ঢাকা ১১:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ভোলায় সাংবাদিক ইউনুছ শরীফের উপর হামলা, বিভিন্ন মহলের নিন্দা Logo পাসপোর্ট আনতে গিয়ে সোনারগাঁয়ের দুই যুবক নিহত Logo সৈয়দপুরে গরিব ও দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ Logo আইফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ড! ১২০০০ পর্যটককে নিরাপদ স্থানে সরান হল Logo সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে: প্রেস সচিব Logo উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড: শিশুসহ নিহত ২ Logo বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক জোরদারের আশাবাদ প্রণয় ভার্মার Logo আশুলিয়ায় ছয় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা Logo অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মার্কিন সমর্থন অব্যাহত থাকবে, ফোনলাপে জ্যাক সুলিভান Logo গণহত্যার সাথে জড়িতদের বিএনপিতে নেয়া মানা: মির্জা ফখরুল

ছিনতাইকারী আর ডাকাতদের বিরুদ্ধে পথে নামলেন ঢাকাবাসী

বিশেষ প্রতিবেদন
  • আপডেট সময় : ০৮:১৩:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ৬ বার পঠিত

দায়িত্ব পালনে এখনও শিথিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা৷ ফলে ঢাকায় বেড়েছে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা৷ অতিষ্ট নগরবাসী পরিত্রাণ পেতে নেমেছেন পথে৷ ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়ার পর শনিবার রাত থেকে শুরু হয়েছে অভিযান৷
ঢাকার মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় দিনে-দুপুরে ডাকাতি, ছিনতাই যেন স্বাভাবিক ঘটনা৷ কয়েকদিন আগে একটি দোকানে ঢুকে চাপাতির মুখে ডাকাতি করে দৃর্বত্তরা৷ ওই এলাকার নবোদয় হাউজিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার সময় এক ছাত্রীকে কয়েকজন ছিনতাইকারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে৷ পরে তার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়৷ ঘটছে গণছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও৷
ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে শনিবার সকালে মোহাম্মদপুর এলকায় বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা৷ বিক্ষোভ থেকে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন তারা৷ এরপরই সক্রিয় হয় সেনাসদস্য ও পুলিশ৷
শনিবার গভীর রাতে তারা অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের মূলহোতাসহ ৪৫ জনকে আটক করেছে৷ তাদের কাছ থেকে ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৬২ রাউন্ড গুলি, ১৯ ধরনের মাদক দ্রব্য ও গ্রেনেড জব্দ করা হয়েছে৷
এই পরিস্থিতিতে মোহাম্মদপুরের প্রতিটি হাউজিংয়ে সেনা ক্যাম্প বসানোর কথা জানিয়েছেন ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া মেজর নাজিম আহমেদ৷
প্রতিবাদে অংশ নেয়া মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা পারভেজ হাসান সুমন জানান, ‘‘মোহাম্মদপুরের বসিলা, চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, নবোদয় হাউজিং থেকে শুরু করে পুরো বেড়িবাধ এলাকা অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে৷ এখানে নানা অপরাধী গ্রুপ আর কিশোর গ্যাং সক্রিয়৷ ৫ আগস্টের পর পুলিশও অনেকটা নিস্ক্রিয় হয়ে যায় ফলে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়ে গেছে৷”
তিনি আরো বলেন, ‘‘গত শুক্রবার রাতে কিশোর গ্যাংয়ের ৩০-৪০ জন সদস্য গণ ছিনতাই করেছে রাস্তায়৷ একটি দোকানে ঢুকে অস্ত্রের মুখে ডাকাতি করেছে৷ দিনের বেলায় একজন ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাই করেছে৷ এগুলোর ভিডিও ভাইরাল হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ ফলে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি৷”
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘আমরা কয়েকজন ছিনতাইকারীকে ধরে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয়ার পর আবার আরেক গ্রুপ ছিনতাইকারী পাশেই ছিনতাই করে৷”
গণছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন শিক্ষার্থী দিপু আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘ওই ঘটনা আমার কাছে বিভীষিকার মতো৷ মনে হচ্ছিল, ছিনতাইকারীদের প্রতিরোধের কেউ নেই৷ আমি প্রাণ ভয়ে আমরা মেবাইল ফোন এবং পকেটে কিছু টাকা ছিলো তা ছিনতাইকারীদের দিয়ে দিই৷”
