ঢাকা ০৫:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আসামে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কেন্দ্রে কীভাবে জেতে বিজেপি?

সারাবেলা প্রতিবেদন
  • আপডেট সময় : ০১:৪৯:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০২৪ ১৬ বার পঠিত

আসামের এই নদীগুলিই হলো মাইমালদের বেঁচে থাকার উৎস

করিমগঞ্জে ৬৫ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম। তাসত্ত্বেও গতবার বিজেপি এখানে জিতেছিল। এবারও জয়ের আশা করছে তারা।
বরাক নদীর ঘোলা জল এখন নিস্তরঙ্গ। বর্ষায় এই নদীই যে দুকূল ভাসায় তা কে বলবে! আর এই নদীকে ঘিরে যাদের জীবনযাপন, বংশপরম্পরায় মাছ ধরাই যাদের পেশা, সেই মাইমালদের জীবন অতটা নিস্তরঙ্গ নয়। ভোটের আসামে তারা এখন খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন।

মাহি মানে মাছ ও মাল্লা মানে মাঝি, দুইয়ে মিলে মাইমাল। এই মুসলিম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মূল পেশা হলো মাছ ধরা, কিন্তু এখন অনেকে চাষবাসও করেন। বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ এলাকায় বা তার আশাপাশে প্রায় আড়াই লাখ মাইমালের বাস।
মাইমাল নেতা ও পেশায় আইনজীবী সেলিম আহমেদ কোনোরকম রাখঢাক না করে জানিয়ে দিলেন, তারা এবার বিজেপি-কেই ভোট দেবেন। তিনি আবার সরকারি মাইমাল ডেভলাপমেন্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। ডিডাব্লিউকে তিনি বললেন, ”আমি ঘোষণা করে দিয়েছি, বিজেপি-কেই ভোট দেব।” বরাবর কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে আসা মাইমালরা এবার মতবদল করেছেন। কেন এই মতবদল?
হিমন্ত বিশ্বশর্মার চাল

মাইমালদের মতবদলের কারণ আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার একটি সিদ্ধান্ত ও একটি প্রতিশ্রুতি। সিদ্ধান্তটা হলো, মাইমাল উন্নয়ন কাউন্সিল গঠন করা। প্রতিশ্রুতিটা হলো, ভোট মিটে গেলেই মাইমলদের খিলোঞ্জিয়া ঘোষণা করা হবে। খিলোঞ্জিয়া মানে ভূমিপুত্র। অর্থাৎ, তারা আসামেরই মানুষ।

সেলিম জানিয়েছেন, এই স্বীকৃতির জন্যই মূলত তারা মতবদল করেছেন। ভূমিপুত্রের মর্যাদা পেলে কী হবে? তার জবাব, ”এনআরসি, সিএএ(এখানে বলা হয় কা), ডি-ভোটার নিয়ে হয়রানির হাত থেকে মাইমালরা বাঁচবেন। ভূমিপুত্রদের নিয়ে কোউ টানাটানি করবে না।” এনআরসি পরবর্তী আসামে নাগরিকত্ব একটা বড় বিষয়। মোট ১৯ লাখ মানুষের নাম এনআরসি-তে নেই। তার মধ্যে ১৩ লাখ হিন্দু ও ছয় লাখ মুসলিম। তাদের অনেককে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ডিটেনশন শিবিরে আছেন বেশ কিছু মানুষ। তাই ভূমিপুত্র বলে ঘোষণা করা হলে ওই চিন্তা আর থাকবে না।

সেলিম বলছিলেন, শুধু মাইমালরাই নন, মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই গোরিয়া, মোরিয়া, দেশি, জোলহার মতো পাঁচটি মুসলিম গোষ্ঠীকে ভূমিপুত্রর স্বীকৃতি দিয়েছেন। তারাও জানিয়ে দিয়েছে, এবার লোকসভা ভোটে বিজেপি-র পদ্মেই ভোটটা দেবেন।

