকেই তার মনে হয়েছিল এখন যদি তার নিজের কোনো প্রতিষ্ঠান থাকত তবে এই মহামারীর সময় তাকে আর কোনো প্রতিষ্ঠানের মুখাপেক্ষী হতে হত না। তখন তিনি ঠিক করেছিলেন সুস্থ হবার পর যদি সুযোগ হয় তবে অবশ্যই উদ্যোক্তা হবেন । যেহেতু তিনি অনেক বছর অনলাইন প্লাটফর্ম এর সাথে থেকে কাজ করেছেন তার এই ক্ষেত্রে দক্ষতা থাকায় তার মনে হয়েছে এই সময় এই দক্ষতা কে কাজে লাগালে হয়তো তিনি ভালো কিছু করতে পারবেন।

এছাড়া তিনি আইটি সেক্টরে থাকায় তার এনালগ কোম্পানিকে ডিজিটালাইজড করার ধারণা রয়েছে, ই-কমার্স নিয়েও তার ধারণার কমতি ছিল না। সেই দক্ষতা ও আল্লাহ্ এর প্রতি পূর্ন বিশ্বাসে ভর করেই তিনি অবশেষে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন। ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন নিয়ে যেহেতু তার ধারণা ছিল তাই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তিনি একজন ট্রেইনার এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করতে থাকেন। এছাড়া তার কিছু কর্পোরেট সেক্টরের সাথে বাৎসরিক চুক্তি থাকায় মহামারীর সময় থেকেও তিনি পিঁছিয়ে যান নি।

করপোরেট ক্যারিয়ার ছাড়াও ‘পাবলিক স্পীকিং’ তার ক্যারিয়ারে একটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। ছোট বেলা থেকেই উপস্থাপনা ও স্টেজের প্রতি ছিলো তার দুর্নিবার আকর্ষন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘বিশ্ব কলা কেন্দ্র’ থেকে আবৃত্তি ও নিউজ প্রেজেন্টেশনের উপর প্রশিক্ষণও নিয়েছেন তিনি। এই ভালো লাগার জায়গা থেকেই মূলত তার পাবলিক স্পীকার বা ট্রেইনার হিসেবে পদার্পণ করা।

বাংলাদেশে যখন এই পাবলিক স্পিকিং এবং মেন্টরিং এর জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে তখন তিনি তার উপস্থাপনা ও বক্তব্য গুলো তুলে ধরতে শুরু করেন। ফেসবুক পেজ থেকে শুরু করে ইউটিউব এ বিভিন্ন ধরনের ভিডিও আপলোড করা, ইউনিভার্সিটিতে লেকচারও দিয়েছেন তিনি। সারা বাংলাদেশে প্রায় হাজারের কাছাকাছি অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থাপনা করেছেন। নেপালে সরাসরি ও কোলকাতায় অনলাইনে প্রশিক্ষন দেয়ার সুযোগও হয়েছে। সোলায়মান আহমেদ জিসান মূলত তরুণ প্রজন্ম বা তরুণদের উদ্দেশ্যে করে তার সকল কার্যক্রম গুলো চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার মতে তরুণরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। তরুনদের শুধু অনুপ্রেরনা দিলে হবে না প্রয়োজন সঠিক দিক নির্দেশনা।

পাবলিক স্পীকিংয়ে তার মেন্টর হচ্ছেন বাংলাদেশের অন্যতম একজন পাবলিক স্পিকার এবং মোটিভেশনাল স্পিকার ড.আলমাসুর রহমান। “ভালো মানুষ হবার অভিনয় করার দরকার কি? ভালো মানুষ হয়ে গেলেই তো হয়।’’ ড.আলমাসুর রহমান স্যারের এই কথাটিই সোলায়মান আহমেদ জিসান তার জীবনে বাহক হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন। তিনি নিজে ঠকতে রাজি কিন্তু কাউকে ঠকাতে নয় । তার এই নীতি শুধু তার জন্য নয় আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও প্রদর্শক হিসেবে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