ছিনতাইকারীদের সবার হাতে চাপাতি, ছুরিসহ ধারালো অস্ত্র ছিল বলেও জানান এই শিক্ষার্থী৷ বলেন, ‘‘মানুষ ভয়ে ছুটে পালাচ্ছিলেন৷”
মোহাম্মদপুরে ১১ অক্টোবর গভীর রাতে সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাক পরে সংঘবদ্ধ ডাকাতদল এক ব্যবসায়ীর বাসায় ঢুকে সাড়ে ৭৫ লাখ টাকা ও ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে৷ এ ঘটনা সবার মনে আতঙ্ক তৈরি করেছে৷ ২০ অক্টোবর মোহাম্মদপুরেই দিনে-দুপুরে অস্ত্রের মুখে গাড়ি থামিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে৷ সকাল সোয়া ১০টার দিকে মোহাম্মদিয়া হাউজিং লিমিটেড ৩ নম্বর সড়কে নেসলে কোম্পানির পণ্য পরিবহনকারী একটি গাড়ি থামিয়ে ১২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা৷ গত ১০ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ায় রবিউল ইসলাম নামে এক নিরাপত্তাকর্মীর বুকে, পিঠে ও হাতে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা৷শুধু মোহাম্মদপুরে নয়, বলতে গেলে পুরো ঢাকার চিত্র এমন৷ ১৮ অক্টোবর রাত ২টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বাসায় ফেরার পথে মগবাজার রেলক্রসিংয়ের কাছে ডাকাতির শিকার হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিবলু হক৷ তিনটি মোটরসাইকেলে থাকা সাত দুর্বৃত্ত তার গলায় চাপাতি ধরে আইফোন, টাকা, দরকারি কাগজপত্র ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে যায়৷
এ ঘটনায় তিনি মামলা করতে চাইলেও হাতিরঝিল থানা ডাকাতির মামলা নিতে চায়নি৷ শিবলু অভিযোগ করেন, ঘটনার বর্ণনা দিতে হাতিরঝিল থানায় তিন দফা যেতে হয়েছে৷ ডাকাতির মামলা করতে চাইলে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা তাদের পরামর্শ মতো লিখতে বলেন৷ পরে মামলা নিলেও ডাকাতির বর্ণনা দিতে রাজি হয়নি পুলিশ৷
তিনি বলেন, ‘‘আমি এখনো ট্রমার মধ্যে আছি৷ ছিনতাইয়ের সময় রাস্তায় পুলিশের কোনো টহল ছিল না৷ তবে অনেক গাড়ি ছিলো৷ তারা ভয়ে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেনি৷ ছিনতাইকারীরা যখন আমার গলায় চাপাতি ধরে, তখন আমি এত ভয় পেয়েছি যে এখনো সেই ভয় কাটেনি৷ আমার ফোন, টাকা ও কাগজপত্র পুলিশ এখন উদ্ধার করতে পারেনি৷”
ঢাকায় এই বছরের শুরু থেকে গত ৯ মাসে চুরি কমলেও বেড়েছে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা৷ রাজধানীতে প্রতিদিনই ডাকাতি ও চুরির ঘটনা ঘটছে৷ সবচেয়ে নাজুক অবস্থা মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও ডেমরা এলাকায়৷ এসব এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে৷ ঢাকা মেট্রেপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ২৪টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে৷ এগুলোর মধ্যে পুলিশ সদস্যের বাসায়ও ডাকাতি ও চুরির ঘটনা আছে৷ অন্যদিকে, চুরির ঘটনা প্রায় ৫০০টি৷ আর ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়লেও গত দুই মাসে ঢাকায় পুলিশ মামলা নিয়েছে মাত্র ৩৯টি৷
ভুক্তভোগীরা বলছেন, পুলিশ অধিকাংশ ঘটনায়ই ছিনতাইয়ের মামলা নেয় না৷ তারা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে বাধ্য করেন৷
ডিএমপির তৈরি করা এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ছিনতাইকারী বেশি সক্রিয় রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শাহবাগ, ভাটারা, বাড্ডা, শেরেবাংলানগর, হাজারীবাগ, তেজগাঁও, হাতিরঝিল, মিরপুর, পল্লবী, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত ও উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায়৷
ডিএমপির জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তালেবুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা প্রতিটি এলাকায় টহল জোরদার করেছি৷ যেসব এলাকায় ঘটনা বেড়েছে, সেসব এলাকায় ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ ডিউটি করছে৷ আর কিছু এলাকা যেমন মোহাম্মদপুর, সেখানে ভৌগোলিক কারণেও অপরাধ প্রবণতা বেশি৷ তাই আমাদের বিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে৷ তবে আমরা এরইমধ্যে কয়েকটি গ্যাংয়ের সদস্যদের আটক করেছি৷ আরো অপরাধীদের চিহ্নিত করেছি৷”
পুলিশ এখন সক্রিয় আছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘পুরো মনোবল নিয়ে কাজ করছেন সবাই৷”
মামলা না নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব৷ ওসিরা মামলা না নিলে ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট জোনের ডিসিদের কাছে অভিযোগ করতে পারেন৷” ডয়চে ভেলে

