ঢাকা ০৭:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

এমপি আদেলের কর্মকাণ্ডে বিব্রত জাপা নেতা কর্মীরা, মতবিনিময় সভায় বক্তারা

সৈয়দপুর প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৫:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ৮৪ বার পঠিত

নীলফামারী-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আহসান আদেলুর রহমান আদেলের কর্মকাণ্ডে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়েছেন সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ উপজেলার জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা । লাগাতার নেতিবাচক কাজের ফলে জনগণের কাছে মুখ দেখাতে পারছেন না তারা।

উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ প্রদানে বাধ্যতামুলক ৪০ ভাগ কমিশন নেয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেপরোয়া নিয়োগ বাণিজ্য, অসহায় মানুষকে সহযোগিতা প্রদানে কৃপণতা, নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন ও অসৌজন্যমূলক আচরণ, নিবেদিত প্রাণদের বঞ্চিত করে একক আধিপত্য বিস্তারে পার্টিতে বিভাজন তৈরি এবং আত্মীয়দের পদ-পদবী দিয়ে পকেট কমিটি গঠন, সর্বোপরি পরিবার ও দলের সম্মান বিসর্জন দিয়ে পুরো মেয়াদকাল অনৈতিকভাবে ব্যক্তিগত আখের গোছানোয় মেতে রয়েছেন বলে পার্টির ব্যাপক ইমেজ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের শতাধিক জাপা নেতা কর্মীরা। তাঁরা গত সোমবার শহরের ইকু হেরিটেজ এন্ড রিসোর্টে এক মত বিনিময় সভায় উপরোল্লিখিত অভিযোগ সমুহ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।

এসময় তাঁরা এমপি আদেলের প্রতি তাদের অনাস্থা প্রকাশ করে আগামী নির্বাচনে পার্টির বলিষ্ঠ, নিবেদিত প্রাণ, কর্মী বান্ধব ও সুযোগ্য নেতা সিদ্দিকুল আলমের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং তাঁকে বিজয়ী করতে সকল নেতা কর্মী ঐক্যবদ্ধ হন।

বিকাল ৪ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন কিশোরগঞ্জের কৃতি সন্তান সৈয়দপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ। বক্তব্য রাখেন নীলফামারী জেলা সহ সভাপতি ও সৈয়দপুর উপজেলা সভাপতি ইকু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম, পৌর আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আহম্মদ ও শামসুদ্দিন অরুণ, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সৈয়দপুর পৌর সদস্য সচিব রাকিব খান।

জাতীয় যুব সংহতির নীলফামারী জেলা সাবেক সভাপতি রওশন মাহানামার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাইসুল ইসলাম লাকী বসুনিয়া, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক শফিউল আলম সুজন। এছাড়া কিশোরগঞ্জ থেকে আগতদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, রফিকুল ইসলাম মেম্বার, সাংবাদিক শাকিল, বড়ভিটা ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক, নিতাই বেলতলার সায়েদুল ইসলাম, মজিদ মাস্টারের ছেলে মমতাজুর রহমান, বাচ্চু প্রমুখ।

আলতাফ হোসেন বলেন, এমপির ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডের জন্য আমরা লজ্জায় পড়েছি। লোকজন তাঁকে মিষ্টার ফোরটি পার্সেন্ট হিসেবে অবিহিত করে। কোন কাজের বরাদ্দের শতকরা ৪০ ভাগই যদি এমপি বাধ্যতামুলক ভাবে আদায় করেন আর পিআইও অফিসে ২০% দিতে হয় তাহলে কি কাজ হবে। ঠিকাদার ন্যুনতম ১০ ভাগ লাভ নিলে বাকী টাকায় কতটা উন্নয়ন হয়েছে তা বুঝে নেন।