সফলতা থাকলে ব্যর্থতা এবং বাঁধার গল্পও থাকবে সমসাময়িক ভাবে। সোলায়মান আহমেদ জিসান এর জীবনের এতদিনের সফলতার যাত্রায় তিনি করেছেন কঠোর পরিশ্রম। থেমে থাকেন নি এবং থেমে যান নি এক মূহুর্তের জন্যও। তিনি তার কর্ম জীবনে বেশ কয়েকবার কর্পোরেট পলিটিক্স এর শিকার হয়েছেন। জনপ্রিয়তা যখন তার একটু করে বাঁড়তে শুরু করে তখনই মূলত তিনি নানা বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন।

সেই সময় থেকেই তিনি তার জীবনে অনেক প্রোগ্রাম বিনামূল্যেও করেছেন শুধু তার প্যাশনের জায়গা থেকে। তার কাছে ‘মূল্য’ এর চেয়ে ‘মূল্যায়ন’ এর গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে তিনি ব্যক্তি জীবনে খুব পরিশ্রমী, নিয়মানুবর্তী এবং একজন ইতিবাচক মানুষ। তিনি সবসময় বিশ্বাস করেন আওয়াজ নয় কাজ ও সফলতা দিয়ে জবাব মানে সবচেয়ে বড় জবাব। এর কোনো পাল্টা জবাব হয়না। আর প্রথমেই সমাদরের পিছনে নয়, নিজেকে তৈরি করার পেছনে সময় দিতে হবে আর পরামর্শ গ্রহণে বেছে নিতে হবে সঠিক জায়গা।

২০২০ সালের ডিসেম্বর এর ১৫ তারিখ “জিসানবিডি লার্নিং এন্ড কনসালটেন্সি”এর সাথে যখন তিনি পুরোদমে যুক্ত হন তার পর পরই তিনি উদ্যোক্তা প্ল্যাটফর্ম ই-ক্লাবের সাথে যুক্ত হন। যেহেতু আগে থেকেই ই-ক্লাবের সাথে তার পরিচিতি ছিল সেই সুবাদে এবং নিজের দক্ষতায় পরবর্তীতে তিনি ই-ক্লাবের একজন সদস্য হিসেবেও যুক্ত হন পরবর্তীতে দায়িত্বেও নিযুক্ত হন আর এখন তিনি ই-ক্লাবের একজন পরিচালক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া দেশের তরুনদের দক্ষতা উন্নয়নে সেরা প্ল্যাটফর্ম ‘ইয়ুথ ক্যারিয়ার ইন্সটিটিউটে’ একজন মেন্টর ও প্রেজেন্টার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

নিজের কাজে কতটুকু সন্তুষ্ট তা দিয়ে কাজের সফলতাকে মূল্যায়ন করেন সোলায়মান আহমেদ জিসান। তার কাছে কতদূর যেতে পেরেছি তার চেয়ে কতটুকু করতে পেরেছি সেটাই সফলতা। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি বড় ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেনিং এজেন্সি তৈরি করার পরিকল্পনা রেখেছেন তিনি। আগামী ২ বছরে নিজের একটা বড় প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে চান। তার সাথে অবশ্যই নিজের উদ্দ্যোগ ‘জিসান বিডি লার্নিং এন্ড কন্সালটেন্সি’ কে আরও বড় আকারে প্রতিষ্ঠিত রুপ দিতে চান ভবিষ্যতে।

সোলায়মান আহমেদ জিসান আমাদের প্রজন্মের জন্য একজন উদাহরণ। তার যাত্রা এবং পরিকল্পনা আরও অনেকদূর বিস্তৃত হোক সেই কামনা করি । তার জন্য রইলো অসংখ্য শুভকামনা।

সারাবেলার সংবাদ/ জেডআরসি/ ২৮ আগস্ট ২০২৩

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

ঝুঁকি নিয়েই চাকরি ছাড়লেন জীসান, হলেন সফল উদ্যোক্তা

আপডেট সময় : ০৬:৪৩:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৩

ঢাকা : তিনি কথায় পটু। এই কথাই পরবর্তীতে তাকে করেছে দেশব্যাপী সমাদৃত। তার মতে, “যে যেই কাজটা ভালো পারে তার সে কাজটা নিয়েই এগিয়ে যাওয়া উচিৎ। আমি খুব ভালো কথা বলতে পারি। তাই আমার শব্দটাকেই কাজে লাগিয়ে নিজেকেও এগিয়ে নিলাম।” এই কথায় যিনি আজ সকলের কাছে এক নামে সুপরিচিত তিনি হলেন ‘জিসান বিডি লার্নিং এন্ড কনসালটেন্সি’র ফাউন্ডার এবং স্পিকার সোলায়মান আহমেদ জিসান।

