ঢাকা ১১:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ভোলায় সাংবাদিক ইউনুছ শরীফের উপর হামলা, বিভিন্ন মহলের নিন্দা Logo পাসপোর্ট আনতে গিয়ে সোনারগাঁয়ের দুই যুবক নিহত Logo সৈয়দপুরে গরিব ও দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ Logo আইফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ড! ১২০০০ পর্যটককে নিরাপদ স্থানে সরান হল Logo সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে: প্রেস সচিব Logo উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড: শিশুসহ নিহত ২ Logo বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক জোরদারের আশাবাদ প্রণয় ভার্মার Logo আশুলিয়ায় ছয় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা Logo অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মার্কিন সমর্থন অব্যাহত থাকবে, ফোনলাপে জ্যাক সুলিভান Logo গণহত্যার সাথে জড়িতদের বিএনপিতে নেয়া মানা: মির্জা ফখরুল

আবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভূমিধস, আবার প্রাণহানি

সারাবেলা প্রতিবেদন
  • আপডেট সময় : ০১:০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪ ২০ বার পঠিত

কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়।
ক্যাম্প এলাকায় মাইকিং করে বাসিন্দাদের ক্যাম্পের ভিতরে যেতে বলা হচ্ছে। এ পর্যন্ত এক হাজার রোহিঙ্গাকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
উখিয়া ক্যাম্পে মোট চার জায়গায় পাহাড় ধসে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে আটজন রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং দুই জন বাংলাদেশি নাগরিক। নিহতদের মধ্যে তিনজন পুরুষ, তিনজন নারী ও চারটি শিশু রয়েছে। আহত হয়েছেন ১০-১২ জন। তবে কেউ নিখোঁজ আছেন বলে খবর পাওয়া যায়নি বলে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন জানিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ,আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন (এপিবিএন) সদস্যসহ স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধারকাজে অংশ নেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, নিহতদের লাশ উদ্ধার করে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ক্যাম্পের ৮, ৯ , ১০ ও ১৪ নাম্বার ব্লকে পাহাড় ধস এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে ভারি বৃষ্টির কারণে এই পাহাড় ধস হয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান অতিরিক্ত শরণার্থী , ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার সামছু-দ্দৌজা নয়ন।
তিনি জানান, পুরো উখিয়া ক্যাম্পটিই মাটির পাহাড়ের ওপর। পাহাড় কেটে এই ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। পাহাড় ধসের এলাকায় কমপক্ষে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করে। যারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে- এরকম এক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তার কথা, “আমরা প্রটেকশনের ব্যবস্থা করেছিলাম, কিন্তু ভারি বৃষ্টিতে তাতে কাজ হয়নি। আরো বিভিন্ন ব্লকে প্রটেকশন দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখানকার যা অবস্থা তাতে প্রকৃতির ওপর কোনো হাত নেই। কারণ, পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে তৈরি করা এই ক্যাম্প এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
ক্যাম্পের বাসিন্দাদের কথা
ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং ক্যাম্প-৯-এর মাঝি (ক্যাম্পের স্বেচ্ছাসেবক) মো. ইউনূস বলেন, “আমাদের ক্যাম্পগুলো পাহাড়ের উপরে এবং পাদদেশে। গত রাতে (মঙ্গলবার) প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে পড়ে। তাতে ৫০-৬০টি ঘর মাটির নিচে চাপ পড়ে। পাদদেশে যাদের ঘর ছিল, তাদের মধ্য থেকেই মারা যায়। আসলে এই রকম প্রবল বৃষ্টি হলে পাহাড় ধসে পড়া এখানকার নিয়মিত ঘটনা।”
“আমরা যে ঘরগুলোতে থাকি, তা বাঁশের তৈরি, উপরে পলিথিন। আকারে সাতফুট বাই দশ ফুট। এমনি বৃষ্টি হলেও ঘর পানিতে ডুবে যায়। এই ক্যাম্পে মোট ৯৪টি ব্লক আছে। সব ব্লকই পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে। মাটির পাহাড় প্রবল বৃষ্টি হলেই ধসে পড়ে।”
আরেক রোহিঙ্গা শরণার্থী মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, “আমাদের আগে সরিয়ে নিলে হয়তো ওই ১০ জন মারা যেতো না। এখন ক্যাস্পের ভিতরে অফিস ও স্কুল ও মাদ্রাসায় নিয়ে কিছু লোককে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে। কিন্তু পুরো ক্যাম্পের অধিকাংশ জায়গাই ঝুঁকিপূর্ণ। আবার প্রবল বৃষ্টি হলে আরো পাহাড় ধসে পড়ার আশঙ্কা আছে।” তিনি জানান, নিহতদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীও আছেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, ক্যাম্পের মধ্যে অনেক জায়গায়ই পানি জমে গেছে। এই বৃষ্টি আরো কয়েকদিন চললে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে বলে তাদের আশঙ্কা।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা


ক্যাম্পের বাইরের বাংলাদেশি নাগরিকরাও পাহাড়ে বসবাস করেন বলে জানান উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন। তিনি বলেন, “ক্যাম্পটি তৈরি করা হয়েছে পাহাড় ও বনভূমি কেটে তার ধাপে ধাপে। ক্যাম্পের পুরোটাই আসলে মাটির পাহাড়। ক্যাম্পের বাইরেও আরো অনেক পাহাড়ে স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিকরা বসবাস করছেন। তারাও ঝুঁকির মধ্যে আছেন। আমরা প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে মাইকিং করে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলছি। তাদের সরকারি স্থাপনায় আশ্রয় নিতে বলছি।”
ক্যাম্পের বাইরে যারা ঝুঁকিতে আছেন, তাদের জন্য কাজ করছে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়। অতিরিক্ত কমিশনার বলেন,” আসলে এখানে অনেক এলাকাই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু যারা অধিক ঝুঁকির মধ্যে আছে, তাদের আমরা সরিয়ে নিচ্ছি।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, পাহাড়ের ঢালে বাঁশ ও বালু দিয়ে প্রটেকশন তৈরি করা হয়। বালু হওয়ায় তা ভারি বর্ষনে অনেক সময়ই টেকে না। আবার পাহাড় কেটে ফেলার ফলেও এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।
তিনি জানান, প্রতি বছরই এখানে পাহাড় ধসে লোকজন মারা যায়।
উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়াম্যান নুরুল কবির বলেন,” ক্যাম্পে প্রতি বছরই পাহাড় ধস হয়। গত বছরও হয়েছিল। তবে ক্ষয়ক্ষতি কম ছিল। গত বছর বৃষ্টিও কম ছিল। এ বছর বৃষ্টি বেশি। আগে থেকে সতর্ক করা প্রয়োজন ছিল।” গত বছর মারা গেছেন ছয় জন।
তিনি বলেন, “আসলে এখানে তো ক্যাম্প করার মতো জায়গা নাই। ধাপ ধাপ করে পাহাড় কেটে ক্যাম্প বানানো হয়েছে। বন কাটা হয়েছে। আবার স্থানীয়রাও পাহাড় দখল করে বাড়ি-ঘর বানিয়েছে। ফলে পুরো এলাকাটাই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এখন মাইকিং করে তাদের নিরাপদ এলাকায় যেতে বলছি।”
শুধু রোহিঙ্গা ক্যাম্প নয়, কক্সবাজারের আরো অনেক পাহাড়ি এলাকা ঝুকিতে আছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। সেখানে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে সতর্কতা
এদিকে পুরো চট্টগ্রামে টানা ভারি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে আজ (বুধবার) সকাল ৯টা থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। ভারি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও পাহাড় ও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, চট্টগ্রাম এলাকায় পাহাড় ধসে গত ১৬ বছরে ২৪৮ জন মারা গেছেন।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় আছে৷ ১৭টি অতিঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৮৩৫ পরিবার বসবাস করে। ১৭ পাহাড়ের মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০ পাহাড়ে অবৈধভাবে বাস করছে ৫৩১টি পরিবার। ডয়চে ভেলে

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

আবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভূমিধস, আবার প্রাণহানি

আপডেট সময় : ০১:০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪

কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়।
ক্যাম্প এলাকায় মাইকিং করে বাসিন্দাদের ক্যাম্পের ভিতরে যেতে বলা হচ্ছে। এ পর্যন্ত এক হাজার রোহিঙ্গাকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
উখিয়া ক্যাম্পে মোট চার জায়গায় পাহাড় ধসে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে আটজন রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং দুই জন বাংলাদেশি নাগরিক। নিহতদের মধ্যে তিনজন পুরুষ, তিনজন নারী ও চারটি শিশু রয়েছে। আহত হয়েছেন ১০-১২ জন। তবে কেউ নিখোঁজ আছেন বলে খবর পাওয়া যায়নি বলে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন জানিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ,আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন (এপিবিএন) সদস্যসহ স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধারকাজে অংশ নেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, নিহতদের লাশ উদ্ধার করে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ক্যাম্পের ৮, ৯ , ১০ ও ১৪ নাম্বার ব্লকে পাহাড় ধস এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে ভারি বৃষ্টির কারণে এই পাহাড় ধস হয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান অতিরিক্ত শরণার্থী , ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার সামছু-দ্দৌজা নয়ন।
তিনি জানান, পুরো উখিয়া ক্যাম্পটিই মাটির পাহাড়ের ওপর। পাহাড় কেটে এই ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। পাহাড় ধসের এলাকায় কমপক্ষে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করে। যারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে- এরকম এক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তার কথা, “আমরা প্রটেকশনের ব্যবস্থা করেছিলাম, কিন্তু ভারি বৃষ্টিতে তাতে কাজ হয়নি। আরো বিভিন্ন ব্লকে প্রটেকশন দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখানকার যা অবস্থা তাতে প্রকৃতির ওপর কোনো হাত নেই। কারণ, পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে তৈরি করা এই ক্যাম্প এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
ক্যাম্পের বাসিন্দাদের কথা
ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং ক্যাম্প-৯-এর মাঝি (ক্যাম্পের স্বেচ্ছাসেবক) মো. ইউনূস বলেন, “আমাদের ক্যাম্পগুলো পাহাড়ের উপরে এবং পাদদেশে। গত রাতে (মঙ্গলবার) প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে পড়ে। তাতে ৫০-৬০টি ঘর মাটির নিচে চাপ পড়ে। পাদদেশে যাদের ঘর ছিল, তাদের মধ্য থেকেই মারা যায়। আসলে এই রকম প্রবল বৃষ্টি হলে পাহাড় ধসে পড়া এখানকার নিয়মিত ঘটনা।”
“আমরা যে ঘরগুলোতে থাকি, তা বাঁশের তৈরি, উপরে পলিথিন। আকারে সাতফুট বাই দশ ফুট। এমনি বৃষ্টি হলেও ঘর পানিতে ডুবে যায়। এই ক্যাম্পে মোট ৯৪টি ব্লক আছে। সব ব্লকই পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে। মাটির পাহাড় প্রবল বৃষ্টি হলেই ধসে পড়ে।”
আরেক রোহিঙ্গা শরণার্থী মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, “আমাদের আগে সরিয়ে নিলে হয়তো ওই ১০ জন মারা যেতো না। এখন ক্যাস্পের ভিতরে অফিস ও স্কুল ও মাদ্রাসায় নিয়ে কিছু লোককে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে। কিন্তু পুরো ক্যাম্পের অধিকাংশ জায়গাই ঝুঁকিপূর্ণ। আবার প্রবল বৃষ্টি হলে আরো পাহাড় ধসে পড়ার আশঙ্কা আছে।” তিনি জানান, নিহতদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীও আছেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, ক্যাম্পের মধ্যে অনেক জায়গায়ই পানি জমে গেছে। এই বৃষ্টি আরো কয়েকদিন চললে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে বলে তাদের আশঙ্কা।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা


