ঢাকা ০৩:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo স্বপ্ন পূরণ হলো না মৌলভীবাজারের লিটনের ! বেলারুশ সীমান্তে পিটিয়ে হত্যা তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: স্বপ্ন পূরণে ইচ্ছা ছিল জার্মানিতে গিয়ে উন্নত জীবনযাপনের মাধ্যমে স্বপ্নের বাস্তবতা হাসিল করার অদম্য সাহস ছিল লিটন চৌধুরীর। সেই দেশে যেতে বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিসহ কয়েকজন অভিবাসন-প্রত্যাশী পোল্যান্ড পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। তাদের পুশব্যাক করা হয়। কিন্তু বেলারুশেও তারা ঢুকতে পারেননি। দুই দেশের সীমান্তে গভীর জঙ্গলে বহু কষ্টে দিন কাটছিল তাদের। গত সোমবার স্থানীয় সময় রাতে স্বজনেরা জানতে পারেন, লিটনসহ ১৫ জন অভিবাসী পুলিশের পিটুনিতে মারা গেছেন। বেলারুশের একটি হাসপাতালের মর্গে তাদের লাশ রাখা হয়েছে। এ খবরে লিটনের পরিবারে মাতম শুরু হয়। লিটন চৌধুরী (৩৫) মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদরের জাঙ্গিরাই এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত মোশারফ হোসেন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ ছেলে। তার মা, এক ভাই, স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তান রয়েছে। লিটন এর আগে দুবাইয়ে থাকতেন। লিটনদের বাড়িতে, একটি কক্ষে তার মা ও স্ত্রী আহাজারি করছেন। স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, লিটনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে একটি কিন্ডারগার্টেনে পঞ্চম ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলের বয়স মাত্র দুই বছর। লিটনের ছোট ভাই নোমান চৌধুরী ইতালিতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বসবাস করছেন। বৈধ না হওয়ায় দেশে ফিরতে পারছেন না। স্বজনেরা বলেন, লিটনদের পরিবার অনেকটা সচ্ছল। দুবাইয়ের জীবন লিটনের ভালো লাগত না। ইউরোপে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। লিটনের স্ত্রীর বড় ভাই শাহিন আহমদ বলেন, মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে বছরখানেক আগে লিটন দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। মায়ের চিকিৎসা করান। মা সুস্থ হওয়ার কয়েক মাস পর দুবাইয়ে ফিরে যান। দুবাইয়ে গিয়ে রাশিয়ায় বসবাসকারী ম্যাক্স নামের এক দালালের মাধ্যমে জার্মানিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য ম্যাক্স ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ম্যাক্সের বাড়ি নোয়াখালী। প্রকৃত নাম অন্য কিছু হলেও দুবাইয়ে ওই নামেই তিনি পরিচিত। শাহিন বলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজারে নজরুল ইসলাম নামের এক গাড়ি ব্যবসায়ী ম্যাক্সের আত্মীয়। নজরুলের কাছে তাঁরা টাকা জমা দেন। এ সময় একটি চুক্তিনামাও করা হয়। জার্মানিতে পাঠাতে না পারলে সব টাকা ফেরতের কথাও চুক্তিনামায় উল্লেখ করা হয়। সেপ্টেম্বরে লিটন রাশিয়া হয়ে বেলারুশে যান। এরপর বেলারুশের সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে পৌঁছালে পুলিশ তাঁকেসহ আরও কয়েকজনকে ধরে ফেলে। তাদের সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। বেলারুশের পুলিশ তাঁদের ঢুকতে বাঁধা দেয়। