বাংলাদেশের খুলনার মোংলা বন্দরের পশুর নদীতে ৮০০ টন কয়লা নিয়ে ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজ উদ্ধার ও কয়লা অপসারণের কাজ কার্গো মালিক নিজেই লোকজন নিয়ে শুরু করেছেন।
আর এই উদ্ধার তৎপরতা চলছে জোয়ার-ভাটার দিকে তাকিয়ে। পরিবেশ, নদীর জীববৈচিত্র্য বা অপর পারের সুন্দরবন নিয়ে কোনো ভাবনা নেই।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা কার্গো জাহাজ মালিককে চিঠি দিয়ে দ্রুত কয়লা সরিয়ে নিতে বলেছেন। আর জাহাজের মালিক জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে ভেকু জোগাড় করে আরেকটি বোটে তারা কয়লা অপসারণ শুরু করেছেন। ভাটার সময় এই অপসারণের কাজ চলে। জোয়ারের সময় বন্ধ থাকে। কয়লা অপসারণ করতে তাদেও সাত-আট দিন লাগবে।
শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে খুলনার বাগেরহাটের পশুর নদীর পূর্ব পাশে ডুবোচরে আটকে " এমভি প্রিন্স অব ঘাষিয়াখালী” নামের লাইটার কার্গো জাহাজটি তলা ফেটে ডুবে যায়।
জাহাজটি মোংলা বন্দরের হাড়বাড়িয়ায় অবস্থানরত একটি বিদেশি জাহাজ থেকে ৮০০ জন কয়লা নিয়ে যশোরের নোয়াপাড়ায় রওয়ানা হয়েছিলো। বিদেশি ওই জাহাজটির নাম "ফেয়ার ওয়ে” বলে জানাগেছে। জাহাজটি ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা নিয়ে এসেছে।এমভি প্রিন্স অব ঘাষিয়াখালীর ১২ জন স্টাফ সবাই সাঁতার কেটে নিরাপদে তীরে উঠতে সক্ষম হন।
কার্গো জাহাজটি ডুবে যাওয়ার ২৭ ঘণ্টা পর রোববার মালিক কতৃপক্ষ উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। জাহাজের মালিক মো. বশির হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান," ভাটার সময় যখন পানি কমে যায় তখন আমরা কয়লা অপসারণ করি ভেকু দিয়ে। আরেকট বোট আনা হয়েছে। কয়লা সেই বোটে রাখা হচ্ছে। জোয়ার ভাটার নদী। যখন জোয়ার আসে তখন কয়লাসহ জাহাজ ডুবে থাকে। ভাটার সময় জেগে ওঠে। তখন আমরা কয়লা অপসারণ করি। এভাবে কয়লা অপসারণ করতে সাত-আট দিন লাগবে। এরপর জাহাজ নদীর তীরে টেনে আনব।”
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহিন মজিদ জানান," কয়লা অপসারণ ও জাহাজ উদ্ধারের দায়িত্ব মালিক কর্তৃপক্ষের। আমরা তাদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। আমরা উদ্ধারের সময় বেধে দিই। সেই সময়ে উদ্ধার করতে না পারলে আমরাই দায়িত্ব গ্রহণ করি।”
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন," অপসারণের সময় পরিবেশের সুরক্ষাসহ সার্বিক দিক দেখার দায়িত্ব জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষের।”
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের(বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও খুলনার বাসিন্দা মো. নুর আলম শেখ বলেন," এই জাহাজগুলোর অধিকাংশেরই ফিটনেস নাই। তাই কয়েকদিন পর পরই পশুর নদীতে জাহাজডুবির ঘটনা ঘটে। এগুলো যাদের দেখার দায়িত্ব তারা দেখেন না।”
তার কথায়," কয়লায় অনেক ধরনের কেমিক্যাল আছে , যা বিষাক্ত। যে কারণে আমরা রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতা করেছি। পশুর নদী দিয়ে কয়লা পরিবহনের বিরোধিতা করছি। এই নদীর তীরেই সুন্দরবন। এই নদীতে এর আগে জ¦ালানি তেলবাহী জাহজও ডুবেছে। এর ফলে এখানকার পরিবেশ, নদীর জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে আছে।”
পশুর নদীতে মিঠা পানির ইরাবতি ডলফিন এইসব কারণে এখন বিলুপ্ত প্রায়, জলজ প্রাণীর প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্রতি বছরই গড়ে কমপক্ষে পাঁচটি কয়লা বোঝাই জাহাজ ডুবে যায় পশুর নদীতে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে কারুরই তেমন কোনো মাথাব্যথা নাই। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইউসুফ আল হারুন বলেন," কয়লায় কার্বন আর সালাফার আছে। ওই কয়লার কারণে নদীতে কার্বনের পরিমাণ বেড়ে যাবে। আর সালফার পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক অ্যাসিড তৈরি করে। যেটা জলজ প্রাণবৈচিত্র্য ও সিস্টেমের জন্য খুবই ক্ষতিকর। জলজ প্রাণী হুমকির মুখে পড়ে। ”
তার কথায়," পশুদের বাসস্থান এই নদীতীরের সুন্দরবন। তাই এর প্রভাব সুন্দরবনেও পড়তে পারে। কার্বনের কারণে বড় গাছ ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও বীজ থেকে জন্ম নেয়া গাছ ও লতাপতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতিরিক্ত কার্বন বীজের ক্ষতি করে।”
সম্পাদক : মাহমুদ আনোয়ার হোসেন
নির্বাহী সম্পাদক : জুবায়ের রহমান চৌধুরী
বার্তা সম্পাদক : খালেকুজ্জামান পান্নু
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয় : বাড়ি # ৬৩, সড়ক # ২১,
রূপনগর আ/এ, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬।
বাণিজ্যিক কার্যালয় : গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড, ঢাকা-১২১২।
ফোন : 01731-488397,01552381515, 01751345643
হোয়াটসএ্যাপ : 01826567123
Copyright © 2024 সারাবেলার সংবাদ. All rights reserved.