মাইমাল নেতা যে কেন্দ্রে বসে এই কথাটা বলছেন, সেই করিমগঞ্জ হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকসভা কেন্দ্র। এখানে মুসলিম ভোটদাতার সংখ্যা ৬৫ শতাংশ। ফলে দিল্লিতে বসে যে ভোটপণ্ডিতরা শুধু সংখ্যা বিচার করে ফলাফল সম্পর্কে ধারণা করতে চান, তারা মনে করেন, করিমগঞ্জে বিজেপি নিশ্চিত হারছে। কারণ, ৬৫ শতাংশ মুসলিম ভোটদাতা যে কেন্দ্রে আছেন, সেই কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী, হিমন্ত বিশ্বশর্মার দল জিততে পারে না। কিন্তু আসামে এলে, বলা ভালো বরাক উপত্যকার এই বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় এলে বোঝা যায়, রাজনীতির হিসাবটা আলাদা। তার পরতে পরতে অনেক চমক অপেক্ষা করে থাকে। একটা প্রতিশ্রুতি, একটা সিদ্ধান্ত, একটা ঠিক বা ভুল পদক্ষেপ অনেক হিসাব বদলে দিতে পারে। যেমন দিচ্ছে বরাক উপত্যকায়।

করিমগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী ও হাইকোর্টের আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরিী

বিরোদীদের অনৈক্য
তবে শুধু মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত নয়, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আরো একটি বিষয়। সেটা হলো আসামের মুসলিম-প্রধান এলাকায় কংগ্রেস ও বদরুদ্দিন আজমলের ইউডিএফ দুই দলই প্রার্থী দিয়েছে। এই দুই দলের ভোট কাটাকাটিতে গতবার করিমগঞ্জ-সহ একাধিক আসন কংগ্রেস বা ইউডিএফের হাতছাড়া হয়েছে। এবারও ছবিটা একই। দুই দলের জোট হয়নি। ফলে ইউডিএফ-ও মুসলিম-প্রধান এলাকায় প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। কংগ্রেস বলছে, ইউডিএফ এখানে বিজেপি-র বি টিম হয়ে কাজ করছে।
করিমগঞ্জে ইউডিএফ প্রার্থী শাহবুল ইসলাম চৌধুরী পারুল ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ”আমরা তো জোট চেয়েছি। আমরা বলেছিলাম, করিমগঞ্জ, ধুবড়ির মতো চারটি আসন ছেড়ে দিয়ে বাকি কেন্দ্রে প্রার্থী দিক কংগ্রেস। কিন্তু ওরা শোনেনি।”
ঘটনা হলো, যে চারটি কেন্দ্রের কথা তিনি বলছেন, সেইগুলোতেই জয়ের ক্ষীণ বা প্রবল আশা দেখছে কংগ্রেস। ফলে তারা ওই আসন ছাড়লে তো আসাম থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হতো কংগ্রেসকে। ফলে দুই দল লড়ছে। তাদের মধ্যে মুসলিম ভোট কেটে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।

কংগ্রেস প্রার্থী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, মাইমাল-সহ মুসলিমদের এবং হিন্দুদের বড় অংশের ভোট তিনি পাবেন। সন্দেহ নেই, হাফিজ রশিদ শক্তিশালী প্রার্থী। গুয়াহাটি হাইকোর্টে এনআরসি, ডিভোটার, সিএএ সংক্রান্ত মামলা তিনি বিনা পয়সায় করে দেন। কিন্তু তাকেও বিপাকে ফেলেছে হিমন্তর কৌশল।