তিনি বলেন এভাবে প্রকাশ্যে দূর্নীতির কারণে আমরা নেতাকর্মীরা কারো কাছে মুখ দেখাতে পারছিনা। কারণ আমরাই তাঁকে রাজনীতিতে এনে প্রতিষ্ঠিত করেছি। যাকে কেউ চিনতোনা, এলাকায় ঢোকার মত সাহস ছিলনা। এমন ব্যক্তিকে জনগণের কাছে ভালো লোক হিসেবে উপস্থিত করে এলাকার ভোটারদের হাত পা ধরে ভোট নিয়ে এমপি বানিয়েছি। অথচ সে আজ আমাদের চেনেনা। একের পর এক অপকর্ম করে পার্টির ইমেজ ক্ষুণ্ণ করেছে। এজন্য আমরা আজ সব মহলে প্রশ্নের সম্মুখীন।

রওশন মহানামা বলেন, আমরা রাজনীতি করি মানুষের উন্নয়নের জন্য। যে কারণে জনগণ ও নেতাকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে বিপদে আপদে পাশে দাড়িয়ে সহযোগিতা করার সাধ্যমত চেষ্টা করি। সেজন্যই ভেবেছিলাম আদেলের মত শিক্ষিত ব্যক্তিকে এমপি করে এলাকাবাসীর ভাগ্যোন্নয়ন করার পাশাপাশি পার্টিকে সুসংগঠিত করবো। কিন্তু সে গুড়ে বালি। আদেল সাহেব তাঁকে পদায়নকারীদেরকেই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপের কুটচালে মগ্ন হয়ে অভূতপূর্ব প্রতারণা করেছে। এর ফলে পার্টির দিক থেকে লোকজন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

মমতাজুর রহমান বলেন, বিগত করোনায় ও সাম্প্রতিক বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মত ন্যুনতম মানবতা নেই এমপি আদেলের। দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দের চাল ও টাকা মেরে খেয়েছে নানা অজুহাতে। ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা সহায়তা চাইলে আবেদন পত্রে সুপারিশ করে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে পাঠিয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্য করেনি। অথচ চাহিদা মত কমিশন দিতে পটু পছন্দের গুটিকয়েক ব্যক্তিকেই সব প্রকল্পের কাজ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

কমিশন ছাড়া একটা কাজও কেউ তাঁর কাছ থেকে নিতে পারেনি। অতিরিক্ত কমিশন পাওয়ায় অসংখ্য ভূয়া প্রকল্পের ডিও প্রদান করেছেন জেনে বুঝেই। তাঁর লেলিয়ে দেয়া প্রতিনিধিরা এসব কাজ না করেই বরাদ্দের টাকা পকেটস্থ করেছে। এমনকি মসজিদ মাদ্রাসায় অনুদান পাইয়ে দেয়া, প্রাইমারী স্কুলে চাকরি দেয়ার কথা বলে অগ্রিম অর্থ নেয়া হয়েছে। নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে বার বার বরাদ্দ দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা ভাগাভাগি করে তসরুপ করা হয়েছে। তাঁর এসব অনিয়ম দূর্নীতির খেসারত দিতে হচ্ছে স্থানীয় নেতাকর্মীদের।

ফজলুল হক বলেন, বেশুমার অপকর্মের জন্য এমপির নাম নিলেই সর্বস্তরের মানুষের গাল খেতে হয়। তাঁকে নিয়ে নোংরা কটুক্তি হজম করতে হয়। দূর্নীতির এতটা অকাট্য ও প্রমাণিত তথ্য তুলে ধরে লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে যে জবাব দেয়ার কোন জো থাকেনা। লজ্জায় মাথা নিচু করে পালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। এমন বিতিকিচ্ছিরি পরিস্থিতিতে পড়েছি আমরা। আদেলের মত উড়ে এসে জুড়ে বসাদের দিয়ে কখনোই জনগণের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর এই ভুল করা যাবেনা।

আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম বলেন, বংশীয়ভাবে আমরা প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী হওয়ায় পারিবারিক মর্যাদা নিয়ে সমাজে সম্মানের সাথে অবস্থান করছি। পার্টিকে ভালোবাসি বলেই দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে নিজের টাকা খরচ করে সংগঠন চালাচ্ছি। আমরা জনপ্রতিনিধি তৈরী করি। কিন্তু যাদেরকেই মেম্বার, চেয়ারম্যান, মেয়র, এমপি বানিয়েছি তারাই বেইমানী করেছে। এলাকার উন্নয়ন না করে শুধু নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। একারণে শুধুমাত্র জনগণকে সঠিক সেবা দিতে নির্বাচনে এমপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।

