ঢাকা ০৪:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামসহ দেশের ১৫ জেলায় বন্যার আরও অবনতি

সারাবেলা সংবাদ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০১:২৫:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪ ৯ বার পঠিত

ছবি সংগৃহিত

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। টানা ছয় দিনব্যাপী স্থায়ী বন্যায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকার হাজারো বন্যা প্লাবিত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

প্রাথমিকভাবে মানুষ যেসব উঁচু স্থানে গবাদিপশু রেখেছেন, গত দুদিনে হুহু করে সেসব স্থানে পানি ওঠায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ।

জীবন বাঁচাতে অনেকে নিজস্ব নৌকায়, উঁচু রাস্তায়, ফ্লাড শেল্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। রংপুরে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। টাঙ্গাইল, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, মংয়মনসিংহের ফুলপুর ও শেরপুরে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। লালমনিরহাটে উঠতি ফসল ঘরে তুলতে পারেননি কৃষকরা।

বগুড়া ও জামালপুরের ইসলামপুরে পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় খোলেনি ৫০ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২০ মাধ্যমিক স্কুল-মাদ্রাসার মূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জে এখনো গৃহবন্দি নিম্নাঞ্চলের মানুষ।

তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে সুমানগঞ্জে। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে হাওড়ে ডুবে মারা যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

 প্রতিবেদকদের পাঠানো খবর

কুড়িগ্রাম, চিলমারী, নাগেশ্বরী ও রৌমারী: জেলায় পানিবন্দি লোকের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাফসান জানি জানান, শনিবার বিকালে ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬১ সেন্টিমিটার, হাতিয়া পয়েন্টে ৬৮ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ও তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমার নদীর পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

আগামী কয়েকদিন এ পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানান। বন্যার পানির তোড়ে শনিবার বিকালে নাগেশ্বরী উপজেলার মিয়াপাড়া নামক স্থানে দুধকুমার নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী ১২ গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে ৮৩টি মেডিকেল টিম বন্যা কবলিত এলাকায় কাজ করছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কার্যত বন্যা এলাকায় কাউকে দেখা মেলেনি। ওই সব গ্রামে গত ৫ দিন ধরে কোনো মেডিকেল টিম খোঁজখবর নেয়নি বলে বানভাসিরা জানিয়েছেন।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৬৬০ হেক্টর ফসলি জমি, বীজতলা ও শাকসবজি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, ১৪৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বেগম নুরুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩২টি এবং নাগেশ্বরীর বেরুবাড়ী ইউনিয়নের সবুজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৫টি বানভাসি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম জানান, চলমান বন্যায় ১০৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৭১টি স্কুল, ৩২টি মাদ্রাসা ও ৬টি কলেজ রয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধির কারণে সংযোগ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়েছে। গত ৫ দিন ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রাস্তার ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবাহী পরিবহণের চালক ও শ্রমিকরা।

নাগেশ্বরী উপজেলায় শুক্রবার ভেলা দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে ডুবে যাওয়া সেচ পাম্পের বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মারা গেছে দুই শিশু। এরা হলো কালীগঞ্জ বেগুনীপাড়ার শাহাদৎ হোসেনের দুই মেয়ে সুমাইয়া ও মাছুমা। একই দিনে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছে নারায়ণপুর ইউনিয়নের আব্দুর রহমানের ছেলে সিরাজুল ইসলাম।

লালমনিরহাট: অনেক উঠতি ফসল ঘরে তুলতে পারেননি চরাঞ্চলের কৃষকরা। আর পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। তাদের কাছে এখনো শুকনো খাবার বিতরণ করেনি জেলা প্রশাসন।

তবে তিস্তার পানি এ সময়ের মধ্যে বিপৎসীমার উপরে যায়নি। তিস্তা ব্যারাজের পাশে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা শহর রক্ষার্থে চন্ডিমারী বাঁধে ধস দেখা দেয়। পরে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণ করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। এছাড়া আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচার কয়েকটি স্থানে পানি ঢুকে পড়েছে।