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সীমান্তে জঙ্গলে তাঁরা দিন কাটান। শাহিন বলেন, সর্বশেষ ৭ই অক্টোবর লিটন তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভয়েস মেসেজ পাঠান। ওই ভয়েস মেসেজে লিটন বলেন, তিনি জঙ্গলে খুব কষ্টে আছেন। খাবার নেই, পানি নেই। তাঁর একটি পা ভেঙে গেছে। লিটন ম্যাক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে বলেন। পরে তিনি (শাহিন আহমেদ) ম্যাক্সের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করলে তিনি শুধু আশ্বাস দিতে থাকেন। কিছুদিন পর লিটনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। লিটনের খোঁজ না পাওয়ায় চিন্তিত ছিল তার পরিবার। এই বিষয়ে শাহিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লিটনের খোঁজখবর না পাওয়ায় তারা উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে থাকেন। সম্প্রতি তারা বেলারুশ সীমান্তের একটি ভিডিও পান। ভিডিওটি স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের। ওই ভিডিওতে দাবি করা হয়, সীমান্তে ১৫ জন অভিবাসীকে পোল্যান্ড পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এর মধ্যে চেহারা, পরনের টি-শার্ট ও প্যান্ট দেখে তারা লিটনের লাশ শনাক্ত করেন। কিন্তু তাতেও তাঁরা পুরোপুরি নিশ্চিত হননি। শাহিন বলেন, বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে বেলারুশে বসবাসকারী এক বাংলাদেশি চিকিৎসকের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেন। ওই চিকিৎসক বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প ও হাসপাতালে খোঁজ নেন। একপর্যায়ে একটি হাসপাতালের মর্গে লিটনের লাশ পান। সোমবার রাত আটটার দিকে চিকিৎসক লিটনের লাশের ছবি তাদের কাছে পাঠান। এতে তাঁরা নিশ্চিত হন লিটন মারা গেছেন। শাহিন বলেন, লিটনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ম্যাক্স ও নজরুলের সঙ্গে কথা বলেন। লাশ ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের সহায়তা চান। কিন্তু তারা কোনো সহায়তা করেননি। ম্যাক্সের আসল পরিচয় উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে। তারা ম্যাক্স ও নজরুলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেবেন। শাহিন বলেন, লিটনের লাশ দেশে আনা হবে কি না, সে বিষয়ে তাঁরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে কুলাউড়া সার্কেলের (কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান গনমাধ্যমে বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। Logo নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ Logo সৌদিতে ফ্যাশন শো নিয়ে ইসলামী পণ্ডিতদের ক্ষোভের যত কারণ Logo প্রতারণার অভিযোগে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে আমেরিকার আদালতে মামলা Logo ট্রাইব্যুনালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক কর্তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হলো Logo ভাঙ্গুড়া প্রেস ক্লাবের অবৈধ কমিটি বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান Logo মৌলভীবাজার পূজা উদযাপন পরিষদের সম্পাদক মহিম গ্রেপ্তার Logo পাবনার আমিনপুরে ইজিবাইক-মোটর সাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ Logo সেনাকুঞ্জে যাবেন খালেদা জিয়া Logo সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ সিওয়াইবির কমিটি গঠন

