ঢাকা ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo সোনারগাঁয়ে বাস-অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১০ Logo সোনারগাঁয়ে ২৫কেজি গাঁজা ও পিকআপ ভ্যানসহ আটক-৩ Logo চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত-পাকিস্তান মহারণের সূচি প্রকাশ Logo শেষ দুই টেস্টও খেলা হচ্ছে না শামির Logo বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে ৭ সদস্যের কমিশন গঠন Logo বিয়ের পরিকল্পনা নেই! তবে বাবা হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে! সন্তান প্রসঙ্গে কী মত সলমনের? Logo মস্কোয় অতিষ্ঠ! সিরিয়ার পলাতক প্রেসিডেন্টের থেকে ‘মুক্তি’ চাইছেন স্ত্রী, ফিরে যেতে চান ব্রিটেনে Logo ‘বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিল বাবদ ২০০ কোটি রুপি পাওনা রয়েছে ত্রিপুরা’ Logo নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন মত Logo শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের তদন্ত নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক কি এবার বন্ধ হবে?

সারাবেলা প্রতিবেদন
  • আপডেট সময় : ০৮:৩০:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১০১ বার পঠিত

প্রতীকী ছবি

দেশে অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্ল্যাড ব্যাংকের সংখ্যা ১ হাজার ২৭টি৷ আর লাইসেন্স আছে ১৫ হাজার ২৩৩টি প্রতিষ্ঠানের৷

হাইকোর্টে দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (স্বাস্থ্যসেবা) পক্ষে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যদি জানে অবৈধ প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা, তাহলে সেগুলো বন্ধ করতে বাধা কোথায়? কেন এতদিনেও এগুলো বন্ধ করা হয়নি৷ উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর এবার কি এগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্ল্যাড ব্যাংকের যে সংখ্যা বলেছে বাস্তব চিত্র তার চেয়ে অনেক বেশি৷ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উচ্চ আদালতে যে তালিকা দিয়েছে, বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হবে৷ জনবল বা তথ্য ঘাটতির কারণে হয়ত তাদের রিপোর্টে বাস্তব চিত্রটা উঠে আসেনি৷ তারপরও সংখ্যাটা যাই হোক না কেন, অনুমোদন ছাড়া শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের একটি প্রতিষ্ঠানও চলতে পারে না৷ দ্রুত এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ এখানে রাজনৈতিক বা অর্থের যতই দাপট থাকুক না কেন এ ব্যাপারে কোন ছাড় দেওয়া উচিৎ নয়৷”

‘লাইফ সাপোর্ট থেকে ফিরল না আয়ান : খতনা করাতে গিয়ে মৃত্যু’ শিরোনামে গত ৮ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি জাতীয় দৈনিক৷ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ৯ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ৷ আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর গত ১৫ জানুয়ারি রুলসহ আদেশ দেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ৷ আয়ানের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়৷ সেই সঙ্গে সারা দেশে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত বা অনুমোদনহীন কতগুলো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে, সে বিষয়েও একটি প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট৷ রোববার সেই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, “আমরা উচ্চ আদালতে যে তালিকা দিয়েছি, সেটা কম বেশি হতে পারে৷ আমরা সবগুলোর জেলার সিভিল সার্জনদের কাছে অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্ল্যাড ব্যাংকের তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম৷ তারা অনুসন্ধান করে যে তালিকাটা দিয়েছে, আমরা সেটাই উচ্চ আদালতে জমা দিয়েছি৷ তালিকা হাতে পাওয়ার পর আমরা সবগুলো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে চিঠি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি৷ ইতিমধ্যে অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে৷ এ ব্যাপারে আমরা কাউকে ছাড় দেবো না৷”

কিছুদিন পরপর অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ এতে কিছু হাসপাতাল বন্ধও হয়৷ কিছুদিন পর আবারও চালু হয়৷ এভাবেই চলছে স্বাস্থ্য বিভাগের বেসরকারি খাত৷ এমন পরিস্থিতিতে জনগণকে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরাও৷ আগের অভিযানে যেগুলো বন্ধ করা হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই পরের অভিযানে চালু অবস্থায় পাওয়া গেছে? গত বছর দুই দফায় অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ প্রথম দফায় সাড়ে ১৬শ’ অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে৷ আর দ্বিতীয় দফায় বন্ধ করা হয় ৮৬০টি অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক৷