সোলায়মান আহমেদ জিসান একাধারে একজন জনপ্রিয় উপস্থাপক, পাবলিক স্পিকার এবং ট্রেইনার । লন্ডনের ‘World Book of Records’ এ আছে তার নাম । ২০২০ সালের করোনাকালীন সময়ে পৃথিবীর মানুষ যখন ঘরবন্দী ঠিক তখন জুলাই মাসের ১৭ ও ১৮ তারিখ দুইদিন ব্যাপী একটা অনলাইন প্রোগ্রাম করা হয়।

যেখানে সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৪৫০০ জন মানুষ রেজিষ্ট্রেশন করে এবং ৫৫ জন বক্তা বক্তব্য দেন জুম প্ল্যাটফর্মে। সেই সময় জুম প্ল্যাটফর্ম এ সর্বোচ্চ ১০০০ মানুষ নিয়ে এই ধরনের কোনো প্রোগ্রাম এর আগে কখনো করা হয়নি। তাই, এটি একটি ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছে সেই সময়। ২০১৯ সালে সামাজিক কর্মকান্ড ও তরুনদের অনুপ্রানিত করার জন্য ‘সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ লিডারশীপ এওয়ার্ড’ ও পান জিসান। এছাড়াও তার জীবনে বহু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

সোলায়মান আহমেদ জিসান পুরনো ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা । বাবা ছিলেন বেসরকারী চাকরিজীবী এবং মা গৃহিনী। তিন ভাই বোনের মাঝে সবার ছোট ও একমাত্র ছেলে। তার স্কুল ছিল ঐতিহ্যবাহী ‘আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ’ আর কলেজ ছিল ‘নটর ডেম কলেজ’। তিনি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা চলাকালীন অবস্থাতেই পার্ট টাইম কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি দুই পুত্র ও এক কন্যার জনক, তার স্ত্রী একজন গৃহিনী।

উদ্যোক্তা জীবনের পূর্বে দীর্ঘ ১৩ বছর তিনি কর্পোরেট সেক্টরে কাজ করেছেন। ২০০৭ সালে ‘ওয়েব বাংলাদেশ গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ নামক একটি আইটি কোম্পানি তে ‘গ্রাফিক্স ডিজাইনার এবং এডমিনিস্ট্রেটিভ এসিস্ট্যান্ট’ হিসেবে তার চাকরি জীবন শুরু করেন । উক্ত প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের প্রথম সার্চ ইঞ্জিন ও ই-কমার্স সাইটগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছিলো। এর পরবর্তীতে তিনি ২০০৮ সালে যুক্ত হন দুবাই ভিত্তিক টেলিকম কোম্পানি ‘ওয়ারিদ টেলিকম’ এ একজন কাস্টমার ম্যানেজার হিসেবে। যা পরবর্তীতে এয়ারটেল হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিতি বহন করে। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি এখানেই ছিলেন।

২০১০ সালের পর ২০২০ পর্যন্ত তিনি বেশ কয়েকটি আইটি কোম্পানিতে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করেছেন। প্রথমে ইউনিকন সলিউসন লিমিটেডে ই-স্ক্যান এন্টিভাইরাস, এরপর মাইক্রোটপ টেকনোলজি লিমিটেডে এভিজি এন্টিভাইরাস এবং সর্বশেষ ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেডে পান্ডা ও বিটডিফেন্ডার এন্টিভাইরাস সফটও্য়্যার নিয়ে কাজ করেন।

টানা ১০ বছর এত দীর্ঘ সময় এন্টিভাইরাস সেক্টর নিয়ে কাজ করেছেন তিনি যা আমাদের দেশে খুব কম সংখ্যক মানুষ করতে পেরেছে। এছাড়া ২০১৪-১৫ সালে চাকুরীর পাশাপাশি স্বনামধন্য ‘ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব’ এর মার্কেটিং বিভাগের দ্বায়িত্ব পায়। সে সুযোগে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ফিফা’ 𝗙𝗜𝗙𝗔 “𝗜𝗻𝘁𝗲𝗿𝗻𝗮𝘁𝗶𝗼𝗻𝗮𝗹 𝗙𝗲𝗱𝗲𝗿𝗮𝘁𝗶𝗼𝗻 𝗼𝗳 𝗔𝘀𝘀𝗼𝗰𝗶𝗮𝘁𝗶𝗼𝗻 𝗙𝗼𝗼𝘁𝗯𝗮𝗹𝗹” এর একটি সংস্থা ‘এ.এফ.সি’ 𝗔𝗙𝗖 “𝗔𝘀𝗶𝗮𝗻 𝗙𝗼𝗼𝘁𝗯𝗮𝗹𝗹 𝗖𝗼𝗻𝗳𝗲𝗱𝗲𝗿𝗮𝘁𝗶𝗼𝗻” থেকে ক্লাবের বিভিন্ন বিষয়ের উপর আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং পাওয়ার সুযোগ হয়।

