ঢাকা ০৭:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

কর্ণফুলী টানেল দেশের জন্য লাভজনক হবে নাকি ‘বোঝা’

সারাবেলা ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:২৬:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ৪৭ বার পঠিত

উদ্বোধন হয়েছে কর্ণফুলী টানেলের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (২৮ অক্টোবর) এর উদ্বোধন করেন। এই প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অধীনে।

তাদের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটির মোট নির্মাণ ব্যয় ৯হাজার ৮৮০ কোটি টাকা‌ ধরা হলেও ব্যায় হয়েছে ১০ হাজার ৬৭৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশে সরকারের অর্থ সহায়তা তিন হাজার ৯৬৭ কোটি টাকার মতো। বাকি টাকা এসেছে চীনের কাছ থেকে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে টানেলটি দেশের জন্য লাভজনক হবে নাকি বোঝা হয়ে থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্ণফুলী নদীর উপর যে টানেলটি গড়ে তোলা হয়েছে সেটি আসলে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য একটি ভাল প্রকল্প হিসেবে দেখা দিতে পারে। কিন্তু স্বল্পমেয়াদে এটি আসলে সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে যেদেখা দিবে। স্বল্পমেয়াদে এটার আয় দিয়ে এটি নির্মাণে যে খরচ হয়েছে সে খরচ তোলা যাবে না। “সেদিক থেকে এটা শর্ট টার্মে এটা বোঝা হয়ে থাকবে বাংলাদেশের উপর বিশেষজ্ঞরা বলেন।

টানেলে কী কী রয়েছে : সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, কর্ণফুলী টানেলটি মূলত আনোয়ারা উপজেলাকে চট্টগ্রামের মূল শহরের সাথে যুক্ত করেছে। এই প্রকল্পের অধীনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ৪ লেনের সড়ক টানেল নির্মান করা হয়েছে।

মূল টানেলে রয়েছে দুটি টিউব। যার দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এছাড়া টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি সংযোগ সড়ক রয়েছে। সাথে রয়েছে ৭শ ২৭ মিটার দীর্ঘ একটি ওভারব্রীজ।

কী লাভ হবে : সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম শহরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন ও আধুনিকায়ন করাই এই টানেলটি নির্মাণের অন্যতম কারণ।

টানেলটি চালু হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের সাথে নতুন একটি সড়ক যোগাযোগ চালু হল।

ফলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার কিংবা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার দূরত্ব কমে আসবে। বাঁচবে খরচ এবং সময়ও।

সেই সাথে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব দিকে শহরাঞ্চলকে যুক্ত করে সেখানে উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এটি।

ওই এলাকায় যে শিল্প এলাকা গড়ে তোলার প্রস্তাব রয়েছে সেটির কাজও শুরু হবে জোরেসোরে।

অন্যদিকে পশ্চিম দিকে চট্টগ্রাম মূল শহরের সাথে সাগর ও বিমান বন্দরেরও দূরত্ব কমে আসবে।

কম খরচে ভ্রমণ আরো সহজ হবে। আর দুই বন্দর থেকেই মাল পরিবহন সহজ হবে।

এছাড়া টানেলটি নির্মাণ করায় চট্টগ্রাম বন্দরের সুযোগ সুবিধা বাড়বে। যার কারণে গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজও এগিয়ে যাবে।

সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, টানেল নির্মাণ হওয়ায় চট্টগ্রাম শহরকে চীনের সাংহাই শহরের আদলে “ওয়ান সিটি টু টাউন” বা “এক নগর দুই শহর” এর মডেলে গড়ে তোলা হয়েছে। টানেলটি দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে উল্লেখ করে এর প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ বলেন, এই টানেল চালু হওয়ায় সেটি দেশের জিডিপিতে বার্ষিক শূণ্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে।

স্বল্পমেয়াদে বোঝা : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্ণফুলী নদীর উপর যে টানেলটি গড়ে তোলা হচ্ছে সেটি আসলে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য একটি ভাল প্রকল্প হিসেবে দেখা দিতে পারে। কিন্তু স্বল্পমেয়াদে এটি আসলে সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিবে। স্বল্পমেয়াদে এটার আয় দিয়ে এটি নির্মাণে যে খরচ হয়েছে সে খরচ তোলা যাবে না।