শিলচরে সিটিজেনস রাইটস প্রোটেকশন কমিটির প্রধান কিশোর কুমার ভট্টাচার্য বলছিলেন, করিমগঞ্জ গিয়ে তার মনে হয়েছে, এবার মুসলিমরা যে কোনো একপক্ষকে ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন। সেটা যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে কংগ্রেস বা ইউডিএফ যে কোনো একপক্ষের কাছে মুসলিম ভোট যাবে। যদি সেটা হয়, তাহলে কংগ্রেস বা ইউডিএফের কিছুটা আশা থাকছে। ভোট ভাগাভাগি হলে, সেই আশাটকুকও থাকবে না। গতবার এই কারণেই করিমগঞ্জে বিজেপি জিতে গিয়েছিল।

বিজেপি-র দাবি
বিজেপি-র জেলা সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য তাই জোরগলায় দাবি করছেন, এবার প্রচুর মুসলিম ভোটদাতা বিজেপি-কে ভোট দেবেন। কারণ, তারা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন। বিনা পয়সায় রেশন পাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পাচ্ছেন, বয়স্ক পেনশন-সহ একগুচ্ছ সুবিধা পাচ্ছেন। তাই তারা আমাদের ভোট দেবেন, এতে আর আশ্চর্য কী আছে।
করিমগঞ্জের পাশ দিয়ে বইছে কুশিয়ারা নদী, যার ওপারে বাংলাদেশের সিলেট। এপারে ভারতের করিমগঞ্জ। এখনো শহরের একটা দোকানের সামনের পাথরে লেখা আছে ‘সিলেট’। এখানকার মানুষের কথায় সিলেটি টান। খাবারে সিলেটি রান্নার অপূর্ব স্বাদ। সীমান্তের এই শহরেই এবার রাজনিীতির এই অঙ্ক অনেক হিসাব গুলিয়ে দিতে পারে।

হিসাব বদলে যায়
এভাবেই আসামে অনেক হিসাব বদলে যাচ্ছে। জয়-পরাজয়ের হিসাব। ৬৫ শতাংশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কেন্দ্রে জিতে যাওয়ার জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে বিজেপি। কংগ্রেস, ইউডিএফ মিলে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। যে কেন্দ্রে তাদের অনেকটাই এগিয়ে থাকার কথা, সেখানেও মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার চালে কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে তারা। ডয়চে ভেলে

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

আসামে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কেন্দ্রে কীভাবে জেতে বিজেপি?

আপডেট সময় : ০১:৪৯:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০২৪

করিমগঞ্জে ৬৫ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম। তাসত্ত্বেও গতবার বিজেপি এখানে জিতেছিল। এবারও জয়ের আশা করছে তারা।
বরাক নদীর ঘোলা জল এখন নিস্তরঙ্গ। বর্ষায় এই নদীই যে দুকূল ভাসায় তা কে বলবে! আর এই নদীকে ঘিরে যাদের জীবনযাপন, বংশপরম্পরায় মাছ ধরাই যাদের পেশা, সেই মাইমালদের জীবন অতটা নিস্তরঙ্গ নয়। ভোটের আসামে তারা এখন খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন।

মাহি মানে মাছ ও মাল্লা মানে মাঝি, দুইয়ে মিলে মাইমাল। এই মুসলিম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মূল পেশা হলো মাছ ধরা, কিন্তু এখন অনেকে চাষবাসও করেন। বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ এলাকায় বা তার আশাপাশে প্রায় আড়াই লাখ মাইমালের বাস।
মাইমাল নেতা ও পেশায় আইনজীবী সেলিম আহমেদ কোনোরকম রাখঢাক না করে জানিয়ে দিলেন, তারা এবার বিজেপি-কেই ভোট দেবেন। তিনি আবার সরকারি মাইমাল ডেভলাপমেন্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। ডিডাব্লিউকে তিনি বললেন, ”আমি ঘোষণা করে দিয়েছি, বিজেপি-কেই ভোট দেব।” বরাবর কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে আসা মাইমালরা এবার মতবদল করেছেন। কেন এই মতবদল?
হিমন্ত বিশ্বশর্মার চাল

