ঢাকা ০১:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo আওয়ামী দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে সরকার সফল হবে না: তারেক Logo স্বৈরাচারের হিংস্র থাবা থেকে দেশ এখনও মুক্ত নয়: রিজভী Logo হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে যেভাবে ইসরায়েল খুঁজে বের করে হত্যা করেছে Logo সোনারগাঁওয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে যুবকের মৃত্যু Logo সংবাদ প্রকাশের পর বৃদ্ধা মহিলার ঠাই হলো স্বামীর বসত ভিটায় Logo সোনারগাঁয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি হালট দখল করে বালু ভরাট Logo ‘সংস্কারের ধীর গতি’ ও কাজের গুরুত্ব নির্ধারণ নিয়ে সমালোচনা, কী বলছেন উপদেষ্টারা? Logo আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু আজ Logo বাড়তে পারে ঈদ ও পূজার সরকারি ছুটি Logo আগামী বছর থেকে আবারও মাধ্যমিকে বিভাগ বিভাজন শুরু

আচরণবিধি বেশি ভাঙছেন এমপিরা, প্রার্থিতা বাতিল হবে বলছে ইসি

সারাবেলা প্রতিবেদন
  • আপডেট সময় : ১০:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ৫০ বার পঠিত
“নৌকার বাইরে গিয়ে কেউ কোনো কথা বললে তার গলা নামিয়ে দেওয়া হবে” -এমন হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খান।
শুধু শো-কজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নির্বাচন কমিশন।

সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিদের পক্ষে এমন হুমকি প্রতিনিয়ত দেওয়া হচ্ছে।

তবে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, “যারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কয়েকটি জায়গায় আরও কিছু কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। সেগুলো পেলে আমরা কিছু প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করব সে সিদ্ধন্ত নিয়েছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আপনারা দেখতে পাবেন।”

পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, নির্বাচনী আচরণবিধি বেশি লঙ্ঘন করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মন্ত্রী-এমপিরা। নির্বাচন কমিশনের গঠন করা নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিগুলো এখন পর্যন্ত ২১১টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ বা চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ৯২ জন। আবার তাদের মধ্যে ৫২ জনই বর্তমান সংসদ সদস্য। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জেল-জরিমানার পাশাপাশি প্রার্থিতা বাতিল করার ক্ষমতা রাখে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সতর্ক করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা করা হয়েছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “নির্বাচন কমিশন যে ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি শক্ত ভূমিকা নেওয়ার সুযোগ আছে। কেন তারা নিচ্ছে না, সেটা তো জানি না। আমি মনে করি, তারা কয়েকটি জায়গায় শক্ত ব্যবস্থা নিলে নির্বাচনের পরিবেশ আরও অনেক ভালো হবে।”
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য এখন মাঠে আছেন প্রায় ৮০০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ ছাড়া ‘ভোটপূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত’ করার জন্য জুডিশিয়াল (বিচারিক) ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে প্রতিটি আসনে একটি করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি রয়েছে। তারাও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে। তবে তারা নিজেরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারে। কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা দলকে ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা করতে পারে অথবা প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে।
আমার ছেলে লন্ডন থেকে আইনে পড়াশোনা করে এসেছে। অত্যন্ত ভদ্র। এটা আসলে তেমন কোনো ঘটনা না : শাজাহান খান

আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা কেন এত বেপরোয়া? দল থেকে তাদের কী ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে? জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমরা কেন্দ্র থেকে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছি, আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। কেউ যদি আচরণবিধি ভঙ্গ করেন তাহলে নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা নেবে। এক্ষেত্রে আমাদের কোন কথা নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেও সবাইকে আচরণবিধি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে কেউ যদি ভঙ্গ করেন তাহলে তার দায় দল নেবে না। আমরা এ ব্যাপারে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করব নির্বাচন কমিশনের প্রতি।”

তফসিল ঘোষণার পর থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত অন্তত ২১১টি অভিযোগ আমলে নিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিগুলো। প্রার্থীর পাশাপাশি তাদের অনুসারী নেতা-কর্মী সমর্থক এবং কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। কারও কারও বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগও রয়েছে। আওয়ামী লীগের যেসব প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ বা চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ৫২ জন বর্তমান সংসদ সদস্য। এ ছাড়া ২৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির ৯ প্রার্থীকেও শো-কজ করা হয়েছে। এসব অভিযোগের তদন্ত শেষে কমিটিগুলো ইসিতে প্রতিবেদনও পাঠাতে শুরু করেছে।