চট্টগ্রামের পূজামণ্ডপে ‘ইসলামি গান’ পরিবেশন নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

সারাবেলা সংবাদ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ১২:১৯:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪ ৭ বার পঠিত

পূজামণ্ডপের মঞ্চে ‘ইসলামি গান’ গাওয়ার ভিডিও ঘিরে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জের ধরে দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে একটি ভিডিওর কিছু অংশ ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায় একটি পূজামণ্ডপে ছয়জন যুবক ‘ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য’ প্রকাশ করে – এমন একটি গান গাইছেন।

মোবাইলে ধারণ করা প্রায় এক মিনিটের ভিডিওটিতে দেখা যায়, কোনো বাদ্যযন্ত্র ছাড়া মাইক হাতে নিয়ে ঐ ছয় যুবক পূজার স্টেজে গান গাইছেন।

ভিডিওতে গানের যে কয়েকটি লাইন শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল সেগুলো ছিল ‘এসো সেই ইসলাম বুঝি, সত্য ন্যায়ের পথ খুঁজি, বিশ্ব মানুষের মুক্তির শেষ পথ, বিপ্লব ইসলামী বিপ্লব।’

জামণ্ডপটি চট্টগ্রাম শহরের রহমতগঞ্জ এলাকার জেএম সেন হলের মাঠে। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি এই পূজার আয়োজন করে বলে এটিকেই চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার পরপরই তা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

পূজামণ্ডপে ‘ইসলামি গান’ গাওয়ার জন্য ঐ ছয় যুবকের সমালোচনা হতে থাকে, পাশাপাশি কীভাবে পূজামণ্ডপে তারা এই গান গাওয়ার সুযোগ পেলেন সেটিকে কেন্দ্র করে আয়োজকদের সমালোচনাও শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা কী বলছেন ?

বৃহস্পতিবার পূজা =মণ্ডপে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিরা জানান, সন্ধ্যা সাতটার কিছুক্ষণ পর কয়েকজন যুবক স্টেজে ওঠেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন হিন্দু তরুণ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা স্টেজে উঠে যখন ইসলাম নিয়ে একটি গান গাওয়া শুরু করেন তখন উপস্থিত মানুষজন কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন।

“আমরা বেশ কয়েকজন বন্ধুবান্ধব সেখানে ছিলাম। আমরা কিছুটা অবাক হয়ে একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করতে থাকি যে এই গান গাচ্ছে কেন, কারা গাচ্ছে? আশেপাশের মানুষজনকে দেখেও কিছুটা হতচকিত মনে হচ্ছিল,” বলেন সে তরুণ।

প্রথম গান শেষ করে তারা সুপরিচিত আরেকটি গান গায়। গান শেষে স্টেজ থেকে নামার আগে তাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানায় অনুষ্ঠানের আয়োজকরা।

ঐ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা একজন সাংবাদিক বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের স্থানীয় কয়েকজন রাজনীতিবিদের অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য বিবিসি বাংলাকে জানান যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মণ্ডপে ‘স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের’ আসাকে কেন্দ্র করে পূজা উদযাপন কমিটির সদস্যরা বেশ ব্যস্ত ছিলেন। সেই সময় ঐ ছয় যুবকের গান গাওয়ার ঘটনাটি ঘটে।

যেভাবে পূজার মণ্ডপে ‘ইসলামি গান’

আশীষ ভট্টাচার্য বিবিসি বাংলাকে জানান, পূজা মণ্ডপে যে ইসলামি গান গাওয়া হবে, সে বিষয়ে কমিটির সদস্যরা আগে থেকে কিছু জানতেন না।

মঞ্চে ওঠার আগে ঐ যুবকদের ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি’র সদস্য হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। মি. ভট্টাচার্য বলছিলেন, সেদিন তাদের অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করার কথা ছিল না।

তবে আশীষ ভট্টাচার্য বিবিসি বাংলাকে বলেন, পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের অনুমতি নিয়ে ঐ ছয় যুবক গান গাইতে মঞ্চে উঠেছিলেন।

“পূজার অনুষ্ঠানে কী গান গাওয়া হবে তা নিয়ে কয়েকমাস ধরে প্রস্তুতি নেয়া হয়। যে গান নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটি অনুষ্ঠানসূচিতে ছিল না। ঐ সময় সজল দত্ত মঞ্চে ঐ যুবকদের গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান বলে আমরা জানতে পেরেছি,” আশীষ ভট্টাচার্য।

“তিনি আমাদের কারো সাথে আলোচনা না করে একক সিদ্ধান্তে তাদের গান গাওয়ার সুযোগ দেন।”

তবে ঐ ঘটনার পর থেকে সজল দত্তের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান মি. ভট্টাচার্য।

ঘটনাটি নিয়ে কথা বলার জন্য ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির’ সাথে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি।

আলোচনা তৈরি হওয়ার পর বিভিন্নভাবে এটি প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমগুলোতে। চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামানের বরাত দিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করে যে প্রতিষ্ঠানটিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল পূজার অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য।

