ঢাকা ০৫:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অন্তর্বর্তী সরকার শপথের দিন শেয়ারবাজারে রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০১:০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অগাস্ট ২০২৪ ৯ বার পঠিত

সংগৃহিত

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার গঠনের দিন অনন্য উচ্চতায় উঠেছে পুঁজিবাজার। নতুন সম্ভাবনার প্রত্যাশায় এই সরকারের শপথের দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ৩০৬ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

পয়েন্ট বৃদ্ধির দিক দিয়ে ডিএসইএক্স চালুর পর বৃহস্পতিবারের বৃদ্ধি ছিল সর্বোচ্চ। এ হিসেবে গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পয়েন্ট বেড়েছে সূচকটির। তবে শতাংশ বিবেচনায় এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রেকর্ড সূচক বৃদ্ধির দিনে শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণও দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।

চলতি সপ্তাহে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর টানা তিনদিন পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন চলছে। গত মঙ্গলবার থেকে তিন দিনে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৬৯৫ পয়েন্ট বা ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এরমধ্যে বৃহস্পতিবারই সূচক সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারের অনুপস্থিতিতেই পুঁজিবাজারে প্রায় সব শেয়ারের দাম ব্যাপক হারে বাড়ছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বশেষ তিন কার্যদিবস প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়লেও সূচকের উল্লম্ফনে প্রধান ভূমিকা রাখছে বড় মূলধনী ও মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে ব্যাংক, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ওষুধ, জ্বালানি খাত ছাড়াও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিশেষ অবদান রয়েছে।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজগুলোর মধ্যে ৯১ শতাংশের দর বেড়েছে। এরমধ্যে ৭ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বেড়েছে ২১০টি সিকিউরিটিজের। বড় মূলধনী ও মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর সর্বোচ্চ দর বাড়ায় ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩০৬ পয়েন্ট। পয়েন্ট বিবেচনায় সূচকটি চালুর পর এটি সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি এ সূচকটি চালু হয়। তবে শতাংশ হিসেবে সূচকের বৃদ্ধি সাড়ে চার বছরে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি ডিএসইএক্স ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছিল।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরুর পর থেকেই বেশিরভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে সূচকটি বাড়তে শুরু করে। ডিএসইতে লেনদেন শুরুর প্রথম মিনিটেই সূচকটি প্রায় ৮০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। পরবর্তি আধ ঘন্টায় সূচকে কিছুটা নিম্নমুখী ধারা তৈরি হলেও বেলা পৌনে ১১টা থেকে আবারও বৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসে। ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জ্বালানি, ওষুধসহ সবগুলো খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে সূচকও পাল্লা দিতে বাড়তে থাকে, যা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। দিনশেষে ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৩০৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫৯২৪ পয়েন্টে উন্নীত হয়। সূচকের এ অবস্থান গত ২১ মার্চের পর সর্বোচ্চ।

সূচক বাড়াতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে বিএটিবিসি, ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও গ্রামীণফোন। এ পাঁচ কোম্পানি সম্মিলিতভাবে সূচকে প্রায় ৮৯ পয়েন্ট যোগ করেছে।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৮টি সিকিউরিটিজের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৬৪টির, কমেছে ২৭টির ও অপরিবর্তিত ছিল ৭টির দর। খাতওয়ারি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার একমাত্র করপোরেট বন্ড ছাড়া সবগুলোর খাতের বাজার মূলধন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

এরমধ্যে টেলিযোগাযোগ, ব্যাংক, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, খাদ্য ও অনুসঙ্গ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের দর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এসব খাতের বাজার মূলধন বেড়েছে ৭ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত। এছাড়া বাজার মূলধন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়া খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে বীমা, কাগজ ও প্রকাশনা, সিমেন্ট, তথ্য প্রযুক্তি, প্রকৌশল, ভ্রমণ ও অবকাশ এবং সিরামিক খাত।

এদিকে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ায় ডিএসইর লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে কেনাবেচা হয়েছে ১ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা, যা গত ১৩ ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ।