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

ছিনতাইকারী আর ডাকাতদের বিরুদ্ধে পথে নামলেন ঢাকাবাসী

আপডেট সময় : ০৮:১৩:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

দায়িত্ব পালনে এখনও শিথিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা৷ ফলে ঢাকায় বেড়েছে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা৷ অতিষ্ট নগরবাসী পরিত্রাণ পেতে নেমেছেন পথে৷ ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়ার পর শনিবার রাত থেকে শুরু হয়েছে অভিযান৷
ঢাকার মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় দিনে-দুপুরে ডাকাতি, ছিনতাই যেন স্বাভাবিক ঘটনা৷ কয়েকদিন আগে একটি দোকানে ঢুকে চাপাতির মুখে ডাকাতি করে দৃর্বত্তরা৷ ওই এলাকার নবোদয় হাউজিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার সময় এক ছাত্রীকে কয়েকজন ছিনতাইকারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে৷ পরে তার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়৷ ঘটছে গণছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও৷
ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে শনিবার সকালে মোহাম্মদপুর এলকায় বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা৷ বিক্ষোভ থেকে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন তারা৷ এরপরই সক্রিয় হয় সেনাসদস্য ও পুলিশ৷
শনিবার গভীর রাতে তারা অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের মূলহোতাসহ ৪৫ জনকে আটক করেছে৷ তাদের কাছ থেকে ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৬২ রাউন্ড গুলি, ১৯ ধরনের মাদক দ্রব্য ও গ্রেনেড জব্দ করা হয়েছে৷
এই পরিস্থিতিতে মোহাম্মদপুরের প্রতিটি হাউজিংয়ে সেনা ক্যাম্প বসানোর কথা জানিয়েছেন ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া মেজর নাজিম আহমেদ৷
প্রতিবাদে অংশ নেয়া মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা পারভেজ হাসান সুমন জানান, ‘‘মোহাম্মদপুরের বসিলা, চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, নবোদয় হাউজিং থেকে শুরু করে পুরো বেড়িবাধ এলাকা অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে৷ এখানে নানা অপরাধী গ্রুপ আর কিশোর গ্যাং সক্রিয়৷ ৫ আগস্টের পর পুলিশও অনেকটা নিস্ক্রিয় হয়ে যায় ফলে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়ে গেছে৷”
তিনি আরো বলেন, ‘‘গত শুক্রবার রাতে কিশোর গ্যাংয়ের ৩০-৪০ জন সদস্য গণ ছিনতাই করেছে রাস্তায়৷ একটি দোকানে ঢুকে অস্ত্রের মুখে ডাকাতি করেছে৷ দিনের বেলায় একজন ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাই করেছে৷ এগুলোর ভিডিও ভাইরাল হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ ফলে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি৷”
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘আমরা কয়েকজন ছিনতাইকারীকে ধরে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয়ার পর আবার আরেক গ্রুপ ছিনতাইকারী পাশেই ছিনতাই করে৷”
গণছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন শিক্ষার্থী দিপু আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘ওই ঘটনা আমার কাছে বিভীষিকার মতো৷ মনে হচ্ছিল, ছিনতাইকারীদের প্রতিরোধের কেউ নেই৷ আমি প্রাণ ভয়ে আমরা মেবাইল ফোন এবং পকেটে কিছু টাকা ছিলো তা ছিনতাইকারীদের দিয়ে দিই৷”
ছিনতাইকারীদের সবার হাতে চাপাতি, ছুরিসহ ধারালো অস্ত্র ছিল বলেও জানান এই শিক্ষার্থী৷ বলেন, ‘‘মানুষ ভয়ে ছুটে পালাচ্ছিলেন৷”