আবার কিছু গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় যে ঐ যুবকরা সন্ধ্যায় উপস্থিত হয়ে সজল দত্তকে অনুরোধ করেন তাদের গান গাওয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য।

তবে প্রকৃতপক্ষে ঠিক কী ঘটেছিল, তা নিশ্চিতভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

এমনকি পূজা উদযাপন কমিটিও বলছে যে ঘটনাটি সম্পর্কে তারা নিশ্চিতভাবে জানতে পারেনি।

মি. ভট্টাচার্য বলছিলেন, “আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে দেখছি যে সে (সজল দত্ত) তাদের গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। কিন্তু আমরা তার সাথে কথা বলতে পারিনি। সন্ধ্যা থেকে তার ফোন বন্ধ আছে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

“আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি যে সে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, না কি তারা এসে গান গাওয়ার অনুরোধ করেছে।”

 

প্রশাসন কী বলছে

এ বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার রাতে পূজামণ্ডপে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য।

মি. ভট্টাচার্য সে সময় পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে আজীবন বহিষ্কারের ঘোষণা দেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান যে ‘দায়িত্বে অবহেলা’র দায়ে সজল দত্তকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি।

এই ঘটনার জের ধরে রাতে জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে বিক্ষোভ করে কয়েকশো হিন্দু ধর্মাবলম্বী। রাত প্রায় দুইটা পর্যন্ত জে এম সেন হলের পূজামণ্ডপের বাইরে চলে এই বিক্ষোভ।

সে সময় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‍্যাবের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।

বৃহস্পতিবার রাতেই চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম জে এম সেন হলের পূজামণ্ডপে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন।

সে সময় তিনি এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ’২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে’ দোষীদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দেন।

শুক্রবার দুপুরের মধ্যেই পুলিশ জানায়, যে ছয়জন গান পরিবেশন করেছিলেন তাদের দু’জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আটক দুইজনই স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক।

দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ক্রাইম অ্যান্ড অপারশন্স রইছ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তারা পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে গান পরিবেশন করতে গিয়েছিলেন।”

তবে এ বিষয়ে সজল দত্তের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানায় মি. রইছ উদ্দিন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। যাদের আটক করা হয়েছে তাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না বা তারা ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ এই কাজ করেছিলেন কি না তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বিবিসি

