ঢাকা ১১:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

জোর করে চাঁদা আদায় মারপিট, বিষ পানে আত্মহত্যা কৃষকের

পাবনা প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৮:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৪৮ বার পঠিত

চিকিৎসার জন্য গরু বিক্রি করে টাকা গচ্ছিত রাখার খবর পেয়ে চাঁদাবাজরা চাঁদার জন্য চাপ দেয়া এবং হেনস্তা করায় বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন ঠান্টু নামে এক কৃষক । ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার সাঁথিয়া নাগডেমড়া ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত মজিবর শেখের ছেলে। গরু পালন আর কৃষি কাজের উপরই নির্ভরশীল ছিলেন তিনি।

মৃত  ঠান্টুর ছেলে অনার্স পড়ুয়া রবিউল ইসলাম রোববার দুপুরে সাঁথিয়া প্রেসক্লাবে এসে অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবা এমনি এমনি আত্মহত্যা করেননি। মুলত চাঁদাবাজদের চাঁদার জন্য বারবার চাপ এবং অপমান অপদস্থ করার কারণে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ২০ /২২ দিন আগে আমার বাবাকে জুয়েল সাদ্দামরা চাঁদা না দেয়ায় বাড়ি থেকে টেনে হিচড়ে সাবেক চেয়ারম্যান হারুনের বাড়িতে নিয়ে বেদম মারপিট করে। খবর পেয়ে আমার মা সেখানে গিয়ে হাতে পায়ে ধরেও তার স্বামীকে ফেরত পারেননি। শেষে প্রতিবেশী বাবুল এসে টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করলে তবেই আমার বাবাকে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। তারা বলে আগে তদন্ত করবো তারপর মামলা ।

পরে একদিন পুলিশ বাড়িতে জিজ্ঞাসা করতে আসলে আমার মা জুয়েলদের ভয়ে বলে কোন অভিযোগ নেই। কারণ এর আগেই জুয়েল আমার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে যে পুলিশকে সত্যি কথাটা বললে গ্রাম থেকেই তাড়িয়ে দেয়া হবে। পরে দেখলাম আমি যদি এভাবে থানাপুলিশ করি তাহলে বাবাকে বাঁচানো যাবে না। এ দিকে বাবাকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে প্রথমে এনায়েতপুর পরে ঢাকাতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে নিউরোসায়েন্সে ভর্তি করানো হয়। জানা গেল আমার বাবার ব্রেন স্ট্রোক করেছে। তার একটা সাইড অবশ হয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা শেষে বাবাকে বাড়িতে নিয়ে এসে বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা দেয়ায় তিনি একটু সুস্হ্য হন। তবে পুরোপুরি ভাল হননি। এরই মাঝে গত কয়েকদিন আগে আব্বার চিকিৎসার জন্য একটা গরু বিক্রি করা হয়। এ খবর জুয়েলরা পাওয়ার পর থেকে পিছে লাগে। জুয়েলের লোকজন বাড়ির নিকট দিয়ে যায় আর বলে চাঁদা দিলেই কি গ্রামে থাকতে পারবিনি। চাঁদা আর বিশ হাজার টাকা দিলে থাকতে পারবি। এভাবেই তারা মানসিক নির্যাতন করতো।

গত পরশুদিন আমাকে বলে শনিবার বিকেলে লাঠি মিছিল হবে উপস্থিত থাকবি। নইলে কিন্তু ঠ্যাং ভেঙ্গে ফেলবো। ভয়ে আমি মিছিলে যাই। ওদিকে আমার বাবাকে বলে তোর কাছে তো ২০ হাজার টাকা পাব আর বিশ হাজার দে নইলে গ্রামে থাকতে পারবি না । ওই দিন রাত থেকেই বাবা টেনশন ছিলেন। গত রাতে বলেন আমি আর বাঁচবো না। মানুষের এত নির্যাতন অত্যাচার ভাল লাগে না। বলে না খেয়েই শুয়ে পড়েন। সকালে মাছ কেনার কথা বলে বাজারে গিয়ে বিষ কিনে এনে ঘরের দরজা বন্ধ করে বিষ পান করেন। বিষয়টি টের পেয়ে হাসপাতালে নিয়েও বাবাকে বাাঁচাতে পারলাম না।

রবিউল বলেন, আমার বাবার নিকট থেকে যারা জোর করে চাঁদা নিয়েছে ,তাকে মানসিক নির্যাতন করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে আমি তাদের বিচার চাই। আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে আমি আমার বাবাকে যে হয়রানি করা হয়েছে এর সুষ্ঠ বিচার চাই।

এ বিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান হারুন রবিউলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন ঠান্টু ঋনে জর্জরিত ছিল। সকালে ঘুম থেকে ওঠে শুনি ঠান্টু বিষ খাইছে। ব্যস এতটুকুই।

সাঁথিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম রবিউলের বক্তব্যকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে বলেন, সে বিষ পান করেছে ।তারাই বলেছে। আমার নিকট ভিডিও বক্তব্য আছে। এ ব্যাপারে সাঁথিয়া থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে।

সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ১৫ অক্টোবর ২০২৩

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

জোর করে চাঁদা আদায় মারপিট, বিষ পানে আত্মহত্যা কৃষকের

আপডেট সময় : ০৮:৫৮:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৩

চিকিৎসার জন্য গরু বিক্রি করে টাকা গচ্ছিত রাখার খবর পেয়ে চাঁদাবাজরা চাঁদার জন্য চাপ দেয়া এবং হেনস্তা করায় বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন ঠান্টু নামে এক কৃষক । ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার সাঁথিয়া নাগডেমড়া ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত মজিবর শেখের ছেলে। গরু পালন আর কৃষি কাজের উপরই নির্ভরশীল ছিলেন তিনি।

মৃত  ঠান্টুর ছেলে অনার্স পড়ুয়া রবিউল ইসলাম রোববার দুপুরে সাঁথিয়া প্রেসক্লাবে এসে অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবা এমনি এমনি আত্মহত্যা করেননি। মুলত চাঁদাবাজদের চাঁদার জন্য বারবার চাপ এবং অপমান অপদস্থ করার কারণে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ২০ /২২ দিন আগে আমার বাবাকে জুয়েল সাদ্দামরা চাঁদা না দেয়ায় বাড়ি থেকে টেনে হিচড়ে সাবেক চেয়ারম্যান হারুনের বাড়িতে নিয়ে বেদম মারপিট করে। খবর পেয়ে আমার মা সেখানে গিয়ে হাতে পায়ে ধরেও তার স্বামীকে ফেরত পারেননি। শেষে প্রতিবেশী বাবুল এসে টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করলে তবেই আমার বাবাকে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। তারা বলে আগে তদন্ত করবো তারপর মামলা ।

পরে একদিন পুলিশ বাড়িতে জিজ্ঞাসা করতে আসলে আমার মা জুয়েলদের ভয়ে বলে কোন অভিযোগ নেই। কারণ এর আগেই জুয়েল আমার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে যে পুলিশকে সত্যি কথাটা বললে গ্রাম থেকেই তাড়িয়ে দেয়া হবে। পরে দেখলাম আমি যদি এভাবে থানাপুলিশ করি তাহলে বাবাকে বাঁচানো যাবে না। এ দিকে বাবাকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে প্রথমে এনায়েতপুর পরে ঢাকাতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে নিউরোসায়েন্সে ভর্তি করানো হয়। জানা গেল আমার বাবার ব্রেন স্ট্রোক করেছে। তার একটা সাইড অবশ হয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা শেষে বাবাকে বাড়িতে নিয়ে এসে বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা দেয়ায় তিনি একটু সুস্হ্য হন। তবে পুরোপুরি ভাল হননি। এরই মাঝে গত কয়েকদিন আগে আব্বার চিকিৎসার জন্য একটা গরু বিক্রি করা হয়। এ খবর জুয়েলরা পাওয়ার পর থেকে পিছে লাগে। জুয়েলের লোকজন বাড়ির নিকট দিয়ে যায় আর বলে চাঁদা দিলেই কি গ্রামে থাকতে পারবিনি। চাঁদা আর বিশ হাজার টাকা দিলে থাকতে পারবি। এভাবেই তারা মানসিক নির্যাতন করতো।

গত পরশুদিন আমাকে বলে শনিবার বিকেলে লাঠি মিছিল হবে উপস্থিত থাকবি। নইলে কিন্তু ঠ্যাং ভেঙ্গে ফেলবো। ভয়ে আমি মিছিলে যাই। ওদিকে আমার বাবাকে বলে তোর কাছে তো ২০ হাজার টাকা পাব আর বিশ হাজার দে নইলে গ্রামে থাকতে পারবি না । ওই দিন রাত থেকেই বাবা টেনশন ছিলেন। গত রাতে বলেন আমি আর বাঁচবো না। মানুষের এত নির্যাতন অত্যাচার ভাল লাগে না। বলে না খেয়েই শুয়ে পড়েন। সকালে মাছ কেনার কথা বলে বাজারে গিয়ে বিষ কিনে এনে ঘরের দরজা বন্ধ করে বিষ পান করেন। বিষয়টি টের পেয়ে হাসপাতালে নিয়েও বাবাকে বাাঁচাতে পারলাম না।

রবিউল বলেন, আমার বাবার নিকট থেকে যারা জোর করে চাঁদা নিয়েছে ,তাকে মানসিক নির্যাতন করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে আমি তাদের বিচার চাই। আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে আমি আমার বাবাকে যে হয়রানি করা হয়েছে এর সুষ্ঠ বিচার চাই।

এ বিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান হারুন রবিউলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন ঠান্টু ঋনে জর্জরিত ছিল। সকালে ঘুম থেকে ওঠে শুনি ঠান্টু বিষ খাইছে। ব্যস এতটুকুই।

সাঁথিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম রবিউলের বক্তব্যকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে বলেন, সে বিষ পান করেছে ।তারাই বলেছে। আমার নিকট ভিডিও বক্তব্য আছে। এ ব্যাপারে সাঁথিয়া থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে।

সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ১৫ অক্টোবর ২০২৩

Facebook Comments Box