ঢাকা ০২:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান

মুক্তাগাছা( ময়মনসিংহ) প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৭:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪ ১৮ বার পঠিত

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের ঝড়ে টিনের চাল উড়ে যাওয়ায় শ্রেণিকক্ষের অভাবে প্রচণ্ড গরম ও প্রখর রোদ উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে স্থান সংকুলান না হওয়ায় শ্রেণিকক্ষেও তাদের গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হচ্ছে। এতে তারা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে উপজেলার বড়গ্রাম ইউনিয়নের মানকোন গ্রামের বিনোদবাড়ি মানকোন দাখিল মাদ্রাসার দুইটি শ্রেণিকক্ষের টিনের চাল উড়ে যায়। ফলে শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চ সংকটে খোলা আকাশের নিচে প্রচণ্ড গরমে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে।

এদিকে বিদ্যালয় ভবনের অবস্থাও বর্তমানে জরাজীর্ণ। অধিকাংশ কক্ষের জানালা ভাঙা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য দুটি টয়লেট থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী ও অস্বাস্থ্যকর। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল বরাবর ভালো হলেও এসব কারণে বিদ্যালয়বিমুখ হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী।

এ মাদ্রাসাটি ১৯৯৬ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে সুনামের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে এবং এলাকার শিক্ষা প্রসারে অবদান রাখছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হলেও প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ভাঙা ও জরাজীর্ণ টিনশেডের ভবনে শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবুও দেখার কেউ নেই।

বর্তমানে মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার শতাধিক এবং শিক্ষক ও স্টাফ রয়েছেন ২০ জন। তবে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব কক্ষে আর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠার ২৮ বছরেও সরকারিভাবে কোনো ভবন বরাদ্দ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকদের বসার জন্য একটিমাত্র কক্ষ থাকলেও সেখানে আবার অফিসের কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাবাসসুম, সিয়াম, জাহিদুল, বিথী আক্তার, সুমাইয়া নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজিয়া, তমা, আফরিন, ইকরাম, অষ্টম শ্রেণির মাহিয়াতুল আফিয়া আক্তার ও দিদারুল আলম জানায়, ক্লাস রুমের টিন উড়ে যাওয়ায় প্রচণ্ড গরমে খোলা মাঠে ক্লাস করতে খুব কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে টয়লেটের দুর্গন্ধে স্কুলে টেকা দায় হয়ে পড়ে। সরকারের কাছে তাদের প্রতিষ্ঠানের সংস্কারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করার পাশাপাশি নতুন ভবনের বরাদ্দ দাবি জানান তারা।

মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাইয়েবা তাবাসসুম বলে- মাদ্রাসার টিনের চাল উড়িয়ে নেওয়ায় পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। আমরা স্বাভাবিক ক্লাসে ফিরতে চাই।

নবম শ্রেণির আরএক ছাত্র তাকরীম হোসেন বলে- নতুন কারিকুলাম এমনিতেই অনেক কঠিন আবার ঠিকমত আমরা ক্লাস করতে পারছি না। এ অবস্থায় আমরা কতটুকু শিখতে পারব তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।

প্রতিষ্ঠান প্রধান মো. মোখলেছুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ঝড়ে শ্রেণিকক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং বেঞ্চের অভাবে বাধ্য হয়ে কখনো মাঠে, কখনো বারান্দায় পাঠদান করতে হচ্ছে। বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে কিন্তু কোনো সমাধান না হওয়ায় আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। সরকারিভাবে একটি ভবন বরাদ্দ দিলে সবাই উপকৃত হতো।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মনির হোসেন চৌধুরী বলেন, ভালো রেজাল্ট করা সত্ত্বেও শ্রেণিকক্ষ সংকটে এলাকার অনেক শিক্ষার্থী অন্য বিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হচ্ছে। অবিলম্বে একটি ভবন বরাদ্দ দেওয়ার জন্য তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে জানতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহাদাত হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি কলটি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান

আপডেট সময় : ০৪:৫৭:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের ঝড়ে টিনের চাল উড়ে যাওয়ায় শ্রেণিকক্ষের অভাবে প্রচণ্ড গরম ও প্রখর রোদ উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে স্থান সংকুলান না হওয়ায় শ্রেণিকক্ষেও তাদের গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হচ্ছে। এতে তারা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে উপজেলার বড়গ্রাম ইউনিয়নের মানকোন গ্রামের বিনোদবাড়ি মানকোন দাখিল মাদ্রাসার দুইটি শ্রেণিকক্ষের টিনের চাল উড়ে যায়। ফলে শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চ সংকটে খোলা আকাশের নিচে প্রচণ্ড গরমে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে।

এদিকে বিদ্যালয় ভবনের অবস্থাও বর্তমানে জরাজীর্ণ। অধিকাংশ কক্ষের জানালা ভাঙা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য দুটি টয়লেট থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী ও অস্বাস্থ্যকর। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল বরাবর ভালো হলেও এসব কারণে বিদ্যালয়বিমুখ হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী।

এ মাদ্রাসাটি ১৯৯৬ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে সুনামের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে এবং এলাকার শিক্ষা প্রসারে অবদান রাখছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হলেও প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ভাঙা ও জরাজীর্ণ টিনশেডের ভবনে শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবুও দেখার কেউ নেই।

বর্তমানে মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার শতাধিক এবং শিক্ষক ও স্টাফ রয়েছেন ২০ জন। তবে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব কক্ষে আর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠার ২৮ বছরেও সরকারিভাবে কোনো ভবন বরাদ্দ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকদের বসার জন্য একটিমাত্র কক্ষ থাকলেও সেখানে আবার অফিসের কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাবাসসুম, সিয়াম, জাহিদুল, বিথী আক্তার, সুমাইয়া নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজিয়া, তমা, আফরিন, ইকরাম, অষ্টম শ্রেণির মাহিয়াতুল আফিয়া আক্তার ও দিদারুল আলম জানায়, ক্লাস রুমের টিন উড়ে যাওয়ায় প্রচণ্ড গরমে খোলা মাঠে ক্লাস করতে খুব কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে টয়লেটের দুর্গন্ধে স্কুলে টেকা দায় হয়ে পড়ে। সরকারের কাছে তাদের প্রতিষ্ঠানের সংস্কারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করার পাশাপাশি নতুন ভবনের বরাদ্দ দাবি জানান তারা।

মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাইয়েবা তাবাসসুম বলে- মাদ্রাসার টিনের চাল উড়িয়ে নেওয়ায় পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। আমরা স্বাভাবিক ক্লাসে ফিরতে চাই।

নবম শ্রেণির আরএক ছাত্র তাকরীম হোসেন বলে- নতুন কারিকুলাম এমনিতেই অনেক কঠিন আবার ঠিকমত আমরা ক্লাস করতে পারছি না। এ অবস্থায় আমরা কতটুকু শিখতে পারব তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।

প্রতিষ্ঠান প্রধান মো. মোখলেছুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ঝড়ে শ্রেণিকক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং বেঞ্চের অভাবে বাধ্য হয়ে কখনো মাঠে, কখনো বারান্দায় পাঠদান করতে হচ্ছে। বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে কিন্তু কোনো সমাধান না হওয়ায় আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। সরকারিভাবে একটি ভবন বরাদ্দ দিলে সবাই উপকৃত হতো।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মনির হোসেন চৌধুরী বলেন, ভালো রেজাল্ট করা সত্ত্বেও শ্রেণিকক্ষ সংকটে এলাকার অনেক শিক্ষার্থী অন্য বিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হচ্ছে। অবিলম্বে একটি ভবন বরাদ্দ দেওয়ার জন্য তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে জানতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহাদাত হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি কলটি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।

Facebook Comments Box