বগুড়া: সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শনিবার বিকালে মথুরাপাড়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ৬টা পর্যন্ত পানি ১০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। ১৭ হাজার ২৫০ পরিবারের ৬৮ হাজার ৪০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান এসব তথ্য দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ায় প্রবল বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ৪ জুলাই থেকে যমুনা নদী পরিবেষ্টিত সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার নিচু এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করে।

রংপুর ও কাউনিয়া: গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর পানি অব্যাহত ভাবে বাড়ছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার নদীর তীরবর্তী ৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও নদীর চরের জনবসতি হুমকির মুখে পড়েছে। নতুন নতুন এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত প্রাথমিক হিসাবে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এছাড়া কাউনিয়ার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। শনিবার দুপুরে তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৯.৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদী পারের মানুষ।

টাঙ্গাইল, ভূঞাপুর ও কালীহাতি: নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি পানিবন্দি হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বর্ন্যাতরা। দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির অভাব।

অন্যদিকে ভূঞাপুরে যমুনা নদীর পানি গ্রামে প্রবেশ করায় একটি পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। এছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের মানুষজন।

শনিবার (৬ জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত যমুনা নদীর ভূঞাপুর অংশে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। আর বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় যমুনা নদীতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিপৎসীমারা ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার ভূঞাপুর, কালীহাতি, নাগরপুর, গোপাপলপুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নদীর পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনও অব্যাহত রয়েছে।

সুজানগর (পাবনা): সুজানগর উপজেলায় পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে উপজেলার ভায়না, সাতবাড়িয়া, মানিকহাট, নাজিরগঞ্জ ও সাগরকান্দি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।

হুমকির মুখে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বসতভিটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নদীর পানি বৃদ্ধি ও পানি কমতি এবং পদ্মা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলন নদী ভাঙনের অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নদী পারের বাসিন্দারা।

বড়লেখা (মৌলভীবাজার): বড়লেখা উপজেলার গজভাগ গ্রামের মণিপুরীপাড়ার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ধলইছড়ার (সরকারি খাল) ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে আদিবাসী মণিপুরী ১৫ পরিবারের বাড়িঘর। বাড়িঘর রক্ষায় অনেকে ব্যক্তিগত গাইডওয়াল দিলেও পাহাড়ি ঢলে তা ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে।
বাড়িঘর রক্ষায় খালের ভূমি চিহ্নিত করে উদ্ধার, পরিকল্পিতভাবে খনন ও গাইডওয়াল নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

বড়লেখায় ঈদের ছুটি শেষে বুধবার প্রাথমিক বিদ্যালয় খুললেও দীর্ঘদিন ধরে বন্যায় পানিবন্দি উপজেলার ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫০টি বন্ধ রাখতে হয়েছে। অপরদিকে মাধ্যমিক স্তরের ৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টি বন্যার কারণে বন্ধ থাকায় নেওয়া হয়নি সেগুলোর পূর্ব নির্ধারিত সাম্নাষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা।

কেন্দুয়া (নেত্রকোনা): কেন্দুয়ায় নদ-নদী ও হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত হয়ে কয়েকটি গ্রামীণ সড়কের ওপর দিয়ে বইছে পানি।

এছাড়া নিম্নাঞ্চলের তিন চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম।

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) : ফুলপুরের নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে উপজেলার ছনধরা, সিংহেশ্বর, ফুলপুর ইউনিয়নের অধিকাংশসহ অন্যান্য ইউনিয়নের আংশিক তলিয়ে অনেক পরিবার গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়া পৌর সদরসহ অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ চলছে।

শেরপুর: শেরপুর সদর উপজেলার ধলা ইউনিয়নের ৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এদিয়ে শেরপুর সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৪৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলো।

ঢলের পানিতে আকস্মিকভাবে প্লাবিত এসব গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার রোপা আমনের বীজতলা ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে। নালিতাবাড়ীর কলসপাড় ইউনিয়নের পিপলেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং এর আশপাশে ঢলের পানি থাকায় ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম ৪ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া বালুঘাটা তারাকান্দি হয়ে পিপলেশ্বর পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়কে এখনও এক হাঁটু পরিমাণ পানি থাকায় চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে।

এ ছাড়া সদর উপজেলার ৬নং চর এলাকায় যমুনার শাখা নদী দশানী ও ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নদীতে শুরু হয়েছে ভাঙন। নদীতে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, ভিটেমাটি, আবাদি জমি ও রাস্তাঘাট।

