ঢাকা ০৪:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগরবাতি তৈরিতে ভাগ্য বদল ১০হাজার নারীর

মোঃ জহুরুল ইসলাম খোকন সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১১:২৫:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ১৮ বার পঠিত

আগরবাতি কারখানায় কাজ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে সৈয়দপুরের প্রায় ১০ হাজার নারীর। প্রায় দুই যুগের ও বেশি সময় ধরে তৈরি হচ্ছে এই আগরবাতি।বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব মসজিদ, মন্দির, গির্জায় জ্বালানো হয় এই আগরবাতি। এ ছাড়া সুগন্ধি হিসেবেও এখন অনেকে প্রতিদিন ঘরে বা দোকানেও ব্যবহার করেন অনেকেই।

ব্যবসায়িক শহর হিসেবে খ্যাত এলাকা সৈয়দপুর। এ শহরে বেশ কয়েকটি শিল্প-কল কারখানা থাকলেও ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প রয়েছে এই শহরে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ছোট ছোট অর্ধশত কারখানা। এর মধ্যে অন্যতম হলো আগরবাতি তৈরির কারখানা। একসময় শহর সহ উপজেলার বাড়ি বাড়ি আগরবাতি তৈরি করা হলেও এখন কারখানাতেই তৈরি হচ্ছে বেশি।

সরেজমিন দেখা যায়, আগরবাতির কারখানার মালিকরা নিজ কারখানা ছাড়া ও পাড়া মহল্লার নারীদের আগরবাতির উপকরণ দিয়ে যান। আর এসব উপকরণ দিয়ে নারীরা পিড়িতে বসে আগরবাতি বানাচ্ছেন। একেকটি নারী শ্রমিক প্রতিদিন তৈরি করছেন ৩/৪ হাজার আগরবাতি। এতে প্রতিদিন একেকজনের আয় হচ্ছে ১০০/১৫০ টাকা। শহরের ২২টি বিহারি ক্যাম্পের অধিকাংশ নারী সহ উপজেলার প্রায় নারী অবসর সময়ে আগরবাতি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন।

বাঁশবাড়ি এলাকার সাদরা লেন এর আগরবাতি কারখানার মালিক মাসুম বলেন, মেশিন ক্রয়ের আগে নারীরা হাত দিয়েই আগরবাতি তৈরি করতেন। কিন্তু যখন থেকে কারখানায় মেশিন বসিয়েছি তখন থেকে তাদের খাটনি কমে গেছে। তিনি আরও বলেন বর্তমানে শহর সহ উপজেলার পাড়া মহল্লায় এমন একটা বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে বাড়ির নারীরা আগরবাতি বানাচ্ছেন না। এখন তাদের খাটনি কমে গেছে এবং মজুরি ও পাচ্ছেন ভালো।

শহরের গোলাহাট বিহারি ক্যাম্পের ফরিদা পারভীন বলেন, ‘আমরা বাড়ির কাজ শেষ করে অবসর সময়ে আগরবাতি তৈরি করি। এক দিনে ২ থেকে ৩ হাজার পিস আগরবাতি তৈরি করতে পারি।। মজুরি যা পাই তা দিয়ে আমরা আমাদের শখ-আহ্লাদ পূরন করতে পারি।

ওই ক্যাম্পের বিলকিস নামের অপর একজন জানান, আগরবাতি তৈরির সঙ্গে আমি ২০ বছর ধরে জড়িত। শরুর দিকে আগরবাতির কাঁচামাল বিভিন্ন মহল্লার নারীদের দিয়ে আসতাম। ওইসময় হাত দিয়ে তৈরি করা আগরবাতির ফিনিশিং ভালো হতো না, তবে এখন মেশিন দিয়ে তৈরি করা আগরবাতির ফিনিশিং অনেক ভালো। এতে ব্যবহার কারির চাহিদা বেড়েছে।

সাহেবপাড়ায় আগরবাতি কারখানার স্বত্বাধিকারী শাহাজাদা বলেন, ‘সৈয়দপুরের ২২টি বিহারি ক্যাম্পের অনেক নারী আগরবাতি তৈরির সঙ্গে যুক্ত। অনেক নারী এ কাজ করে সাবলম্বি হয়ে ভালো ভাবে সংসার চালাচ্ছেন। নিজেদের উদ্যোগে অনেকের বাসায় ছোট ছোট কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ শিল্পে স্বল্প ঋণ সুবিধা ও সরকারি অনুদান পাওয়া পেলে ব্যবসার পরিধি বাড়ানো সম্ভব।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের উপব্যবস্থাপক হুসনে আরা বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের আমরা সব সময় প্রাধান্য দিয়ে আসছি। আগরবাতির ক্ষেত্রেও কারিগরি প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতার পাশাপাশি অর্থও দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