২০২০ সালের নভেম্বর মাসে তিনি যখন করনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন তখন থেকেই তার মনে হয়েছিল এখন যদি তার নিজের কোনো প্রতিষ্ঠান থাকত তবে এই মহামারীর সময় তাকে আর কোনো প্রতিষ্ঠানের মুখাপেক্ষী হতে হত না। তখন তিনি ঠিক করেছিলেন সুস্থ হবার পর যদি সুযোগ হয় তবে অবশ্যই উদ্যোক্তা হবেন । যেহেতু তিনি অনেক বছর অনলাইন প্লাটফর্ম এর সাথে থেকে কাজ করেছেন তার এই ক্ষেত্রে দক্ষতা থাকায় তার মনে হয়েছে এই সময় এই দক্ষতা কে কাজে লাগালে হয়তো তিনি ভালো কিছু করতে পারবেন।

এছাড়া তিনি আইটি সেক্টরে থাকায় তার এনালগ কোম্পানিকে ডিজিটালাইজড করার ধারণা রয়েছে, ই-কমার্স নিয়েও তার ধারণার কমতি ছিল না। সেই দক্ষতা ও আল্লাহ্ এর প্রতি পূর্ন বিশ্বাসে ভর করেই তিনি অবশেষে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন। ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন নিয়ে যেহেতু তার ধারণা ছিল তাই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তিনি একজন ট্রেইনার এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করতে থাকেন। এছাড়া তার কিছু কর্পোরেট সেক্টরের সাথে বাৎসরিক চুক্তি থাকায় মহামারীর সময় থেকেও তিনি পিঁছিয়ে যান নি।

করপোরেট ক্যারিয়ার ছাড়াও ‘পাবলিক স্পীকিং’ তার ক্যারিয়ারে একটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। ছোট বেলা থেকেই উপস্থাপনা ও স্টেজের প্রতি ছিলো তার দুর্নিবার আকর্ষন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘বিশ্ব কলা কেন্দ্র’ থেকে আবৃত্তি ও নিউজ প্রেজেন্টেশনের উপর প্রশিক্ষণও নিয়েছেন তিনি। এই ভালো লাগার জায়গা থেকেই মূলত তার পাবলিক স্পীকার বা ট্রেইনার হিসেবে পদার্পণ করা।

বাংলাদেশে যখন এই পাবলিক স্পিকিং এবং মেন্টরিং এর জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে তখন তিনি তার উপস্থাপনা ও বক্তব্য গুলো তুলে ধরতে শুরু করেন। ফেসবুক পেজ থেকে শুরু করে ইউটিউব এ বিভিন্ন ধরনের ভিডিও আপলোড করা, ইউনিভার্সিটিতে লেকচারও দিয়েছেন তিনি। সারা বাংলাদেশে প্রায় হাজারের কাছাকাছি অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থাপনা করেছেন। নেপালে সরাসরি ও কোলকাতায় অনলাইনে প্রশিক্ষন দেয়ার সুযোগও হয়েছে। সোলায়মান আহমেদ জিসান মূলত তরুণ প্রজন্ম বা তরুণদের উদ্দেশ্যে করে তার সকল কার্যক্রম গুলো চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার মতে তরুণরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। তরুনদের শুধু অনুপ্রেরনা দিলে হবে না প্রয়োজন সঠিক দিক নির্দেশনা।