তিনি বলেন, বিগত পৌর নির্বাচনে পার্টির এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতারাই আমাকে হারিয়েছে। অথচ মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন এমপি সাহেব। আহসান আদেলুর রহমান আদেল প্রকৃত অর্থে কোন রাজনীতিবিদ নন। তিনি এরশাদ পরিবারেরও কেউ নন। তাঁকে মূলতঃ শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়েছিল। কিন্তু তিনি তাঁর মর্যাদা ধরে রাখতে পারেননি। চাটুকারদের খপ্পরে বিপথগামী হয়েছেন তিনি। জনসেবার পরিবর্তে দূর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছেন। নেতাকর্মী ও জনগণের সাথে তাঁর কোন সম্পৃক্ততা নেই।

আগামী নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করা হলে এই আসন হারাতে হবে। অথচ জাতীয় পার্টির এই দূর্গ কোনভাবেই হাতছাড়া করা ঠিক হবেনা। একারণে আমি এমপি পদে নির্বাচন করতে চাইছি।পার্টির মনোনয়ন দাবী করেছি। আশাকরি এবার আর ভুল করবেনা কেন্দ্র। মনোনয়ন পেলে এবং আপনারা পার্টির নিবেদিত প্রাণ নেতারা সাথে থাকলে আমাদের বিজয় নিশ্চিত। আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নাই। বরং আমি দিতে চাই।

পরে উপস্থিত সকলে সমস্বরে নিজেদের মায়ের কসম খেয়ে প্রতিশ্রুতি দেন সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সিদ্দিকুুল আলমের কাজ করার। মনোনয়ন পাক বা না পাক তাঁরা সিদ্দিকুল আলমকেই এমপি নির্বাচিত করবেন। এজন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে এখন থেকেই সক্রিয় হবে বলে মন্তব্য করেন

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

এমপি আদেলের কর্মকাণ্ডে বিব্রত জাপা নেতা কর্মীরা, মতবিনিময় সভায় বক্তারা

আপডেট সময় : ০৪:৫৫:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৩

নীলফামারী-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আহসান আদেলুর রহমান আদেলের কর্মকাণ্ডে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়েছেন সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ উপজেলার জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা । লাগাতার নেতিবাচক কাজের ফলে জনগণের কাছে মুখ দেখাতে পারছেন না তারা।

উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ প্রদানে বাধ্যতামুলক ৪০ ভাগ কমিশন নেয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেপরোয়া নিয়োগ বাণিজ্য, অসহায় মানুষকে সহযোগিতা প্রদানে কৃপণতা, নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন ও অসৌজন্যমূলক আচরণ, নিবেদিত প্রাণদের বঞ্চিত করে একক আধিপত্য বিস্তারে পার্টিতে বিভাজন তৈরি এবং আত্মীয়দের পদ-পদবী দিয়ে পকেট কমিটি গঠন, সর্বোপরি পরিবার ও দলের সম্মান বিসর্জন দিয়ে পুরো মেয়াদকাল অনৈতিকভাবে ব্যক্তিগত আখের গোছানোয় মেতে রয়েছেন বলে পার্টির ব্যাপক ইমেজ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের শতাধিক জাপা নেতা কর্মীরা। তাঁরা গত সোমবার শহরের ইকু হেরিটেজ এন্ড রিসোর্টে এক মত বিনিময় সভায় উপরোল্লিখিত অভিযোগ সমুহ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।

এসময় তাঁরা এমপি আদেলের প্রতি তাদের অনাস্থা প্রকাশ করে আগামী নির্বাচনে পার্টির বলিষ্ঠ, নিবেদিত প্রাণ, কর্মী বান্ধব ও সুযোগ্য নেতা সিদ্দিকুল আলমের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং তাঁকে বিজয়ী করতে সকল নেতা কর্মী ঐক্যবদ্ধ হন।