ক্যাম্পের বাইরের বাংলাদেশি নাগরিকরাও পাহাড়ে বসবাস করেন বলে জানান উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন। তিনি বলেন, “ক্যাম্পটি তৈরি করা হয়েছে পাহাড় ও বনভূমি কেটে তার ধাপে ধাপে। ক্যাম্পের পুরোটাই আসলে মাটির পাহাড়। ক্যাম্পের বাইরেও আরো অনেক পাহাড়ে স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিকরা বসবাস করছেন। তারাও ঝুঁকির মধ্যে আছেন। আমরা প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে মাইকিং করে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলছি। তাদের সরকারি স্থাপনায় আশ্রয় নিতে বলছি।”
ক্যাম্পের বাইরে যারা ঝুঁকিতে আছেন, তাদের জন্য কাজ করছে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়। অতিরিক্ত কমিশনার বলেন,” আসলে এখানে অনেক এলাকাই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু যারা অধিক ঝুঁকির মধ্যে আছে, তাদের আমরা সরিয়ে নিচ্ছি।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, পাহাড়ের ঢালে বাঁশ ও বালু দিয়ে প্রটেকশন তৈরি করা হয়। বালু হওয়ায় তা ভারি বর্ষনে অনেক সময়ই টেকে না। আবার পাহাড় কেটে ফেলার ফলেও এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।
তিনি জানান, প্রতি বছরই এখানে পাহাড় ধসে লোকজন মারা যায়।
উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়াম্যান নুরুল কবির বলেন,” ক্যাম্পে প্রতি বছরই পাহাড় ধস হয়। গত বছরও হয়েছিল। তবে ক্ষয়ক্ষতি কম ছিল। গত বছর বৃষ্টিও কম ছিল। এ বছর বৃষ্টি বেশি। আগে থেকে সতর্ক করা প্রয়োজন ছিল।” গত বছর মারা গেছেন ছয় জন।
তিনি বলেন, “আসলে এখানে তো ক্যাম্প করার মতো জায়গা নাই। ধাপ ধাপ করে পাহাড় কেটে ক্যাম্প বানানো হয়েছে। বন কাটা হয়েছে। আবার স্থানীয়রাও পাহাড় দখল করে বাড়ি-ঘর বানিয়েছে। ফলে পুরো এলাকাটাই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এখন মাইকিং করে তাদের নিরাপদ এলাকায় যেতে বলছি।”
শুধু রোহিঙ্গা ক্যাম্প নয়, কক্সবাজারের আরো অনেক পাহাড়ি এলাকা ঝুকিতে আছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। সেখানে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে সতর্কতা
এদিকে পুরো চট্টগ্রামে টানা ভারি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে আজ (বুধবার) সকাল ৯টা থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। ভারি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও পাহাড় ও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, চট্টগ্রাম এলাকায় পাহাড় ধসে গত ১৬ বছরে ২৪৮ জন মারা গেছেন।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় আছে৷ ১৭টি অতিঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৮৩৫ পরিবার বসবাস করে। ১৭ পাহাড়ের মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০ পাহাড়ে অবৈধভাবে বাস করছে ৫৩১টি পরিবার। ডয়চে ভেলে

Facebook Comments Box