পাবলিক স্পীকিংয়ে তার মেন্টর হচ্ছেন বাংলাদেশের অন্যতম একজন পাবলিক স্পিকার এবং মোটিভেশনাল স্পিকার ড.আলমাসুর রহমান। “ভালো মানুষ হবার অভিনয় করার দরকার কি? ভালো মানুষ হয়ে গেলেই তো হয়।’’ ড.আলমাসুর রহমান স্যারের এই কথাটিই সোলায়মান আহমেদ জিসান তার জীবনে বাহক হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন। তিনি নিজে ঠকতে রাজি কিন্তু কাউকে ঠকাতে নয় । তার এই নীতি শুধু তার জন্য নয় আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও প্রদর্শক হিসেবে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

সফলতা থাকলে ব্যর্থতা এবং বাঁধার গল্পও থাকবে সমসাময়িক ভাবে। সোলায়মান আহমেদ জিসান এর জীবনের এতদিনের সফলতার যাত্রায় তিনি করেছেন কঠোর পরিশ্রম। থেমে থাকেন নি এবং থেমে যান নি এক মূহুর্তের জন্যও। তিনি তার কর্ম জীবনে বেশ কয়েকবার কর্পোরেট পলিটিক্স এর শিকার হয়েছেন। জনপ্রিয়তা যখন তার একটু করে বাঁড়তে শুরু করে তখনই মূলত তিনি নানা বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন।

সেই সময় থেকেই তিনি তার জীবনে অনেক প্রোগ্রাম বিনামূল্যেও করেছেন শুধু তার প্যাশনের জায়গা থেকে। তার কাছে ‘মূল্য’ এর চেয়ে ‘মূল্যায়ন’ এর গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে তিনি ব্যক্তি জীবনে খুব পরিশ্রমী, নিয়মানুবর্তী এবং একজন ইতিবাচক মানুষ। তিনি সবসময় বিশ্বাস করেন আওয়াজ নয় কাজ ও সফলতা দিয়ে জবাব মানে সবচেয়ে বড় জবাব। এর কোনো পাল্টা জবাব হয়না। আর প্রথমেই সমাদরের পিছনে নয়, নিজেকে তৈরি করার পেছনে সময় দিতে হবে আর পরামর্শ গ্রহণে বেছে নিতে হবে সঠিক জায়গা।

২০২০ সালের ডিসেম্বর এর ১৫ তারিখ “জিসানবিডি লার্নিং এন্ড কনসালটেন্সি”এর সাথে যখন তিনি পুরোদমে যুক্ত হন তার পর পরই তিনি উদ্যোক্তা প্ল্যাটফর্ম ই-ক্লাবের সাথে যুক্ত হন। যেহেতু আগে থেকেই ই-ক্লাবের সাথে তার পরিচিতি ছিল সেই সুবাদে এবং নিজের দক্ষতায় পরবর্তীতে তিনি ই-ক্লাবের একজন সদস্য হিসেবেও যুক্ত হন পরবর্তীতে দায়িত্বেও নিযুক্ত হন আর এখন তিনি ই-ক্লাবের একজন পরিচালক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া দেশের তরুনদের দক্ষতা উন্নয়নে সেরা প্ল্যাটফর্ম ‘ইয়ুথ ক্যারিয়ার ইন্সটিটিউটে’ একজন মেন্টর ও প্রেজেন্টার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

নিজের কাজে কতটুকু সন্তুষ্ট তা দিয়ে কাজের সফলতাকে মূল্যায়ন করেন সোলায়মান আহমেদ জিসান। তার কাছে কতদূর যেতে পেরেছি তার চেয়ে কতটুকু করতে পেরেছি সেটাই সফলতা। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি বড় ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ট্রেনিং এজেন্সি তৈরি করার পরিকল্পনা রেখেছেন তিনি। আগামী ২ বছরে নিজের একটা বড় প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে চান। তার সাথে অবশ্যই নিজের উদ্দ্যোগ ‘জিসান বিডি লার্নিং এন্ড কন্সালটেন্সি’ কে আরও বড় আকারে প্রতিষ্ঠিত রুপ দিতে চান ভবিষ্যতে।

সোলায়মান আহমেদ জিসান আমাদের প্রজন্মের জন্য একজন উদাহরণ। তার যাত্রা এবং পরিকল্পনা আরও অনেকদূর বিস্তৃত হোক সেই কামনা করি । তার জন্য রইলো অসংখ্য শুভকামনা।

সারাবেলার সংবাদ/ জেডআরসি/ ২৮ আগস্ট ২০২৩

Facebook Comments Box