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

স্বপ্ন পূরণ হলো না মৌলভীবাজারের লিটনের ! বেলারুশ সীমান্তে পিটিয়ে হত্যা তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: স্বপ্ন পূরণে ইচ্ছা ছিল জার্মানিতে গিয়ে উন্নত জীবনযাপনের মাধ্যমে স্বপ্নের বাস্তবতা হাসিল করার অদম্য সাহস ছিল লিটন চৌধুরীর। সেই দেশে যেতে বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিসহ কয়েকজন অভিবাসন-প্রত্যাশী পোল্যান্ড পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। তাদের পুশব্যাক করা হয়। কিন্তু বেলারুশেও তারা ঢুকতে পারেননি। দুই দেশের সীমান্তে গভীর জঙ্গলে বহু কষ্টে দিন কাটছিল তাদের। গত সোমবার স্থানীয় সময় রাতে স্বজনেরা জানতে পারেন, লিটনসহ ১৫ জন অভিবাসী পুলিশের পিটুনিতে মারা গেছেন। বেলারুশের একটি হাসপাতালের মর্গে তাদের লাশ রাখা হয়েছে। এ খবরে লিটনের পরিবারে মাতম শুরু হয়। লিটন চৌধুরী (৩৫) মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদরের জাঙ্গিরাই এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত মোশারফ হোসেন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ ছেলে। তার মা, এক ভাই, স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তান রয়েছে। লিটন এর আগে দুবাইয়ে থাকতেন। লিটনদের বাড়িতে, একটি কক্ষে তার মা ও স্ত্রী আহাজারি করছেন। স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, লিটনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে একটি কিন্ডারগার্টেনে পঞ্চম ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলের বয়স মাত্র দুই বছর। লিটনের ছোট ভাই নোমান চৌধুরী ইতালিতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বসবাস করছেন। বৈধ না হওয়ায় দেশে ফিরতে পারছেন না। স্বজনেরা বলেন, লিটনদের পরিবার অনেকটা সচ্ছল। দুবাইয়ের জীবন লিটনের ভালো লাগত না। ইউরোপে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। লিটনের স্ত্রীর বড় ভাই শাহিন আহমদ বলেন, মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে বছরখানেক আগে লিটন দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। মায়ের চিকিৎসা করান। মা সুস্থ হওয়ার কয়েক মাস পর দুবাইয়ে ফিরে যান। দুবাইয়ে গিয়ে রাশিয়ায় বসবাসকারী ম্যাক্স নামের এক দালালের মাধ্যমে জার্মানিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য ম্যাক্স ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ম্যাক্সের বাড়ি নোয়াখালী। প্রকৃত নাম অন্য কিছু হলেও দুবাইয়ে ওই নামেই তিনি পরিচিত। শাহিন বলেন, সিলেটের বিয়ানীবাজারে নজরুল ইসলাম নামের এক গাড়ি ব্যবসায়ী ম্যাক্সের আত্মীয়। নজরুলের কাছে তাঁরা টাকা জমা দেন। এ সময় একটি চুক্তিনামাও করা হয়। জার্মানিতে পাঠাতে না পারলে সব টাকা ফেরতের কথাও চুক্তিনামায় উল্লেখ করা হয়। সেপ্টেম্বরে লিটন রাশিয়া হয়ে বেলারুশে যান। এরপর বেলারুশের সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে পৌঁছালে পুলিশ তাঁকেসহ আরও কয়েকজনকে ধরে ফেলে। তাদের সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। বেলারুশের পুলিশ তাঁদের ঢুকতে বাঁধা দেয়। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সীমান্তে জঙ্গলে তাঁরা দিন কাটান। শাহিন বলেন, সর্বশেষ ৭ই অক্টোবর লিটন তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভয়েস মেসেজ পাঠান। ওই ভয়েস মেসেজে লিটন বলেন, তিনি জঙ্গলে খুব কষ্টে আছেন। খাবার নেই, পানি নেই। তাঁর একটি পা ভেঙে গেছে। লিটন ম্যাক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে বলেন। পরে তিনি (শাহিন আহমেদ) ম্যাক্সের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করলে তিনি শুধু আশ্বাস দিতে থাকেন। কিছুদিন পর লিটনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। লিটনের খোঁজ না পাওয়ায় চিন্তিত ছিল তার পরিবার। এই বিষয়ে শাহিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লিটনের খোঁজখবর না পাওয়ায় তারা উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে থাকেন। সম্প্রতি তারা বেলারুশ সীমান্তের একটি ভিডিও পান। ভিডিওটি স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের। ওই ভিডিওতে দাবি করা হয়, সীমান্তে ১৫ জন অভিবাসীকে পোল্যান্ড পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এর মধ্যে চেহারা, পরনের টি-শার্ট ও প্যান্ট দেখে তারা লিটনের লাশ শনাক্ত করেন। কিন্তু তাতেও তাঁরা পুরোপুরি নিশ্চিত হননি। শাহিন বলেন, বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে বেলারুশে বসবাসকারী এক বাংলাদেশি চিকিৎসকের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেন। ওই চিকিৎসক বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প ও হাসপাতালে খোঁজ নেন। একপর্যায়ে একটি হাসপাতালের মর্গে লিটনের লাশ পান। সোমবার রাত আটটার দিকে চিকিৎসক লিটনের লাশের ছবি তাদের কাছে পাঠান। এতে তাঁরা নিশ্চিত হন লিটন মারা গেছেন। শাহিন বলেন, লিটনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ম্যাক্স ও নজরুলের সঙ্গে কথা বলেন। লাশ ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের সহায়তা চান। কিন্তু তারা কোনো সহায়তা করেননি। ম্যাক্সের আসল পরিচয় উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে। তারা ম্যাক্স ও নজরুলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেবেন। শাহিন বলেন, লিটনের লাশ দেশে আনা হবে কি না, সে বিষয়ে তাঁরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে কুলাউড়া সার্কেলের (কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান গনমাধ্যমে বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চট্টগ্রামের পূজামণ্ডপে ‘ইসলামি গান’ পরিবেশন নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

