আন্দোলনকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে: কর্মবিরতির কর্মসূচিতে শিক্ষকরা
- আপডেট সময় : ১০:৪৬:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪ ১৬ বার পঠিত
সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে বুধবার দশম দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে বন্ধ রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম। শিক্ষক নেতারা বলছেন, তাদের আন্দোলনকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
আন্দোলনের ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো সরকারের উচ্চ মহল থেকে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করায় হতাশাও ব্যক্ত করেন কেউ কেউ। তবে শিক্ষক-কর্মচারীরা বলেছেন, তাদের সর্বাত্মক আন্দোলন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : প্রত্যয় স্কিমকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে এটা বাতিলের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বুধবার কর্মবিরতির দশম দিনে কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষকরা।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, অনেকে আমাদের আন্দোলনকে নিয়ে ভুলভাবে ব্যাখ্যা দিচ্ছে। আমরা বলে দিতে চাই, সরকারের বিরুদ্ধে নয়, সরকারের হাতকে শক্তিশালী করার জন্যই এ আন্দোলন। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আছি।
কবে ক্লাসরুমে ফিরবেন এমন প্রশ্নের জবাবে জিনাত হুদা বলেন, এ প্রশ্নের উত্তর একমাত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছেই। শিক্ষক সমাজের কাছে এ প্রশ্নের উত্তর নেই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তিনি বলেন, আমরা ক্লাসরুমে ব্যস্ত সময় পার করছিলাম, আমরা একটি স্থিতিশীল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম, হঠাৎ করেই আমাদেরকে কারা এমন অবস্থায় নিয়ে এসেছে? এ প্রশ্নের উত্তর প্রশাসনের কাছেই আছে।
সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভ‚ইয়া বলেন, আপনারা যখন কাউকে মিডিয়াতে ডাকবেন, তারা যেন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো কথা না বলেন। এগুলো আমাদের আত্মসম্মানে লাগে। আপনারাও একসময় শিক্ষার্থী ছিলেন। শিক্ষকরা ছাড়াও এই পেনশন স্কিমের বিরুদ্ধে কর্মবিরতি পালন করে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : বুধবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নিচ তলায় পূর্বের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্দোলন থেকে সরে এলেও আমরা পিছপা হব না। আমাদের শিক্ষা খাত নিয়ে এক ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। জাতিকে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রত্যেকটা লেভেলে শিক্ষকসমাজ অবহেলিত। শিক্ষার্থীরা অবহেলিত। প্রত্যয় স্কিমকে আমরা কখনই পেনশন স্কিম বলতে পারি না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার চত্বরে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। এ সময় জগন্নাথ শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের ও পরবর্তী শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এটা বাতিল করতে হবে, আলোচনায় বসতে হবে। প্রত্যয় স্কিম থাকবে না এটা আমি নিশ্চিত। কারণটা হলো, আলোচনায় বসা মানেই উনারা জানেন এর পক্ষে কোনো যুক্তি দেখানো যায় না।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনে শিক্ষাঙ্গনে চলমান স্থবিরতার বিষয়ে এই শিক্ষক নেতা আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে তা একটি বিচারাধীন বিষয়। আশা করি বিষয়টি সুন্দরভাবে সমাধান হবে। আমাদের যে দায় সেটা হলো আমরা শিক্ষক হয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েদের ক্লাসরুমে রাখছি না, তাদের ল্যাবরেটরিতে রাখতে পারছি না। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু তাদেরকে স্পষ্ট করে জানাতে চাই, এই ক্ষতিটা সামান্য ক্ষতি মনে হবে যদি তারা জানে পরবর্তী জেনারেশনের জন্য এটা কতো সর্বনাশা প্রস্তাব আসছে। যেখানে মেধাবীরা এই পেশায় আসবে না, তারা প্রস্তুত হবে না। কাজেই আমাদের দাবি মেনে নেয়াটাই এখন যুক্তিযুক্ত।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষকদের ডাকা লাগাতার কর্মবিরতিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পূর্ণদিবস কর্মবিরতি করেন শিক্ষকরা। এতে ক্লাস, পরীক্ষা, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম সবকিছু এখনও বন্ধ রয়েছে। ববি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আবদুল বাতেন চৌধুরী বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপক ড. সোহেল হাসান বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন চাকরির প্রশ্নের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তিনি আহ্বান জানিয়েছেন রাবিকে যেন প্রশ্নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রশ্নফাঁসের কোনো রেকর্ড নেই। প্রশ্নের দায়িত্ব পেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে বলেই তিনি মনে করেন। বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহার এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকার বলেন, আমরা পহেলা জুলাই থেকে এই আন্দোলন করে যাচ্ছি। তবুও আজকে পর্যন্ত সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে কোনো আশ্বাস মেলেনি। কোনো মন্ত্রী দায়িত্ব নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন না।
বিডিইউ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিডিইউ) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন। বুধবার সকাল থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতি এ কর্মবিরতি পালন করেন।
হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : বুধবার দুপুর ১২টায় ১০ম দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন শিক্ষকরা। কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক ড. অরুণ চন্দ্র বর্মণ, সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম রাসেল, প্রভাষক ঈশিতা মন্ডল, তৌকির আহমেদ, শাকির আহম্মেদ প্রমুখ।