বিকাল ৪ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন কিশোরগঞ্জের কৃতি সন্তান সৈয়দপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ। বক্তব্য রাখেন নীলফামারী জেলা সহ সভাপতি ও সৈয়দপুর উপজেলা সভাপতি ইকু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম, পৌর আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আহম্মদ ও শামসুদ্দিন অরুণ, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সৈয়দপুর পৌর সদস্য সচিব রাকিব খান।

জাতীয় যুব সংহতির নীলফামারী জেলা সাবেক সভাপতি রওশন মাহানামার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাইসুল ইসলাম লাকী বসুনিয়া, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক শফিউল আলম সুজন। এছাড়া কিশোরগঞ্জ থেকে আগতদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, রফিকুল ইসলাম মেম্বার, সাংবাদিক শাকিল, বড়ভিটা ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক, নিতাই বেলতলার সায়েদুল ইসলাম, মজিদ মাস্টারের ছেলে মমতাজুর রহমান, বাচ্চু প্রমুখ।

আলতাফ হোসেন বলেন, এমপির ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডের জন্য আমরা লজ্জায় পড়েছি। লোকজন তাঁকে মিষ্টার ফোরটি পার্সেন্ট হিসেবে অবিহিত করে। কোন কাজের বরাদ্দের শতকরা ৪০ ভাগই যদি এমপি বাধ্যতামুলক ভাবে আদায় করেন আর পিআইও অফিসে ২০% দিতে হয় তাহলে কি কাজ হবে। ঠিকাদার ন্যুনতম ১০ ভাগ লাভ নিলে বাকী টাকায় কতটা উন্নয়ন হয়েছে তা বুঝে নেন।

তিনি বলেন এভাবে প্রকাশ্যে দূর্নীতির কারণে আমরা নেতাকর্মীরা কারো কাছে মুখ দেখাতে পারছিনা। কারণ আমরাই তাঁকে রাজনীতিতে এনে প্রতিষ্ঠিত করেছি। যাকে কেউ চিনতোনা, এলাকায় ঢোকার মত সাহস ছিলনা। এমন ব্যক্তিকে জনগণের কাছে ভালো লোক হিসেবে উপস্থিত করে এলাকার ভোটারদের হাত পা ধরে ভোট নিয়ে এমপি বানিয়েছি। অথচ সে আজ আমাদের চেনেনা। একের পর এক অপকর্ম করে পার্টির ইমেজ ক্ষুণ্ণ করেছে। এজন্য আমরা আজ সব মহলে প্রশ্নের সম্মুখীন।

রওশন মহানামা বলেন, আমরা রাজনীতি করি মানুষের উন্নয়নের জন্য। যে কারণে জনগণ ও নেতাকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে বিপদে আপদে পাশে দাড়িয়ে সহযোগিতা করার সাধ্যমত চেষ্টা করি। সেজন্যই ভেবেছিলাম আদেলের মত শিক্ষিত ব্যক্তিকে এমপি করে এলাকাবাসীর ভাগ্যোন্নয়ন করার পাশাপাশি পার্টিকে সুসংগঠিত করবো। কিন্তু সে গুড়ে বালি। আদেল সাহেব তাঁকে পদায়নকারীদেরকেই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপের কুটচালে মগ্ন হয়ে অভূতপূর্ব প্রতারণা করেছে। এর ফলে পার্টির দিক থেকে লোকজন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

মমতাজুর রহমান বলেন, বিগত করোনায় ও সাম্প্রতিক বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মত ন্যুনতম মানবতা নেই এমপি আদেলের। দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দের চাল ও টাকা মেরে খেয়েছে নানা অজুহাতে। ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা সহায়তা চাইলে আবেদন পত্রে সুপারিশ করে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে পাঠিয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্য করেনি। অথচ চাহিদা মত কমিশন দিতে পটু পছন্দের গুটিকয়েক ব্যক্তিকেই সব প্রকল্পের কাজ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