Facebook Comments Box
ট্যাগস :

অন্তর্বর্তী সরকার শপথের দিন শেয়ারবাজারে রেকর্ড

আপডেট সময় : ০১:০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অগাস্ট ২০২৪

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার গঠনের দিন অনন্য উচ্চতায় উঠেছে পুঁজিবাজার। নতুন সম্ভাবনার প্রত্যাশায় এই সরকারের শপথের দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ৩০৬ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

পয়েন্ট বৃদ্ধির দিক দিয়ে ডিএসইএক্স চালুর পর বৃহস্পতিবারের বৃদ্ধি ছিল সর্বোচ্চ। এ হিসেবে গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পয়েন্ট বেড়েছে সূচকটির। তবে শতাংশ বিবেচনায় এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রেকর্ড সূচক বৃদ্ধির দিনে শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণও দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।

চলতি সপ্তাহে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর টানা তিনদিন পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন চলছে। গত মঙ্গলবার থেকে তিন দিনে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৬৯৫ পয়েন্ট বা ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এরমধ্যে বৃহস্পতিবারই সূচক সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারের অনুপস্থিতিতেই পুঁজিবাজারে প্রায় সব শেয়ারের দাম ব্যাপক হারে বাড়ছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বশেষ তিন কার্যদিবস প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়লেও সূচকের উল্লম্ফনে প্রধান ভূমিকা রাখছে বড় মূলধনী ও মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে ব্যাংক, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ওষুধ, জ্বালানি খাত ছাড়াও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিশেষ অবদান রয়েছে।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজগুলোর মধ্যে ৯১ শতাংশের দর বেড়েছে। এরমধ্যে ৭ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বেড়েছে ২১০টি সিকিউরিটিজের। বড় মূলধনী ও মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর সর্বোচ্চ দর বাড়ায় ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩০৬ পয়েন্ট। পয়েন্ট বিবেচনায় সূচকটি চালুর পর এটি সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি এ সূচকটি চালু হয়। তবে শতাংশ হিসেবে সূচকের বৃদ্ধি সাড়ে চার বছরে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি ডিএসইএক্স ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছিল।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরুর পর থেকেই বেশিরভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে সূচকটি বাড়তে শুরু করে। ডিএসইতে লেনদেন শুরুর প্রথম মিনিটেই সূচকটি প্রায় ৮০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। পরবর্তি আধ ঘন্টায় সূচকে কিছুটা নিম্নমুখী ধারা তৈরি হলেও বেলা পৌনে ১১টা থেকে আবারও বৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসে। ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জ্বালানি, ওষুধসহ সবগুলো খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে সূচকও পাল্লা দিতে বাড়তে থাকে, যা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। দিনশেষে ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৩০৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫৯২৪ পয়েন্টে উন্নীত হয়। সূচকের এ অবস্থান গত ২১ মার্চের পর সর্বোচ্চ।

সূচক বাড়াতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে বিএটিবিসি, ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও গ্রামীণফোন। এ পাঁচ কোম্পানি সম্মিলিতভাবে সূচকে প্রায় ৮৯ পয়েন্ট যোগ করেছে।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৮টি সিকিউরিটিজের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৬৪টির, কমেছে ২৭টির ও অপরিবর্তিত ছিল ৭টির দর। খাতওয়ারি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার একমাত্র করপোরেট বন্ড ছাড়া সবগুলোর খাতের বাজার মূলধন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

এরমধ্যে টেলিযোগাযোগ, ব্যাংক, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, খাদ্য ও অনুসঙ্গ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের দর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এসব খাতের বাজার মূলধন বেড়েছে ৭ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত। এছাড়া বাজার মূলধন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়া খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে বীমা, কাগজ ও প্রকাশনা, সিমেন্ট, তথ্য প্রযুক্তি, প্রকৌশল, ভ্রমণ ও অবকাশ এবং সিরামিক খাত।

এদিকে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ায় ডিএসইর লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে কেনাবেচা হয়েছে ১ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা, যা গত ১৩ ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ।

Facebook Comments Box