বন্ধ করার পর আবার কীভাবে সেগুলো চালু হয়? জানতে চাইলে ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, “বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক দেখার জন্য আমাদের আলাদা কোন জনবল নেই৷ একেক সময় একেকজনকে দায়িত্ব দিয়ে এটা করা হয়৷ আর আমাদের মোবাইল কোর্ট চালাতে হলে ডিসির কাছ থেকে নিতে হয়৷ ফলে আমরা চাইলেই সবসময় অভিযান চালাতে পারি না৷ আমার কোন কর্মকর্তা যদি কোথাও গিয়ে অবৈধ এমন প্রতিষ্ঠান দেখেন তিনি বন্ধ করতে বললেও তারা অনেক সময় করেন না৷ কারণ তারা জানেন আমাদের হাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোন ক্ষমতা নেই৷ আমার ঢাকা জেলা একটা বিশাল এলাকা৷ এখানে কোন গলির মধ্যে একটা রুমে ক্লিনিক খুলে ব্যবসা শুরু করলে সেটা দেখারও কোন সুযোগ আমাদের নেই৷ কারণ আমার হাতে তো স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) নেই৷ কোন দুর্ঘটনা যদি ঘটে বা সাংবাদিকরা যদি লেখেন তাহলে আমরা জানতে পারি৷ ফলে আমাদের এগুলো দেখার জন্য নির্দিষ্ট লোকবল ও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে৷ তাহলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে৷”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চালানো অভিযানে দেখা গেছে, অনেক হাসপাতালে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে চিকিৎসা৷ নেই সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী অবকাঠামো৷ এক্সরে মেশিন এমন জায়গায় রাখা হয় যেখানে ন্যূনতম সুরক্ষা-ব্যবস্থা নেই৷ এতে এক্সরে করতে আসা রোগী, যিনি এক্সরে করাচ্ছেন তিনি এবং আশপাশের মানুষ ভয়াবহ রেডিয়েশনের শিকার হচ্ছেন৷ রি-এজেন্ট অর্থাৎ কেমিক্যালের পাশে রাখা হচ্ছে তরকারি৷ ভুয়া চিকিৎসক, অনভিজ্ঞ নার্স ও অদক্ষ আয়া দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম৷ অর্থাৎ চিকিৎসার নামে মরণব্যবস্থা চালু আছে৷

বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, “দেশের মাত্র ৩৫ শতাংশ চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালে হয়, বাকি ৬৫ শতাংশ হয় বেসরকারি হাসপাতালে৷ ফলে বেসরকারি খাতের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই৷ বিশেষ করে কোভিডের সময় আমাদের এখানে যে চিকিৎসা হয়েছে, সেটা তো আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না৷ উন্নত দেশগুলো যেখানে হিশশিম খেয়েছে সেখানে আমরা কত চমৎকারভাবে সামাল দিয়েছি৷ এগুলো মাথায় নিয়েই অভিযান চালাতে হবে৷ অবৈধদের বিরুদ্ধে অভিযানে আমাদের আপত্তি নেই৷ কিন্তু বৈধ যারা তাদের যেন কোনভাবেই হয়রানি করা না হয়, সেদিকেও বিশেষ নজর রাখতে হবে৷”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, “দেশের আনাচে-কানাচে গজিয়ে উঠেছে হাজার হাজার অনিবন্ধিত ক্লিনিক-হাসপাতাল৷ ফলে অধিকাংশ হাসপাতালে প্রতিদিনই ঘটছে নানা অঘটন৷ ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে রোগীদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে প্রায়ই৷ অনেক প্রতিষ্ঠানের তথ্যও নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে৷ দেশজুড়ে এমন অবৈধ, নিবন্ধনহীন হাসপাতালের সংখ্যা হাজার হাজার৷ যেগুলোর বেশির ভাগেরই নাম ও অবস্থান জানে না অধিদপ্তর৷ অনলাইনে আবেদনের পর স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টোকেন, সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন ক্লিনিক মালিকেরা৷ এসব অবৈধ, নিবন্ধনহীন ক্লিনিক-হাসপাতাল বন্ধে নানা সময়ে অভিযান পরিচালিত হলেও আসলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না৷ বরং এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে৷”

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “এভাবে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না৷ শুধু অভিযান চালিয়ে চলে গেলে হবে না৷ লাগাতার পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷ এই দুর্বলতা শুরু থেকেই রয়েছে৷ আসলে প্রয়োজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটা আলাদা উইং তৈরি করা৷ তাদের পর্যাপ্ত জনবল ও সুযোগসুবিধা দিতে হবে৷ তারা সারাবছরই এগুলো মনিটরিং করবে৷ এর পাশাপাশি মফস্বলে স্থানীয় প্রশাসনকেও এর সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে৷ প্রয়োজনে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে৷ আর বন্ধ করাও কোন সমাধান না৷ যেগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলো কীভাবে সঠিকপথে আনা যায় সেই চেষ্টাও করতে হবে৷ তাহলেই গড়ে উঠবে সুশৃঙ্খল স্বাস্থ্য খাত৷” ডয়চে ভেলে
Facebook Comments Box
ট্যাগস :

অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক কি এবার বন্ধ হবে?