আগরবাতি তৈরিতে ভাগ্য বদল ১০হাজার নারীর

আপডেট সময় : ১১:২৫:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

আগরবাতি কারখানায় কাজ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে সৈয়দপুরের প্রায় ১০ হাজার নারীর। প্রায় দুই যুগের ও বেশি সময় ধরে তৈরি হচ্ছে এই আগরবাতি।বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব মসজিদ, মন্দির, গির্জায় জ্বালানো হয় এই আগরবাতি। এ ছাড়া সুগন্ধি হিসেবেও এখন অনেকে প্রতিদিন ঘরে বা দোকানেও ব্যবহার করেন অনেকেই।

ব্যবসায়িক শহর হিসেবে খ্যাত এলাকা সৈয়দপুর। এ শহরে বেশ কয়েকটি শিল্প-কল কারখানা থাকলেও ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প রয়েছে এই শহরে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ছোট ছোট অর্ধশত কারখানা। এর মধ্যে অন্যতম হলো আগরবাতি তৈরির কারখানা। একসময় শহর সহ উপজেলার বাড়ি বাড়ি আগরবাতি তৈরি করা হলেও এখন কারখানাতেই তৈরি হচ্ছে বেশি।

সরেজমিন দেখা যায়, আগরবাতির কারখানার মালিকরা নিজ কারখানা ছাড়া ও পাড়া মহল্লার নারীদের আগরবাতির উপকরণ দিয়ে যান। আর এসব উপকরণ দিয়ে নারীরা পিড়িতে বসে আগরবাতি বানাচ্ছেন। একেকটি নারী শ্রমিক প্রতিদিন তৈরি করছেন ৩/৪ হাজার আগরবাতি। এতে প্রতিদিন একেকজনের আয় হচ্ছে ১০০/১৫০ টাকা। শহরের ২২টি বিহারি ক্যাম্পের অধিকাংশ নারী সহ উপজেলার প্রায় নারী অবসর সময়ে আগরবাতি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন।

বাঁশবাড়ি এলাকার সাদরা লেন এর আগরবাতি কারখানার মালিক মাসুম বলেন, মেশিন ক্রয়ের আগে নারীরা হাত দিয়েই আগরবাতি তৈরি করতেন। কিন্তু যখন থেকে কারখানায় মেশিন বসিয়েছি তখন থেকে তাদের খাটনি কমে গেছে। তিনি আরও বলেন বর্তমানে শহর সহ উপজেলার পাড়া মহল্লায় এমন একটা বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে বাড়ির নারীরা আগরবাতি বানাচ্ছেন না। এখন তাদের খাটনি কমে গেছে এবং মজুরি ও পাচ্ছেন ভালো।

শহরের গোলাহাট বিহারি ক্যাম্পের ফরিদা পারভীন বলেন, ‘আমরা বাড়ির কাজ শেষ করে অবসর সময়ে আগরবাতি তৈরি করি। এক দিনে ২ থেকে ৩ হাজার পিস আগরবাতি তৈরি করতে পারি।। মজুরি যা পাই তা দিয়ে আমরা আমাদের শখ-আহ্লাদ পূরন করতে পারি।

ওই ক্যাম্পের বিলকিস নামের অপর একজন জানান, আগরবাতি তৈরির সঙ্গে আমি ২০ বছর ধরে জড়িত। শরুর দিকে আগরবাতির কাঁচামাল বিভিন্ন মহল্লার নারীদের দিয়ে আসতাম। ওইসময় হাত দিয়ে তৈরি করা আগরবাতির ফিনিশিং ভালো হতো না, তবে এখন মেশিন দিয়ে তৈরি করা আগরবাতির ফিনিশিং অনেক ভালো। এতে ব্যবহার কারির চাহিদা বেড়েছে।

সাহেবপাড়ায় আগরবাতি কারখানার স্বত্বাধিকারী শাহাজাদা বলেন, ‘সৈয়দপুরের ২২টি বিহারি ক্যাম্পের অনেক নারী আগরবাতি তৈরির সঙ্গে যুক্ত। অনেক নারী এ কাজ করে সাবলম্বি হয়ে ভালো ভাবে সংসার চালাচ্ছেন। নিজেদের উদ্যোগে অনেকের বাসায় ছোট ছোট কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ শিল্পে স্বল্প ঋণ সুবিধা ও সরকারি অনুদান পাওয়া পেলে ব্যবসার পরিধি বাড়ানো সম্ভব।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের উপব্যবস্থাপক হুসনে আরা বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের আমরা সব সময় প্রাধান্য দিয়ে আসছি। আগরবাতির ক্ষেত্রেও কারিগরি প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতার পাশাপাশি অর্থও দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

Facebook Comments Box