গোলাপগঞ্জ (সিলেট): গোলাপগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমানে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ডাইকের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হু হু করে পানি বাড়ায় উপজেলার নিম্নাঞ্চল এলাকার লোকজন কার্যত রয়েছেন পানিবন্দি অস্থায়।

এদিকে এক মাসেও পানি নেমে যায়নি ভাদেশ্বরের মীরগঞ্জ থেকে। হাকালুকি হাওড় পারের লোকজন রয়েছেন কার্যত গৃহবন্দি অবস্থায়। শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের কালীকৃষ্ণপুর, রাংজিওল, নুরজাহানপুর, পানিয়াগাসহ বিভিন্ন গ্রামে এখনো হাটুপানি। ঘরে-বাইরে পানি থাকায় লোকজন রয়েছেন বেকায়দায় মধ্যে।

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল কম নামায় জেলার সুরমা ও যাদুকাটা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। নদীর পানি কমলেও কমছে অনেকটা ধীর লয়ে।
তবে নদ-নদীর পানি কমলেও জেলার নিম্নাঞ্চলের অনেক বাড়ি থেকে এখনও নামেনি বন্যার পানি। এমনকি নিম্নাঞ্চলের তলিয়ে যাওয়া গ্রামীণ সড়কগুলো থেকেও পানি নামেনি। তবে দ্রুত পানি নেমে যাবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

রাউজান (চট্টগ্রাম): কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে হাওড়ে নেমে পানিতে ডুবে রাউজানের আবিদুর রহমান খান আবিদ নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিখোঁজ হন।

নিখোঁজের ২১ ঘণ্টা পর শনিবার দুপুর ২টার সময় আবিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে শুক্রবার বিকাল ৫টা করিমগঞ্জে হাওড়ে নামলে ওই শিক্ষার্থী পানিতে তলিয়ে যান।

তিনি চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের মোবারকখীল হালদার খান চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ সারওয়ার জামান খান ও তাহমিনা নুরের সন্তান। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

কুড়িগ্রামসহ দেশের ১৫ জেলায় বন্যার আরও অবনতি

আপডেট সময় : ০১:২৫:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। টানা ছয় দিনব্যাপী স্থায়ী বন্যায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকার হাজারো বন্যা প্লাবিত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

প্রাথমিকভাবে মানুষ যেসব উঁচু স্থানে গবাদিপশু রেখেছেন, গত দুদিনে হুহু করে সেসব স্থানে পানি ওঠায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ।

জীবন বাঁচাতে অনেকে নিজস্ব নৌকায়, উঁচু রাস্তায়, ফ্লাড শেল্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। রংপুরে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। টাঙ্গাইল, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, মংয়মনসিংহের ফুলপুর ও শেরপুরে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। লালমনিরহাটে উঠতি ফসল ঘরে তুলতে পারেননি কৃষকরা।

বগুড়া ও জামালপুরের ইসলামপুরে পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় খোলেনি ৫০ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২০ মাধ্যমিক স্কুল-মাদ্রাসার মূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জে এখনো গৃহবন্দি নিম্নাঞ্চলের মানুষ।

তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে সুমানগঞ্জে। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে হাওড়ে ডুবে মারা যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

 প্রতিবেদকদের পাঠানো খবর

কুড়িগ্রাম, চিলমারী, নাগেশ্বরী ও রৌমারী: জেলায় পানিবন্দি লোকের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাফসান জানি জানান, শনিবার বিকালে ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬১ সেন্টিমিটার, হাতিয়া পয়েন্টে ৬৮ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ও তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমার নদীর পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