আপডেট সময় : ০৮:৩০:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
দেশে অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্ল্যাড ব্যাংকের সংখ্যা ১ হাজার ২৭টি৷ আর লাইসেন্স আছে ১৫ হাজার ২৩৩টি প্রতিষ্ঠানের৷

হাইকোর্টে দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (স্বাস্থ্যসেবা) পক্ষে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যদি জানে অবৈধ প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা, তাহলে সেগুলো বন্ধ করতে বাধা কোথায়? কেন এতদিনেও এগুলো বন্ধ করা হয়নি৷ উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর এবার কি এগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্ল্যাড ব্যাংকের যে সংখ্যা বলেছে বাস্তব চিত্র তার চেয়ে অনেক বেশি৷ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উচ্চ আদালতে যে তালিকা দিয়েছে, বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হবে৷ জনবল বা তথ্য ঘাটতির কারণে হয়ত তাদের রিপোর্টে বাস্তব চিত্রটা উঠে আসেনি৷ তারপরও সংখ্যাটা যাই হোক না কেন, অনুমোদন ছাড়া শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের একটি প্রতিষ্ঠানও চলতে পারে না৷ দ্রুত এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ এখানে রাজনৈতিক বা অর্থের যতই দাপট থাকুক না কেন এ ব্যাপারে কোন ছাড় দেওয়া উচিৎ নয়৷”

‘লাইফ সাপোর্ট থেকে ফিরল না আয়ান : খতনা করাতে গিয়ে মৃত্যু’ শিরোনামে গত ৮ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি জাতীয় দৈনিক৷ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ৯ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ৷ আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর গত ১৫ জানুয়ারি রুলসহ আদেশ দেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ৷ আয়ানের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়৷ সেই সঙ্গে সারা দেশে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত বা অনুমোদনহীন কতগুলো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে, সে বিষয়েও একটি প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট৷ রোববার সেই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, “আমরা উচ্চ আদালতে যে তালিকা দিয়েছি, সেটা কম বেশি হতে পারে৷ আমরা সবগুলোর জেলার সিভিল সার্জনদের কাছে অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্ল্যাড ব্যাংকের তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম৷ তারা অনুসন্ধান করে যে তালিকাটা দিয়েছে, আমরা সেটাই উচ্চ আদালতে জমা দিয়েছি৷ তালিকা হাতে পাওয়ার পর আমরা সবগুলো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে চিঠি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি৷ ইতিমধ্যে অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে৷ এ ব্যাপারে আমরা কাউকে ছাড় দেবো না৷”

কিছুদিন পরপর অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ এতে কিছু হাসপাতাল বন্ধও হয়৷ কিছুদিন পর আবারও চালু হয়৷ এভাবেই চলছে স্বাস্থ্য বিভাগের বেসরকারি খাত৷ এমন পরিস্থিতিতে জনগণকে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরাও৷ আগের অভিযানে যেগুলো বন্ধ করা হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই পরের অভিযানে চালু অবস্থায় পাওয়া গেছে? গত বছর দুই দফায় অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ প্রথম দফায় সাড়ে ১৬শ’ অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে৷ আর দ্বিতীয় দফায় বন্ধ করা হয় ৮৬০টি অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক৷

