ঢাকা ১০:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

গোয়েন্দা নজরদারিতে অর্ধ শতাধিক গার্মেন্ট কারখানা

সারাবেলা সংবাদ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৫:২৩:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪ ২৯ বার পঠিত

আসছে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বেতন-বোনাস দেওয়া না দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা হতে পারে এমন অর্ধ শতাধিক গার্মেন্ট কারখানায় গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করেছে শিল্প পুলিশ। শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে এমন গার্মেন্ট কারখানাগুলোর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এসব কারখানার মালিকদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে সোমবার (২৫ মার্চ) উত্তরায় ইন্ড্রাস্টিয়াল পুলিশের হেডকোয়ার্টারে ঈদ উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মাহাবুবুর রহমানের সঙ্গে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ-এর নেতারাসহ বেপজা, কলকারখানা অধিদফতর, শ্রম অধিদফতরের প্রতিনিধিরা মিলে একটি বৈঠক করেছেন। সভায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের পক্ষ থেকে ঈদের আগেই শ্রমকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের আহ্বান জানানো হয়।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘মালিকরা যদি শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা যথাসময়ে পরিশোধ করেন তাহলে শিল্প সেক্টরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক থাকবে এবং আমাদের মহাসড়কগুলো নিরাপদ থাকবে।’

তিনি জানান, ঈদ উপলক্ষে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে, সকল সদস্য মাঠ পর্যায়ে অতীতের মতো নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বিভিন্ন কল-কারখানার বেতন পরিশোধের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়েছে। সম্ভাব্য গোলযোগ হতে পারে এমন গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনা করে গার্মেন্ট কারখানাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কল-কারখানার মালিকদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করে বেতন-ভাতার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হচ্ছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, এপ্রিলের শুরুতেই শ্রমিকদের ঈদের বেতন দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া ঈদের আগে মার্চ মাসের বেতন পরিশোধের জন্যও বলা হয়েছে। তাছাড়া ঈদের আগে যেন কোনও গার্মেন্ট কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করা না হয় সে জন্য মালিকদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, এমনিতেই গার্মেন্ট সেক্টর নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র বিভিন্নভাবে গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছে। বিশেষ করে মার্কিন শ্রমনীতি ঘোষণা দেওয়ার পর এই সেক্টরে গোলযোগ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। গোলযোগের কারণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা যাবে বলে চক্রটি মনে করছে।

সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় চার হাজার ১০৯টি গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। এতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এই খাতে উৎপাদিত পোশাক বিশ্বের প্রায় ১৬৭টি দেশে রফতানি হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে পোশাক রফতানি হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার মূল্যমানের, যা রফতানি আয়ের শতকরা ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ফলে এ খাতে বিশৃঙ্খলা-সৃষ্টি করে বিধি নিষেধ আরোপ করানো গেলে সরকার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশ বিরোধী একটি শক্তি মাঠের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার চেষ্টা করছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সোমবারের বৈঠকে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে কোনও অপশক্তি যাতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে সে জন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করাসহ সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গার্মেন্ট সেক্টরে অস্থিরতা তৈরি করতে তৃতীয় একটি পক্ষ ওত পেতে বসে আছে। যে কোনও ছুতোয় তারা গার্মেন্টকর্মীদের উসকে দিয়ে সড়কে নামানোর পাঁয়তারা করছে। তৃতীয় শক্তি যাতে কোনও সুযোগ না পায় সে জন্য ঈদের ছুটির বিষয়েও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সভায় বিকেএমই-এর নির্বাহী সভাপতি হাতে আলী বলেন, অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের ঈদে বেতন-বোনাস প্রদান করা মালিকদের জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হলেও ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া হবে। বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ হীল রকিব বলেন, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদান সংক্রান্তে সব পক্ষের পারস্পারিক সমন্বয়ের কোনও বিকল্প নেই। যে কোনও প্রকার নাশকতা রোধে তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন।
Facebook Comments Box
ট্যাগস :

