ঢাকা ০৭:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

এক কোম্পানির উপর নির্ভরশীলতা কমাতে এয়ারবাস কিনছে বাংলাদেশ

সারাবেলা ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৫:১৬:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১১ বার পঠিত

খরচ বেড়ে যাওয়া নিয়ে সমালোচনা থাকলেও সুফল বেশি বলে এয়ারবাস কিনছে বাংলাদেশ। বিমানের কর্মকর্তারা একথা জানিয়েছেন। এয়ারবাস থেকে ১০টি এ৩৫০ মডেলের উড়োজাহাজ কেনা হবে। বিমানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এয়ারবাস থেকে এসব উড়োজাহাজ কিনতে গত মে মাসে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে যৌথ চুক্তি হয়েছে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে এসব উড়োজাহাজ কেনা হবে৷

এর মধ্যে আগামী বছরের জুলাই মাসে আসবে দুইটি৷ গত ৩ মে বিমানের পরিচালনা পর্ষদ এয়ারবাসের ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়৷ বাংলাদেশ সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ গত ১১ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘এয়ারবাস কোম্পানির তৈরি ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ৷ ইউরোপীয় উড়োজাহাজ শিল্পে আস্থা রাখার জন্য আমি আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) ধন্যবাদ জানাই৷

১০টি এয়ারবাস এ৩৫০ কেনার এই প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ৷” সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ-এর এক নিরীক্ষায় দেখা যায়, ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক রুটে ২০ লাখ ৫৮ হাজার যাত্রী পরিবহণ করেছে বিমান৷ এসব ফ্লাইটে প্রায় সাত লাখ আসন খালি ছিল, যা বিমানের যাত্রী বহন সক্ষমতার প্রায় ২৪ শতাংশ৷ এরপরেও বহরে নতুন উড়োজাহাজের দরকার আছে কিনা- এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে৷ বর্তমানে বিমানের বহরে ২১টি উড়োজাহাজ আছে

৷ এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭, ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার, ছয়টি বোয়িং ৭৩৭ এবং পাঁচটি ড্যাশ ৮ মডেলের৷ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম বলেন, ‘‘মে মাসে দুই দেশের মধ্যে (বাংলাদেশ-ফ্রান্স) জয়েন্ট কমিউনিকে হয়েছে এক দেশ আরেক দেশ থেকে মোট ১০টি উড়োজাহাজ কিনবে৷ উনারা আগামী জুলাই মাসে দুইটি উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি ৷

স্ট্যান্ডার্ড মেনেই দুই পক্ষ কাজ করছি৷ ২০৩০ সালের মধ্যে ১০টি উড়োজাহাজ কেনা হবে৷” কেউ শতভাগ আসনে যাত্রী বহন করতে পারে না জানিয়ে শফিউল আজিম বলেন, ‘‘ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ শতাংশ৷ নতুন উড়োজাহাজের রুট কী হবে তা এগুলো কেনার প্রক্রিয়া শুরুর সময়ই নির্ধারণ করা হয়েছে ৷

অনুমান করে নয়, সায়েন্টিফিক ওয়েতে এগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে৷” রোয়িং থেকে উড়োজাহাজ না কিনে এয়ারবাস থেকে কেনার সিদ্ধান্ত হওয়ায় খরচ বেড়ে যাবে বলে অনেকেই মতামত দিয়েছেন৷ তবে বড় বড় এয়ালাইন্সের মতো একাধিক কোম্পানির উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করতে চায় বিমান৷ শফিউল আজিম বলেন, ‘‘একটা জায়গা থেকে আমরা কিনছি, আরেকজন এলে তাকেও তো আমরা দেখবো ৷

এখানে ডায়ভার্সিফাই করার একটি সুযোগ আছে৷ যাত্রীদেরও অনেক সময় চয়েস থাকে, এয়ারবাসের আছে কিনা, সেই এক্সপেরিয়েন্স নেওয়ার জন্য৷ বিমানের সক্ষমতাও বাড়বে৷ দুইটি বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে যদি কাজ করতে পারি, অনেক সময় একই কোম্পানি একসাথে দিতে পারছে না, সেক্ষেত্রে আরেকজন থাকছে ৷ অপশনটা বেড়ে গেল৷ দুইটি কোম্পানি যখন আসবে, তখন প্রতিযোগিতামূলক হবে, আমরা বেস্ট প্রাইসে বেস্ট জিনিসটি নিতে পারবো৷’’