মাইমালদের মতবদলের কারণ আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার একটি সিদ্ধান্ত ও একটি প্রতিশ্রুতি। সিদ্ধান্তটা হলো, মাইমাল উন্নয়ন কাউন্সিল গঠন করা। প্রতিশ্রুতিটা হলো, ভোট মিটে গেলেই মাইমলদের খিলোঞ্জিয়া ঘোষণা করা হবে। খিলোঞ্জিয়া মানে ভূমিপুত্র। অর্থাৎ, তারা আসামেরই মানুষ।

সেলিম জানিয়েছেন, এই স্বীকৃতির জন্যই মূলত তারা মতবদল করেছেন। ভূমিপুত্রের মর্যাদা পেলে কী হবে? তার জবাব, ”এনআরসি, সিএএ(এখানে বলা হয় কা), ডি-ভোটার নিয়ে হয়রানির হাত থেকে মাইমালরা বাঁচবেন। ভূমিপুত্রদের নিয়ে কোউ টানাটানি করবে না।” এনআরসি পরবর্তী আসামে নাগরিকত্ব একটা বড় বিষয়। মোট ১৯ লাখ মানুষের নাম এনআরসি-তে নেই। তার মধ্যে ১৩ লাখ হিন্দু ও ছয় লাখ মুসলিম। তাদের অনেককে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ডিটেনশন শিবিরে আছেন বেশ কিছু মানুষ। তাই ভূমিপুত্র বলে ঘোষণা করা হলে ওই চিন্তা আর থাকবে না।

সেলিম বলছিলেন, শুধু মাইমালরাই নন, মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই গোরিয়া, মোরিয়া, দেশি, জোলহার মতো পাঁচটি মুসলিম গোষ্ঠীকে ভূমিপুত্রর স্বীকৃতি দিয়েছেন। তারাও জানিয়ে দিয়েছে, এবার লোকসভা ভোটে বিজেপি-র পদ্মেই ভোটটা দেবেন।

মাইমাল নেতা যে কেন্দ্রে বসে এই কথাটা বলছেন, সেই করিমগঞ্জ হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকসভা কেন্দ্র। এখানে মুসলিম ভোটদাতার সংখ্যা ৬৫ শতাংশ। ফলে দিল্লিতে বসে যে ভোটপণ্ডিতরা শুধু সংখ্যা বিচার করে ফলাফল সম্পর্কে ধারণা করতে চান, তারা মনে করেন, করিমগঞ্জে বিজেপি নিশ্চিত হারছে। কারণ, ৬৫ শতাংশ মুসলিম ভোটদাতা যে কেন্দ্রে আছেন, সেই কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী, হিমন্ত বিশ্বশর্মার দল জিততে পারে না। কিন্তু আসামে এলে, বলা ভালো বরাক উপত্যকার এই বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় এলে বোঝা যায়, রাজনীতির হিসাবটা আলাদা। তার পরতে পরতে অনেক চমক অপেক্ষা করে থাকে। একটা প্রতিশ্রুতি, একটা সিদ্ধান্ত, একটা ঠিক বা ভুল পদক্ষেপ অনেক হিসাব বদলে দিতে পারে। যেমন দিচ্ছে বরাক উপত্যকায়।

করিমগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী ও হাইকোর্টের আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরিী

বিরোদীদের অনৈক্য
তবে শুধু মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত নয়, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আরো একটি বিষয়। সেটা হলো আসামের মুসলিম-প্রধান এলাকায় কংগ্রেস ও বদরুদ্দিন আজমলের ইউডিএফ দুই দলই প্রার্থী দিয়েছে। এই দুই দলের ভোট কাটাকাটিতে গতবার করিমগঞ্জ-সহ একাধিক আসন কংগ্রেস বা ইউডিএফের হাতছাড়া হয়েছে। এবারও ছবিটা একই। দুই দলের জোট হয়নি। ফলে ইউডিএফ-ও মুসলিম-প্রধান এলাকায় প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। কংগ্রেস বলছে, ইউডিএফ এখানে বিজেপি-র বি টিম হয়ে কাজ করছে।
করিমগঞ্জে ইউডিএফ প্রার্থী শাহবুল ইসলাম চৌধুরী পারুল ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ”আমরা তো জোট চেয়েছি। আমরা বলেছিলাম, করিমগঞ্জ, ধুবড়ির মতো চারটি আসন ছেড়ে দিয়ে বাকি কেন্দ্রে প্রার্থী দিক কংগ্রেস। কিন্তু ওরা শোনেনি।”
ঘটনা হলো, যে চারটি কেন্দ্রের কথা তিনি বলছেন, সেইগুলোতেই জয়ের ক্ষীণ বা প্রবল আশা দেখছে কংগ্রেস। ফলে তারা ওই আসন ছাড়লে তো আসাম থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হতো কংগ্রেসকে। ফলে দুই দল লড়ছে। তাদের মধ্যে মুসলিম ভোট কেটে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।

কংগ্রেস প্রার্থী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, মাইমাল-সহ মুসলিমদের এবং হিন্দুদের বড় অংশের ভোট তিনি পাবেন। সন্দেহ নেই, হাফিজ রশিদ শক্তিশালী প্রার্থী। গুয়াহাটি হাইকোর্টে এনআরসি, ডিভোটার, সিএএ সংক্রান্ত মামলা তিনি বিনা পয়সায় করে দেন। কিন্তু তাকেও বিপাকে ফেলেছে হিমন্তর কৌশল।

শিলচরে সিটিজেনস রাইটস প্রোটেকশন কমিটির প্রধান কিশোর কুমার ভট্টাচার্য বলছিলেন, করিমগঞ্জ গিয়ে তার মনে হয়েছে, এবার মুসলিমরা যে কোনো একপক্ষকে ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন। সেটা যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে কংগ্রেস বা ইউডিএফ যে কোনো একপক্ষের কাছে মুসলিম ভোট যাবে। যদি সেটা হয়, তাহলে কংগ্রেস বা ইউডিএফের কিছুটা আশা থাকছে। ভোট ভাগাভাগি হলে, সেই আশাটকুকও থাকবে না। গতবার এই কারণেই করিমগঞ্জে বিজেপি জিতে গিয়েছিল।

বিজেপি-র দাবি
বিজেপি-র জেলা সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য তাই জোরগলায় দাবি করছেন, এবার প্রচুর মুসলিম ভোটদাতা বিজেপি-কে ভোট দেবেন। কারণ, তারা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন। বিনা পয়সায় রেশন পাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পাচ্ছেন, বয়স্ক পেনশন-সহ একগুচ্ছ সুবিধা পাচ্ছেন। তাই তারা আমাদের ভোট দেবেন, এতে আর আশ্চর্য কী আছে।
করিমগঞ্জের পাশ দিয়ে বইছে কুশিয়ারা নদী, যার ওপারে বাংলাদেশের সিলেট। এপারে ভারতের করিমগঞ্জ। এখনো শহরের একটা দোকানের সামনের পাথরে লেখা আছে ‘সিলেট’। এখানকার মানুষের কথায় সিলেটি টান। খাবারে সিলেটি রান্নার অপূর্ব স্বাদ। সীমান্তের এই শহরেই এবার রাজনিীতির এই অঙ্ক অনেক হিসাব গুলিয়ে দিতে পারে।

হিসাব বদলে যায়
এভাবেই আসামে অনেক হিসাব বদলে যাচ্ছে। জয়-পরাজয়ের হিসাব। ৬৫ শতাংশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কেন্দ্রে জিতে যাওয়ার জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে বিজেপি। কংগ্রেস, ইউডিএফ মিলে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। যে কেন্দ্রে তাদের অনেকটাই এগিয়ে থাকার কথা, সেখানেও মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার চালে কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে তারা। ডয়চে ভেলে

Facebook Comments Box