আপডেট সময় : ১২:১৯:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

পূজামণ্ডপের মঞ্চে ‘ইসলামি গান’ গাওয়ার ভিডিও ঘিরে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জের ধরে দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে একটি ভিডিওর কিছু অংশ ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায় একটি পূজামণ্ডপে ছয়জন যুবক ‘ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য’ প্রকাশ করে – এমন একটি গান গাইছেন।

মোবাইলে ধারণ করা প্রায় এক মিনিটের ভিডিওটিতে দেখা যায়, কোনো বাদ্যযন্ত্র ছাড়া মাইক হাতে নিয়ে ঐ ছয় যুবক পূজার স্টেজে গান গাইছেন।

ভিডিওতে গানের যে কয়েকটি লাইন শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল সেগুলো ছিল ‘এসো সেই ইসলাম বুঝি, সত্য ন্যায়ের পথ খুঁজি, বিশ্ব মানুষের মুক্তির শেষ পথ, বিপ্লব ইসলামী বিপ্লব।’

জামণ্ডপটি চট্টগ্রাম শহরের রহমতগঞ্জ এলাকার জেএম সেন হলের মাঠে। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি এই পূজার আয়োজন করে বলে এটিকেই চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার পরপরই তা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

পূজামণ্ডপে ‘ইসলামি গান’ গাওয়ার জন্য ঐ ছয় যুবকের সমালোচনা হতে থাকে, পাশাপাশি কীভাবে পূজামণ্ডপে তারা এই গান গাওয়ার সুযোগ পেলেন সেটিকে কেন্দ্র করে আয়োজকদের সমালোচনাও শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা কী বলছেন ?

বৃহস্পতিবার পূজা =মণ্ডপে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিরা জানান, সন্ধ্যা সাতটার কিছুক্ষণ পর কয়েকজন যুবক স্টেজে ওঠেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন হিন্দু তরুণ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা স্টেজে উঠে যখন ইসলাম নিয়ে একটি গান গাওয়া শুরু করেন তখন উপস্থিত মানুষজন কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন।

“আমরা বেশ কয়েকজন বন্ধুবান্ধব সেখানে ছিলাম। আমরা কিছুটা অবাক হয়ে একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করতে থাকি যে এই গান গাচ্ছে কেন, কারা গাচ্ছে? আশেপাশের মানুষজনকে দেখেও কিছুটা হতচকিত মনে হচ্ছিল,” বলেন সে তরুণ।

প্রথম গান শেষ করে তারা সুপরিচিত আরেকটি গান গায়। গান শেষে স্টেজ থেকে নামার আগে তাদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানায় অনুষ্ঠানের আয়োজকরা।

ঐ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা একজন সাংবাদিক বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের স্থানীয় কয়েকজন রাজনীতিবিদের অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য বিবিসি বাংলাকে জানান যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মণ্ডপে ‘স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের’ আসাকে কেন্দ্র করে পূজা উদযাপন কমিটির সদস্যরা বেশ ব্যস্ত ছিলেন। সেই সময় ঐ ছয় যুবকের গান গাওয়ার ঘটনাটি ঘটে।

যেভাবে পূজার মণ্ডপে ‘ইসলামি গান’