নৌকার প্রার্থীদের হুমকি চলছেই

নৌকার বাইরে গিয়ে কেউ কোনো কথা বললে “গলা নামিয়ে দেওয়ার” হুমকি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ (রাজৈর-সদর একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খান। এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আসিবুরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। রোববার তিনি সশরীরে উপস্থিত হয়ে জবাব দেবেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শাজাহান খান  বলেন, “প্রতিপক্ষের লোকজন আমার একজন কর্মীকে আটকে রেখে মারধর করে। খবর পেয়ে আমার ছেলে সেখানে যায়। তার আগেই অবশ্য পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। তখন আমার ছেলে তাদের বলেছে, এত উঁচু গলায় কথা বলেন না, গলা নেমে যাবে বা এমন কিছু। এসব কথা সে অতকিছু মিন করে বলেনি। ছোট মানুষ আস্তে আস্তে রাজনীতি শিখে যাবে। আমার ছেলে লন্ডন থেকে আইনে পড়াশোনা করে এসেছে। অত্যন্ত ভদ্র। এটা আসলে তেমন কোনো ঘটনা না।”

লালমনিরহাট-১ আসনে উচ্চ আদালত নিয়ে এমপি মোতাহার হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস-২) উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামলের অবমাননাকর বক্তব্য গত বুধবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা নিয়ে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। এ ছাড়া শ্যামলের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার রাতে লালমনিরহাট-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান প্রধানের ওপর হামলা, তার গাড়ি ও অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এর জন্য শুক্রবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে শ্যামলকে শোকজ করেছে জেলা নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।

গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শ্যামল বলেন, “ওনার (আতাউর রহমান প্রধান) প্রার্থিতা কোনোভাবেই বৈধ হওয়ার কারণ নাই। ওঁর মনোনয়নপত্র জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা বাতিল করেছেন, বিজ্ঞ নির্বাচন কমিশনার বাতিল করেছেন। উনি হাইকোর্টে অর্থের বিনিময়ে প্রার্থিতা নিয়েছেন। সেটি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছে।” আদালত নিয়ে তার এমন বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়। পরে আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, “আমি আসলে এভাবে বলতে চাইনি। ওই কথাটা হলো উকিলদের (আইনজীবী) ম্যানেজ করেছে। কোর্ট তো আর ম্যানেজ হয় না।”

মাদারীপুর জেলার কালকিনিতে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থকদের মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে

মাদারীপুরে হামলায় আহত স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীর মৃত্যু

মাদারীপুরে কালকিনি উপজেলায় হামলায় আহত স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক কর্মী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এসকানদার খাঁ (৫০) নামের ওই ব্যক্তি শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এসকানদার ওই উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের ভাটোবালী গ্রামে আমির খানের ছেলে। তিনি মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তহামিনা বেগমের পক্ষের কর্মী ও লক্ষীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে লক্ষ্মীপুর বাজার থেকেবাড়ির দিকে ফিরছিলেন এসকান্দার।  সে সময় তার ওপর হামলা হয়। হামলাকারীরা তাকে হাতুড়ি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে।

গত বৃহস্পতিবার স্বতন্ত্র প্রার্থী তহামিনা বেগমের ঈগল মার্কার মিছিলে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের সমর্থক ফজলুল হক বেপারীসহ ৫৭ জনকে আসামি একটি মামলা করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থক কাজী মোফাজ্জেল হোসেন। মামলার পর দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

আচরণবিধি বেশি ভাঙছেন এমপিরা, প্রার্থিতা বাতিল হবে বলছে ইসি

আপডেট সময় : ১০:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩
“নৌকার বাইরে গিয়ে কেউ কোনো কথা বললে তার গলা নামিয়ে দেওয়া হবে” -এমন হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খান।
শুধু শো-কজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নির্বাচন কমিশন।

সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিদের পক্ষে এমন হুমকি প্রতিনিয়ত দেওয়া হচ্ছে।

তবে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, “যারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কয়েকটি জায়গায় আরও কিছু কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। সেগুলো পেলে আমরা কিছু প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করব সে সিদ্ধন্ত নিয়েছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আপনারা দেখতে পাবেন।”

পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, নির্বাচনী আচরণবিধি বেশি লঙ্ঘন করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মন্ত্রী-এমপিরা। নির্বাচন কমিশনের গঠন করা নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিগুলো এখন পর্যন্ত ২১১টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ বা চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ৯২ জন। আবার তাদের মধ্যে ৫২ জনই বর্তমান সংসদ সদস্য। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জেল-জরিমানার পাশাপাশি প্রার্থিতা বাতিল করার ক্ষমতা রাখে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সতর্ক করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা করা হয়েছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “নির্বাচন কমিশন যে ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি শক্ত ভূমিকা নেওয়ার সুযোগ আছে। কেন তারা নিচ্ছে না, সেটা তো জানি না। আমি মনে করি, তারা কয়েকটি জায়গায় শক্ত ব্যবস্থা নিলে নির্বাচনের পরিবেশ আরও অনেক ভালো হবে।”
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য এখন মাঠে আছেন প্রায় ৮০০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ ছাড়া ‘ভোটপূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত’ করার জন্য জুডিশিয়াল (বিচারিক) ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে প্রতিটি আসনে একটি করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি রয়েছে। তারাও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে। তবে তারা নিজেরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারে। কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা দলকে ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা করতে পারে অথবা প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে।
আমার ছেলে লন্ডন থেকে আইনে পড়াশোনা করে এসেছে। অত্যন্ত ভদ্র। এটা আসলে তেমন কোনো ঘটনা না : শাজাহান খান

আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা কেন এত বেপরোয়া? দল থেকে তাদের কী ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে? জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমরা কেন্দ্র থেকে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছি, আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। কেউ যদি আচরণবিধি ভঙ্গ করেন তাহলে নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা নেবে। এক্ষেত্রে আমাদের কোন কথা নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেও সবাইকে আচরণবিধি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে কেউ যদি ভঙ্গ করেন তাহলে তার দায় দল নেবে না। আমরা এ ব্যাপারে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করব নির্বাচন কমিশনের প্রতি।”

তফসিল ঘোষণার পর থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত অন্তত ২১১টি অভিযোগ আমলে নিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিগুলো। প্রার্থীর পাশাপাশি তাদের অনুসারী নেতা-কর্মী সমর্থক এবং কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। কারও কারও বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগও রয়েছে। আওয়ামী লীগের যেসব প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ বা চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ৫২ জন বর্তমান সংসদ সদস্য। এ ছাড়া ২৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির ৯ প্রার্থীকেও শো-কজ করা হয়েছে। এসব অভিযোগের তদন্ত শেষে কমিটিগুলো ইসিতে প্রতিবেদনও পাঠাতে শুরু করেছে।

নৌকার প্রার্থীদের হুমকি চলছেই

নৌকার বাইরে গিয়ে কেউ কোনো কথা বললে “গলা নামিয়ে দেওয়ার” হুমকি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ (রাজৈর-সদর একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খান। এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আসিবুরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। রোববার তিনি সশরীরে উপস্থিত হয়ে জবাব দেবেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শাজাহান খান  বলেন, “প্রতিপক্ষের লোকজন আমার একজন কর্মীকে আটকে রেখে মারধর করে। খবর পেয়ে আমার ছেলে সেখানে যায়। তার আগেই অবশ্য পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। তখন আমার ছেলে তাদের বলেছে, এত উঁচু গলায় কথা বলেন না, গলা নেমে যাবে বা এমন কিছু। এসব কথা সে অতকিছু মিন করে বলেনি। ছোট মানুষ আস্তে আস্তে রাজনীতি শিখে যাবে। আমার ছেলে লন্ডন থেকে আইনে পড়াশোনা করে এসেছে। অত্যন্ত ভদ্র। এটা আসলে তেমন কোনো ঘটনা না।”

লালমনিরহাট-১ আসনে উচ্চ আদালত নিয়ে এমপি মোতাহার হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস-২) উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামলের অবমাননাকর বক্তব্য গত বুধবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা নিয়ে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। এ ছাড়া শ্যামলের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার রাতে লালমনিরহাট-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান প্রধানের ওপর হামলা, তার গাড়ি ও অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এর জন্য শুক্রবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে শ্যামলকে শোকজ করেছে জেলা নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।

গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শ্যামল বলেন, “ওনার (আতাউর রহমান প্রধান) প্রার্থিতা কোনোভাবেই বৈধ হওয়ার কারণ নাই। ওঁর মনোনয়নপত্র জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা বাতিল করেছেন, বিজ্ঞ নির্বাচন কমিশনার বাতিল করেছেন। উনি হাইকোর্টে অর্থের বিনিময়ে প্রার্থিতা নিয়েছেন। সেটি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছে।” আদালত নিয়ে তার এমন বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়। পরে আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, “আমি আসলে এভাবে বলতে চাইনি। ওই কথাটা হলো উকিলদের (আইনজীবী) ম্যানেজ করেছে। কোর্ট তো আর ম্যানেজ হয় না।”

মাদারীপুর জেলার কালকিনিতে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থকদের মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে

মাদারীপুরে হামলায় আহত স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীর মৃত্যু

মাদারীপুরে কালকিনি উপজেলায় হামলায় আহত স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক কর্মী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এসকানদার খাঁ (৫০) নামের ওই ব্যক্তি শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এসকানদার ওই উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের ভাটোবালী গ্রামে আমির খানের ছেলে। তিনি মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তহামিনা বেগমের পক্ষের কর্মী ও লক্ষীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে লক্ষ্মীপুর বাজার থেকেবাড়ির দিকে ফিরছিলেন এসকান্দার।  সে সময় তার ওপর হামলা হয়। হামলাকারীরা তাকে হাতুড়ি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে।

গত বৃহস্পতিবার স্বতন্ত্র প্রার্থী তহামিনা বেগমের ঈগল মার্কার মিছিলে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের সমর্থক ফজলুল হক বেপারীসহ ৫৭ জনকে আসামি একটি মামলা করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থক কাজী মোফাজ্জেল হোসেন। মামলার পর দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

Facebook Comments Box