আগামী কয়েকদিন এ পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানান। বন্যার পানির তোড়ে শনিবার বিকালে নাগেশ্বরী উপজেলার মিয়াপাড়া নামক স্থানে দুধকুমার নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী ১২ গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে ৮৩টি মেডিকেল টিম বন্যা কবলিত এলাকায় কাজ করছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কার্যত বন্যা এলাকায় কাউকে দেখা মেলেনি। ওই সব গ্রামে গত ৫ দিন ধরে কোনো মেডিকেল টিম খোঁজখবর নেয়নি বলে বানভাসিরা জানিয়েছেন।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৬৬০ হেক্টর ফসলি জমি, বীজতলা ও শাকসবজি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, ১৪৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বেগম নুরুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩২টি এবং নাগেশ্বরীর বেরুবাড়ী ইউনিয়নের সবুজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৫টি বানভাসি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম জানান, চলমান বন্যায় ১০৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৭১টি স্কুল, ৩২টি মাদ্রাসা ও ৬টি কলেজ রয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধির কারণে সংযোগ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়েছে। গত ৫ দিন ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রাস্তার ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবাহী পরিবহণের চালক ও শ্রমিকরা।

নাগেশ্বরী উপজেলায় শুক্রবার ভেলা দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে ডুবে যাওয়া সেচ পাম্পের বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মারা গেছে দুই শিশু। এরা হলো কালীগঞ্জ বেগুনীপাড়ার শাহাদৎ হোসেনের দুই মেয়ে সুমাইয়া ও মাছুমা। একই দিনে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছে নারায়ণপুর ইউনিয়নের আব্দুর রহমানের ছেলে সিরাজুল ইসলাম।

লালমনিরহাট: অনেক উঠতি ফসল ঘরে তুলতে পারেননি চরাঞ্চলের কৃষকরা। আর পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। তাদের কাছে এখনো শুকনো খাবার বিতরণ করেনি জেলা প্রশাসন।

তবে তিস্তার পানি এ সময়ের মধ্যে বিপৎসীমার উপরে যায়নি। তিস্তা ব্যারাজের পাশে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা শহর রক্ষার্থে চন্ডিমারী বাঁধে ধস দেখা দেয়। পরে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণ করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। এছাড়া আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচার কয়েকটি স্থানে পানি ঢুকে পড়েছে।

বগুড়া: সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শনিবার বিকালে মথুরাপাড়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ৬টা পর্যন্ত পানি ১০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। ১৭ হাজার ২৫০ পরিবারের ৬৮ হাজার ৪০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান এসব তথ্য দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ায় প্রবল বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ৪ জুলাই থেকে যমুনা নদী পরিবেষ্টিত সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার নিচু এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করে।

রংপুর ও কাউনিয়া: গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর পানি অব্যাহত ভাবে বাড়ছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার নদীর তীরবর্তী ৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও নদীর চরের জনবসতি হুমকির মুখে পড়েছে। নতুন নতুন এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত প্রাথমিক হিসাবে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এছাড়া কাউনিয়ার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। শনিবার দুপুরে তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৯.৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদী পারের মানুষ।

টাঙ্গাইল, ভূঞাপুর ও কালীহাতি: নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি পানিবন্দি হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বর্ন্যাতরা। দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির অভাব।

অন্যদিকে ভূঞাপুরে যমুনা নদীর পানি গ্রামে প্রবেশ করায় একটি পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। এছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের মানুষজন।

শনিবার (৬ জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত যমুনা নদীর ভূঞাপুর অংশে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। আর বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় যমুনা নদীতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিপৎসীমারা ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার ভূঞাপুর, কালীহাতি, নাগরপুর, গোপাপলপুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নদীর পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনও অব্যাহত রয়েছে।

সুজানগর (পাবনা): সুজানগর উপজেলায় পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে উপজেলার ভায়না, সাতবাড়িয়া, মানিকহাট, নাজিরগঞ্জ ও সাগরকান্দি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।

হুমকির মুখে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বসতভিটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নদীর পানি বৃদ্ধি ও পানি কমতি এবং পদ্মা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলন নদী ভাঙনের অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নদী পারের বাসিন্দারা।

বড়লেখা (মৌলভীবাজার): বড়লেখা উপজেলার গজভাগ গ্রামের মণিপুরীপাড়ার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ধলইছড়ার (সরকারি খাল) ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে আদিবাসী মণিপুরী ১৫ পরিবারের বাড়িঘর। বাড়িঘর রক্ষায় অনেকে ব্যক্তিগত গাইডওয়াল দিলেও পাহাড়ি ঢলে তা ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে।
বাড়িঘর রক্ষায় খালের ভূমি চিহ্নিত করে উদ্ধার, পরিকল্পিতভাবে খনন ও গাইডওয়াল নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