এয়ারবাসের উড়োজাহাজের জন্য পাইলট ও প্রকৌশলীদের নতুন করে প্রশিক্ষণ নিতে হবে কিনা জানতে চাইলে শফিউল আজিম বলেন, ‘‘দুই কোম্পানির উড়োজাহাজে খুব সামান্যই পার্থক্য৷ অনেক এয়ারলাইন্স একসঙ্গে বোয়িং ও এয়ারবাস চালাচ্ছে৷ অ্যামেরিকার বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স কোম্পানি বোয়িং ও এয়ারবাস চালাচ্ছে৷ সুতরাং এখানে বড় কোনো পার্থক্য নেই৷ এটা অ্যাডজাস্ট করার সক্ষমতা আমাদের আছে, আমাদেরও একসময় এয়ারবাস ছিল ৷

খুব মাইনর অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হবে৷” বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘এককভাবে বোয়িংয়ের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতেই এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ফলে বোয়িং থেকে এসব উড়োজাহাজ কিনলে কত টাকা সাশ্রয় হতো সেই হিসাব আমরা করতে যাইনি৷ সরকারও চায় বিমান যাতে এককভাবে কারো উপর নির্ভরশীল না থাকে ৷

” আগামী ৫ বছরে বিমানের আরো এয়ারক্রাফটের প্রয়োজন হবে বলে মত দিয়েছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ, অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার এ টি এম নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘বিমানের অনেক রুটেই ফ্লাইট চালানোর সুযোগ রয়েছে ৷ বড় বড় কোম্পানিতে দুই ধরনের এয়ারক্রাফট থাকে ৷

এখন বিমান এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ কিনলে তাদের বার্গেইনিং পাওয়ার বাড়বে৷ এয়ারবাসের দাম একটু বেশি হলেও অপারেশন কস্ট কম৷ তবে পাইলট, ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশিক্ষণ লাগবে৷” তিনি মনে করেন, দশটি বিমান যেহেতু ধাপে ধাপে সাত বছরে এসে পৌঁছাবে তাতে বিমান বিভিন্ন প্রস্তুতি নেয়ার সময় পাবে৷ তার মতে শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল চালু হলে বাড়তি সুবিধা যাবে, যা নিয়ে আগ্রহ আছে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর ৷ এসব বিষয়ও বিমানকে ভাবতে হবে। ডয়চে ভেলে

সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ১৫সেপ্টম্বর ২০২৩

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

এক কোম্পানির উপর নির্ভরশীলতা কমাতে এয়ারবাস কিনছে বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০৫:১৬:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

খরচ বেড়ে যাওয়া নিয়ে সমালোচনা থাকলেও সুফল বেশি বলে এয়ারবাস কিনছে বাংলাদেশ। বিমানের কর্মকর্তারা একথা জানিয়েছেন। এয়ারবাস থেকে ১০টি এ৩৫০ মডেলের উড়োজাহাজ কেনা হবে। বিমানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এয়ারবাস থেকে এসব উড়োজাহাজ কিনতে গত মে মাসে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে যৌথ চুক্তি হয়েছে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে এসব উড়োজাহাজ কেনা হবে৷

এর মধ্যে আগামী বছরের জুলাই মাসে আসবে দুইটি৷ গত ৩ মে বিমানের পরিচালনা পর্ষদ এয়ারবাসের ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়৷ বাংলাদেশ সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ গত ১১ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘এয়ারবাস কোম্পানির তৈরি ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ৷ ইউরোপীয় উড়োজাহাজ শিল্পে আস্থা রাখার জন্য আমি আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) ধন্যবাদ জানাই৷

১০টি এয়ারবাস এ৩৫০ কেনার এই প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ৷” সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ-এর এক নিরীক্ষায় দেখা যায়, ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক রুটে ২০ লাখ ৫৮ হাজার যাত্রী পরিবহণ করেছে বিমান৷ এসব ফ্লাইটে প্রায় সাত লাখ আসন খালি ছিল, যা বিমানের যাত্রী বহন সক্ষমতার প্রায় ২৪ শতাংশ৷ এরপরেও বহরে নতুন উড়োজাহাজের দরকার আছে কিনা- এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে৷ বর্তমানে বিমানের বহরে ২১টি উড়োজাহাজ আছে

৷ এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭, ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার, ছয়টি বোয়িং ৭৩৭ এবং পাঁচটি ড্যাশ ৮ মডেলের৷ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম বলেন, ‘‘মে মাসে দুই দেশের মধ্যে (বাংলাদেশ-ফ্রান্স) জয়েন্ট কমিউনিকে হয়েছে এক দেশ আরেক দেশ থেকে মোট ১০টি উড়োজাহাজ কিনবে৷ উনারা আগামী জুলাই মাসে দুইটি উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি ৷