মোহাম্মদপুরে ১১ অক্টোবর গভীর রাতে সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাক পরে সংঘবদ্ধ ডাকাতদল এক ব্যবসায়ীর বাসায় ঢুকে সাড়ে ৭৫ লাখ টাকা ও ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে৷ এ ঘটনা সবার মনে আতঙ্ক তৈরি করেছে৷ ২০ অক্টোবর মোহাম্মদপুরেই দিনে-দুপুরে অস্ত্রের মুখে গাড়ি থামিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে৷ সকাল সোয়া ১০টার দিকে মোহাম্মদিয়া হাউজিং লিমিটেড ৩ নম্বর সড়কে নেসলে কোম্পানির পণ্য পরিবহনকারী একটি গাড়ি থামিয়ে ১২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা৷ গত ১০ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ায় রবিউল ইসলাম নামে এক নিরাপত্তাকর্মীর বুকে, পিঠে ও হাতে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা৷শুধু মোহাম্মদপুরে নয়, বলতে গেলে পুরো ঢাকার চিত্র এমন৷ ১৮ অক্টোবর রাত ২টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বাসায় ফেরার পথে মগবাজার রেলক্রসিংয়ের কাছে ডাকাতির শিকার হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিবলু হক৷ তিনটি মোটরসাইকেলে থাকা সাত দুর্বৃত্ত তার গলায় চাপাতি ধরে আইফোন, টাকা, দরকারি কাগজপত্র ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে যায়৷
এ ঘটনায় তিনি মামলা করতে চাইলেও হাতিরঝিল থানা ডাকাতির মামলা নিতে চায়নি৷ শিবলু অভিযোগ করেন, ঘটনার বর্ণনা দিতে হাতিরঝিল থানায় তিন দফা যেতে হয়েছে৷ ডাকাতির মামলা করতে চাইলে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা তাদের পরামর্শ মতো লিখতে বলেন৷ পরে মামলা নিলেও ডাকাতির বর্ণনা দিতে রাজি হয়নি পুলিশ৷
তিনি বলেন, ‘‘আমি এখনো ট্রমার মধ্যে আছি৷ ছিনতাইয়ের সময় রাস্তায় পুলিশের কোনো টহল ছিল না৷ তবে অনেক গাড়ি ছিলো৷ তারা ভয়ে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেনি৷ ছিনতাইকারীরা যখন আমার গলায় চাপাতি ধরে, তখন আমি এত ভয় পেয়েছি যে এখনো সেই ভয় কাটেনি৷ আমার ফোন, টাকা ও কাগজপত্র পুলিশ এখন উদ্ধার করতে পারেনি৷”
ঢাকায় এই বছরের শুরু থেকে গত ৯ মাসে চুরি কমলেও বেড়েছে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা৷ রাজধানীতে প্রতিদিনই ডাকাতি ও চুরির ঘটনা ঘটছে৷ সবচেয়ে নাজুক অবস্থা মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও ডেমরা এলাকায়৷ এসব এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে৷ ঢাকা মেট্রেপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ২৪টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে৷ এগুলোর মধ্যে পুলিশ সদস্যের বাসায়ও ডাকাতি ও চুরির ঘটনা আছে৷ অন্যদিকে, চুরির ঘটনা প্রায় ৫০০টি৷ আর ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়লেও গত দুই মাসে ঢাকায় পুলিশ মামলা নিয়েছে মাত্র ৩৯টি৷
ভুক্তভোগীরা বলছেন, পুলিশ অধিকাংশ ঘটনায়ই ছিনতাইয়ের মামলা নেয় না৷ তারা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে বাধ্য করেন৷
ডিএমপির তৈরি করা এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ছিনতাইকারী বেশি সক্রিয় রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শাহবাগ, ভাটারা, বাড্ডা, শেরেবাংলানগর, হাজারীবাগ, তেজগাঁও, হাতিরঝিল, মিরপুর, পল্লবী, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত ও উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায়৷
ডিএমপির জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তালেবুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা প্রতিটি এলাকায় টহল জোরদার করেছি৷ যেসব এলাকায় ঘটনা বেড়েছে, সেসব এলাকায় ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ ডিউটি করছে৷ আর কিছু এলাকা যেমন মোহাম্মদপুর, সেখানে ভৌগোলিক কারণেও অপরাধ প্রবণতা বেশি৷ তাই আমাদের বিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে৷ তবে আমরা এরইমধ্যে কয়েকটি গ্যাংয়ের সদস্যদের আটক করেছি৷ আরো অপরাধীদের চিহ্নিত করেছি৷”
পুলিশ এখন সক্রিয় আছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘পুরো মনোবল নিয়ে কাজ করছেন সবাই৷”
মামলা না নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব৷ ওসিরা মামলা না নিলে ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট জোনের ডিসিদের কাছে অভিযোগ করতে পারেন৷” ডয়চে ভেলে

Facebook Comments Box