বড়লেখায় ঈদের ছুটি শেষে বুধবার প্রাথমিক বিদ্যালয় খুললেও দীর্ঘদিন ধরে বন্যায় পানিবন্দি উপজেলার ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫০টি বন্ধ রাখতে হয়েছে। অপরদিকে মাধ্যমিক স্তরের ৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টি বন্যার কারণে বন্ধ থাকায় নেওয়া হয়নি সেগুলোর পূর্ব নির্ধারিত সাম্নাষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা।

কেন্দুয়া (নেত্রকোনা): কেন্দুয়ায় নদ-নদী ও হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত হয়ে কয়েকটি গ্রামীণ সড়কের ওপর দিয়ে বইছে পানি।

এছাড়া নিম্নাঞ্চলের তিন চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম।

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) : ফুলপুরের নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে উপজেলার ছনধরা, সিংহেশ্বর, ফুলপুর ইউনিয়নের অধিকাংশসহ অন্যান্য ইউনিয়নের আংশিক তলিয়ে অনেক পরিবার গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়া পৌর সদরসহ অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ চলছে।

শেরপুর: শেরপুর সদর উপজেলার ধলা ইউনিয়নের ৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এদিয়ে শেরপুর সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৪৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলো।

ঢলের পানিতে আকস্মিকভাবে প্লাবিত এসব গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার রোপা আমনের বীজতলা ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে। নালিতাবাড়ীর কলসপাড় ইউনিয়নের পিপলেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং এর আশপাশে ঢলের পানি থাকায় ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম ৪ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া বালুঘাটা তারাকান্দি হয়ে পিপলেশ্বর পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়কে এখনও এক হাঁটু পরিমাণ পানি থাকায় চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে।

এ ছাড়া সদর উপজেলার ৬নং চর এলাকায় যমুনার শাখা নদী দশানী ও ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নদীতে শুরু হয়েছে ভাঙন। নদীতে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, ভিটেমাটি, আবাদি জমি ও রাস্তাঘাট।

গোলাপগঞ্জ (সিলেট): গোলাপগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমানে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ডাইকের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হু হু করে পানি বাড়ায় উপজেলার নিম্নাঞ্চল এলাকার লোকজন কার্যত রয়েছেন পানিবন্দি অস্থায়।

এদিকে এক মাসেও পানি নেমে যায়নি ভাদেশ্বরের মীরগঞ্জ থেকে। হাকালুকি হাওড় পারের লোকজন রয়েছেন কার্যত গৃহবন্দি অবস্থায়। শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের কালীকৃষ্ণপুর, রাংজিওল, নুরজাহানপুর, পানিয়াগাসহ বিভিন্ন গ্রামে এখনো হাটুপানি। ঘরে-বাইরে পানি থাকায় লোকজন রয়েছেন বেকায়দায় মধ্যে।

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল কম নামায় জেলার সুরমা ও যাদুকাটা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। নদীর পানি কমলেও কমছে অনেকটা ধীর লয়ে।
তবে নদ-নদীর পানি কমলেও জেলার নিম্নাঞ্চলের অনেক বাড়ি থেকে এখনও নামেনি বন্যার পানি। এমনকি নিম্নাঞ্চলের তলিয়ে যাওয়া গ্রামীণ সড়কগুলো থেকেও পানি নামেনি। তবে দ্রুত পানি নেমে যাবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

রাউজান (চট্টগ্রাম): কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে হাওড়ে নেমে পানিতে ডুবে রাউজানের আবিদুর রহমান খান আবিদ নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিখোঁজ হন।

নিখোঁজের ২১ ঘণ্টা পর শনিবার দুপুর ২টার সময় আবিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে শুক্রবার বিকাল ৫টা করিমগঞ্জে হাওড়ে নামলে ওই শিক্ষার্থী পানিতে তলিয়ে যান।

তিনি চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের মোবারকখীল হালদার খান চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ সারওয়ার জামান খান ও তাহমিনা নুরের সন্তান। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন।

Facebook Comments Box