“সেদিক থেকে এটা শর্ট টার্মে এটা বোঝা হয়ে থাকবে বাংলাদেশের উপরে,” মঈনুল ইসলাম বলেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ড. মঈনুল ইসলাম বলেন, মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিনড্রাইভ সড়কটি যদি সম্পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে মেরিনড্রাইভের পাশে অনেকগুলো শিল্প এলাকা গড়ে উঠবে।

“অতএব লং টার্ম বিবেচনা করলে এটা গুড প্রজেক্ট,” বলেন তিনি। কারণ এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব কমিয়ে দেবে।

তবে তিনি মনেকরেন স্বল্পমেয়াদে এটার আয় দিয়ে এটি নির্মাণে যে খরচ হয়েছে সে খরচ তোলা যাবে না। “সেদিক থেকে এটা শর্ট টার্মে এটা বোঝা হয়ে থাকবে বাংলাদেশের উপরে,” মঈনুল ইসলাম বলেন। আগামী ৫-৭ বছরে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ হবে না বলেও মনে করেন তিনি।

যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, কারণ আগামী ৫-৭ বছরে এটা পর্যাপ্ত ব্যবহৃত হবে না। এতে যথেষ্ট পরিমাণ গাড়ি চলাচল করবে না। ফলে প্রথম দিকে এটি বাংলাদেশের উপরে একটি বোঝা হয়ে থাকবে।

মঈনুল ইসলাম বলেন, ২০২৫ সাল থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা শুরু হয়ে যাবে। আর স্বল্প মেয়াদে যে লাভ হবে এই টানেল থেকে সেটি ঋণ পরিশোধের জন্য যথেষ্ট হবে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সহসাই হবে না বলেও মনে করেন তিনি।   বিবিসি

সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ২৮ অক্টোবর ২০২৩

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

কর্ণফুলী টানেল দেশের জন্য লাভজনক হবে নাকি ‘বোঝা’

আপডেট সময় : ০১:২৬:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৩

উদ্বোধন হয়েছে কর্ণফুলী টানেলের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (২৮ অক্টোবর) এর উদ্বোধন করেন। এই প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অধীনে।

তাদের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটির মোট নির্মাণ ব্যয় ৯হাজার ৮৮০ কোটি টাকা‌ ধরা হলেও ব্যায় হয়েছে ১০ হাজার ৬৭৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশে সরকারের অর্থ সহায়তা তিন হাজার ৯৬৭ কোটি টাকার মতো। বাকি টাকা এসেছে চীনের কাছ থেকে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে টানেলটি দেশের জন্য লাভজনক হবে নাকি বোঝা হয়ে থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্ণফুলী নদীর উপর যে টানেলটি গড়ে তোলা হয়েছে সেটি আসলে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য একটি ভাল প্রকল্প হিসেবে দেখা দিতে পারে। কিন্তু স্বল্পমেয়াদে এটি আসলে সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে যেদেখা দিবে। স্বল্পমেয়াদে এটার আয় দিয়ে এটি নির্মাণে যে খরচ হয়েছে সে খরচ তোলা যাবে না। “সেদিক থেকে এটা শর্ট টার্মে এটা বোঝা হয়ে থাকবে বাংলাদেশের উপর বিশেষজ্ঞরা বলেন।

টানেলে কী কী রয়েছে : সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, কর্ণফুলী টানেলটি মূলত আনোয়ারা উপজেলাকে চট্টগ্রামের মূল শহরের সাথে যুক্ত করেছে। এই প্রকল্পের অধীনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ৪ লেনের সড়ক টানেল নির্মান করা হয়েছে।

মূল টানেলে রয়েছে দুটি টিউব। যার দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এছাড়া টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি সংযোগ সড়ক রয়েছে। সাথে রয়েছে ৭শ ২৭ মিটার দীর্ঘ একটি ওভারব্রীজ।