স্ট্যান্ডার্ড মেনেই দুই পক্ষ কাজ করছি৷ ২০৩০ সালের মধ্যে ১০টি উড়োজাহাজ কেনা হবে৷” কেউ শতভাগ আসনে যাত্রী বহন করতে পারে না জানিয়ে শফিউল আজিম বলেন, ‘‘ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ শতাংশ৷ নতুন উড়োজাহাজের রুট কী হবে তা এগুলো কেনার প্রক্রিয়া শুরুর সময়ই নির্ধারণ করা হয়েছে ৷

অনুমান করে নয়, সায়েন্টিফিক ওয়েতে এগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে৷” রোয়িং থেকে উড়োজাহাজ না কিনে এয়ারবাস থেকে কেনার সিদ্ধান্ত হওয়ায় খরচ বেড়ে যাবে বলে অনেকেই মতামত দিয়েছেন৷ তবে বড় বড় এয়ালাইন্সের মতো একাধিক কোম্পানির উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করতে চায় বিমান৷ শফিউল আজিম বলেন, ‘‘একটা জায়গা থেকে আমরা কিনছি, আরেকজন এলে তাকেও তো আমরা দেখবো ৷

এখানে ডায়ভার্সিফাই করার একটি সুযোগ আছে৷ যাত্রীদেরও অনেক সময় চয়েস থাকে, এয়ারবাসের আছে কিনা, সেই এক্সপেরিয়েন্স নেওয়ার জন্য৷ বিমানের সক্ষমতাও বাড়বে৷ দুইটি বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে যদি কাজ করতে পারি, অনেক সময় একই কোম্পানি একসাথে দিতে পারছে না, সেক্ষেত্রে আরেকজন থাকছে ৷ অপশনটা বেড়ে গেল৷ দুইটি কোম্পানি যখন আসবে, তখন প্রতিযোগিতামূলক হবে, আমরা বেস্ট প্রাইসে বেস্ট জিনিসটি নিতে পারবো৷’’

এয়ারবাসের উড়োজাহাজের জন্য পাইলট ও প্রকৌশলীদের নতুন করে প্রশিক্ষণ নিতে হবে কিনা জানতে চাইলে শফিউল আজিম বলেন, ‘‘দুই কোম্পানির উড়োজাহাজে খুব সামান্যই পার্থক্য৷ অনেক এয়ারলাইন্স একসঙ্গে বোয়িং ও এয়ারবাস চালাচ্ছে৷ অ্যামেরিকার বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স কোম্পানি বোয়িং ও এয়ারবাস চালাচ্ছে৷ সুতরাং এখানে বড় কোনো পার্থক্য নেই৷ এটা অ্যাডজাস্ট করার সক্ষমতা আমাদের আছে, আমাদেরও একসময় এয়ারবাস ছিল ৷

খুব মাইনর অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হবে৷” বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘এককভাবে বোয়িংয়ের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতেই এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ফলে বোয়িং থেকে এসব উড়োজাহাজ কিনলে কত টাকা সাশ্রয় হতো সেই হিসাব আমরা করতে যাইনি৷ সরকারও চায় বিমান যাতে এককভাবে কারো উপর নির্ভরশীল না থাকে ৷

” আগামী ৫ বছরে বিমানের আরো এয়ারক্রাফটের প্রয়োজন হবে বলে মত দিয়েছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ, অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার এ টি এম নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘বিমানের অনেক রুটেই ফ্লাইট চালানোর সুযোগ রয়েছে ৷ বড় বড় কোম্পানিতে দুই ধরনের এয়ারক্রাফট থাকে ৷

এখন বিমান এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ কিনলে তাদের বার্গেইনিং পাওয়ার বাড়বে৷ এয়ারবাসের দাম একটু বেশি হলেও অপারেশন কস্ট কম৷ তবে পাইলট, ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশিক্ষণ লাগবে৷” তিনি মনে করেন, দশটি বিমান যেহেতু ধাপে ধাপে সাত বছরে এসে পৌঁছাবে তাতে বিমান বিভিন্ন প্রস্তুতি নেয়ার সময় পাবে৷ তার মতে শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল চালু হলে বাড়তি সুবিধা যাবে, যা নিয়ে আগ্রহ আছে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর ৷ এসব বিষয়ও বিমানকে ভাবতে হবে। ডয়চে ভেলে

সারাবেলার সংবাদ/ এমএএইচ/ ১৫সেপ্টম্বর ২০২৩

Facebook Comments Box