আশীষ ভট্টাচার্য বিবিসি বাংলাকে জানান, পূজা মণ্ডপে যে ইসলামি গান গাওয়া হবে, সে বিষয়ে কমিটির সদস্যরা আগে থেকে কিছু জানতেন না।

মঞ্চে ওঠার আগে ঐ যুবকদের ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি’র সদস্য হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। মি. ভট্টাচার্য বলছিলেন, সেদিন তাদের অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করার কথা ছিল না।

তবে আশীষ ভট্টাচার্য বিবিসি বাংলাকে বলেন, পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের অনুমতি নিয়ে ঐ ছয় যুবক গান গাইতে মঞ্চে উঠেছিলেন।

“পূজার অনুষ্ঠানে কী গান গাওয়া হবে তা নিয়ে কয়েকমাস ধরে প্রস্তুতি নেয়া হয়। যে গান নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটি অনুষ্ঠানসূচিতে ছিল না। ঐ সময় সজল দত্ত মঞ্চে ঐ যুবকদের গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান বলে আমরা জানতে পেরেছি,” আশীষ ভট্টাচার্য।

“তিনি আমাদের কারো সাথে আলোচনা না করে একক সিদ্ধান্তে তাদের গান গাওয়ার সুযোগ দেন।”

তবে ঐ ঘটনার পর থেকে সজল দত্তের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান মি. ভট্টাচার্য।

ঘটনাটি নিয়ে কথা বলার জন্য ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির’ সাথে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি।

আলোচনা তৈরি হওয়ার পর বিভিন্নভাবে এটি প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমগুলোতে। চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামানের বরাত দিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করে যে প্রতিষ্ঠানটিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল পূজার অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য।

আবার কিছু গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় যে ঐ যুবকরা সন্ধ্যায় উপস্থিত হয়ে সজল দত্তকে অনুরোধ করেন তাদের গান গাওয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য।

তবে প্রকৃতপক্ষে ঠিক কী ঘটেছিল, তা নিশ্চিতভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

এমনকি পূজা উদযাপন কমিটিও বলছে যে ঘটনাটি সম্পর্কে তারা নিশ্চিতভাবে জানতে পারেনি।

মি. ভট্টাচার্য বলছিলেন, “আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে দেখছি যে সে (সজল দত্ত) তাদের গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। কিন্তু আমরা তার সাথে কথা বলতে পারিনি। সন্ধ্যা থেকে তার ফোন বন্ধ আছে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

“আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি যে সে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, না কি তারা এসে গান গাওয়ার অনুরোধ করেছে।”

 

প্রশাসন কী বলছে

এ বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার রাতে পূজামণ্ডপে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য।

মি. ভট্টাচার্য সে সময় পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে আজীবন বহিষ্কারের ঘোষণা দেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান যে ‘দায়িত্বে অবহেলা’র দায়ে সজল দত্তকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি।

এই ঘটনার জের ধরে রাতে জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে বিক্ষোভ করে কয়েকশো হিন্দু ধর্মাবলম্বী। রাত প্রায় দুইটা পর্যন্ত জে এম সেন হলের পূজামণ্ডপের বাইরে চলে এই বিক্ষোভ।

সে সময় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‍্যাবের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।

বৃহস্পতিবার রাতেই চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম জে এম সেন হলের পূজামণ্ডপে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন।

সে সময় তিনি এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ’২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে’ দোষীদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দেন।

শুক্রবার দুপুরের মধ্যেই পুলিশ জানায়, যে ছয়জন গান পরিবেশন করেছিলেন তাদের দু’জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আটক দুইজনই স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক।

দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ক্রাইম অ্যান্ড অপারশন্স রইছ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তারা পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে গান পরিবেশন করতে গিয়েছিলেন।”

তবে এ বিষয়ে সজল দত্তের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানায় মি. রইছ উদ্দিন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। যাদের আটক করা হয়েছে তাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না বা তারা ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ এই কাজ করেছিলেন কি না তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বিবিসি

Facebook Comments Box