কমিশন ছাড়া একটা কাজও কেউ তাঁর কাছ থেকে নিতে পারেনি। অতিরিক্ত কমিশন পাওয়ায় অসংখ্য ভূয়া প্রকল্পের ডিও প্রদান করেছেন জেনে বুঝেই। তাঁর লেলিয়ে দেয়া প্রতিনিধিরা এসব কাজ না করেই বরাদ্দের টাকা পকেটস্থ করেছে। এমনকি মসজিদ মাদ্রাসায় অনুদান পাইয়ে দেয়া, প্রাইমারী স্কুলে চাকরি দেয়ার কথা বলে অগ্রিম অর্থ নেয়া হয়েছে। নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে বার বার বরাদ্দ দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা ভাগাভাগি করে তসরুপ করা হয়েছে। তাঁর এসব অনিয়ম দূর্নীতির খেসারত দিতে হচ্ছে স্থানীয় নেতাকর্মীদের।

ফজলুল হক বলেন, বেশুমার অপকর্মের জন্য এমপির নাম নিলেই সর্বস্তরের মানুষের গাল খেতে হয়। তাঁকে নিয়ে নোংরা কটুক্তি হজম করতে হয়। দূর্নীতির এতটা অকাট্য ও প্রমাণিত তথ্য তুলে ধরে লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে যে জবাব দেয়ার কোন জো থাকেনা। লজ্জায় মাথা নিচু করে পালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। এমন বিতিকিচ্ছিরি পরিস্থিতিতে পড়েছি আমরা। আদেলের মত উড়ে এসে জুড়ে বসাদের দিয়ে কখনোই জনগণের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর এই ভুল করা যাবেনা।

আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম বলেন, বংশীয়ভাবে আমরা প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী হওয়ায় পারিবারিক মর্যাদা নিয়ে সমাজে সম্মানের সাথে অবস্থান করছি। পার্টিকে ভালোবাসি বলেই দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে নিজের টাকা খরচ করে সংগঠন চালাচ্ছি। আমরা জনপ্রতিনিধি তৈরী করি। কিন্তু যাদেরকেই মেম্বার, চেয়ারম্যান, মেয়র, এমপি বানিয়েছি তারাই বেইমানী করেছে। এলাকার উন্নয়ন না করে শুধু নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। একারণে শুধুমাত্র জনগণকে সঠিক সেবা দিতে নির্বাচনে এমপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।

তিনি বলেন, বিগত পৌর নির্বাচনে পার্টির এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতারাই আমাকে হারিয়েছে। অথচ মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন এমপি সাহেব। আহসান আদেলুর রহমান আদেল প্রকৃত অর্থে কোন রাজনীতিবিদ নন। তিনি এরশাদ পরিবারেরও কেউ নন। তাঁকে মূলতঃ শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়েছিল। কিন্তু তিনি তাঁর মর্যাদা ধরে রাখতে পারেননি। চাটুকারদের খপ্পরে বিপথগামী হয়েছেন তিনি। জনসেবার পরিবর্তে দূর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছেন। নেতাকর্মী ও জনগণের সাথে তাঁর কোন সম্পৃক্ততা নেই।

আগামী নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করা হলে এই আসন হারাতে হবে। অথচ জাতীয় পার্টির এই দূর্গ কোনভাবেই হাতছাড়া করা ঠিক হবেনা। একারণে আমি এমপি পদে নির্বাচন করতে চাইছি।পার্টির মনোনয়ন দাবী করেছি। আশাকরি এবার আর ভুল করবেনা কেন্দ্র। মনোনয়ন পেলে এবং আপনারা পার্টির নিবেদিত প্রাণ নেতারা সাথে থাকলে আমাদের বিজয় নিশ্চিত। আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নাই। বরং আমি দিতে চাই।

পরে উপস্থিত সকলে সমস্বরে নিজেদের মায়ের কসম খেয়ে প্রতিশ্রুতি দেন সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সিদ্দিকুুল আলমের কাজ করার। মনোনয়ন পাক বা না পাক তাঁরা সিদ্দিকুল আলমকেই এমপি নির্বাচিত করবেন। এজন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে এখন থেকেই সক্রিয় হবে বলে মন্তব্য করেন

Facebook Comments Box