কী লাভ হবে : সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম শহরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন ও আধুনিকায়ন করাই এই টানেলটি নির্মাণের অন্যতম কারণ।

টানেলটি চালু হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের সাথে নতুন একটি সড়ক যোগাযোগ চালু হল।

ফলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার কিংবা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার দূরত্ব কমে আসবে। বাঁচবে খরচ এবং সময়ও।

সেই সাথে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব দিকে শহরাঞ্চলকে যুক্ত করে সেখানে উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এটি।

ওই এলাকায় যে শিল্প এলাকা গড়ে তোলার প্রস্তাব রয়েছে সেটির কাজও শুরু হবে জোরেসোরে।

অন্যদিকে পশ্চিম দিকে চট্টগ্রাম মূল শহরের সাথে সাগর ও বিমান বন্দরেরও দূরত্ব কমে আসবে।

কম খরচে ভ্রমণ আরো সহজ হবে। আর দুই বন্দর থেকেই মাল পরিবহন সহজ হবে।

এছাড়া টানেলটি নির্মাণ করায় চট্টগ্রাম বন্দরের সুযোগ সুবিধা বাড়বে। যার কারণে গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজও এগিয়ে যাবে।

সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, টানেল নির্মাণ হওয়ায় চট্টগ্রাম শহরকে চীনের সাংহাই শহরের আদলে “ওয়ান সিটি টু টাউন” বা “এক নগর দুই শহর” এর মডেলে গড়ে তোলা হয়েছে। টানেলটি দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে উল্লেখ করে এর প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ বলেন, এই টানেল চালু হওয়ায় সেটি দেশের জিডিপিতে বার্ষিক শূণ্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে।

স্বল্পমেয়াদে বোঝা : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্ণফুলী নদীর উপর যে টানেলটি গড়ে তোলা হচ্ছে সেটি আসলে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য একটি ভাল প্রকল্প হিসেবে দেখা দিতে পারে। কিন্তু স্বল্পমেয়াদে এটি আসলে সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিবে। স্বল্পমেয়াদে এটার আয় দিয়ে এটি নির্মাণে যে খরচ হয়েছে সে খরচ তোলা যাবে না।

“সেদিক থেকে এটা শর্ট টার্মে এটা বোঝা হয়ে থাকবে বাংলাদেশের উপরে,” মঈনুল ইসলাম বলেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ড. মঈনুল ইসলাম বলেন, মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিনড্রাইভ সড়কটি যদি সম্পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে মেরিনড্রাইভের পাশে অনেকগুলো শিল্প এলাকা গড়ে উঠবে।

“অতএব লং টার্ম বিবেচনা করলে এটা গুড প্রজেক্ট,” বলেন তিনি। কারণ এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব কমিয়ে দেবে।

তবে তিনি মনেকরেন স্বল্পমেয়াদে এটার আয় দিয়ে এটি নির্মাণে যে খরচ হয়েছে সে খরচ তোলা যাবে না। “সেদিক থেকে এটা শর্ট টার্মে এটা বোঝা হয়ে থাকবে বাংলাদেশের উপরে,” মঈনুল ইসলাম বলেন। আগামী ৫-৭ বছরে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ হবে না বলেও মনে করেন তিনি।

যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, কারণ আগামী ৫-৭ বছরে এটা পর্যাপ্ত ব্যবহৃত হবে না। এতে যথেষ্ট পরিমাণ গাড়ি চলাচল করবে না। ফলে প্রথম দিকে এটি বাংলাদেশের উপরে একটি বোঝা হয়ে থাকবে।

মঈনুল ইসলাম বলেন, ২০২৫ সাল থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা শুরু হয়ে যাবে। আর স্বল্প মেয়াদে যে লাভ হবে এই টানেল থেকে সেটি ঋণ পরিশোধের জন্য যথেষ্ট হবে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সহসাই হবে না বলেও মনে করেন তিনি।   বিবিসি

সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ২৮ অক্টোবর ২০২৩

Facebook Comments Box