বন্ধ করার পর আবার কীভাবে সেগুলো চালু হয়? জানতে চাইলে ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, “বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক দেখার জন্য আমাদের আলাদা কোন জনবল নেই৷ একেক সময় একেকজনকে দায়িত্ব দিয়ে এটা করা হয়৷ আর আমাদের মোবাইল কোর্ট চালাতে হলে ডিসির কাছ থেকে নিতে হয়৷ ফলে আমরা চাইলেই সবসময় অভিযান চালাতে পারি না৷ আমার কোন কর্মকর্তা যদি কোথাও গিয়ে অবৈধ এমন প্রতিষ্ঠান দেখেন তিনি বন্ধ করতে বললেও তারা অনেক সময় করেন না৷ কারণ তারা জানেন আমাদের হাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোন ক্ষমতা নেই৷ আমার ঢাকা জেলা একটা বিশাল এলাকা৷ এখানে কোন গলির মধ্যে একটা রুমে ক্লিনিক খুলে ব্যবসা শুরু করলে সেটা দেখারও কোন সুযোগ আমাদের নেই৷ কারণ আমার হাতে তো স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) নেই৷ কোন দুর্ঘটনা যদি ঘটে বা সাংবাদিকরা যদি লেখেন তাহলে আমরা জানতে পারি৷ ফলে আমাদের এগুলো দেখার জন্য নির্দিষ্ট লোকবল ও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে৷ তাহলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে৷”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চালানো অভিযানে দেখা গেছে, অনেক হাসপাতালে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে চিকিৎসা৷ নেই সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী অবকাঠামো৷ এক্সরে মেশিন এমন জায়গায় রাখা হয় যেখানে ন্যূনতম সুরক্ষা-ব্যবস্থা নেই৷ এতে এক্সরে করতে আসা রোগী, যিনি এক্সরে করাচ্ছেন তিনি এবং আশপাশের মানুষ ভয়াবহ রেডিয়েশনের শিকার হচ্ছেন৷ রি-এজেন্ট অর্থাৎ কেমিক্যালের পাশে রাখা হচ্ছে তরকারি৷ ভুয়া চিকিৎসক, অনভিজ্ঞ নার্স ও অদক্ষ আয়া দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম৷ অর্থাৎ চিকিৎসার নামে মরণব্যবস্থা চালু আছে৷

বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, “দেশের মাত্র ৩৫ শতাংশ চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালে হয়, বাকি ৬৫ শতাংশ হয় বেসরকারি হাসপাতালে৷ ফলে বেসরকারি খাতের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই৷ বিশেষ করে কোভিডের সময় আমাদের এখানে যে চিকিৎসা হয়েছে, সেটা তো আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না৷ উন্নত দেশগুলো যেখানে হিশশিম খেয়েছে সেখানে আমরা কত চমৎকারভাবে সামাল দিয়েছি৷ এগুলো মাথায় নিয়েই অভিযান চালাতে হবে৷ অবৈধদের বিরুদ্ধে অভিযানে আমাদের আপত্তি নেই৷ কিন্তু বৈধ যারা তাদের যেন কোনভাবেই হয়রানি করা না হয়, সেদিকেও বিশেষ নজর রাখতে হবে৷”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, “দেশের আনাচে-কানাচে গজিয়ে উঠেছে হাজার হাজার অনিবন্ধিত ক্লিনিক-হাসপাতাল৷ ফলে অধিকাংশ হাসপাতালে প্রতিদিনই ঘটছে নানা অঘটন৷ ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে রোগীদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে প্রায়ই৷ অনেক প্রতিষ্ঠানের তথ্যও নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে৷ দেশজুড়ে এমন অবৈধ, নিবন্ধনহীন হাসপাতালের সংখ্যা হাজার হাজার৷ যেগুলোর বেশির ভাগেরই নাম ও অবস্থান জানে না অধিদপ্তর৷ অনলাইনে আবেদনের পর স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টোকেন, সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন ক্লিনিক মালিকেরা৷ এসব অবৈধ, নিবন্ধনহীন ক্লিনিক-হাসপাতাল বন্ধে নানা সময়ে অভিযান পরিচালিত হলেও আসলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না৷ বরং এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে৷”

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “এভাবে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না৷ শুধু অভিযান চালিয়ে চলে গেলে হবে না৷ লাগাতার পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷ এই দুর্বলতা শুরু থেকেই রয়েছে৷ আসলে প্রয়োজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটা আলাদা উইং তৈরি করা৷ তাদের পর্যাপ্ত জনবল ও সুযোগসুবিধা দিতে হবে৷ তারা সারাবছরই এগুলো মনিটরিং করবে৷ এর পাশাপাশি মফস্বলে স্থানীয় প্রশাসনকেও এর সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে৷ প্রয়োজনে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে৷ আর বন্ধ করাও কোন সমাধান না৷ যেগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলো কীভাবে সঠিকপথে আনা যায় সেই চেষ্টাও করতে হবে৷ তাহলেই গড়ে উঠবে সুশৃঙ্খল স্বাস্থ্য খাত৷” ডয়চে ভেলে
Facebook Comments Box