গোয়েন্দা নজরদারিতে অর্ধ শতাধিক গার্মেন্ট কারখানা

আপডেট সময় : ০৫:২৩:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

আসছে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বেতন-বোনাস দেওয়া না দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা হতে পারে এমন অর্ধ শতাধিক গার্মেন্ট কারখানায় গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করেছে শিল্প পুলিশ। শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে এমন গার্মেন্ট কারখানাগুলোর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এসব কারখানার মালিকদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে সোমবার (২৫ মার্চ) উত্তরায় ইন্ড্রাস্টিয়াল পুলিশের হেডকোয়ার্টারে ঈদ উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মাহাবুবুর রহমানের সঙ্গে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ-এর নেতারাসহ বেপজা, কলকারখানা অধিদফতর, শ্রম অধিদফতরের প্রতিনিধিরা মিলে একটি বৈঠক করেছেন। সভায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের পক্ষ থেকে ঈদের আগেই শ্রমকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের আহ্বান জানানো হয়।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘মালিকরা যদি শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা যথাসময়ে পরিশোধ করেন তাহলে শিল্প সেক্টরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক থাকবে এবং আমাদের মহাসড়কগুলো নিরাপদ থাকবে।’

তিনি জানান, ঈদ উপলক্ষে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে, সকল সদস্য মাঠ পর্যায়ে অতীতের মতো নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বিভিন্ন কল-কারখানার বেতন পরিশোধের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়েছে। সম্ভাব্য গোলযোগ হতে পারে এমন গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনা করে গার্মেন্ট কারখানাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কল-কারখানার মালিকদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করে বেতন-ভাতার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হচ্ছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, এপ্রিলের শুরুতেই শ্রমিকদের ঈদের বেতন দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া ঈদের আগে মার্চ মাসের বেতন পরিশোধের জন্যও বলা হয়েছে। তাছাড়া ঈদের আগে যেন কোনও গার্মেন্ট কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করা না হয় সে জন্য মালিকদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, এমনিতেই গার্মেন্ট সেক্টর নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র বিভিন্নভাবে গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছে। বিশেষ করে মার্কিন শ্রমনীতি ঘোষণা দেওয়ার পর এই সেক্টরে গোলযোগ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। গোলযোগের কারণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা যাবে বলে চক্রটি মনে করছে।

সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় চার হাজার ১০৯টি গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। এতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এই খাতে উৎপাদিত পোশাক বিশ্বের প্রায় ১৬৭টি দেশে রফতানি হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে পোশাক রফতানি হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার মূল্যমানের, যা রফতানি আয়ের শতকরা ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ফলে এ খাতে বিশৃঙ্খলা-সৃষ্টি করে বিধি নিষেধ আরোপ করানো গেলে সরকার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশ বিরোধী একটি শক্তি মাঠের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার চেষ্টা করছে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সোমবারের বৈঠকে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে কোনও অপশক্তি যাতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে সে জন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করাসহ সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গার্মেন্ট সেক্টরে অস্থিরতা তৈরি করতে তৃতীয় একটি পক্ষ ওত পেতে বসে আছে। যে কোনও ছুতোয় তারা গার্মেন্টকর্মীদের উসকে দিয়ে সড়কে নামানোর পাঁয়তারা করছে। তৃতীয় শক্তি যাতে কোনও সুযোগ না পায় সে জন্য ঈদের ছুটির বিষয়েও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সভায় বিকেএমই-এর নির্বাহী সভাপতি হাতে আলী বলেন, অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের ঈদে বেতন-বোনাস প্রদান করা মালিকদের জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হলেও ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া হবে। বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ হীল রকিব বলেন, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদান সংক্রান্তে সব পক্ষের পারস্পারিক সমন্বয়ের কোনও বিকল্প নেই। যে কোনও প্রকার নাশকতা রোধে তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন।
Facebook Comments Box