অনলাইনেই দেওয়া যাবে মনোনয়নপত্র
- আপডেট সময় : ১১:৫২:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩ ৫৫ বার পঠিত
ঢাকা : অনলাইনের মাধ্যমে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যুক্ত হতে যাচ্ছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই এই পদ্ধতি পুরোপুরি কার্যকর করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ফলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে না গিয়েও প্রার্থীরা অনলাইনে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। সারা দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের সব প্রার্থীই এ সুবিধা নিতে পারবেন।
সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইসির সভায় এ বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ পদ্ধতি কার্যকর হলে আগামীতে কেউ প্রভাব বিস্তার করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ থেকে কোনো প্রার্থীকে বিরত রাখতে পারবে না। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, এটি ইসির একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক পদক্ষেপ।
অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য একটি ‘স্বতন্ত্র’ ইউজার আইডি থাকবে। অনলাইনে মনোনয়নপত্রটি জমা হয়েছে কি না সে তথ্যও রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর থেকে প্রার্থীর মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে মনোনয়নপত্রের তথ্যে কোনো ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে যাচাই-বাছাইয়ের সময় সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সরাসরি না গিয়ে ঘরে বসেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আরও সুযোগ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে কমিশনের ওয়েবসাইটে মনোনয়নপত্র সংক্রান্ত লিঙ্কে প্রবেশ করে প্রথমে প্রার্থী তার মুখমণ্ডল ‘প্রদর্শন’ করলে ভোটার ডেটা বেইজের সম্পূর্ণ তথ্য স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। এরপর তিনি একটা ইউজার আইডি পাবেন। সেটি ব্যবহার করেই ওই প্রার্থী মনোনয়নপত্রের যাবতীয় তথ্য সন্নিবেশ করবেন।
মনোনয়নপত্রে প্রার্থীর প্রস্তাবক, সমর্থকদের নাম-পরিচয় ইত্যাদি স্বতন্ত্রভাবে সার্ভারে আপলোড করা হবে। দল থেকে মনোনীত প্রার্থীর ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান, সাধারণ সম্পাদক বা দপ্তরের সত্যায়িত প্রত্যয়নপত্র থাকতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাকে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংবলিত প্রথম ও শেষ পৃষ্ঠার ছবি আপলোড করতে হবে। হার্ডকপি বার্তা বাহকের মাধ্যমে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছালেও হবে। প্রার্থীর ভোটার তথ্যভান্ডারে যাবতীয় তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট ছকে বসে যাবে।
সেখানে ধাপে ধাপে আয়কর রিটার্ন, হলফনামা, দলীয় প্রার্থী হলে স্বাক্ষরিত সত্যায়িত কপিসহ আনুষঙ্গিক তথ্য আপলোড করতে হবে। প্রতিটি ধাপের তথ্য সেভ অপশনে চাপলে সেটি সুরক্ষিত থাকবে। পরে নতুন কোনো তথ্য সন্নিবেশ করলেও আগের তথ্য অবিকল থাকবে। প্রার্থীর তথ্য নিশ্চিত হলেই প্রস্তাবকের মুখমণ্ডলের ছবি ও তার তথ্য আপলোড করবেন। এরপর শেষ ধাপে সমর্থকের তথ্য সংযোজনের পর প্রার্থী, প্রস্তাবক ও সমর্থকের ছবি ক্রস ম্যাচিংয়ের পর সেটি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠালে প্রার্থী নিজ মোবাইলে ফিরতি একটি এসএমএস পাবেন। তিনি নির্বাচনে প্রার্থিতায় টিকেছেন নাকি বাদ পড়েছেন এসএমএসের মাধ্যমেই তা অবহিত হবেন।
বিগত দিনে প্রার্থীকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থিত থেকে হলফনামায় স্বাক্ষর করতে হতো। এখন আগে স্বাক্ষর করানো হলফনামা আপলোড করলেই মনোনয়নপত্র বৈধ হবে। প্রার্থিতা যাচাই-বাছাইয়ের সময় প্রার্থীকে সরাসরি উপস্থিত থাকতে হবে। জামানতের টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অথবা ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন প্রার্থীরা। শিগগিরই অনলাইনে মনোনয়ন ফরম পূরণের জন্য একটি ‘অ্যাপ’ চূড়ান্ত করবে ইসি।
নির্বাচন কমিশন সূত্রগুলো বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান নির্বাচনী বিধিমালায় সংযুক্ত করা হয়েছিল। তখন সুযোগ থাকলেও তা কার্যকর করা যায়নি। কেননা, সেটি পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক ছিল না। অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর যাবতীয় কাগজপত্রের হার্ডকপি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হতো। এখন বিষয়টি পুরোপুরি অনলাইননির্ভর করায় ওই ঝামেলা পোহাতে হবে না।
ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মতে, এই পদ্ধতি কার্যকর করার মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা এবং আচরণবিধি ভঙ্গের প্রবণতা বন্ধ হবে। সাম্প্রতিক সময়ে কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত একাধিক সংলাপে অংশীজনদের অনেকেই অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান পুরোপুরি কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, প্রার্থীদের অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশন সভায় সকলে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন। এখন তা বাস্তবায়ন করবে ইসি। এটি কার্যকর হলে প্রার্থীদের অনেক সুবিধা হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। সরকারের যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা, এটি তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে। দ্বিতীয়ত, কমিশন চাইলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তথ্যগুলো মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়েবসাইটে দিয়ে দিতে পারবে। তৃতীয়ত, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকে বিরত রাখার যে চেষ্টা অনেক সময় দেখা যায়, সেখান থেকেও পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। ভারতে বেশ কয়েক বছর আগেই এ ব্যবস্থা চালু হয়েছে বলে জানান তিনি।
সারাবেলার সংবাদ/ জেডআরসি/ ২৩ আগস্ট ২০২৩